বিয়ে একটি শক্ত প্রতিজ্ঞা। কুরআনেও এই ব্যাপারে খুব গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। “আল্মুহসানাত”, “আল্মুহসিনিন”। আরবিতে “ইহসান” মানে হল কাউকে নিরাপদ দুর্গের মধ্যে রাখা। অনেকটা মিলিটারি ক্যাম্পের মত। উদাহরনটা এমন যে, বাইরে শত্রু আছে আর তাই যে মিলিটারি ক্যাম্পের ভিতরে আছে সে নিরাপদ। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে নারীরা যেন নিরাপদ প্রাচীরের মধ্যে আছে, আর কে তাদের সুরক্ষা দিচ্ছে? তাদের নিজ নিজ স্বামীরা। সবকিছু থেকে সুরক্ষা দিচ্ছে, দুঃখ কষ্ট, লজ্জাহীনতা, এমনকি অজ্ঞানতা থেকেও, কারন তাকে সঠিক শিক্ষা দেয়াও তার স্বামীর দায়িত্ব। সে তাকে সব দিক থেকে নিরাপদ রাখছে। আর যারা বিয়ে করতে ইচ্ছুক তাদেরকে আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, “মুহসিনিন গাইরা মুসাফিহিন”।(সূরা নিসা ২৪) তারা হল সেসব মানুষ যারা নারীদের এরূপ নিরাপত্তায় আনতে আগ্রহী, তাদের নিজেদের পরিচর্যায়, পরিবার গঠনের উদ্দেশ্যে, শুধুমাত্র তাদের নিজেদের কামনা পূরণ করার জন্য নয়। “মুসাফিহ” বলতে এমন কাউকে বুঝায় যে নিজের হরমোনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আর একারনেই সে বিয়ে করতে চায়, এটাই একমাত্র কারন। তাই আল্লাহ বিয়ের সম্পর্কে আমাদের মনোভাব পরিবর্তন করেছেন। যদি আপনি সঠিক কারনে বিয়েতে আবদ্ধ হন, তাহলে আপনার স্ত্রীর সাথে আপনার একটি সুস্থ সম্পর্ক গড়ে উঠবে। আর যদি আপনি ভুল কারনে বিয়ে করেন, ভুল কারন কি কি হতে পারে? আমার হরমোনের সমস্যা আছে তাই আমি বিয়ে করতে চাই, ব্যাস। তাহলে অবশ্যই আপনার সংসার অশান্তির হবে, আর আপনি কখনই সন্তুষ্ট হবেন না। আর খুব সম্ভবত আপনাদের অনেকেই এটা অনুধাবন করেছেন কঠিন উপায়ে। কারন আপনার নিয়্যতে ভুল ছিল। আপনার নিয়্যত থাকতে হবে একটি পরিবার শুরু করার, আল্লাহকে খুশি করা, সমাজে ভাল কিছু বৃদ্ধি করা। তাই আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীনের অন্যান্য সব কিছুর মত বিয়ের মূলনীতিও হলঃ আপনি নিজের দায়িত্ব নিয়ে চিন্তিত থাকুন, আর আপনার অধিকার আদায়ের কথা ভুলে যান। আমি জানি যে এটা খুবই রুক্ষ শুনাচ্ছে, কিন্তু আপনি যদি এটা করতে পারেন, ছয় মাস চেষ্টা করে দেখুন, নিজের অধিকার নিয়ে ভুলে যান, শুধু নিজের দায়িত্বটুকু ভাল ভাবে করুন। এটা ভাবুন, আমি আমার স্ত্রীর জন্য কি করতে পারি? তার জন্য আমি আরও কি করতে পারি? আমি কি তাকে কোন উপহার কিনে দিব? কারন আমি অনেকদিন তাকে কিছু কিনে দেইনি, তারপর সে যদি কোন ভুল করে থাকে তাহলে এমন ভান করুন যেন আপনি তা লক্ষ্য করেননি। “ওয়া ইন তা’ফু ওয়া তাস্ফাহু ওয়া তাগফিরু”। তাস্ফাহু মানে হল পৃষ্ঠা দিয়ে ঢেকে রাখা। আপনি যখন একটি পৃষ্ঠা ঢেকে ফেলেন তখন নিচের পৃষ্ঠায় কি আছে দেখা যায়না, তাইনা? সেইভাবে আপনার স্ত্রী যদি কোন ভুল করে তাহলে আপনি এমন ভান করুন যে আপনি তা দেখেননি। এটাকে সরাসরি বলার দরকার নেই যে “তুমি আবার এমন কেন করেছ?” এভাবে আপনি তার ভুলগুলো ঢেকে রাখেন, আর আরও বেশি বেশি নিজের দায়িত্বগুলোর প্রতি যত্নবান হউন। আরও বেশি বেশি ধৈর্যশীল এবং সহনশীল হউন। আর সে যখন আপনাকে আঘাত দিয়ে কথা বলবে তখন আপনি হাসিমুখে তা গ্রহন করুন এবং জবাব দেয়া থেকে বিরত থাকুন। নিজের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে সীমা ছাড়িয়ে যান। আপনারা জানেন যে, যখন আপনি চাওয়া শুরু করবেন, স্ত্রীর কাছ থেকে সবাই কিছু নির্দিষ্ট জিনিষ চায়, সে আমার যত্ন নিবে, আমার চাহিদার ব্যাপারে খেয়াল রাখবে, আমার কিছু চাহিদা আছে, মানসিক প্রয়োজন আছে, সে আমাকে সঙ্গ দিবে আরও বেশি ভাল ব্যবহার করবে, আমি যখন বাসায় ফিরি তখন তার হাসিমুখে থাকা উচিৎ, সবসময় আমার ভুল ধরা উচিৎ না। সবসময় আমাকে বাজারের লিস্ট আর লন্ড্রির ব্যাপারে কথা বলবে না, ভালভাবে কথা বলবে। আপনার মাথায় সব সময় এসব চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে। কিন্তু জানেন কি, একজন মুমিন কার কাছে তার চাহিদার কথা বলে? একজন মুমিন সর্বদা তার মালিকের কাছে নিজের জন্য আশা করে। কারন আল্লাহ ছাড়া আপনি অন্য যার কাছেই কিছু আশা করবেন আপনি হতাশ হবেন। “দাউফা আত্তালিবু ওয়াল্মাতলুব”। এটা আল্লাহ প্রদত্ত একটি সর্বব্যাপী পন্থা। ”যে আশা করে, যে চাহিদার প্রকাশ করে সে দুর্বল, তাকে দুর্বল করা হয়েছে, এবং সে যা আশা করে তাও দুর্বল, প্রকৃতিগতভাবেই দুর্বল।” যতক্ষণ আপনি কোন সৃষ্ট কিছুর প্রতি আশা পোষণ করবেন, আপনি অবশ্যই হতাশ হবেন। আপনি চান যে আপনার বস আপনাকে প্রমোশন দিক, এটা ঘটবে না। আপনি বন্ধুর উপর আশা করেন, ভাবছেন যে সে তার দেয়া সময় মত আসবে, সে দেরি করবে। অথবা সে আসতেই পারবেনা। আপনি সৃষ্টির প্রতি আশা করবেন, কোন জিনিসের উপর আশা করবেন, আপনাকে হতাশ হতে হবে। আল্লাহ চান যে আমরা এটা শিখি যে শুধুমাত্র তার কাছেই আশা করা উচিৎ। আর যখন আপনি মন থেকে এটা গ্রহন করবেন, তখন কি ঘটবে জানেন? আপনার স্ত্রী যখন আপনার জন্য খুব অল্প কিছুও করবে আপনি অনেক বেশি কৃতজ্ঞ হবেন, কারন আপনি তার কাছ থেকে কিছু আশা করেননি। অনেক সময় এমন ঘটে যে, আমরা কিছু ইসলামী বইয়ে বা কিছু হাদিসে পড়ি স্বামীর অধিকার বা স্ত্রীর অধিকার নিয়ে। আর তারপর যা ঘটে তা হল, স্বামীরা শুধু স্বামীদের অধিকার আর স্ত্রীরা শুধু স্ত্রীর অধিকার নিয়ে পড়া শুরু করে। সত্য আসলে উল্টোটা। স্বামীদের কি নিয়ে পড়া উচিৎ? স্ত্রীর অধিকার নিয়ে। কিন্তু সবাই নিজেকে নিয়ে মত্ত। সবাই স্বার্থপর। এমনকি ইসলামের ব্যাপারেও তারা শুধু তাই জানে যেটা তাদের কাজে লাগবে। উদাহরন হল, পিতামাতা কুরআনের ব্যাপারে কিছু না জানলেও এতটুকু ঠিকই জানে যে, “ওয়াবিল ওয়ালিদাইনি ইহসানা”। তারা শুধু এতটুকুই জানে, এমনকি এটাও জানেনা যে এটা কুরআনের কোথায় আছে। তারা কেন শুধু এতটুকুই মনে রাখে? কারন এতটুকুই তাদের কাজে লাগে। তারপর যেমন পুরুষেরা হয়ত কুরআন নিয়ে খুব বেশি জানেনা, কিন্তু যখনি স্ত্রী কিছু বলে, সাথে সাথে স্বামী বলে উঠে “আর রিজালু কাও্বামুনা আলান্নিসা” কারন এটাই তাদের কাজে লাগে। তারমানে আপনি আল্লাহ্র কথা মত চলছেন না, বরং আল্লাহ্র দ্বীনকে নিজের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন, ঠিক কিনা? আমাদের বুঝতে হবে যে আমাদের দ্বীনে সর্বপ্রথম হল নিজের দায়িত্ব ঠিকমত পালন করা। তাই আমরা পড়ব আর এটা শিখব যে কিভাবে আমরা নিজেদের স্ত্রীদের জন্য আরও ভাল স্বামী হব, আর স্ত্রীরা কিভাবে আরও ভাল স্ত্রী হবে।
কি খুঁজতে চান ?
সাম্প্রতিক পোস্ট
আর্কাইভ
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- February 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- June 2020
- March 2019
- August 2018
- July 2018
- June 2018
- May 2018
- April 2018
- March 2018
- February 2018
- January 2018
- December 2017
- November 2017
- October 2017
- September 2017
- August 2017
- July 2017
- June 2017
- April 2017
- February 2017
- January 2017
- December 2015
- October 2015
- September 2015
- July 2015
- June 2015
- May 2015
- April 2015
- March 2015
- January 2015
বিষয় সমূহ
ego
islam
আখিরাত
আধ্যাত্মিক
আল্লাহ
আয়াত
ইবাদাহ
ইসলাম
ঈমান
উপদেশ
উপাসনা
উস্তাদ নুমান আলী খান
কুরআন
কৃতজ্ঞতা
ক্ষমা
চরিত্র
চিন্তা করা
চ্যালেঞ্জ
জান্নাত
জিব্রাইল (আঃ)
জীবন
দাসত্ব
দুনিয়া
দুনিয়া আসক্তি
নামাজ
নামাজে মনোযোগ
নুমান আলী খান
পথভ্রষ্টতা
বিশ্বাস
বিয়ে
ব্যক্তিগত উন্নয়ন
ভিন্নমত
মতাদর্শ
মানসিক শান্তি
মু'জিযা
মুসলিম
রমজান
রামাদান
শান্তি
শাস্তি
শায়েখ ডঃ ইয়াসির কাদি
শয়তান
সম্মান
সালাত
সূরা ফাতিহা