প্রসঙ্গতঃ স্বপ্নদোষ বা অশ্লীল স্বপ্ন এগুলোও শয়তানের পক্ষ থেকে। এ ধরণের স্বপ্ন দেখাতে একজন পুরুষ বা নারীর কোন দোষ নেই। যাইহোক, আপনারা সবাই এ বিষয়ে ফিকহ জানেন; এ রকম স্বপ্ন দেখলে এবং এটা হলে আপনাকে গোসল করতে হবে। এ স্বপ্ন শয়তানের নিকট থেকে, যদিও এতে আপনার কোন দোষ নেই কারণ আপনি আপনার স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ করেন না। এ কারণে নবীদের কখনো স্বপ্নদোষ হতো না। কোন নবীদের এটা হতো না। কারণ এ স্বপ্ন, এ রকম চরম নির্লজ্জতা শয়তানের নিকট থেকে। এটা প্রাকৃতিক, এতে আমাদের কোন অপরাধ বোধ করার প্রয়োজন নেই। একজন মানুষের জন্য এ পর্যায় অতিক্রম করা স্বাভাবিক। এর জন্য নিজের প্রতি কোন ঘৃণা অনুভব করার প্রয়োজন নেই। আমাদের উপলব্দি করা দরকার যে, শয়তানই এ রকম অশ্লীল দৃশ্য আমাদের দেখায় আর ভয়ংকর শীতের রাতে আমাদের গোসল করতে হয়। এটা আমাদের কাছ থেকে নয় বা আল্লাহর নিকট থেকেও নয়। এটা আসে শয়তানের কাছ থেকে। সুতরাং এটা আরেক রকম ‘হুলম’ বা অশুভ স্বপ্ন।
এ ক্ষেত্রেও আমরা মানুষদের এসব বলে বেড়াই না। আমরা কাউকে বলি না, কিন্তু স্পষ্টতঃ যদি আমরা এরূপ অবস্থায় জেগে উঠি আমাদের গোসল করতে হবে। তো, এটা হল দ্বিতীয় প্রকারের স্বপ্ন। প্রথম প্রকার কি ছিল? ‘হাদিসুন নাফস’। দ্বিতীয় প্রকারঃ শয়তানের পক্ষ থেকে দুঃস্বপ্ন।
তারপর আছে তৃতীয় প্রকার। তৃতীয় প্রকার হল- মুবাশশিরাত। এটাকে আরবিতে আরও বলা হয়- রু’ইয়া। রু’ইয়া হল আল্লাহর পক্ষ থেকে দেখানো স্বপ্ন। এটা একটা ইতিবাচক স্বপ্ন। আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন স্বপ্ন দেখলে আপনি ভীত হয়ে জেগে উঠবেন না। আপনি আতঙ্কিত হবেন না। যদি এমন হত তাহলে তো আর একে মুবাশশির (সুসংবাদ) বলা হত না। মুবাশশির শব্দটি বাশির, বাশারা থেকে আগত। মুবাশশির অর্থ কি? সুসংবাদ, ভাল সংবাদ, আশাব্যঞ্জক কিছু অথবা যদি এটা ইতিবাচক নাও হয় তবু এটা হবে প্রকৃত সত্য কোন স্বপ্ন, ভয়ংকর কিছু নয়।
এখন এ ধরণের স্বপ্নের লক্ষণ কি? আপনি স্বপ্নে কি দেখেছেন তা স্পষ্টভাবে মনে রেখে জেগে উঠবেন। তাহলে এটা হাদিসুন নাফস নয়। আপনি আতঙ্কিত অবস্থায় জেগে উঠবেন না। যদি এ দুইটি শর্ত পূরণ করা হয় তাহলে সম্ভবত এটা একটা ‘মুবাশশির’। কখনো কখনো আপনি ইতিবাচক কিছু দেখে জেগে উঠেন আবার কখনো কখনো আপনি স্বাভাবিক পক্ষপাতহীন অবস্থায় জেগে উঠেন। আপনি ভীত নন আবার খুশিও নন। আপনি হয়তো কিছুটা দ্বিধান্বিত? কি দেখলাম আমি? কিন্তু এ ধরণের স্বপ্নে আপনি কখনো ভীত অবস্থায় জেগে উঠবেন না। যদি আপনি ভীত অবস্থায় জেগে উঠেন তাহলে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়। এটা কার কাছ থেকে? শয়তানের কাছ থেকে।
আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত স্বপ্ন দুই রকমের হতে পারে। প্রথম প্রকার- যেটা কম দেখা যায়- আপনি সরাসরি কোন ঘটনা দেখেন যেখানে আপনি নিজে রয়েছেন কোন ধরণের সাংকেতিক চিহ্ন ব্যতীত। আপনি এমন কোন ঘটনা দেখেন যা ভবিষ্যতে ঘটবে। আর এতে কোন সাংকেতিক চিহ্ন নেই, সরাসরি কোন ঘটনা; সরাসরি ভবিষ্যতের কোন ঘটনার বাস্তবায়ন। ঠিক এটাই ঘটবে। যেমন – রাসূল (স) স্বপ্নে দেখেন যে তিনি কাবা ঘরের চার পাশে তাওয়াফ করছেন। কোন বছর তিনি এটা দেখেন? হিজরতের ষষ্ঠ বছর। তিনি স্বপ্নে দেখেন যে তিনি কাবা তাওয়াফ করছেন। এ স্বপ্নে কোন সাংকেতিক চিহ্ন ছিল না। যখন তিনি এটা দেখেন তিনি বুঝতে পারেন যে এটা কোন সাংকেতিক স্বপ্ন নয়। তাই তিনি বলেন – ও মুসলিম! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে আমি কাবার চারপাশে তাওয়াফ করছি, চল ওমরা করতে চল। সে বছর কি ঘটেছিল? কুরাইশরা তাঁকে বাধা দিল, ফলে হুদায়বিয়ার সন্ধি হয়। আশা করি আমরা এক বা দুই বছর পর এ বিষয়ে কথা বলব, ইনশাআল্লাহ। যদি প্রতি বুধবারে এভাবে আল্লাহ আমাদের আসার তৌফিক দান করেন। অনেক দীর্ঘ সময় পর হতে পারে তিন বা চার বছর পর। ইনশাআল্লাহ আমরা কোন এক সময় এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো কিভাবে রাসূল (স) কে মক্কা যেতে বাধা দেয়া হয়।
তিনি সরাসরি একটি স্বপ্ন দেখেন যাতে কোন সাংকেতিক চিহ্ন ছিল না। আমি নিজেকে তাওয়াফ করতে এবং মাথা মুণ্ডন করতে দেখেছি। এটা অবশ্যই ঘটবে। আল্লাহ কুরআনে বলেন- যে স্বপ্ন আপনি দেখেছেন এটা একটা সত্য স্বপ্ন। আপনি অবশ্যই মসজিদে হারামে প্রবেশ করবেন। এটা ঘটবে। এই বছর না, পরের বছর। তাহলে এটা ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত দুই ধরণের স্বপ্নের প্রথম প্রকার। আপনি সত্যিকারের ঘটনার বাস্তবায়ন দেখবেন। এ ধরণের স্বপ্ন খুবই অপ্রতুল। কিন্তু এটা ঘটে। এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নবীদের বেলায় ঘটে।
যেমন ইব্রাহীম (আ) দেখেন, কি দেখেন তিনি? ‘ইন্নি আরা ফিল মানামে আন্নি আজবাহুক’ আমি স্বপ্নে দেখেছি যে আমি তোমাকে জবেহ করছি। এখানেও কোন সাংকেতিক চিহ্ন ছিল না। এটা স্পষ্ট, পরিষ্কার এক স্বপ্ন। এ ধরণের স্বপ্ন নবীদের মাঝে বেশি দেখা যায়। এ ধরণের স্বপ্ন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আমাদের রাসূল (স) বর্ণনা করেন; আয়েশা (রা) আমাদের বলেন- কুরআন নাযিলের ছয় মাস পূর্ব থেকে রাসূল (স) প্রতি রাতে এ ধরণের স্বপ্নের কোনটা দেখতেন। ছয় মাস ক্রমাগত। রাসূল (স) ঘুমাতে গেলেই দেখতেন যে আগামী কাল কি ঘটবে। তিনি হয়তো স্বপ্নে দেখেন যে তিনি বাজার থেকে কিছু ক্রয় বিক্রয় করছেন। পরের দিন ঠিক তাই ঘটে। তিনি স্বপ্নে দেখেন যে তিনি কোন এক লোকের সাথে দেখা করছেন। পরের দিন ঠিক সেই লোক এসে তাঁর সাথে সাক্ষাত করে। একেবারে ঠিক বার ঘণ্টার মাঝে, তিনি যা দেখেন পরের দিন ঠিক তাই ঘটে। ছয় মাস ক্রমাগত, কেন? আল্লাহ তাঁকে বলছেন যে বিশেষ কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে ওহি নাযিলের জন্য প্রস্তুত করছেন। ছয় মাস যাবত এরূপ ঘটার পর ‘ইকরা’ অবতীর্ণ হয়। তাহলে এটা হল এ ধরণের স্বপ্নের একটা উদাহরণ।
আমরা বলেছি, আল্লাহর পক্ষ থেকে দুই ধরণের স্বপ্ন দেখানো হতে পারে। প্রথম প্রকার- কোন ধরণের সাংকেতিক চিহ্ন ছাড়া। আর দ্বিতীয় প্রকার হল- সাংকেতিক চিহ্নসহ স্বপ্ন। এ ধরণের স্বপ্ন বেশি কমন, এটা বেশি দেখা যায়। কোন কোন সময় নবীরা দেখেন। কিন্তু অধিকাংশ সময় এমনকি সাধারণ মানুষও এ ধরণের স্বপ্ন দেখেন। এ ধরণের স্বপ্নে আপনি যা দেখেন তা দ্বারা অন্য কিছু বুঝায়। যেমন – ইউসুফ (আ) এর স্বপ্নে শস্যের একটি পাতা এক বছরের পানি নির্দেশ করে। খুব মোটা গাভী নির্দেশ করে বাম্পার ফলন বা অতিরিক্ত ফলন। আর চিকন গাভী নির্দেশ করে কম ফলন। কেন? গাছ নির্দেশ করে এটা, বাছুর নির্দেশ করে ওটা, আলো অন্য কিছু নির্দেশ করে।
এক হাদিসে রাসূল (স) বলেন আমি পুরুষদের বিভিন্ন সাইজের পোশাক পরিধান করে থাকতে দেখেছি। কারো পোশাক গলা পর্যন্ত, কারো পেট পর্যন্ত আর আমি উমার ইবনে খাত্তাবকে দেখেছি তার পোশাক (এত বড় যে তা) শরীর ছাড়িয়ে পেছনে ঝুলছে। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন- কিভাবে আপনি এটা ব্যাখ্যা করবেন? তিনি বলেন- এর মানে হল ধর্ম।
ধর্মের প্রতি মানুষের আনুগত্য বিভিন্ন সাইজের। কারো ছোট, কারো বড়। ধর্মের প্রতি উমর (রা) এর আনুগত্য এত শক্তিশালী যে তা তাঁর শরীর ছাড়িয়ে পেছনে ছড়িয়ে গেছে। সুতরাং এই স্বপ্নে পোশাক মানে ধর্ম। প্রসঙ্গত এর মানে এই নয় যে, সকল স্বপ্নে পোশাক মানে ধর্ম। কিন্ত এই স্বপ্নে এর মানে পোশাক। সুতরাং এই ধরণের স্বপ্ন হল সাংকেতিক স্বপ্ন। আমরা ইউসুফ (আঃ) এর ঘটনায় এটা দেখেছি। কারণ তিনি এগারটি তারা দেখেন এবং চাঁদ ও সূর্যকে দেখেন। এটা সাংকেতিক। যা কিছু আপনি দেখেন- প্রতিটা রঙ, প্রতিটা প্রাণী, প্রতিটা ছবি, প্রতিটা গাছ, প্রতিটা বস্তু যা আপনি স্মরণে রাখেন এর দ্বারা অন্য কিছু বুঝায়। এই ধরণের সাংকেতিক স্বপ্ন সবাই ব্যাখ্যা করতে পারে না।