আল্লাহ সুব হা নাহু ওয়া তায়ালার সবচেয়ে গৌরবজনক নাম হলো আল্লাহ। এটাই আল্লাহ সুব হা নাহু ওয়া তায়ালার প্রধান নাম। আর আল্লাহ নামটি এসেছে আল-ইলাহ থেকে অর্থাৎ যার উপাসনা করা হয়, যার ইবাদাত করা হয়। এজন্য সমগ্র কুরআন জুড়ে আল্লাহ নামটির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। আপনাকে আমাকে এই কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য যে, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, যিনি আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন, যাকে আমরা বিপদের সময় ডাকি – একমাত্র তিনিই আমাদের উপাসনা পাওয়ার যোগ্য। আমাদের এই মালিক, যাকে আমরা আল্লাহ নাকে ডাকি, তিনি সকল সুন্দরতম নাম এবং উপাধির অধিকারী। আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা হলেন – আল ওয়াদুদ- ভালবাসাপূর্ণ, স্নেহময় এবং প্রিয়তম।
এই পৃথিবীতে আপনার জন্য যত ভালবাসাই থাকুক না কেন – সেটা হতে পারে আপনার বন্ধুদের নিকট থেকে, আপনার স্ত্রীর কাছ থেকে, আপনার মাতা পিতার কাছ থেকে, এই দুনিয়ার অন্য সবার কাছ থেকেই হউক – আপনার অন্তর সবসময় অপূর্ণ থেকে যাবে। আর এই অপূর্ণতা একমাত্র আল্লাহর ভালবাসার মাধ্যমেই পূর্ণ হতে পারে। এ বিষয়টি ইবনে কাইয়েম (র) এভাবে বর্ণনা করেছেন- ”প্রকৃতপক্ষে অন্তরের শূন্যতা একমাত্র আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালার ভালবাসার মাধ্যমেই পূর্ণ হতে পারে।”
এই ব্যাপারটি আমাদের অনেকেই উপলব্ধি করতে সমর্থ হয় না। মানব জাতির অনেকেই এটা উপলব্ধি করে না। তাই তারা অন্তরের এই শূন্যতা দুনিয়াবী লালসা দ্বারা পূর্ণ করতে চায়। হতে পারে সম্পদের মাধ্যমে, নারীর মাধ্যমে বা অন্য যে কোন মাধ্যমে- তারা প্রবৃত্তির লালসা দ্বারা এটা পূর্ণ করতে চায়। কিন্তু এতোসব কিছু দ্বারা চেষ্টা করা সত্ত্বেও এই শূন্যতা তারা আরও তীব্রভাবে অনুভব করে। তারা হয়তো এই শূন্যতা মদ্যপানের মাধ্যমে পূরণ করতে চায় বা যে কোন নেশাজাতিয় দ্রব্যের মাধ্যমে- কিন্তু এর পরিণতি কি? আবার সেই শূন্যতা। তারা দুনিয়াবি সব কিছু দ্বারা অন্তরের এই ফাঁকা জায়গাটা পূর্ণ করতে চায় কিন্তু এটা এভাবে পূর্ণ হওয়ার নয়। কারণ আপনার অন্তরের ঐ অংশটা তৈরি করা হয়েছে শুধুই আল্লাহর ভালবাসার জন্য।
ইবনে কাইয়েম (র) একটি চমৎকার উদাহরণ দিয়েছেন। ” একজন বিশ্বাসীর অন্তরে আল্লাহর ভালবাসা একটি বৃক্ষের উপমার মত। এর শিকড় হল – আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালার ভয়, এর কাণ্ড হল – আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালার জন্য বিনম্রতা, এর পাতাগুলো হল- আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা থেকে লজ্জা পাওয়া, আর এর ফল হল- আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালার আনুগত্য করা।”।
সুতরাং দেখুন, আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালার সাথে আমাদের সম্পর্কটা আসলে ভালবাসা কেন্দ্রিক। তাইতো ইবনে কাইয়েম (র) আরেকটি বিখ্যাত উদাহরণ দিয়েছেন- ”আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালার উদ্দেশ্যে আমাদের যাত্রাটা একটি পাখির উপমার মত। যার মস্তক হল ভালবাসা, আর দুই ডানা হল ভয় এবং আশা।” মস্তক বিহীন একটি পাখি কেমন? মস্তক ছাড়া এটি বাঁচতে পারবে না বা উড়তে পারবে না। ঠিক তেমনি আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি আমাদের এই যাত্রা যদি ভালবাসা দিয়ে শুরু না হয় তাহলে এটি কোন অগ্রগতি লাভে সক্ষম হবে না। তাই আমি শুরু করেছি ”আল ওয়াদুদ” দিয়ে আমাদের এ কথা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য যে আল্লাহ আমাদের ভালবাসেন। এবং তিনি চান যে আমরাও যেন তাঁকে ভালবাসি।
আর এটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অন্যতম একটি অনুপম নাম যেখানে তিনি শুধু সাবজেক্ট নন, তিনি অবজেক্টও বটে। যেমন, যখন আমরা আর রাহমানের কথা বলি তখন এর দ্বারা বুঝায় তিনি আমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করেন। কিন্তু এটা দ্বারা তাঁর প্রতি দয়া প্রদর্শন করা বুঝায় না। আমরা যখন বলি, আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা হলেন আল গাফফার, আল গাফুর। তখন এর অর্থ হল তিনি ক্ষমা করেন। এর দ্বারা তাঁকে ক্ষমা করা হয় বুঝায় না। কিন্তু যখন আল ওয়াদুদ এর কথা আসে তখন এর অর্থ হল – তিনি শুধু আমাদের ভালবাসেন তাই নয় বরং তাঁকেও ভালবাসা হয়।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পবিত্র কুরআনে আমাদের বলেছেন – পৃথিবীতে এমন কোন বৃক্ষ নেই যা আল্লাহর মহিমা কীর্তন করে না। এমন কোন পাখি নেই যা আল্লাহর গুণগান করে না, আল্লাহর প্রত্যেকটা সৃষ্টিই আল্লাহর মহিমা কীর্তন করে। কিন্তু আমরা তাদের এই গুণগান বুঝতে পারি না।
রাসূল (স) এর এই হাদিসটি শুনুন। তিনি (স) বলেন- আকাশ চড়চড় শব্দ করে। আর এ শব্দ করার তার অধিকার রয়েছে। কারণ আকাশে চার আঙ্গুলের এমন কোন দূরত্ব ফাঁকা নেই যেখানে কোন ফেরেশতা আল্লাহর উদ্দেশ্যে রুকু, সেজদা এবং কিয়াম করছে না। আর কিয়ামাত পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকবে। এরকম ভালবাসা আল্লাহ তাঁর জন্য তৈরি করেছেন!! এখন প্রশ্ন হল – আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য আমাদের ভালবাসা কোথায়?