সূরা ফাতিহার যে লুকায়িত সৌন্দর্য আমরা পাইনি

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

[উস্তাদ নুমান আলী খানের লেকচার অবলম্বনে অনুবাদ]

জ্ঞান ও কর্মের সমন্বয়সাধন…

সূরাটি শুরু হয়েছে আল্লাহর পরিচিতি দিয়ে (প্রথম ৩ আয়াত)। তাই বলা যায় ‘আল্লাহ’ সম্পর্কে ‘জ্ঞান’ দিয়ে শুরু এই সূরার। এ থেকে বোঝা যায় যে আমাদের যদি ‘জ্ঞান’ থাকে তবেই এই ‘জ্ঞান’ কর্মের পথপ্রদর্শন করতে পারে (কোন বিষয়ে জ্ঞান না থাকলে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো কীভাবে?!)।

‘আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান’ আমাদেরকে কর্মের দিকে ধাবিত করে আর সেই কর্ম হল আল্লাহর দাস হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং প্রচেষ্টা করা (মাঝখানের আয়াত অর্থাৎ ৪ নং আয়াতঃ ই’ইয়াকানা’অবুদু ওয়া ই’ইয়াকানাসতা’ইন)।

আমরা যদি এই জ্ঞানের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিই আর কাজ করে এ’দুটোর মাঝে সমন্বয়সাধন করতে পারি তবেই আমরা সরলপথে থাকব – সিরাতাল মুসতাকিম, এমন একটি পথ যে পথে পূর্ববর্তীরাও সেসব মানুষেরা চলেছেন যারা জ্ঞানকে কর্মে রুপান্তরিত করেছিলেন (হেদায়েত – শেষ ৩ আয়াত)। সুতরাং হিদায়াত বা সৎপথ হল জ্ঞানকে কর্মের মাধ্যমে সমন্বয় করা।

এভাবে সরলপথের বিরপীত ভ্রষ্টপথ এর দুটি অবস্থার যেকোন একটি হতে পারেঃ এক. যখন আমাদের জ্ঞান আছে কিন্তু আমল নেই এবং দুই. যখন আমাদের আমল আছে কিন্তু জ্ঞান নেই।

এরপরেই সূরাটিতে বলা হচ্ছে, আমরা যেন তাদের মত না হই যাদের জ্ঞান ছিল কিন্তু আমল ছিল না (মাগজুব – অভিশপ্ত – সৎপথের আমলহীনলোকেরা তো মন্দই করে – তারা তো মানুষের প্রতি মন্দ করার কারণে অভিশাপে অভিশপ্ত হবেই) এবং এরপরে বলছে, তাদের মতও যেন না হই যাদের আমল ছিল কিন্তু জ্ঞান ছিল না (ওয়ালাজ্জাল্লিন – যারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছিল – জ্ঞান না থাকার কারণে)।

Sura Fatiha

সংক্ষেপে এভাবে দেখানো যায়…

আল্লাহ সম্পর্কে ‘জ্ঞান’ – প্রথম ৩ আয়াত (এ জ্ঞান যখন পথপ্রদর্শনের দিকে নিয়ে যায় তখন)

আমাল – মধ্যখানের ১টি আয়াত (এখন জ্ঞান আর আমাল-এর সমন্বয় হল…তাহলে এটা নিয়ে যাবে)

হেদায়েত-এ – শেষের ৩টি আয়াতে (অর্থাৎ হেদায়েতের জন্য ‘জ্ঞান ও কর্ম’-দুটির সমন্বয় লাগবে। একটি হলে হবে না। একটি হলে হেদায়েত না হয়ে ‘মাগজুব-অভিশপ্ত’ বা ‘নিজেরাই পথহারা’ হয়ে যাবে)

সূরাটির চমৎকারিত্ব লক্ষ্য করেছেন?…

সূরাটি শুরু হয়েছে জ্ঞান দিয়ে, এরপর এসেছে আমালের (কর্ম) কথা এবং এরপরে যখন জ্ঞান ও আমালের সমন্বয় হয়েছে তখনই হেদায়েত এর কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা যেমনি সূরাটিকে সূচারুরুপে সমন্বয় করেছেন আয়াত সংখ্যা দিয়ে (৩+১+৩) তেমনি এর বিষয়কেও সমন্বয় করেছেন অপূর্বভাবে (৩ আয়াত জ্ঞান + ১ আয়াত কর্ম + ৩ আয়াত হেদায়াত সম্পর্কে)!!

কত উত্তমভাবেই না আল্লাহ আমাদের জ্ঞান ও আমালের সমন্বয়ের মাধ্যমে হেদায়েতের কথা বলেছেন সূরা ফাতিহার অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে !!

[Bayyinah.tv এর সূরা ফাতিহার তাফসীর থেকে অনুপ্রাণিত]