বরাবর,
সে সব আত্মা, যারা পাপ করে সীমা অতিক্রম করেছে
অনেক আশা ছিল এই রামাদান নিয়ে। আপনি চেয়েছিলেন এই রামাদানটি একটু ব্যতিক্রম হবে আগের চেয়ে। চেয়েছিলেন এসব খাত থেকে বের হয়ে আসতে। লক্ষ্যও ঠিক করেছিলেন।
কিন্তু এক সপ্তাহ না যেতেই ফিরে গেলেন আগের সেই বদ অভ্যাসে। নিজের উপর খুবই বিরুক্ত আপনি। আপনি শপথ করেছিলেন আপনি সকালে নামাযের জন্য উঠবেন। শপথ করেছিলেন একটু ধৈর্যশীল হবেন অন্যের উপর। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আল্লাহ তাআলার কাছে যে, আপনি প্রশ্নবিদ্ধ কোন সম্পর্কে জড়াবেন না।
কিন্তু… এখন? আপনি সকাল ১০টায় উঠলেন ৩ টায় না উঠে। আপনার আম্মুর সাথে ঝগড়া করলেন কারণ তিনি আপনাকে বার বার মানা করছিল ঐ ছেলে/মেয়ে টির সাথে রাত ২টা পর্যন্ত মেসেঞ্জারে কথা না বলতে।
মনে হচ্ছে রামাদান আপনাদের মত মানুষের জন্য না, কারণ আপনি দ্বীনের পথে যখনই চলার চেষ্টা করতে যান, ব্যর্থ হন।
সর্বদাই।
প্রত্যেকবার।
সবসময়।
শয়তানকে এ মাসে আটকে রাখা হলেও এর যেন কোন প্রভাব আপনার মধ্যে নেই। আপনি হয়ত ভাবছেন ” হবে না আমাকে দিয়ে”। হয়ত ভাবছেন, আপনি এই মাসের করুণা পাওয়ার যোগ্য নন। হয়ত আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা আপনাকে প্রত্যাখ্যান করছেন।
এতক্ষণ যা বললাম, যদি তা আপনার সাথে মিলে যায় আর এরকম অনুভূতি যদি আপনার মাঝে তৈরি হয়, তাহলে আপনি ভুল বুঝছেন।
কারণ রামাদান আসলে আপনারই জন্যই । আল্লাহ তাআলা আপনার মত মানুষদের ডাকছেন:
“বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ (পাপ করে) তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (আল কুরআন ৩৯-৫৩)
মাঝে মাঝে আমরা নিজেরা নিজদের উপর আল্লাহ যতটুক না চান, তার চেয়েও বেশি কঠোর হয়ে যায়। আমরা নিজেদের কঠিন শাস্তি দিয়ে বলি, আমি যে পরিমাণ পাপ করেছি, আমি আল্লাহর রহমত পাওয়ার যোগ্যই নয়। এভাবেই আমরা নিজেদের হাল ছেড়ে দিই আর সেই সাথে ছেড়ে দিই আল্লাহ তাআলার দয়া।
কিন্তু জানেন?
আল্লাহ তাআলার কৃপা পাওয়ার জন্য যোগ্যতা লাগে না। এটি সকলকেই দেয়া হয় বিশেষ করে আমাদের মত পাপী বান্দাদের, যারা সংগ্রামের মধ্যে আছি, চেষ্টা করে যাচ্ছি বার বার ব্যর্থ হওয়ার পরও। আল্লাহ তাআলাতো বলেছেন
“আর আমার দয়া তো (সৃষ্টির) সবকয়টি জিনিসকেই পরিবেষ্টন করে রেখেছে…”(আল কুরআন ৭-১৫৬)
তাই ছেড়ে দিন। নিজের উপর যে ক্রোধ, তা ছেড়ে দিন। “হবে না, কিচ্ছু হবেনা আমকে দিয়ে” এই ধরণের চিন্তা বাদ দিন। এসব হচ্ছে নফস এর মনস্তাত্ত্বিক কৌশল আপনার উপর। এ ফাঁদে পা দিয়েন না। ফাঁদটি হচ্ছে নিজেকে অযোগ্য আর ছোট মনে করা। আপনি যতই নিজের বিরোধিতা করবেন ততই আপনি কম কাজ করবেন। নিজেকে যতই ঘৃণা করবেন, ততই নিজেকে কু-প্রবৃত্তির কাছে বিক্রি করে দিবেন।
কিন্তু আল্লাহ তাআলা আপনাকে মানুষ হিসেবে তৈরি করেছেন, আর সেটাই যথেষ্ট আপনার মূল্যায়নের জন্য…আপনার মর্যাদার জন্য।
“আমি অবশ্যই আদম সন্তানদের মর্যাদা দান করেছি…” (আল কুরআন ১৭-৭০)
তাহলে সমাধান কি? রাসূল ﷺ আপনাদের আমাদের মত মানুষদের সম্পর্কে বলেছেন,
“এক বান্দা গুনাহ করে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার গুনাহ ক্ষমা করে দাও।
তারপর আল্লাহ তাআলা বললেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন প্রতিপালক আছে, যিনি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং গুনাহের কারণে পাকড়াও করেন।
এ কথা বলার পর সে পুনরায় গুনাহ করল এবং বলল, হে আমার মনিব! আমার গুনাহ মাফ করে দাও।
এরপর আল্লাহ তাআলা বললেন, আমার এক বান্দা গুনাহ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন প্রতিপালক আছে যিনি গুনাহ মাফ করেন এবং গুনাহের কারণে পাকড়াও করেন।
তারপর সে আবারও গুনাহ করে বলল, হে আমার রব! আমার গুনাহ ক্ষমা করে দাও।
একথা শুনে আল্লাহ তাআলা আবারও বলেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে এবং সে জানে যে তার একজন মালিক আছে, যিনি বান্দার গুনাহ ক্ষমা করেন এবং গুনাহের কারণে পাকড়াও করেন।
তারপর আল্লাহ তাআলা বলেন, হে বান্দা! এখন যা ইচ্ছা তুমি আমল কর। আমি তোমার গুনাহ মাফে করে দিয়েছি। …” (বুখারী ও মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা আমাদের মত পাপীদের জন্য কি করতে চান? তিঁনি বলেন,
” আল্লাহ তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হতে চান,
এবং যারা কামনা-বাসনার অনুসারী, তারা চায় যে, তোমরা পথ থেকে অনেক দূরে বিচ্যুত হয়ে পড়।
আল্লাহ তোমাদের বোঝা হালকা করতে চান। (কারণ) মানুষকে দুর্বল করে পয়দা করা হয়েছে।” (আল কুরআন ৪-২৭/২৮)
আপনি কি জানেন, আল্লাহ তাআলা কেন এতবার করে নিজের দয়া আর ক্ষমার কথা বলেছেন কুরআনে?
তিঁনি বলেছেন, আপনার নতুন জীবন আপনার হাতেই। তিঁনি বলেই দিয়েছেন যে তিঁনি আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন যদি আপনি তাঁর কাছে ফিরে যান। কিন্তু আপনাকেই প্রথম ধাপটি নিতে হবে তাঁর কাছে যাওয়ার জন্য। চেষ্টা করে যান বদ অভ্যাসগুলো দূর করতে আর ভাল কাজে কষ্ট করে লেগে থাকতে। এই নতুন জীবনে ফিরে আসার কোন বিশেষ মুহূর্ত আছে কি? না, এই নতুন জীবনে আসার সুযোগ প্রতিদিনি আর যে কোন সময়ই। রাসূল ﷺ আমাদের বলে গিয়েছেন:
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা নিজ হাত রাতে প্রসারিত করেন; যেন দিনে পাপকারী (রাতে) তওবা করে এবং দিনে তাঁর হাত প্রসারিত করেন; যেন রাতে পাপকারী (দিনে) তওবাহ করে। যে পর্যন্ত পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় না হবে, সে পর্যন্ত এই রীতি চালু থাকবে।” (মুসলিম)
অতীত ব্যাপার না, যদি বর্তমানে আপনি তাঁর কাছে ফিরে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। আপনি যতবার পাপ করেন, ততবারই ফিরে যেতে থাকেন আর যতবারই ফিরে যান, ততবারই আপনার জন্য কল্যাণ। আপনি বলতে পারেন, “যথেষ্ট হয়েছে, আমি ক্লান্ত” আর আল্লাহ তাআলার এর উত্তরে কি বলে দেখেন,
“আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! যাবৎ তুমি আমাকে ডাকবে এবং ক্ষমার আশা রাখবে, তাবৎ আমি তোমাকে ক্ষমা করব। তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন, আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে থাকে অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে উপস্থিত হও এবং আমার সাথে কাউকে শরীক না করে থাক, তাহলে আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার নিকট উপস্থিত হব।” (তিরমিযী)
রামাদান আপনারই জন্য, আর আগামীকাল একটি নতুন দিন। জীবনটাই সংগ্রামের, আর কেউ পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে পারে না, ক্ষত বিক্ষত চামড়া আর আঁচড়ের দাগ ছাড়া ; ব্যর্থ হয়ে আবার চেষ্টা না করা ছাড়া; ‘আমি পারবই’ এ চিন্তা না করা ছাড়া।
কিন্তু আপনি যখন উঠে যাবেন চূড়ায়… বাহ, আপনি যখন একদম উপরে – তখন এতদিনের কষ্ট সফল; কারণ এটা না যে আপনি পাহাড়ের একদম উপরে, বরং এর চেয়ে আরও ভাল কিছু। যেমনটা আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন: “… যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শোনেনি এবং কোন ব্যক্তির মন কল্পনা করেনি…” (মুসলিম)
এটা জান্নাত, যেখানে থাকবে না কোন দুঃখ, কোন দুর্দশা।
আমি আশা করছি, আমরা সেখানেই দেখা করব আপনাদের সাথে ইনশাআল্লাহ।
বিনীত,
একটি আত্মা যে নিজের উপর জুলুম করেছে পাপ করে ।
(এবং ফিরে এসেছে)
(এবং বার বার যে ফিরে আসে)
[Jinan Y এর Ramadan Letter আর্টিকেল থেকে অনূদিত ]