প্রথমেই যে ব্যাপারটা আমি বলতে চাই তা হলো, আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল সুরা আন নাহল এর শেষ অংশে বলেছেন, ‘উদয়ু ইলা সাবিলি রাব্বিক’। যেটার অর্থ সাধারণ ভাবে বলা যায় ‘তোমার রবের পথে ডাকো’। এটাই সাধারণ ভাবে বলা হয়েছে এখানে। বিল হিকমাহ অর্থ প্রজ্ঞা ব্যবহার করে , অথবা বলা যায় তোমার রবের প্রতি ডাকো প্রজ্ঞার সাথে। কিন্তু এ বিষয়টাই এখন একটু গভীরভাবে ভাবা যাক। যখন আপনি কাউকে দাওয়াত দেন ; দাওয়াত দেবার অর্থ হলো এটা একই সাথে হবে বন্ধুত্বপূর্ণ, দয়ার্ত ও ভালবাসাময় একটা ব্যাপার। আপনি তেমন কাউকে দাওয়াত দিবেন না যাদের আপনি ঘৃণা করেন। এবং এই দাওয়াতের কাজটা তখনও সম্পন্ন হবে না যখন আপনি রাগান্বিত থাকবেন। অন্যভাবে বলা যায়, ব্যাপারটি এমন ও না যে আপনি কাউকে ডিনারের দাওয়াত দিতে গিয়ে রাগতস্বরে বললেন যে, এহ! আমার বাসায় এসো। আপনি সেটা করবেন না। কারণ আপনি নিশ্চিত ভাবে জানেন যে আপনার সে আমন্ত্রন প্রত্যাখ্যাত হবে। আমি যা বুঝাতে চাচ্ছি তা হলো, দাওয়াত দেবার পন্থাটা কেমন হবে। দাওয়াতের সেই পন্থা যেটা ইসলামকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়, মানুষকে ইসলামের পথে আনে।
আপনি যে মানুষটাকে দাওয়াত দিয়ে ইসলামের পথে ডাকেন তার প্রতি ভালবাসা, সৌজন্যতা, সম্মান থাকতে হবে। এই দাওয়াতে ঘৃণা মেশানো কোন কথা থাকতে পারে না, বিচার করার বার্তা থাকতে পারবে না। এই দাওয়াত নিজেকে জাহির করার জন্যও নয় যেখানে কোনভাবেও দেখানো হয় যে যাকে দাওয়াত দিচ্ছেন তার চেয়ে আপনি উত্তম। এর কোনটাই দাওয়াতে থাকতে পারবে না। যদি থাকে তাহলে সেটা কখনই দাওয়াত হতে পারে না। এখন দেখা যাক আল্লাহ প্রথম শব্দটিতে কি ব্যবহার করেছেন। ‘উদয়ু’। এবং তার পরে তিনি বলেছেন ‘ইলা সাবিলি রাব্বিক’- তোমার রবের পথে ডাকো। এটা নিয়ে একটু চিন্তা করুন। ক্লাসিক্যাল তাফসীর থেকে এ সম্পর্কে অনেক কিছুই বলা যায়। কিন্তু আজকের দর্শকদের জন্য আমি খুব সহজ করে বলতে চাই, যেটা বোঝা আপনাদের জন্য খুবি সহজ হবে। যখন আমি কাউকে দাওয়াত দেই তখন আমি তাদের আমার বাসায় দাওয়াত দেই, তাই না? আমি তাদের একটা সম্মেলনে ডাকি, আমি তাদের আড্ডায় যোগ দিতে ডাকি, আমি তাদের এই প্রোগ্রামে ডাকি, রেস্টূরেন্ট এ ডাকি। এর অর্থ আমি বোঝাতে চাচ্ছি যে, আপনি মানুষকে দাওয়াত দেন কোন নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে। কিন্তু আপনি কাউকে ফোন দিয়ে এটা বলেন না যে হেই, আমি তোমাকে হাইওয়ে ৯৫ এ দাওয়াত দিতে চাচ্ছি। এভাবে বললে ব্যাপারটা সবার কাছে বোধগম্য হবে না। আপনি মানুষকে কোনো পথে আমন্ত্রন করেন না। আপনি মানুষকে ডাকেন কোথায়? একটা নির্দিষ্ট গন্তব্যে। হ্যাঁ, তখন বিষয়টা পরিষ্কার হবে।
এখন ভাবুন আল্লাহ কি বলেছেন। ‘উদয়ু ইলা সাবিলি রাব্বিক’। মানুষকে ডাকো। কোথায়? তোমার রবের রাস্তায়, তোমার রবের পথে। এবং এই দাওয়াতটা কোন নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলের দিকে দেয়া হচ্ছে না। দাওয়াতটা দেয়া হচ্ছে পথের দিকে, কারণ এটা অন্য সব দাওয়াতের মত না। যদি সহজভাবে আমি আপনাদের বলি তবে আমি বলব, এটা কুরআনের খুব গভীর একটা জ্ঞান। এই প্রজ্ঞা খুবই গভীর। যখন আপনি কাউকে আপনার বাসায় ডাকেন তখন সেটা হয় আসলে একটা গন্তব্য। সেক্ষেত্রে হতে পারে তাদের দেখা মেলে না ঘন্টার পর ঘন্টা। তারা আসতে অনেক দেরি করে ফেলে। যেমন আমার ব্যাপারটাই ধরুন। আজকে জুমুআ, আর আমি আজ দেরি করে ফেলেছি। তেমনি আপনি আসতে যদি দেরি করে ফেলেন তাহলে মানুষ আপনার উপর হতাশ হয়ে যায়। কেন? কারণ আপনি গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি। কিন্তু আপনাকে যদি পথের কথা বলা হতো তাহলে আপনি ১০০০ মাইল পথ অতিক্রম করেছেন নাকি ১০ ফিট পথ অতিক্রম করেছেন সেটা কোন মূখ্য বিষয় হতো না। কারণ ইতিমধ্যে আপনি আপনার গন্তব্য পেয়ে গেছেন। আর আপনি কোথায় আছেন? গন্তব্যের পথে। আপনি গন্তব্যের পথে আছেন।
অন্যভাবে বলা যায়, আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল কুরআনে আমাদের এক গভীর নেয়ামত দান করেছেন। যা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে দাওয়াতের আসল অর্থ কি। আপনি মানুষকে পরিপূর্ণতার/উৎকর্ষতার গন্তব্যের দিকে ডাকেন না। আপনি ডাকেন না। আমরা কারো কাছেই তা আশা করি না। আমার কাছেও না, আপনার কাছেও না। আমরা কোন ভুল ব্যতিরেকে পূর্ণ শুদ্ধ হয়ে আল্লাহর কাছে সমর্পন আশা করতে পারব না। না, না, না। এবং সবার মান একই রকম হবে এটাও আশা করা হয় না। না! কারণ এটা একটা পথ। এখানে কিছু মানুষ অন্যের চেয়ে দ্রুত উন্নতি করে। কিছু মানুষ তার চেয়েও বেশি এগিয়ে যায়। কিছু মানুষ পেছনে পড়ে থাকে। আবার কিছু মানুষ খুবি মন্থর এগিয়ে চলে। কেউ কেউ অতি দ্রুত এই পথ পাড়ি দেয়। আবার অনেকে দিনে ১ ইঞ্চি পরিমান অগ্রসর হয়। যেটা দেখে মনে হয় তারা আসলে উন্নতির কিছুই করছে না। কিন্তু আপনারা জানেন? আসল কথা হলো তারা সবাই সফল। সবাই, প্রত্যেকে। এবং এই পথ চলার মাঝেই তাদের কেউ মৃত্যু মুখে পতিত হলে এমন কি তারা যদি কেবল পথ চলা শুরু করে এবং গন্তব্যে নাও পৌছাতে পারে তবু তারা আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্যতা পাবে। কারণ তারা ইতিমধ্যেই আল্লাহর পথে নেমেছিল। পুরো ইসলাম ধর্মটাকেই তুলনা করা হয়েছে একটা পথ রুপে। ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম। এইটা নিয়ে ভাবুন। আপনার পুরো জীবনটাই একটা পথের মত যেখানে আপনি যাত্রা করেছেন। এবং এই যাত্রার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে অগ্রসর হওয়া। কিন্তু আল্লাহ আমাদের বলেন নি সেই অগ্রসরতা কত তাড়াতাড়ি হবে বা কত দ্রুত এবং পরিমাণের দিক থেকে আপনাকে কতটুকু অগ্রসর হতে হবে? কারণ প্রতিটি মানুষ আলাদা।