আজকের খুতবার একদম শুরুতে আমি দুটো কথা বলে নিতে চাই, প্রথমত এই যে, অনেক দীর্ঘ সময় নিয়ে ভাবনা চিন্তার পর আজকে যে বিষয়টি আমি বেছে নিয়েছি, এটা খুব কঠিন এবং জটিল। যদিও আমি যখন খুতবার জন্য কোন বিষয় নির্বাচন করি সাধারণত আমি চেষ্টা করি সেটাকে যতটা সহজ করা যায়। কিন্তু আমি মনে করি এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা সব মুসলিমদের জন্য যথেষ্ট জরুরী এবং ভীষণ গুরুত্বপুর্ণ তাই আমি আল্লাহ্ আজ্জা ওয়াজ্বালের কাছে প্রার্থনা করছি যেন আজকের বক্তব্যে আমি আমার ভাবনাগুলো খুব পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করতে পারি যাতে আপনারা এ থেকে উপকৃত হতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, যখনই আমি এখানে এলাম আমি দেখলাম আমাদের ইমাম সাহেব এখানে বসে আছেন, আমার মনে হলো আরবীতে একটা কথা আছে, “আগনাস সাবা আনীল মিসবাহ”, যার মানে হলো, “সময়টা যখন সকাল, আপনার বাতির প্রয়োজন নেই”(স্মিত হাসি)। আমি ঠিক জানি না আমাকে কেন খুতবা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রিত করা হয়েছে যেখানে ইমাম সাহেব স্বয়ং উপস্থিত আছেন। যা হোক, যেহেতু আমি এখন এ জায়গায় আছি, ইন শা আল্লাহ আশা করছি আমি এ সুযোগটা সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে পারবো।
আজকের এই সংক্ষিপ্ত খুতবায় আমি কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্কের দুইটি দিক নিয়ে কথা বলতে চাই। আল্লাহ্ আজ্জা ওয়াজ্বাল কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে বর্ণনা করেছেন বিভিন্ন ভাবে। এটা শুধু এক ধরণের সম্পর্ক নয়, কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্কটা বিভিন্ন ধরণের। যেমন ধরুন এটা (কুরআন) একটা স্মরণিকা নিজের জন্য আবার এটা অন্যকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার একটা মাধ্যমও ।এটা জিকির বা স্মরণিকা আমাদের নিজেদের জন্য এবং কুরআন একটা মাধ্যমও যাতে আমরা অন্যদেরকেও স্মরণ করিয়ে দিতে পারি।
এটা চিন্তা করার মতো বিষয় এবং আমাদেরকে বার বার বলা হয়েছে যাতে আমরা কুরআনকে নিয়ে চিন্তা করি, খুব মনযোগ দিয়ে শুনি এবং গভীর ভাবে ভাবি। এই “গভীর করে ভাবা” ব্যাপারটা নিয়েই আজকে আমি বিশেষভাবে বলতে চাই। এটা শুরু হয়েছে সুরা মুহাম্মাদ এর এই আয়াত দিয়ে “আফালা ইয়াতাদাব্বারুনাল কুরআন” – আল্লাহ্ প্রশ্ন করছেন, “কেন ওরা কুরআন নিয়ে গভীরভাবে ভাবে না?” (৪৭:২৪)
যখন কুরআন নিয়ে কথা আসে, কেন ওরা গভীর ভাবনায় ডুবে যায় না? কেন ওরা গভীরভাবে পর্যালোচনা করে না? ‘তাদাব্বুর’ শব্দটা এসেছে ‘দুবর’ থেকে যার মানে হছে, কোন কিছুর নিচে, কোন কিছুর পেছনে। আর ‘তাদাব্বুর’ মানে হলো যখন আপনি কিছু শোনেন এটা শুধু উপরভাগ , এই কথাটাতে কী বলা হয়েছে, এই বক্তব্যের গুরুত্ব কতখানি তা বুঝতে আপনাকে ঐ বক্তব্যের পেছনে কী আছে এনিয়ে খুব গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। অন্যভাবে বলতে গেলে, এতে (কুরআনে) গভীরতা আছে, এবং এর বক্তব্য বুঝতে চাইলে আপনাকে এর গভীরে ডুব দিতে হবে। এর একটা দৃশ্যত উদাহরণ হতে পারে, সমূদ্র। আপনি সমূদ্রের দিকে তাকালে সমূদ্রের উপরিভাগটা দেখতে পারেন কিন্তু আপনাকে মানতে হবে যে এর নিচে অনেক কিছু ঘটে চলছে। আর সমূদ্রের তলদেশে আছে অনেক মূল্যবান বিষয় এবং অনেক বেশি গভীরতা যা আমরা চোখে দেখতে পাই না। আপনি সমূদ্রের উপরিভাগ দেখেছেন তার মানে এই নয় যে আপনি এর গভীরে কি আছে জেনে ফেলেছেন। তা জানতে আপনাকে কিছু বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে, কিছু অভিযান চালাতে হবে, যাতে আপনি বুঝতে পারেন এই সমূদ্রের গভীরে আসলে কি আছে।
আল্লাহ্ আজ ওয়াজ্বাল যখন কুরআনে “গভীর ভাবে ভাবার” কথা বলেন কোইতুহল উদ্দীপক ব্যাপার হচ্ছে উনি প্রায় একইরকম কথা বলেছেন দুবার। উনি বলেছেন, “আফালা ইয়াতাদাব্বারুনাল কুরআন” “কেন ওরা কুরআন নিয়ে গভীরভাবে ভাবে না?” অথবা “ওরা কী ভাবে না গভীরভাবে কুরআন নিয়ে?”
কিন্তু একবার আল্লাহ্ যখন এই সমস্যা নিয়ে বলছেন যে মানুষ গভীরভাবে ভাবে না, উনি বলেছেন সমস্যাটা আসলে হৃদয়ের। তিনি বলেছেন- أَمْ عَلَىٰ قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا ”না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?” ব্যাপারটা এমন যে তাদের হৃদয় তাদের নিজেদের তালায় বন্দী। কুরআনে এই হৃদয় বিষয়ক সমস্যা বিভিন্নভাবে বর্নণা করা হয়েছে এটা একটা আত্মিক সমস্যা আশা করছি আপনারা সবাই এটা বুঝতে পারছেন। যখন মানুষ আল্লাহ্ যিকর করে না, আল্লাহ্কে স্মরণ করে না, তাদের হৃদয়ে আল্লাহ্র ভয় কাজ করে না, আল্লাহ্ প্রতি ভালোবাসা কাজ করে না তখন তাদের হৃদয় বন্দী হতে শুরু করে।
যখন মানুষের চোখ, কান এমনসব কিছুতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে যা তাঁকে আল্লাহ্র স্মরণ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়, তখন তাদের হৃদয় কঠিন হতে শুরু করে। তো আল্লাহ বলছেন তোমরা অন্য সব কিছু নিয়ে এতো বিক্ষিপ্ত হয়ে আছ যে তোমার হৃদয় কুরআন নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে বা আত্মস্থ করতে আর আগ্রহীই নয়। এটা একটা আত্মিক সমস্যা যা আল্লাহ্ সুরা মুহাম্মদ-এ উল্লেখ করেছেন।
আবার কুরআনের অন্যত্র আরেক প্রসঙ্গে আল্লাহ্ আজ্জা ওয়াজ্বাল বলেছেন, (أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ ۚ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِندِ غَيْرِ اللَّهِ لَوَجَدُوا فِيهِ اخْتِلَافًا كَثِيرًا ’’এরা কি লক্ষ্য করে না কোরআনের প্রতি? পক্ষান্তরে এটা যদি আল্লাহ ব্যতীত অপর কারও পক্ষ থেকে হত, তবে এতো অবশ্যই বহু বৈপরিত্য দেখতে পেত।‘’ সুরা নিসা- ৮২) এটা অন্য আরেকটি জায়গা যেখানে আল্লাহ্ একই কথা উল্লেখ করেছেন। এবং ঊনি (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেছেন, ওরা কী কুরআনকে নিয়ে গভীরভাবে ভাবে না ? যদি এটা অন্য কারো রচিত হতো, এর মধ্যে অনেক বৈপরিত্য থাকতো। যদি কুরআন আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে আসতো, ওরা কুরআনের মধ্যে অনেক বৈপরীত্য, অনেক মতবিরোধী বক্তব্য খুঁজে পেতো। এর এক দিক থেকে অন্য দিকের বিরোধ থাকতো।
কুরআনের মধ্যে এই ধারাবাহিক মিলের ব্যাপারটা খোঁজা বা এর ভেতরকার পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য খুঁজে বের করা এটা কোন আধ্যাত্মিক চর্চা নয় এটা একটা বুদ্ধিভিত্তিক চর্চা। যখন আপনি কোন বই পড়েন এবং বলেন যে ৫ নাম্বার অধ্যায় ৩ নাম্বার অধ্যায়ের সাথে পরষ্পর বিরোধী, অথবা আপনি বলছেন যে এই পৃষ্ঠার কথা ঐ পৃষ্ঠার কথার সাথে মিলছে না, অথবা এই ফর্মুলাটা ঐ ফর্মূলার সাথে যায় না অথবা এই বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত ঐ বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তের সাথে খাপ খায় না, যখন আপনি এধরণের সামঞ্জস্যতা বা অসামঞ্জস্যতার খোঁজ করছেন, কিংবা এরকম অভ্যন্তরীন মিল বা অসঙ্গতির খোঁজ করছেন আপনি আসলে বুদ্ধিভিত্তিক আলোচনা করছেন, ব্যাপারটা আধ্যাত্মিক নয়।
আমি বলতে চাচ্ছি যে, একদিকে আল্লাহ্ আ’জ্জা ওয়াজ্বাল বলছেন, কুরআন কে নিয়ে গভীরভাবে ভাবা বা না ভাবা একটা আধ্যাত্মিক সমস্যা আবার অন্যদিকে ”কুরআন নিয়ে না ভাবার” বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন ঃ যদি তুমি সত্যিকার ভাবে ভাবতে তাহলে তুমি নিশ্চিতভাবে জানতে পারতে যে এর মধ্যে কোন মতবিরোধ নেই তাই এটা কোন মানুষের কথা হতে পারে না, এটা শুধুমাত্র আল্লাহ্র কথাই হতে পারে এবং তুমি (Intellectually convinced) বুদ্ধিবৃত্তিকভাবেই সন্তুষ্ট হতে এবং তোমার বুদ্ধি থেকেই এই সত্যে পৌঁছুতে পারতে।
কুরআনের একটি চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে আল্লাহ্ আ’জ্জা ওয়াজ্বাল কখনো উল্লেখ করেছেন হৃদয়ের(অনুভব করার) কথা আবার কখনো উল্লেখ করেছেন মনের (চিন্তা করার) কথা। কখনো আল্লাহ্ বলেছেন “আল ক্বা-ল্ব”(হৃদয়, অন্তর) আবার কখনো বলেছেন “আল আ’ক্বাল”(বিবেক, বুদ্ধি, চিন্তা)। আর মজার ব্যাপার হছে এই দুটো শব্দের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম প্রয়োগ হয়েছে কুরআনে।
শুধু কিছু উদাহরণ, যদিও আক্ষরিক অর্থেই এর ডজনের পর ডজন উদাহরণ আছে কুরআনে, আমি এখানে কিছু বিষয় তুলে ধরতে চাই ইন শা আল্লাহু তায়ালা, যাতে এই আলোচনার ধারাবাহিকতা ও যৌক্তিকতা বজায় থাকে। আল্লাহ্ আ’জ্জা ওয়াজ্বাল সুরা বাক্বারায় বনী ইসরাঈলদের নিয়ে বলছেন, আপনারা সবাই জানেন বনী ইসরাঈলদের নিয়ে খুব বিস্তারিত ভাবে বলা হয়েছে, (আর গল্পটা হচ্ছে এক ধনী চাচার সম্পদ আত্মসাত করার জন্য তাকে হত্যা করা হয়, হত্যাকারীকে খঁুজে বের করার জন্য ইসরাঈলীরা মূসা আঃ এর নিকট দাবী জানায়। তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে একটি গরু জবাই করে ঐ গরুর কোন একটি অংশ দিয়ে লাশকে আঘাত করতে বলেন। এটা করা হলে আল্লাহর হুকুমে মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়ে হত্যাকারীকে শনাক্ত করে)
তো একটা গরু জবাই করা হয়েছিলো যাতে খুনি ব্যক্তিকে বের করা যায়। فَقُلْنَا اضْرِبُوهُ بِبَعْضِهَا ۚ كَذَٰلِكَ يُحْيِي اللَّهُ الْمَوْتَىٰ وَيُرِيكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
”অতঃপর আমি বললামঃ গরুর একটি খন্ড দ্বারা মৃতকে আঘাত কর। এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শণ সমূহ প্রদর্শন করেন-যাতে তোমরা চিন্তা কর।” (আল-বাকারা ৭৩)
ইস্রায়িলিদের বলা হয়েছিলো যাতে তারা এক টুকরো গোস্ত নিয়ে মৃত ব্যক্তির লাশের প্রতি ছুড়ে মারে, তখন মৃত জীবিত হয়ে উঠবে এবং হত্যাকারীর দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করবে, كَذَٰلِكَ يُحْيِي اللَّهُ الْمَوْتَىٰ এভাবেই আল্লাহ্ মৃতকে জীবন দান করেন, এভাবেই এই কাহিনীটা বর্ণনা করা হয়েছে। এবং এরপর আল্লাহ্ ইসরাঈলীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, উনি তোমাদের এই সকল অলৌকিক দৃষ্টান্তগুলো দেখান যাতে তোমরা চিন্তা কর, যাতে তোমরা চিন্তা করতে পারো, তোমরা তোমাদের ‘আ-ক্বাল’ প্রয়োগ করতে পারো। এবং এর ঠিক পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন, ثُمَّ قَسَتْ قُلُوبُكُم مِّن بَعْدِ ذَٰلِكَ ’’তোমাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গিয়েছে।‘’ প্রথমে আল্লাহ বললেন, তুমি চিন্তা করতে অস্বীকৃতি জানালে, আমি আয়াত দিয়েছি যাতে তোমরা চিন্তা করতে পারো, যেহেতু তোমরা চিন্তা কর না তোমাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গিয়েছে। আল্লাহ্ এটা বলেননি যে তোমাদের ‘ ‘চিন্তা করার ক্ষমতা’ ‘ কঠিন হয়ে গিয়েছে, উনি বলেছেন তোমাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গিয়েছে। সুবহান আল্লাহ!
আগের সমস্যা ছিলো, কেন তোমরা চিন্তা কর না? তারপর যে সমস্যা প্রকট হয় তা আধ্যাত্মিক।
একই ভাবে আপনি দেখবেন সুরা হাদীদ-এ আছে, আল্লাহ্ আজ্জা ওয়াজ্বাল বলছেন হৃদয় নিয়ে, তাদের অন্তর কঠিন হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ লোকই দুর্নীতিপরায়ণ। উনি বলছেন, আহলে কিতাবদের কথা।
فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ ۖ وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ
(৫৭: ১৬)
”তাদের উপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, অতঃপর তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী।” তাদের উপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, তাদের ধর্ম ছিল পরিশুদ্ধ, সুন্দর এরপর এতে এসে গেলো দুর্নীতি, অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়ে শুধু থাকলো কিছু অসাড় আনুষ্ঠানিকতা, তাই তাদের হৃদয় কঠিন হয়ে পড়লো, বেশিরভাগই দুর্নীতিগ্রস্ত। আল্লাহ্র ওহীতে আসলে কী বলা হয়েছে সেটা জানার ব্যাপারে তাদের আর আগ্রহ রইলো না।
একদম এর পরের আয়াতেই আল্লাহ্ বলেছেন, اعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يُحْيِي الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا ۚ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
‘’জেনে রাখো আল্লাহ্ মৃত জমিনে আবার প্রাণের সঞ্চার করেন ।আমরা সুস্পষ্টভাবে আয়াতগুলো বর্ণনা করি যাতে তোমরা চিন্তা করতে পারো।‘’ আগের আয়াতটি ছিলো, হৃদয় কঠিন হয়ে গিয়েছে, একটি আধ্যাত্মিক সমস্যা এবং এরপর আয়াতটা শুনুন খেয়াল করে, যাতে তোমরা ভাবতে পারো।
অন্যভাবে বলতে গেলে, আমাদের আধ্যাত্মিক সমস্যা আমাদের বুদ্ধিমত্তার সমস্যা থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়। যখন আপনার মনন স্বচ্ছ হয়ে যায়, যখন আপনি দ্বীন নিয়ে পরিষ্কারভাবে ভাবতে পারেন, তখন তা আপনার হৃদয় পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে। যখন আপনার হৃদয় পরিষ্কার হবে তা আপনার চিন্তাশক্তিকে স্পষ্টতা দেবে। এদুটো একটা অন্যটার সাথে সম্পর্কিত। এইজন্য ঊলামা যারা আল্লাহ্ তায়ালার এই গভীর বাণীটির উপর মন্তব্য করেছেন। বাণীটি হল .وَيُزَكِّيهِمْ আল্লাহ মানুষকে পবিত্র করেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের নিকট কুরআন তিলাওয়াত করার মাধ্যমে তাদের পবিত্র করেন। তারা এটা বুঝেছেন যে এই তাযকিয়া তথা পবিত্র করার দুটি দিক রয়েছে- আল্লাহ মানুষের চিন্তা করার পদ্ধতি পবিত্র করবেন এবং আল্লাহ তাদের হৃদয় পবিত্র করবেন। তাদের অভিপ্রায় পবিত্র করবেন। তিনি তাদের অন্তরের যন্ত্রণা দূর করবেন। তিনি তাদের কুপ্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করবেন। তাদের কামনা-বাসনার লাগাম টেনে ধরবেন। এবং সেই সাথে তিনি তাদের শেখাবেন যে কিভাবে সঠিক নিয়মে চিন্তা করতে হয়।
আমি এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করছি একটি বিশেষ কারণে। যখন আমি ভ্রমণ করি এবং আলহামদুলিল্লাহ শুধু আমেরিকাতে নয় আমেরিকার বাইরেও – আমি একটি সমস্যা সব জায়গায় লক্ষ্য করছি আমরা মুসলিম হিসেবে শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেই। অন্ততঃপক্ষে আমরা বুঝতে পারছি আমাদের নিজেদেরকে এবং আমাদের সন্তানদেরকে ইসলাম সম্পর্কে জানতে হবে। কিন্তু যে সমস্যটা আমাদের হচ্ছে সেটা হলো, আমরা তথ্য সংগ্রহের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি এটার ওপর যে আমাদের সন্তানদের কিছু দোয়া জানতে হবে, কিছু সুরা জানতে হবে, তাদের আরবীতে কুরআন পাঠ করতে জানতে হবে, তাজবীদ খুব ভালো হতে হবে এবং এসবই গুরুত্বপূর্ণ, এর কোনটিই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখানে ‘ইলম’-এর ওপর, জ্ঞানের ওপর অনেক বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে এবং ঠিক একই সময় এই দুটো বিষয় একটুও গুরুত্ব পায়নি, একটি হলো কিভাবে অন্তর পরিষ্কার করতে হয় তথা আধ্যাত্মিক অবস্থা এবং দ্বিতীয়ত চিন্তার বিষয়ে, কিভাবে ভাবতে হয়।