অর্ধাঙ্গিনী নাকি কষ্টাঙ্গিনী?

একটি সুন্দর সমাজের জন্যে আরেকটি মৌলিক, প্রধান উপাদান হচ্ছে-আমাদের পরিবারে শৃঙ্খলা। আমরা দাওয়াহ এর কথা বলতে পারি না, সামঞ্জস্যপূর্ণ ইসলামিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলতে পারি না যতক্ষণ না আমাদের পরিবারে সামঞ্জস্যতা তৈরি করতে পারি! কিন্তু আমাদের পরিবার হচ্ছে চরম বিশৃঙ্খলার জায়গা। কীভাবে আমরা উচ্চতর দাওয়াহ এর আদর্শের এর কথা বলতে পারি? যেখানে আমাদের পরিবারে অশান্তি, স্বামী-স্ত্রী সারাদিন বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে থাকে আমাদের পরিবার এর ভেতর চলে তিক্ত মন্তব্য। একে অপরের প্রতি জঘন্য টিপ্পনি…
স্বামীঃ “তুমি দেখতে একদম সুন্দর না।”
স্ত্রীঃ “ও! তুমিও তো ইউসুফ (আঃ) এর মতো না! তোমাকে দেখে তো আর আমি হাত কাটছি না !”

অপ্রয়োজনীয় রঙ্গ! একে অপরের সাথে অপ্রয়োজনীয়, তিক্ত মন্তব্য চালিয়ে যাওয়া। আর অনেক সময় আপনি জানেন আপনার স্ত্রী কীসে বিরক্ত হয়, আর আপনি ঠিক সেটাই করেন। আবার অনেক সময় স্ত্রীরাও ওই জিনিসটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানেন যেটা ওনার স্বামীর চামড়ার নিচে গিয়ে সুচের মত গিয়ে লাগবে। তারপরেও তারা সেটা বলবেন শুধু এইটুকু দেখার জন্যে যে কী ঘটে! ঠিক? আর এই সব কিছু কে দেখছে? আপনারা যা কিছু করছেন এগুলো কে দেখছে? এই ধরনের কটূক্তির খেলা, আপনার পরিবারে যে যুদ্ধ চলছে এগুলো কে দেখছে? কে সত্যিকার অর্থে শিকার হচ্ছে এইসবের? পরিবারের শিশুরা। শিশুরা এই ধরনের ব্যবহার শিখছে। যখন তারা বড় হবে তখন তারা কেমন ধরনের পিতামাতা হবে? তারা শিখবে বিয়ের মধ্যে ক্ষমা করার কোন ব্যাপারই নেই!!!
আপনারা জানেন, মুসলিম পুরুষদের চাকরিক্ষেত্রে তাদের নারী সহকর্মীরা যখন অত্যন্ত অসঙ্গত পোশাক পড়ে হেসে জিজ্ঞেস করেন, “কেমন আছেন? আপনার দিন কেমন কাটছে?” তখন ঠিকই হেসে মাখা মাখা কণ্ঠে গদগদ হয়ে বলেন, “হ্যাঅঅ, ভালই। বেশ ভালই।” আপনি এখান থেকে ৫ মিনিট কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছেন আর বাড়িতে ফিরে আপনার স্ত্রী যখন আপনাকে জিজ্ঞেস করে, “কেমন কাটল তোমার সারাদিন?” আপনি বলেন, “আমি কথা বলতে পারব না! সারাদিন অফিসে অনেক পরিশ্রম হয়েছে।” আমরা আমাদের পরিবারের ভেতর এটাই করছি। আমাদের স্ত্রীদের সাথে সম্পর্কগুলো এভাবেই ধ্বংস করে দিচ্ছি।

ভাইদেরকে আমি একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই, শেষ কবে? আমি সেই অবস্থায় নেই যে আমি বোনদের পক্ষ থেকে কথা বলব কারণ আমি তাদের একজন নই। বোনদের কাছ থেকেই তাদের পরামর্শ নেয়া উচিত। কিন্তু এক মিনিটের জন্যে যদি আপনাদের সমস্যা নিয়ে একটু চিন্তা করেন নিজ থেকে তবে বলুন তো, শেষ কবে আপনি তাকে কোন উপহার দিয়েছেন? আপনি হয়তো তাকে নিয়ে বাজারে গিয়েছেন, আপনার স্ত্রী হয়তো কিছু একটা হাতে নিয়েছে আর আপনি বলেছেন, “না না, এটা রাখো, রাখো।” শেষ কবে আপনি তাকে কিছু একটা দিয়েছেন তার চাওয়া ব্যতীত? শেষ কবে তাকে ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিলেন? শুধু একটু বাইরে নিয়ে যান আর একটা আইসক্রিম কিনে দেন, কোন কারণ ছাড়াই। তারা আপনার কাছে বেশি কিছু চায় না। তারা আপনার কাছে কিছু সময় চায়। তারা শুধু আপনার সময় চায়।

কিছু কিছু বোন আমাকে অভিযোগ করেন যে, আমি আমার কানকে বিশ্বাস করতে পারি না। তারা আমার কাছে অভিযোগ করেন যে, তারা তাদের স্বামীকে দেখতেই পায় না। কারণ যখন তারা বাড়িতে আসেন, তখন তারা কম্পিউটারে বসেন, শুধু ইউটিউবেই সারা রাত পার করে দেন। তারা স্বামীদের দেখতে পায় না, আর তারা কাঁদতে থাকেন… এটা এমন, যেন তারা আর বিবাহিত নেই। কম্পিউটার বন্ধ করুন। আপনার স্ত্রী-সন্তানদের সাথে সময় কাটান। এটার অগ্রাধিকার সবচেয়ে বেশি।