আস সালাম আলাইকুম সবাইকে, এখানেএকটি শান্ত / গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে এসেছে গালফ সফর থেকে, আমি কোরআন পড়ি কিন্তু আমি আরবি বুঝি না , সুতরাং আমি কোরআন পড়ার সময় কোন কিছুই বুঝতে পারি না ।
এটি কি শুধুমাত্র ইংরেজিতে পড়া যায় না এবং এই সকল লোকজনরা বলেন যে তোমাকে কোরআন মনে রাখতে হবে, কোরআন মুখস্থ করলে আরও বেশী (সাওয়াব) পাওয়া যাবে, এবং এখানে এমন অনেকে বাবারা আছেন যারা কোরআন মুখস্থ করেছেন কিন্তু অর্থ বুঝেন নি ।
আমাদের কি মানুষকে কোরআন মুখস্ত করতে না বলে কোরআন পড়তে বলা উচিতনা? এবং আপনি জানেন কি আমি যখন এই প্রশ্নটি শুনি আমি কিছু উপলব্ধি করলাম, যে প্রতিটা কাজেরই একটি সমান ও বিপরীত মুখী প্রতিক্রিয়া আছে ।
আমাদের সমাজে কিছু চরমপন্থী লোক আছেন, আমাদের কিছু একমুখী লোক রয়েছেন যারা কোরআন মুখস্ত করার উপর গুরুত্ব দেন কিন্তু বুঝার উপর গুরুত্ব দেন না, এবং আপনি একজন বিজয়ী হয়ে যাবেন যখন আপনি কোরআন মুখস্ত করে ফেলবেন এবং আপনি তারাবী সালাত পড়াবেন এবং আপনি অনেক সুন্দর করে তেলাওয়াত করবেন এবং লোকজন বলবে যে আপনি কতো চমৎকার তাজউয়ীদ উল কোরআন, কিন্তু আপনার কোন ধারনাই নেই যে এখানে এই সকল আয়াতে কি বলা হয়েছে ।
এটা হয় এক প্রকার চরমপন্থা, এবং এই চরমপন্থা আরও অন্যান্য চরমপন্থার জন্ম দেবে, আপনি জানেন কি এই সকল লোক কোরআন তেলাওয়াত করছেন কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই এবং এরা শুধুমাত্র সুন্দর করে শব্দগুলো তেলাওয়াত করে যাচ্ছে , কিন্তু প্রকৃত বার্তা / সংবাদটি কি ? আমাদের উচিত মুখস্ত করার কথা ভুলে যাওয়া / বাদ দেয়া , আমাদের পড়া এবং বুঝার উপর ফোকাস করা / গুরুত্ব দেয়া উচিত , আপনি জানেন এটি কি, এটি হচ্ছে দুটি চরমপন্থা ।
এই সকল ক্ষেত্রে প্রকৃত সত্যটি এই ২ টি ঘটনার মাঝখানে বিরাজমান থাকে, এবং লোকজন অনেক প্রশ্ন করার পরে আমি আরো অনেক অনেক বেশী বুঝতে পারলাম যে এখানে আসলে একটা ক্রিয়া / প্রতিক্রিয়া কাজ করছে দুই চরমপন্থী গ্রুপের মাঝে, যারা একদল আরেকদল কে জাস্টিফাই করে যাচ্ছেন কিন্তু এই দুইটি ব্যাপার এর মধ্যেও যে একটি সমাধান আছে সেটি নিয়ে চিন্তা করছেন না ।
দিন শেষে উত্তরটি হচ্ছে যে কোরআন মুখস্থ করা সবচাইতে বেশী আত্মিকভাবে সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী একটি কাজ যেটি আমরা করতে পারি, কোরআন মুখস্থ করাটা হচ্ছে প্রকৃত পক্ষে রাসুল (সঃ) এর উত্তরাধিকার / অনুসারী হওয়ার কাজটি সম্পন্ন করা ।
এটি সুরাতুল কাবুর এর অনেক সুন্দর একটি আয়াত, এটি বর্ণনা করছে যে এই কোরআন থাকবে মুমিন লোকের অন্তরের মধ্যে, এই আয়াতগুলো এক টুকরো পেপার এর মধ্যে থাকে , এই আয়াত মুসা (আঃ) এর মধ্যেও রয়েছে , পৃথিবীর যেই সকল জায়গায় এই আয়াতগুলো সংরক্ষিত থাকবে তা হচ্ছে ইমানদারদের অন্তর, এটি একটি চমৎকার বিষয় ।
সুতরাং আমি চাই আমার অন্তরের মধ্যে আরো বেশী বেশী করে কোরআন মুখস্থ করে রাখতে, আমি ততো বেশী মুখস্থ করতে চাই যতটুকু আমার পক্ষে সম্ভব, আপনি জানেন কি এটি এমন একটি বিষয় যেটি নিয়ে আপনি নিজের সাথে চেষ্টা করা উচিত, আপনি কেনো কোরআন মুখস্থ করতে চান না যেখানে আপনার বাবা মা শেষ বিচারের দিন তাদের মাথায় মুকুট নিয়ে সবার মধ্যে উঠবেন আপনার কোরআন মুখস্থ / আত্মস্থ করার কারণে।
এক দিক থেকে বলতে গেলে আমাদের অবশ্যই কোরআন মুখস্থ করা উচিত,অন্যদিকে কোরআন নিজেই অভিযোগ করবে যেআমরা কোরআন ভালো মতন পড়ি নি যাতে এর প্রতিফলন ঘটে অন্যথায় তাদের অন্তর কঠিন হয়ে / আবদ্ধ হয়ে গেছে । সুতরাং কোরআন বুঝা এবং কোরআন মুখস্থ করা একটি অপরটির পরিপূরক,আমি আরও একটি বিষয় যোগ করতে চাচ্ছি যে এটি হচ্ছে আমাদের ধর্মের একটি ভারসাম্য,এটি হচ্ছে এমন একটি বিষয় যেখানে সব কিছু মহাকাব্য এর মতন ।
এই দুইটি বিষয় পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয়,যখন আমি কোরআন মুখস্থ করছি তখন আমি একি আয়াত বার বার করে পড়ছি, আমি একটি আয়াতই পড়ছি, আমি এই আয়াতটি যত বেশী পড়বো আমি এটি নিয়ে ততো বেশী চিন্তা ভাবনা করবো, আমি এই আয়াতটি নিয়ে যত বেশী চিন্তা করবো এটি আমার ব্রেইন এ ততো বেশী কাজ করবে, প্রতিফলন পরিপূর্ণতা পাবে সক্রিয় ভাবে আত্মস্থ করার মাধ্যমে, এটি সমর্থন করছে অপরটিকে ।
যখন আপনি তাজউয়ীদের সাথে কোরআন পড়বেন, তাজউয়ীদের প্রতিটি শব্দকে সঠিক ভাবে সময় দিবেন এবং আপনি বিরতি দেবেন এবং আপনি আপনার সময় নেবেন প্রতিটা শব্দের জন্য, এটি নির্দেশ করছে যে এটি আপনাকে ধীর স্থির / গতি কমিয়ে দেবে, তাজউয়ীদ কি আপনার গতি কমিয়ে দেবে না , আপনার মন তখন একটি শব্দকে শুধুমাত্র উচ্চারণই করছে যেই রকম করা উচিত, এটি আপনার প্রতিটি শব্দকে নিয়ে চিন্তা করার সেই সুযোগটি নষ্ট করে দিচ্ছে এবং আমি পুরো বিষয়টির উপর দিয়ে ব্রাশ করে গেলাম এবং প্রতিটি শব্দকে সেই সুযোগটি দিলাম না যে প্রতিটি শব্দেরই আমার উপর আলাদা একটা প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে তাজউয়ীদ এর অর্থ হচ্ছে এটি আপনার মধ্যে কোরআন নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ করে দিবে এবং এর প্রতিফলন ঘটাবে, এটি হয় এই জন্য যে এই বিষয়গুলো এক অপরের সাথে জড়িত, আমরা এটি করি যে আমরা এই দুটিকে আলাদা করে ফেলি যে আমি শুধু ইংরেজি অনুবাদ পড়বো অথবা আমি শুধু তাজউয়ীদ পড়বো আমার বুঝার / প্রতিফলনের প্রয়োজন নেই, সুবহান আল্লাহ এটি এমন একটি বিষয় যেটি আল্লাহপাক একসাথে করে রাখতে আদেশ করেছেন, এবং আমরা এই দুটি বিষয়কে আলাদা করে রাখছি। সুতরাং দিন শেষে যেই উত্তরটি এসেছে সেটি হচ্ছে এই দুটি বিষয়ের মধ্যে “ভারসাম্য”।
যখন আপনার পাশে / সাথে কেউ চরমপন্থী হবে তখন এটি স্বাভাবিক ভাবেই আরেক জন কে চরমপন্থীতে পরিণত করবে, আল্লাহ আজ ওয়াজাল আমাদেরকে এই চরমপন্থা থেকে দূরে রাখুন এবং আমাদেরকে সত্যিকার মধ্যমপন্থী উম্মত হবার তৌফিক দিন। #NAKBangla