আজকের খুতবার আলোচ্য বিষয় সূরা নুরের দুটি আয়াত থেকে একটু কম। এই আয়াতগুলোতে এমন এক মূলনীতি আলোচনা করা হয়েছে যার দ্বারা আমরা শুধু বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটিকে বুঝবো না, বরং সমাজে কিভাবে মানুষকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা যায় তাও বুঝবো। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল এর চেয়ে কেউ বেশি অলংকারপূর্ণ ভাষায় কথা বলে না। অল্প কিছু শব্দের মাধ্যমে তিনি এ বিষয়টা চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন যে কিভাবে মুসলিম কমিউনিটি এবং মুসলিম পরিবারগুলো তাদের ছেলে মেয়েদের বিয়ে দেয়ার বিষয়টি চিন্তা করবে। বস্তুতঃ এটা শুধু আপনার ছেলে বা মেয়ের বিয়ে দেয়ার ব্যাপার নয়। যখন এই আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয় তখন বহু মানুষ মাত্র ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। সুতরাং অনেকের কোন মুসলিম পরিবার ছিল না। এমন অনেক মহিলা ছিলেন যাদের পিতামাতা মুসলিম ছিল না, তারা তাকে সমর্থন দিচ্ছিলেন না। তাঁরা এখন সাহাবিয়াত এবং তাঁরা অবিবাহিত। অথবা যাদের বিবাহ ভেঙ্গে গেছে, অধিকন্তু সন্তান সন্ততি আছে, ইত্যাদি।
সাধারণ পরিবারগুলোতে আপনার ছেলে বা মেয়ে থাকে, তারা বড় হয় অতঃপর বিয়ের বয়সে পৌঁছায় আর আপনি তাদের বিয়ে দেয়ার কথা ভাবেন। কিন্তু বৃহত্তর পরিসরে আমাদের পরিবার হল গোটা উম্মাহ। রাসূল (সঃ) সমগ্র উম্মাহকে একটি শরীরের সাথে তুলনা করেছেন। আর আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা একে ‘ইখওয়া’ বা প্রায় রক্ত সম্পর্কীয় ভ্রাতৃত্ব বলে অভিহিত করেছেন। আমরা একে অপরের ভাই। তার মানে আমরা সবাই মিলে বড় একটি পরিবারের মত। সুতরাং আমাদের সমাজে যখন পুরুষ মহিলারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না সেটা আমাদেরই সমস্যা। যার দায়ভার সম্মিলিতভাবে আমাদের সকলের কাঁধে অর্পিত হয়।
তো, আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা বলেন – وَأَنكِحُوا الْأَيَامَىٰ مِنكُمْ তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও।
এভাবেই বক্তব্যের শুরু। আরবিতে ‘আইম’ শব্দটি নারী পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। বেশিরভাগ সময় এটা নারীদের জন্য ব্যবহৃত হত আর কম সময় পুরুষদের জন্য ব্যবহৃত হত। আরবদের এই শব্দ ব্যবহার করা থেকে বুঝা যায় এটি পুরুষদের বেলায় এমন কারো জন্য ব্যবহৃত হত যে সহজে বউ পাচ্ছে না। অথবা এমন পুরুষ যে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে, তা যে কোন কারণেই হউক। তাদেরকে বিয়ে করতে উৎসাহ যোগাতে এটা ব্যবহার হত।
পক্ষান্তরে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটা নারীদের বেলায় ব্যবহৃত হত। এমন নারী যারা তালাকপ্রাপ্তা, এমন নারী যাদের এখনো বিয়ে হয়নি, এমন নারী যারা অন্য পরিবার থেকে এসেছেন আর এখন তারা মুসলিম ইত্যাদি, ইত্যাদি নারীদের নিয়েই এখানে কথা বলা হয়েছে। এখানে মজার যে বিষয়টার প্রতি আমি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই তা হল – আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা এখানে সর্ব প্রথম তালাকপ্রাপ্তা নারীদের কথা উল্লেখ করেছেন। তালাকপ্রাপ্তা নারীদের প্রতি সর্ব প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। উম্মুল মু’মিনিন তথা রাসূল (স) এর স্ত্রীদের মাঝে অধিকাংশ ছিলেন তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবা। রাসূল (স) এর সুন্নাহ হল তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবাদের বিয়ে করা। এটাই আসলে আমাদের রাসূল (স) এর একটি সুন্নাহ ছিল।
এই সুন্নাহটিকে এখন সম্পূর্ণ বিপরীত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা নয়। কেউ যখন কোন তালাকপ্রাপ্তা কাউকে বিয়ে করার কথা বলে বা বিধবা কাউকে বিয়ে করার কথা বলে – তখন তাকে বলা হয় তুমি কি পাগল হয়েছ? আর এটা আমাদের প্রিয় রাসূল (স) এর দেখানো সুন্নাহর সম্পূর্ণ বিপরীত আচরণ। প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ যে আয়াতে রাসূল (স) কে বর্তমান স্ত্রীদের স্থলে (সুরা তাহরিম দ্রষ্টব্য) নতুন স্ত্রী দেয়ার সম্ভাবনার কথা বলেন, সেখানে তিনি প্রথমে বলেছেন সাইয়েবাত তারপর বলেছেন আবকারা। আমি তাকে অন্য নারী বিয়ে করাব, এখানে তিনি সাইয়েবাত বা অকুমারী নারীদের (তালাকপ্রাপ্তা, বিধবাদের) কথা প্রথমে বলেছেন, তারপর বলেছেন আবকারা বা কুমারীদের কথা যাদের আগে কখনো বিয়ে হয়নি।
কুরআনের এই পর্যায়াক্রমকে অনেক মুফাসসির বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছেন। তারা বলেন এখানে আল্লাহ যাদের আগেও একবার বিয়ে হয়েছিল তাদেরকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কারণ সমাজে এদের কথা মানুষ সহজেই ভুলে যায়, পেছনে ফেলে রাখে। কিন্তু আমাদের উম্মায় আমরা কাউকে পেছনে ফেলে রাখি না।