এই সল্প সময়ে আমি আপনাদের সাথে আমাদের ধর্মের এক উপেক্ষিত মৌলিক নীতি শেয়ার করতে চাই। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল বলেন, “ওয়াত্তাকুল্লাহাল্লাযি তাসা আলুনা বিহি ওয়াল আরহাম” আর আল্লাহকে ভয় কর যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে কিছু চেয়ে থাকো। তারপর তিনি আরো বলেন, “ওয়াল আরহামা” যা আসলে বোঝায় ভয় কর অর্থাৎ, সতর্ক হও, সচেতন থাকো, গর্ভের(আত্মীয় জ্ঞাতীদের) প্রতি ঋণী থাকার বোধ জাগ্রত কর। তাহলে এর অর্থ আসলে কি দাঁড়াল? এর অর্থ হল যে গর্ভের সাথে জড়িত যে কোন বিষয়কে আমাদের সম্মান (কদর) করতে হবে। আর তাই অন্যান্য পারিবারিক সম্পর্কগুলোর তুলনায় ইসলাম আমাদের মায়েদের অত্যধিক সম্মান দিয়ে থাকে। কিন্তু গর্ভের সাথে যুক্ত সম্পর্ক শুরু হয় বিয়ের মাধ্যমে (আদম(আঃ)–এর মত)। সেজন্যে এই আয়াত আরম্ভ হয়েছে এভাবে- ‘ইয়া আইয়্যুহান্নাসু ইত্তাক্বু রাব্বাকুম আল্লাজি খালাকাকুম মিন নাফসিন ওয়াহিদাহ’ ভয় কর তোমার পালনকর্তাকে যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি(আত্মা) থেকে সৃষ্টি করেছেন, ‘ওয়া খালাক্বা মিনহা যাউজাহা’ এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং আয়াতটি আসলে শুরু হয়েছে বিয়ের কথা বলে আর তাই নবী(সাঃ) বিয়ের খুতবায় এই আয়াতটি ব্যবহার করেছেন। মোটামুটি যে কোন বিয়েতে উপস্থিত থাকলে আপনারা এই আয়াতটির তেলাওয়াত শুনতে পাবেন।
তো যে পয়েন্টটি এখানে লক্ষণীয় সেটি হচ্ছে ওই সম্পর্কটি পূত-পবিত্র। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটি হচ্ছে পবিত্র। এটি খুবই প্রগাঢ় একটি বিষয়। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ বলেন, ‘ওয়া আখাযনা মিনকুম মিইসাকান গালিযা’ (4:21) একই সূরাতে সেই জোরালো ভাষা। এই নারীরা তোমাদের থেকে গ্রহণ করেছে, এখানে স্বামীদেরকে বলা হচ্ছে, তারা তোমাদের থেকে গ্রহণ করেছে এক সুদৃঢ় অঙ্গীকার। ঠিক না? আর এটা আশ্চর্যজনক প্রকাশভঙ্গি কেননা আপনারা ভাবেন বিয়ের সমস্ত নিয়ন্ত্রণ পুরুষদের হাতে থাকে, ঠিক না? তাহলে পুরুষেরাই এই নারীদের বিয়ে করতে স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু বলা হয়েছে আখাযনা, আখাযতুম মিনকুন্না নয়, মানে তোমরা তাদের থেকে অঙ্গীকার নিয়েছ, তা নয়! তারা তোমাদের থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে! তারা তোমাদের দায়বধ্য করেছে অর্থাৎ সিদ্ধান্তটি তারাই নিয়েছে। ‘ওয়া আখাযনা মিনকুম মিইসাকান গালিযা’ যার মানে হল যে আপনাকে স্বামী হিসেবে বাছাই করার পিছনে তাদের সরাসরি হাত ছিল, এমনকি মোহরে মধ্যস্থতা করা কিংবা বিয়ের অন্যান্য অঙ্গীকারসমূহের মাঝেও তাদের হাত ছিল।
আমি এই বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছি কারণ দুর্ভাগ্যবশত অধিকাংশ মুসলিম কালচারে এই নীতিটা অর্থাৎ, নিজেদের পছন্দমত বিয়ে করার সুযোগটা মেয়েদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হচ্ছে। বাবা-মায়েরা মনে করেন যে তারাই সবকিছু ভাল বোঝেন আর তাদের সন্তানেরা কিছুই জানে না। সুতরাং আমার মেয়েকে আমি যার সাথে ইচ্ছা, যাকে তার যোগ্য মনে করি, তার সাথেই বিয়ে দেব। তাকে সে পছন্দ করুক আর নাই করুক, এতে কিছু যায় আসে না। যদি সে রাজি না হয় তবে সে বোকামি করছে। অতঃপর আমি যদি তার সাথে কিছুক্ষণ চিৎকার চেঁচামেচি করি, তাকে যথেষ্ট লজ্জিত করি, একসময় তাকে মেনে নিতেই হবে কারণ সে তো আসলে কিচ্ছু বোঝে না। এই যে আমরা আমাদের কন্যাদেরকে নিজেদের ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিতে দেই না, অন্ততপক্ষে এইসব সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ভাবার সুযোগও করে দেই না, অথচ কি অন্যায়ভাবে তাদেরকে মানসিক প্রেশারের দিকে ঠেলে দেই। কিছু মুরুব্বীরা এরূপ করে থাকেন। বিশেষ করে উপমহাদেশে এটা খুবই কমন একটা ব্যাপার। মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য জায়গায়ও এমন দেখা যায়। দেখবেন, যখন কোন প্রপোজাল আসে, তারা বলে (মেয়েটিকে), কেন তুমি এত মোটা, আর এত বিশ্রী, আর এত বেঁটে? কে তোমাকে বিয়ে করবে? এই লোকটি তো অন্তত এসেছে। তোমার চৌদ্দ পুরুষের ভাগ্য যে তোমার একটি প্রপোজাল এসেছে! তাকেই মেনে নিয়ে বিয়ে করে ফেল। ভাগো এখান থেকে। আর তার সুখের কথা ভেবে কিন্তু এটা তারা বলে না। অনেক ক্ষেত্রে মনে হয় যেন, কাঁধ থেকে বোঝার মত অবিবাহিত বুড়িয়ে যাওয়া মেয়েটিকে নামিয়ে ফেলতে পারলেই তারা বাঁচে। ঠিক না? তাই যে কোন পাত্রের সাথে উপরে-উপরে কিছু শর্ত মিলে গেলেই, তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। আর এভাবে বেশ একটা সঙ্কটপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বহু মেয়েদের এমন মানুষদের সাথে বিয়ে দেয়া হচ্ছে যাদের তারা বিয়ে করতে চায় না। উল্টোটাও ঘটে। অনেক সময় ছেলেদেরও জোর করা হয় আত্মীয়ের মাঝে বিয়ে করতে, বা দেশের বাড়ির কাউকে বিয়ে করতে বা এমন কাউকে বিয়ে করতে যাতে তারা ইচ্ছুক না। আর এরকম অনেকে আমার কাছে এসে তাদের সমস্যার কথা বলে, ই-মেইল করে। সামাজিক মিডিয়াগুলোতে এসব আসে আর আপনারাও এরকম অনেক ঘটনা জানেন। আপনাদের মাঝে কয়েকজন বোনও আমার কথা শুনছেন। আপনার অভিভাবক হয়তো আপনাকে এমন কাউকে বিয়ে করার জন্যে প্রেশার দিচ্ছেন যাকে আপনি বিয়ে করতে চান না। আর আপনিও বুঝতে পারছেন না যে এসবে মত প্রকাশ করলে কি তাদের প্রতি অমাননা হবে; কেননা ইসলামে বাবা-মায়েরা যে প্রচুর হকের দাবিদার। ঠিক না? তবে আমার মতামত প্রকাশ করলে কি তাদের প্রতি অসম্মান হয়ে যাবে? তো এই ছোট্ট ভিডিওতে, যদিও ভিডিওটি সমস্যাটির সমাধান করতে পারবে না, আমি শুধু কিছু জিনিষের উপর লক্ষ্য করতে বলছি। আমি প্রথমে সেইসব তরুণদের, যাদের বিয়ে করার জন্যে প্রেশার দেয়া হচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাচ্ছি। আমি তোমাদের কিছু কথা বলতে চাই। আবার কথাগুলি তোমাদের সব সমস্যার সমাধান করে দিবে না, কিন্তু অন্তত কিছু বিষয়ের উপর আলোকপাত করবে। সবার আগে, যে সম্পর্কের বন্ধনে প্রবেশ করছ, সেটা নিয়ে বলবো।
কেউ তো ডিভোর্সের কথা মাথায় রেখে বিয়ে করে না। বাকি অর্ধেকটা জীবনের কথা ভেবেই মানুষ বিয়ে করে। এটা সারা জীবনের একটা অঙ্গীকার। এটাই তোমাদের জীবনের পরের ৫০-৬০ বছর হবে। এটা উড়িয়ে দেবার মত কোন সিদ্ধান্ত নয়। অধিকাংশ সময়ে তোমরা বিয়ে নিয়ে যা ভাবো তা হচ্ছে অনুষ্ঠানটির কথা, বাবা-মাকে খুশি করার কথা। কিন্তু সেটা তো এখনকার বিষয়। অথচ আজ থেকে ১০-১৫-২০ বছর পর কি হবে? কেননা এই একটা সিদ্ধান্তের কারণে বাকিটা জীবনের গতিপথ নির্ধারিত হয়ে যাবে। তাহলে যদি কোন একসময় তোমাদের কথা বলতে হয়, মতামত দিতে হয় এবং সম্মানের সাথে পদক্ষেপ নিতে হয়, তবে এটাই সেই সময়। এটা বেয়াদবি নয়। এটি একটি অধিকার যা আল্লাহ তোমাদের দিয়েছেন। আর এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত যা তোমাদের জীবনের সাথে জড়িত। তোমাদের অভিভাবক থেকে তোমাদের জীবনের সাথে এর সম্পৃক্ততা বেশি। কাকে বিয়ে করবে, সে কেমন মানুষ হবে, এসব অবশ্যই বিচক্ষণতার সাথে ভেবে তোমাদের বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তোমাদের অভিভাবকগণও তাদের মত দিবেন। কিন্তু তাদের মতটি গৌণ, মুখ্য কথাটি আসলে তোমাদেরই। আর সুবাহানাল্লাহ! এমনকি ওই আয়াতে, ‘ওয়া আখাযনা মিনকুম’, তারা তোমাদের থেকে নিয়েছে, নারীগণ তোমাদের থেকে অঙ্গীকার নিয়েছে। আল্লাহ তাদের ওয়ালীর কথাও উল্লেখ করেননি। তিনি নারীদের কথাই বলেছেন।
আমি এখন বোনদের বলছি। আপনি যাকে বিয়ে করছেন, তার সাথে আপনাকে কমফোর্টেবল হতে হবে। আপনি যদি রক্ষণশীল ধার্মিক পরিবারের হয়ে থাকেন, তবে অবশ্যই কখনো আপনি পার্টি করেননি, ছেলেদের সাথে প্রয়োজন ব্যতীত কথা বলেননি, আর কারো ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেবার আগে তাকে জানার জন্যে ডেটেও যাননি। তাই নিশ্চিত আপনি সম্পূর্ণ বিয়ে ব্যপারটাই নিয়ে স্বস্থি অনুভব করবেন না। কেননা এটা আপনার জীবনের নতুন একটা জিনিষ। তবুও কিছুটা স্বস্থি পাবেন এটা ভাবলে যে আপনি ভাল থাকবেন। শরীয়তের নিয়ম মেনে আপনার দিক থেকে আপনি বেস্ট দেখবেন, যাকে আপনার ভাল মানুষ মনে হবে, যার সাথে আপনার মিলে, যার সাথে আপনি চলতে পারবেন বলে মনে করেন। আল্লাহ ভাল জানেন। যদি এটাই উত্তম হয়। কখনো কখনো মানুষের বিয়ে হয়ে ডিভোর্স হয়ে যায়। সেটা সাহাবাদের ক্ষেত্রেও হয়েছে। কিন্তু আমাদের তো সাধ্যের মাঝে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করতে হবে, ঠিক না? আপনাকে খুশি হয়ে সম্পর্কে প্রবেশ করতে হবে। মন খারাপ করে এরুপ উচিৎ নয়। ছেলেদের জন্যেও একই কথা। ছেলেরা কথা বলো। আর তোমাদের মতটা অন্যদের শুনাও। এটার মানে এই নয় যে তোমরা বেয়াদবি করছো, যতক্ষণ না যেভাবে বলছো, সেটা বেয়াদবি হয়ে যায়। দেখো, অসম্মান করা সেটা নয় যেটা বলা হয়। অনেক সময় যেটা বলা হয়, সেটা বৈধ, ন্যায্য অধিকার। কারো কিছু বলবার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সে সেটা কিভাবে বলছে, কোন স্বরে বলছে, এসবের উপর ব্যাপারটি নির্ভর করে। সুতরাং বিচক্ষণ হয়ে অভিভাবকদের সাথে এটা নিয়ে কথা বলো।
এবার অভিভাবকদের বলতে চাচ্ছি যে আপনার সন্তানের বয়স যদি ২৪/২৫, এমনকি ২২-২৩ বছর হয়ে থাকে, তবে তারা যথেষ্ট পরিণত। তারা যদি আপনার কাছে এসে বলে, আমি এই মেয়েটিকে বিয়ে করতে চাই, অথবা আমি এই ছেলেটিকে বিয়ে করতে চাই, আর আপনি যদি পাশ্চাত্যে থাকেন তাহলে সর্বপ্রথম একটা জিনিষ বুঝতে চেষ্টা করুন। তারা সিরিয়াস না হলে আপনার কাছে এই প্রস্তাব নিয়ে আসত না। দ্বিতীয়ত, তারা আর শিশু নয়। আপনি তাদেরকে ৮৫ বছর বয়সেও বাচ্চা ডাকতে পারেন, আর তখন আপনার বয়স থাকবে ১৫০। কিন্তু এটা বিষয় নয়। তারা এখন আর শিশু নয়। তারা প্রাপ্তবয়স্ক। বিষয়টি এমন নয় যে কোন শিশু দোকানে গিয়ে বলছে, “আমি এই খেলনাটি চাই। আমাকে আইরনম্যান একশন ফিগার দাও। ” আর আপনিও বকা দিয়ে বলছেন, “না, না! এটা তোমার জন্য নয়। এর বদলে নিনজা টারটেল নাও।” না, না, না! এটা খেলনা কিনার বিষয় নয়। এটা জীবনের একটি সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করা উচিৎ। অধিকাংশ বাবা মায়ের ক্ষেত্রে, যখন সন্তানেরা প্রস্তাব নিয়ে আসে, তারা কোনভাবেই মেনে নেন না। “তামাশা পাইছো?” আর এতে যেন মান-সম্মানের প্রশ্ন চলে আসে যে আপনার বদলে আপনার সন্তান বিয়ের জন্যে কাউকে পছন্দ করে ফেলেছে। দেখুন, আপনিই তাদেরকে পশ্চিমা সমাজে ছোট থেকে বড় করেছেন। তারা ছেলে-মেয়েদের সাথে সবসময় মিশছে। এখন যেটা হয়েছে যে তাদের কাউকে ভাল লেগেছে, হতে পারে আনইসলামিকভাবে, কিন্তু এটা ঘটে গেছে। তারা ইতিমধ্যে কাউকে পছন্দ করে ফেলেছে। তারা ইতিমধ্যে কাউকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক। অথচ আপনি মানলেন না, বললেন, “কোন ভাবেই না, এটা ইজ্জতের বিষয়, ধর্মের বিষয়। তা ধর্মের তো আরো অনেক বিষয় আছে, যা আপনি তাদের ঠিকমত শেখাননি। আপনি তাদেরকে সুস্থ পরিবেশে গড়ে তোলারও প্রয়োজন মনে করেননি। আর এখন কিনা তাদের উপর রেগে যাচ্ছেন কারণ তারা নিজেরা পছন্দ করেছে অথবা পছন্দের ব্যাপারটা উত্থাপন করেছে। অন্ততপক্ষে, তাদের পছন্দের ব্যাপারে ভেবে দেখুন। একটু খোলা মনে সম্ভাবনাগুলো যাচাই করুন। আপনার আশেপাশের দুনিয়া আর আগের মত নেই। যেভাবে আপনার বিয়ে হয়েছে, এমন কি আপনার বাবা মায়ের বিয়ে হয়েছে, সেটা এখন বদলে গেছে। আগের সেই প্রথা, সাংস্কৃতিক মানদণ্ড, সব বদলে গেছে। দুনিয়া আর আগের মত নেই। তাই খোলা মনে আমাদের সন্তানদের পছন্দ-সিদ্ধান্ত, আমাদেরকে ভেবে দেখতে হবে। দেখুন, আপনি যদি আপনার ছেলে কলেজে পাঠান, তবে তার উপর বিশ্বাস রেখেই নিশ্চয় তাকে নন-মুসলিম সমাজে কাজে পাঠাচ্ছেন।
যদি আপনার মেয়েকে নন-মুসলিম সমাজের স্কুলে পড়তে পাঠান, তবে নিশ্চয় তার উপর বিশ্বাস রেখেই তাকে নিষ্ঠুর দূষিত দুনিয়ায় পাঠাচ্ছেন যেখানে সে তার আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখবে। তাহলে তার সিদ্ধান্তের উপরেও আপনাকে আস্থা রাখতে হবে। অন্তত তার সিদ্ধান্তকে বিবেচনায় আনতে হবে। যদিও তা আপনার মন মত হয় না, তুবও। তাই খোলা মনে আলোচনাটি করুন। মেজাজ খারাপ করবেন না। আর না, নাটকীয়ভাবে কিছু বলবেন না। এরকম কিছু বলবার দরকার নেই যে, “ইয়া আল্লাহ! আমার সব স্বপ্ন ভেস্তে গেল। তুই আর আমার ছেলে না!” বিষয়টিকে সহজভাবে নেন। শুধু সহজ ভাবে নেন। প্রত্যেকের নিজেদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। অথচ বেশীরভাগ মুসলিম সমাজে, বাবা মায়েরা খোলাখুলি করে কিছু বলেন না। তারা তখনই বলেন যখন ব্যাপারটি অনেকদূর গড়িয়ে যায়। আর তাদের সন্তানেরাও ভয়ে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। আমাদের এটা বদলাতে হবে। যাতে আমরা সহজে সৎভাবে এবং অন্যের প্রতি সম্মান রেখে নিজেদের মনের কথা খুলে বলতে পারি। সব শেষে আমি যে কথাটি বলতে চাচ্ছি তা হচ্ছে আমাদের ধর্মে ছেলে মেয়ে কীভাবে মিশবে, কথা বলবে; সেই নীতিটা চিরন্তন নীতি।
কিন্তু সামাজিক বাস্তবতা বদলে গেছে। আমাদের নীতিটা তাতে বদলে যায় না। সামাজিক বাস্তবতা বদলায়। তাই অনেক বছর যাবত চলে আসা সাংস্কৃতিক আদর্শ আর মানা যেতে পারে, নাও যেতে পারে। কিন্তু আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ সবসময়ের জন্যে। অনেকসময় দেখা যায়, আপনি যেটাকে ধর্মের অংশ মনে করছেন, সেটা কোনক্রমেই ধর্মীয় কিছু নয়। সেটা আসলে আপনার সংস্কৃতির অংশ। আপনি শুধু নির্দিষ্টভাবে কিছু করে স্বস্থি পান আর ভাবেন যেহেতু সেটা আপনার জন্যে কাজ করেছে, তাহলে তা আপনার বাচ্চাদের জন্যেও করবে। অথচ ঘটনা সেরকম নাও হতে পারে। পরিশেষে আমি দু’আ করি যে মুসলিম পরিবারে যেন অন্তত এ ধরণের সুস্থ আলোচনার বিকাশ ঘটে। এতে করে যেন আমরা আমাদের ছেলে মেয়েদের জন্য উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হই। আর তাদের বিবাহ যেন সুখের হয়। আমি এও দু’আ করছি যে নারী পুরুষরা যেন হালাল উপায়ে একে অপরকে জানতে পারে, বুঝতে পারে। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লার নিকট গ্রহণযোগ্য পন্থায় যেন তা হয়। যেন উত্তেজনার বশে তারা সস্তা আবেগে সিদ্ধান্ত নিয়ে না নেয়। আল্লাহ ‘আযযাওয়াজ্জাল আমাদেরকে যেন বিজ্ঞতা, সুস্থিরতা, শীতলতা আর সবচেয়ে বড় কথা তাঁর রহমত ও বরকত দান করেন। আমাদের দ্বীনের অর্ধেক, জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়। বারাকাল্লাহু লি ওয়ালাকুম। আসসালামু’আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।