সূরা ফাতিহা – ১১তম পর্ব

ইহদিনা। আমাদের পরিচালিত করুন। এটা সুন্দর, সুন্দর ভাষা। আরবীতে হিদায়াহ শব্দটি– কেন আমরা “পরিচালিত করুন” বলেছি? কারণ আল্লাহ হচ্ছেন প্রভু আর আপনার সে পর্যন্ত কোনো প্রভু থাকতে পারে না যতক্ষণ না তিনি আপনাকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। কীভাবে এই সম্পর্কটি শুরু হয়? কী দিয়ে –? পথনির্দেশনা। আর তারপর, যেহেতু আপনি মাত্রই বললেন,”আমি আপনার দাস। আপনার সাহায্য আমার প্রয়োজন।” প্রথম যে ধরনের সাহায্যটা আপনার/আমার প্রয়োজন তা হলো, “ইয়া আল্লাহ, বলে দিন কী করতে হবে। আমাকে বলুন কী করতে হবে।” এখন আপনি যদি আল্লাহকে জিজ্ঞেস করেন কী করতে হবে, তার মানে হলো আপনি সেটা করতে প্রস্তুত, তাই না? সুতরাং যখন আমরা বলি, ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাক্বীম, আমরা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে বলছি, “ইয়া আল্লাহ, আমি আপনাকে মেনে চলতে প্রস্তুত। শুধু আমাকে বলুন, আমি সেটা করব। আপনার উপদেশ আমার প্রয়োজন। আর যখন আপনি আমাকে উপদেশ দেবেন, আমি সেটা গ্রহণ করব।” আমার কিছু বন্ধু আছে যারা আমার কাছে সব সময় উপদেশ চায়। কিন্তু তারা কখনোই সেটা অনুসরণ করে না। “তুমি এটা সম্পর্কে কী ভাবো? তুমি ওটা সম্পর্কে কী ভাবো? আমার কী করা উচিত? আমার কী করা উচিত ? “আমি তোমাকে ৪ বছর ধরে বলছি তোমার কী করা উচিত। তুমি তা করো না। আমি তোমাকে আর বলতে চাই না। এটা বলার কোনো মানে হয় না।” আপনি এবং আমি আল্লাহর কাছে উপদেশ চাইছি। তাঁর কাছে উপদেশ চেয়ে সেই উপদেশ মত কাজ করা উচিত। অন্তত পক্ষে করার চেষ্টা করুন। এটাই প্রথম বিষয়।

দ্বিতীয়ত। হেদায়া শব্দটির সৌন্দর্যতা নিয়ে। আরবিতে আপনি বলতে পারেন, আর-রুশদ– এটার মানেও পথনির্দেশনা। আরশিদনা। “আমাদের পরিচালিত করুন।” ইহদিনা মানেও আমাদের “পরিচালিত করুন।” পার্থক্য কী তা হলে? হুদা শব্দটি আরবী হাদিয়া শব্দ থেকে এসেছে। আরবীতে হাদিয়া মানে উপহার। যখন কোনো আরব, মরুভূমিতে হারিয়ে যায়, তখন তার জন্যে সবচেয়ে বড় কোন উপহারটি আপনি তাকে দিতে পারেন? পথনির্দেশনা। পানিও অতো যথেষ্ট না। খাবারও অতো ভালো কিছু না। কারণ তার মানে হচ্ছে সে আরও ২ ঘণ্টা বেঁচে থাকবে। সে আরও ১ দিন বেঁচে থাকবে। কিন্তু মরুভূমিতে, আপনার সবচেয়ে বড় যে উপহারটি প্রয়োজন তা হলো? পথনির্দেশনা। এ কারণে তারা বেঁচে থাকা এবং পথনির্দেশনাকে একসাথে যুক্ত করেছে। চূড়ান্ত উপহারটি হবে সঠিক পথের নির্দেশনা পাওয়া। বিশেষ করে মরুভূমির জীবনে। আমরা আল্লাহর কাছে চূড়ান্ত উপহার চাইছি। ইহদিনা। “আমাদের পরিচালিত করুন।” এমনকি আমরা এটাও বলছি না যে, “আমাকে পরিচালিত করুন।” আমরা বলেছিলাম, “পরিচালিত করুন –? আমাদের।” সুতরাং প্রকৃতপক্ষে আমরা পরিবর্তন করছি। আমরা ব্যক্তিগত থেকে সমষ্টিগততে যাচ্ছি। শুরুতে সবকিছুই ব্যক্তিগত ছিল। হামদ ব্যক্তিগত। আল্লাহ আমার প্রভু ব্যক্তিগতভাবে। আল্লাহর দয়া আমার কাছে আসে ব্যক্তিগতভাবে। বিচার দিবসও ব্যক্তি সম্পর্কিত। প্রতিটি ব্যক্তি আলাদাভাবে বিচারের সম্মুখীন হবে। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে আমরা পরিবর্তিত হয়ে গেলাম কীসে –? ইহদি-না। কারণ এ জীবনে, আপনি যদি ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহর সাথে একটা ভালো সম্পর্ক রক্ষা করতে চান, আপনাকে একটা সম্প্রদায় হিসেবে একসাথে চাইতে হবে। আপনার সাথে অন্যান্য মানুষ থাকতে হবে। পথনির্দেশনার জন্যে আপনার অন্যান্য মানুষও দরকার। আপনি নিজে নিজে এটা করতে পারেন না। এ কারণে, এটা ইহদিনী না, এটা হচ্ছে –? ইহদিনা। এটা ইহদিনা-ই হতে হবে। আবার এটা ইয়্যা নাহদিও নয়, যার মানে হতো “শুধুমাত্র আমাদের পরিচালিত করুন।” সেটা খারাপ হতো। “ইয়া আল্লাহ, শুধু আমাকে পথনির্দেশনা দিন। বাকিরা সবাই জাহান্নামে যেতে পারে। কেয়ার করি না” কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমাদের সবাইকে পরিচালিত করুন।

পথনির্দেশনা নিয়ে আমাদের আরও একটু কথা বলতে হবে। আমি আপনাদের একটা বিরতি দেওয়ার আগে। এটা ইসলামের খুবই সুন্দর একটি ব্যাপার। যখন আপনি হারিয়ে যান, আপনার নির্দেশনা প্রয়োজন হয়, ঠিক? আর কেউ একজন আপনাকে বলে দেয়, “৩ কিলোমিটার এই দিকে, ২ কিলোমিটার। (আমি কিলোমিটার ব্যবহার করেছি, মাইল ব্যবহার করিনি। আমি নিজেকে নিয়ে গর্বিত।) “আপনি বামদিকে যান, ডানদিকে মোড় নিন আর আপনি পৌঁছে যাবেন।” ওটাই তথ্য, তাই নয় কি? কখনও কখনও পথনির্দেশনা শুধুই তথ্য। কিন্তু আল্লাহর পথনির্দেশনা তথ্যের চেয়েও বেশি। আপনার কাউন্সেলরের পথনির্দেশনা হচ্ছে তথ্য। ট্রাফিক অফিসারের পথনির্দেশনা হচ্ছে তথ্য। জিপিএস পথনির্দেশনা হচ্ছে তথ্য। এর সবই তথ্য। কিন্তু আল্লাহর পথনির্দেশনা তথ্যের চেয়েও বেশি কিছু। আল্লাহর পথনির্দেশনা প্রতিটি মুহূর্তের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের সাথে সম্পর্কিত। আর আমরা শুধু তথ্য চাইছি না, আমরা সেই শক্তি চাইছি যা দিয়ে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি। দুটো ভিন্ন জিনিস। এটা শুধু তথ্য না। কখনও কখনও আমাদের কাছে সব তথ্য থাকে, আমরা তবু ভুল সিদ্ধান্ত নিই। কারণ আমাদের সেই শক্তি থাকে না, সেই ইচ্ছে, সেই প্রতিশ্রুতি, সঠিক মানসিকতা থাকে না সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার মতো । মানুষ কি ভুল করে না আর আপনি বলেন, “তুমি কি জানো যে এটা ভুল?” “হ্যাঁ, হ্যাঁ কিন্তু আমি রেগে গিয়েছিলাম।” এ কারণেই আমরা আল্লাহর কাছে পথনির্দেশনা চাই। প্রসঙ্গত, যদি এটা শুধু তথ্য হতো, যদি পথনির্দেশনা শুধু তথ্য হতো, কতবার আপনার তথ্য প্রয়োজন হতো? একবার। যদি আপনাকে তথ্যটা দিয়ে দেওয়া হয়, এটা আপনার আবার চাওয়ার দরকার নেই। কতবার আমরা আল্লাহর কাছে পথনির্দেশনা চাই? বারবার এবং বারবার এবং বারবার।

মানদণ্ড অনুযায়ী, আমি পথনির্দেশনাকে তুলনা করি, বোঝার জন্য, আল্লাহর কাছে পানি চাওয়ার মত। আপনি বলতে পারেন না, “আমি ইতোমধ্যে গতকাল পানি পান করেছি। আমি ভালো আছি।” এটা এভাবে কাজ করে না! আপনি যদি বেঁচে থাকতে চান আপনাকে –? বারবার এটা পান করতে হবে। এবং সেজন্য কয়েক ঘণ্টা পরপর। এটা যেন এমন আল্লাহ আমাদের বলছেন : তোমার শরীরের মতো, কয়েক ঘণ্টা পরপর এটার পানি প্রয়োজন হয়, তোমার অন্তর, কয়েক ঘণ্টা পরপর এটার কী প্রয়োজন হয়? পথনির্দেশনা। আপনার আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে এবং আবার বলতে হবে ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাক্বীম। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, আপনার জ্বালানি কমে যাচ্ছে, আপনার আল্লাহর কাছে আবার চাইতে হবে। যদি এটা শুধু তথ্য সম্পর্কে হতো, এটা এভাবে পুনরাবৃত্তি হতো না। আর আমরাও অন্য একটা জিনিস শিখছি। এটা এমন কিছু না যা আপনি জমিয়ে রাখতে পারেন। আপনার শরীরে পানির মতো, আপনি এটা জমিয়ে রাখতে পারেন না। একবার আপনি এটা পাওয়া মানে, এটা আপনার হয়ে যাওয়া নয়। আপনি এটার মালিক নন। এটা একসময় ফুরিয়ে যায়। তারপর আবার গিয়ে আপনার নিয়ে আসতে হয়। আবার শেষ হয়ে যায়। আর আবার আপনার এটা নিতে হয়। কেউ এটা বলতে পারে না, “আমার এটা আছে। আমার ইতোমধ্যে এটা আছে। আমার আর প্রয়োজন নেই। “আপনি এটা করতে পারেন না। এজন্যে আমি পথনির্দেশনার সাথে কীসের তুলনা করেছিলাম? পানি। পানির তৃষ্ণার মতো পথনির্দেশনারও একটি তৃষ্ণা রয়েছে। এটার মতোই। ঠিক? তাই আমাদের আল্লাহর কাছে বারবার বারবার চাইতে হবে। এখন আস-সিরাত আল-মুস্তাক্বীম। ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাক্বীম কী বোঝায় –আমি ছোট ২ মিনিটের বিরতির পর সেটা বলব ইন শা আল্লাহু তা’আলা। কারণ, আবার, আমি আপনার সতেজ মনোযোগ চাই। তো, অন্তত স্ট্রেস করুন। অন্তত এরকম, আপনি জানেন, আপনার হাত উপরে তুলুন এবং যা করার করুন। আমি এখানেই আছি।