আল্লাহ সর্বশক্তিমান

– উস্তাদ নোমান আলী খান

ইনশাআল্লাহ, আজ আমি আপনাদের নিকট আল্লাহর একটি নাম القوي – এর উপকারিতা বর্ণনা করবো। القوي অর্থ – শক্তিশালী, ক্ষমতাশালী। এই অসাধারণ শব্দটি দ্বারা আল্লাহর একটি নাম প্রকাশ করা হয়। শব্দটি শুনলেই আপনি বুঝতে পারেন এর মানে হল আল্লাহ সর্বশক্তিমান। কিন্তু সুরাতুল হাজ্জের শেষের দিকে আল্লাহ যেভাবে এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন তা অসাধারণ চমকপ্রদ। আমি যুক্তি দেখাবো, একজন বিশ্বাসীর জন্য আল্লাহর ‘القوي’ হওয়ার মানে কী তা উপলব্ধি করার জন্য আল কুরআনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোর একটি হল সুরাতুল হাজ্জের এই অংশটি। আমরা তাঁর সকল নামে বিশ্বাস করি কিন্তু তাঁর প্রত্যেকটি নাম কোন না কোনভাবে আমাদের উপকার করে।

কোন না কোনভাবে আমাদের সাহায্য করে। القوي কীভাবে আমাদের সাহায্য করে? এটা শেখার অন্যতম একটি সেরা জায়গা হল ২২তম সূরা, সুরাতুল হাজ্জের শেষের অংশ। এই সূরায় আল্লাহ একটি উপমা পেশ করেন যেন মানুষ তাঁর সম্পর্কে একটি ব্যাপার উপলব্ধি করতে পারে।

তিনি বলেন – يَا أَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوا لَهُ – “হে লোক সকল! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো, অতএব তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন;”

এভাবেই তিনি শুরু করেছেন, একটি উপমা দেয়া হল মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করো। তিনি সাধারণত এভাবে বলেন – আল্লাহ একটি উপমা বর্ণনা করলেন। কিন্তু এখানে বলেছেন, একটি উপমা প্রদান করা হলো। ‘আমি একটি উপমা দিচ্ছি’ বলার পরিবর্তে। তিনি এখানে বক্তাকে আলোচনা থেকে গোপন করে ফেললেন। এটি একটি সাইড নোট – কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি – যা আমাদের জানা থাকা প্রয়োজন। আমি এখন আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার একটি নির্দিষ্ট রূপ আছে, আমার দাঁড়ি আছে, আমার পোশাক এইরকম, আমার মাথায় টুপি আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আপনারা সরাসরি আমাকে দেখতে পাচ্ছেন।

আমি কুরআন থেকে কিছু তিলাওয়াত করলে বা কোন আলোচনা করলে সেটাও আপনারা দেখতে পান। কিন্তু এমন একটি পরিস্থিতির কথা মনে মনে কল্পনা করুন। আপনারা আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। এমন সময় ষোল বছরের এক কিশোর বক্তৃতার মঞ্চে উঠে আসল। তার বাহুতে ট্যাটু আঁকা, পরনে জিন্স, গায়ে টি শার্ট, মাথায় পেছন দিকে ফেরানো বেইস বল হ্যাট। সে মাইকের কাছে এসে কথা শুরু করার আগেই কিছু লোক পালানোর জন্য দরজা খুঁজতে লাগলো। কিছু মানুষ ভাবতে লাগলো – নামাজ মনে হয় আবার পড়তে হবে। কেউ কেউ ভাবতে লাগলো, তাকে মঞ্চ থেকে সরানো হচ্ছে না কেন। এর মধ্যে সে বক্তৃতা দেয়া শুরু করলো।

আর সে আপনার জীবনে শোনা সেরা বক্তৃতা দিল। সে বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধৃতি দিল। এবং এমন অসাধারণ আলোচনা করলো যে জীবনে কখনো এমন শক্তিশালী কথা শুনেননি। আপনারা যারা তাকে দেখতে পাচ্ছেন তাদের পক্ষে তার কথা থেকে উপকার পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কারণ তার চেহারা-সুরত দেখে ভাবতে লাগলেন – তার ওয়াজ করার কোন দরকার আছে?? কিন্তু যারা মসজিদের বাহিরে বসে আছে তারা তো আর তাকে দেখতে পাচ্ছে না। বাহিরের মানুষ শুধু তার কথা শুনছে।

তো, ভেতরের মানুষরা বলতে লাগলেন – আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ…আর যারা বাহিরে তারা কী বলছেন? মাসাআল্লাহ, মাসাআল্লাহ… হা, হা, হা। এই উদাহরণটি পেশ করার কারণ হচ্ছে – মানুষ কারো কথা শোনার আগে তার চেহারা-সুরতের দিকে লক্ষ্য করে। আমরা কারো বক্তব্যের চেয়েও তার পোশাক-পরিচ্ছদ এবং চেহারা-সুরতের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়ে থাকি। তাই কারো পোশাকের দিকে তাকিয়ে বলি –

“সে যাই বলুক না কেন তার কথা শোনার কোন মানে হয় না।”

আবার আরেকজনের ক্ষেত্রে হয়তো বলি – “তার কথা বেশি মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করা উচিত।

” শুধু তাদের চেহারা-সুরতের ভিন্নতার কারণে। কখনো কখনো হয়তো তাদের গায়ের রং এর কারণে। তাদের পোশাক আশাক বা বয়সের কারণেও হতে পারে। কোন ব্যক্তি তার মুখ খোলার আগেই তার পোশাক-আশাক অথবা চেহারা সুরত এর দিকে তাকিয়ে আমরা মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি – লোকটার কথা শুনবো নাকি শুনবো না? এই আয়াতে আল্লাহ বক্তার উপর থেকে ফোকাস সরিয়ে ফেলেছেন। তিনি বলেছেন – “একটি উপমা প্রদান করা হল…। ”

আল্লাহ এই উপমাটি দিচ্ছেন অথবা রাসূলুল্লাহ (স) দিচ্ছেন – এই ব্যাপারটা আপাতত এক দিকে সরিয়ে রাখ। উপমাটি কে দিচ্ছে তার দিকে মনোযোগ না দিয়ে উপমাটির দিকে মনোযোগ দাও। কারণ, এই পৃথিবীতে এমন বহু মানুষ রয়েছে তারা যখনই শুনে

“আল্লাহ বলেছেন …” তখনি বিরক্ত হয়ে মনে মনে বলে উঠে “আবার ধর্ম নিয়ে লেকচার দিতে আসছে!!”

চল, আমরা বরং অন্য কিছু দেখি। যখনই শুনে “রাসুলূল্লাহ (স) বলেছেন…” তখনি বিরক্তির স্বরে বলে উঠে “আবারো ধর্মীয় ব্যাপার! আমরা কি অন্য কিছু নিয়ে কথা বলতে পারি না?” তাহলে দেখা যাচ্ছে, কিছু কিছু মানুষ যখনই শুনে “আল্লাহ বলেছেন বা রাসুল (স) বলেছেন…” তখনি তারা কথাটা শোনার সকল আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তারা শুনতে চায় না। তাই আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা এই অসাধারণ উপমা প্রদান করার সময় কী করলেন? এই উপমাটি সমস্ত মানব জাতির জন্য।

“ইয়া আইয়ুহান নাস…” এখন মানব জাতির সবাই তো আল্লাহর কথা শুনতে আগ্রহী নয়। তাই আল্লাহ বলছেন যদিও তোমরা তাঁর কথা শুনতে আগ্রহী নও, উপমাটি অন্তত মনোযোগ দিয়ে শোন।

“দুরিবা মাসাল, ফাসতামিউ লাহু …” উপমাটিকে একবার সুযোগ দিয়ে দেখো। এখন তিনি নিজের সম্পর্কে একটি বর্ণনা দিচ্ছেন।

তিনি বলেন – إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ لَن يَخْلُقُوا ذُبَابًا – “তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না। ” وَلَوِ اجْتَمَعُوا لَهُ – “এ উদ্দেশে তারা সবাই একত্রিত হলেও।”

এই কথা শোনার পর আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, তারা মাছি সৃষ্টি করতে পারবে না – মানে কী? এই কথা বলার উদ্দেশ্য কী? আর মাছি তো আর চিত্তাকর্ষক কোন প্রজাতি নয়। বরং মাছি হল মানুষের অভিজ্ঞতায় অন্যতম বিরক্তিকর একটি জীব। তাদের দেখলেই আপনি তাড়িয়ে দিতে চান। সাধারণত নোংরা এবং দুর্গন্ধময় জায়গায় তাদের দেখা যায়। আর ভালো খাবারের উপর যদি মাছি বসে আমরা মনে করি তারা খাবার নষ্ট করে ফেলছে। তাই আমরা এদের তাড়িয়ে দেই। আল্লাহ বলছেন –

“তারা কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না।”

এর সাথে আরেকটি ব্যাপার যোগ করলেন

– ۖ وَإِن يَسْلُبْهُمُ الذُّبَابُ شَيْئًا لَّا يَسْتَنقِذُوهُ مِنْهُ – “আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায়, তারা তার থেকে তা উদ্ধারও করতে পারে না। ”

প্রথমত, তারা একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না। তারপর, এই মাছিটি…মনে করুন, আপনি কোন খাবার খাচ্ছেন এমন সময় একটি মাছি এসে আপনার খাবারের উপর এক সেকেন্ডের জন্য বসল। তারপর পা দিয়ে অল্প একটু খাবার নিয়ে নিলো। আপনি তখন হাত নেড়ে মাছিটিকে তাড়িয়ে দিলেন। এখন আল্লাহ বলছেন, যদি কোন মাছি এসে তাদের খাদ্যের উপর বসে এবং তাদের কাছ থেকে খাদ্যের কিছু অংশ ছিনিয়ে নিয়ে যায়, গোটা মানব জাতি একত্রিত হলেও তার থেকে তা উদ্ধার করতে পারে না। এ কথাই তিনি বলেছেন। لَّا يَسْتَنقِذُوهُ مِنْهُ – তারা এটা পুনরুদ্ধার করতে পারবে না।

এখন মানুষের ক্ষেত্রে – কিছু মানুষ শক্তিশালী আর কিছু মানুষ দুর্বল। কিছু মানুষ গরিব আর কিছু মানুষ ধনী। অনেক মানুষের কোন প্রভাব-প্রতিপত্তি নেই। তাদের হয়তো থাকার একটি ঘরও নেই। আবার এমন অনেক মানুষ আছে যারা পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করার ক্ষমতা রাখে। যারা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইতিহাসে এবং আজকের দিনেও। এখন ফেরাউনের মত রাজা যদি নিজ প্রাসাদে বার্গার খেতে বসে, আর এমন সময় একটি মাছি এসে তার খাবারের উপর বসে তাকে অসম্মান করে…। ভাবতে পারেন? রাজা খেতে বসল আর কেউ একজন এসে বলল, এই খাবারটা আমার; আমি এই কেচআপ খাব। এমন করলে লোকটা মারা পড়বে। এখন মাছি এসে যদি তার খাবার খাওয়া শুরু করে …আর ফেরাউন রাগান্বিত হয়ে বলে – “কতো বড় সাহস! আমি আমার খাদ্য এর কাছ থেকে ফেরত চাই।” এমনকি যদি তারা মাছিটি ধরেও ফেলে কী করতে পারবে? তারা এই খাদ্য পুনরুদ্ধার করতে পারবে না।

এই অসাধারণ উপমাটির মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আগেকার দিনে যারা মূর্তি পূজা করতো তাদের নিকট একটি ব্যাপার পরিষ্কারভাবে তুলে ধরলেন। এমন মূর্তিপূজকদের অনেকেই তাদের মূর্তির সামনে খাবার পেশ করতো। তারা দুধ, মধু, চকলেট, আইসক্রিম – আমি জানিনা – যাই আনুক না কেন, মূর্তির সামনে এই খাবারগুলো পেশ করতো। তারপর তারা উপাসনা করতো। আর এই মন্দিরগুলো সাধারণত উন্মুক্ত থাকে। এখন মূর্তির সামনে যদি এভাবে খাবারগুলো উন্মুক্ত থাকে কে এগুলো খেতে আসবে? মাছি আসবে। একটি মাছি গিয়ে তাদের বিশাল মূর্তির নাকের ডগায় গিয়ে বসে। ”এই যে, তোমার খাবার এখন আমি খাবো। মাইন্ড করবা নাতো?” তারপর এটি খাবারের উপর বসে এক টুকরো খাবার নিয়ে উড়ে চলে যায়। আর তাদের দেবতার কোন ক্ষমতাই নেই এই খাবার প্রতিরক্ষা করার। এখন তাদের এই পবিত্র?

খাবার যাতে তারা বিভিন্ন তন্ত্র মন্ত্র পড়ে ফুঁ দেয়, প্রার্থনা করে ইত্যাদি…এখন আপনি সেখানে গিয়ে যদি বলেন, “আরে! এটা তো আমার সবচেয়ে প্রিয় চকলেট” তারপর একটা নিয়ে নিলেন। তখন তারা কি করবে? আপনার হাত থেকে কেড়ে নিবে। আর খেয়ে ফেললে হয়তো আপনাকে মারতে আসবে। কারণ, তাদের মতে আপনি এটাকে অপবিত্র করে ফেলছেন। তথাপি, তাদের ধর্ম প্রতি মুহূর্তে অপমানিত হচ্ছে কার দ্বারা? মাছির দ্বারা। আল্লাহ বলছেন এই মাছি তোমাদেরকে শেখাচ্ছে এই দেবতাগুলো শক্তিহীন। মাছি তোমাদেরকে এটি শিক্ষা দিচ্ছে। তো, আল্লাহ বলছেন আমি তোমাদেরকে ছোট একটি উদাহরণ দিচ্ছি। আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে ডাক প্রথমত, তারা এমনকি একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না। আর মাছি যদি তাদের খাবারের কিছু অংশ কেড়ে নিয়ে যায়, কিভাবে তারা এই খাবার উদ্ধার করবে? মজার ব্যাপার হলো, আমি এই আয়াতটির কারণে মাছি সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম। কিভাবে মাছি খাবার খায়? আমি জানতাম না – কোনো মাছি যখন খাবারের উপর বসে, সে তখন মুখ থেকে লালা ছেড়ে দেয়। তারপর এই লালা দিয়ে একটি ব্যাগ তৈরী করে। খাবার এই ব্যাগের ভেতর যায়, তারপর সে এই ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। আর এই ব্যাগ হল এসিডের তৈরী। খাবার ব্যাগের মধ্যে প্রবেশ করার সাথে সাথে ক্যামিক্যাল রিয়্যাকশন শুরু হয় এবং খাদ্যটি চিরকালের জন্য পরিবর্তিত হয়ে যায়। তাই, কথার কথা – যদি আপনি আয়াতটিকে ভুল প্রমান করার জন্য কোনো টেকনোলজি আবিষ্কার করেন। কোনোভাবে মাছিটাকে ধরে ফেললেন। তারপর পেট্রি ডিশের উপর রেখে এই খাবার উদ্ধারের দায়িত্ব দিলেন সাইন্টিস্টদের। কোনো লাভ হবে না, কারণ মাছিটি খাবারটি স্পর্শ করার সাথে সাথেই এটি হারিয়ে গেছে। আপনার পক্ষে আর এটি ফেরত পাওয়া সম্ভব নয়। لَّا يَسْتَنقِذُوهُ مِنْهُ – তারা এটা পুনরুদ্ধার করতে পারবে না।

এখন আসছে আয়াতের শিক্ষা। আল্লাহ সর্বশক্তিমান এই ব্যাপারটি নিয়ে আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করতে চেয়েছি। এই উপমার সাথে আল্লাহর সর্বশক্তিমান হওয়ার সম্পর্ক কী? আল্লাহ এখানে একটি মূলনীতি সেট করে দিচ্ছেন। আপনি যদি এই মূলনীতিটি বুঝতে পারেন তাহলে আল্লাহর এই নামটির তারিফ করতে শিখবেন। উপমাটি দেয়ার পর আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা বলেন

– ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْمَطْلُوبُ –

এটি আল কুরআনের অন্যতম শক্তিশালী একটি স্টেটমেন্ট। আমরা জানি পৃথিবীর প্রায় সব ভাষাতেই জ্ঞানগর্ভ কিছু প্রবাদ রয়েছে। এই আয়াতাংশটি কুরআন মাজিদের এরকম একটি গভীর অর্থপূর্ণ বক্তব্য। এটি ফ্রেইমে আটকিয়ে রাখার মত বা প্রতিদিন চিন্তা করার মত একটি কথা। খুবই ছোট্ট একটি স্টেটমেন্ট

– ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْمَطْلُوبُ –

কিন্তু খুবই শক্তিশালী একটি সত্য কথা। এর মানে কী? এর মানে হল, প্রার্থনাকারী আর যা প্রার্থনা করা হয় – দুইটি বিষয়, যে প্রার্থনা করছে এবং যা প্রার্থনা করা হচ্ছে – উভয়টি প্রকৃতিগতভাবেই দুর্বল। যে কিছু কামনা করছে সে যেমন দুর্বল, ঠিক তেমনি যা কিছু কামনা করা হচ্ছে তাও দুর্বল। চলুন, এখন প্রার্থনাকারী এবং যা প্রার্থনা করা হচ্ছে তা নিয়ে কথা বলা যাক। কোন যুবক হয়তো বিয়ে করতে চাচ্ছে, কেউ হয়তো চাকরি পাওয়ার আশায় আছে, কেউ হয়তো আরও বেশি টাকা উপার্জনের ধান্দায় আছে, কেউ হয়তো তার স্বাস্থ্যসমস্যা ঠিক করার চেষ্টায় রত, কেউ হয়তো তার অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় নিয়োজিত, আবার কেউ হয়তো পারিবারিক সমস্যা মোকাবেলার চেষ্টায় আছে, প্রত্যেকেই কিছু না কিছু আকাঙ্ক্ষা করছে।

প্রত্যেকেই তাদের জীবনে কিছু না কিছুর অভাব বোধ করছে। মূলতঃ আমরা দুটি জিনিসের পেছনে ছুটি – হয় আপনি এমন ভালো কিছুর সন্ধানে আছেন যা এখনও অর্জন করতে পারেননি…যেমন, গাড়ি চালিয়ে কোথাও যাচ্ছেন আর রাস্তার পাশে চমৎকার সুন্দর একটি বাড়ি দেখলেন। তখন ভাবতে থাকলেন – “একদিন ইনশাআল্লাহ একদিন এরকম একটি বাড়ির মালিক হব।”

অথবা কোন গাড়ির দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবেন ‘একদিন আমিও এরকম একটি গাড়ি কিনব।’ এরপর আপনি আপনার মোবাইলে ব্যাংকের একাউন্ট চেক করেন কত টাকা আছে… “(এভাবে জমাতে থাকলে) আর মাত্র ১২ বছর পরেই গাড়িটি কিনতে পারব।” তাহলে প্রতিটি মানুষ এমন কিছুর পেছনে ছুটে যা এখনও সে অর্জন করতে পারেনি। এটা হল এক ধরনের আকাঙ্ক্ষা। আর দ্বিতীয় ধরনের আকাঙ্ক্ষা হল – আমাদের জীবনে নানারকম সমস্যা রয়েছে। আমরা হয়তো কোন কঠিন গ্যাঁড়াকলে আটকা পড়েছি, বা কোন গভীর দুঃখ, পারিবারিক সমস্যা, মানসিক অশান্তিতে আছি – এবং আমরা এর থেকে মুক্তি চাচ্ছি। তাহলে হয় আমরা ভাল কিছু জীবনে যুক্ত করতে চাচ্ছি অথবা খারাপ কিছু জীবন থেকে দূর করতে চাচ্ছি। সংক্ষেপে বলতে গেলে মানব জীবনের সকল চেষ্টা মূলত এ দুটো বিষয়কে কেন্দ্র করেই।

ঠিক কিনা? এখন, আল্লাহ বলছেন যেহেতু তোমরা সবসময় কিছু না কিছু পাওয়ার ইচ্ছে করছ তাই তোমরা দুর্বল। তোমরা দুর্বল। তুমি অর্থ চাও, তুমি দুর্বল। তুমি শান্তি চাও, তুমি দুর্বল। তুমি স্থিরতা চাও, তুমি দুর্বল। তুমি নিরাপত্তা চাও, তুমি দুর্বল। তুমি সুখ চাও, তুমি দুর্বল। তুমি সামাজিক পদমর্যাদা চাও, তুমি দুর্বল। তুমি ডিগ্রী চাও, তুমি দুর্বল। তুমি বিয়ে করতে চাও, তুমি দুর্বল। তুমি সন্তান চাও, তুমি দুর্বল। তুমি তোমার সন্তানকে বিয়ে করাতে চাও, তুমি দুর্বল।

তুমি যে এই সমস্ত কিছুর আকাঙ্ক্ষা করছ, তা তোমাকে কী বনাচ্ছে? দুর্বল। আর যে জিনিসগুলো তুমি কামনা করছ, তাও দুর্বল। আচ্ছা, আমি বুঝলাম, আমার যেহেতু এগুলো নেই তাই আমি দুর্বল। কিন্তু আমি যে জিনিসগুলো কামনা করছি সেগুলো কিভাবে দুর্বল?

আপনাদের তার একটি উদাহরণ দিচ্ছি। অনেক আগে আমি একবার ‘এবনরমাল সাইকোলজির’ একটি ক্লাসে উপস্থিত ছিলাম। আমাদের প্রফেসর এক যুবকের একটি উদাহরণ দিল, ঘটনাটি ঘটেছিল সত্তরের দশকের শেষ দিকে। সেসময় যুবকটি New York University (NYU) তে ‘ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির’ উপর পিএইচডি করছিল। তখনকার সময় ইমেইল, হার্ড ড্রাইভ এগুলো ছিল না। ছেলেটি তার ৪৫৫ পৃষ্ঠার থিসিস টাইপ করে ডিপার্টমেন্টে জমা দিল। আর এই থিসিস তৈরি করতে তার পাঁচ বছর সময় ব্যয় হয়েছিল। এটার দ্বিতীয় কোন কপি ছিল না। সে অরিজিনাল কপি ডিপার্টমেন্টে জমা দিল। কিন্তু ডিপার্টমেন্ট তার থিসিসটি হারিয়ে ফেলল। ৫ বছরের পরিশ্রম বৃথা গেল। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত তাকে দেখা যেত – সে তখন বুড়ো হয়ে গিয়েছিল – NYU এর ক্যাম্পাসে ঘুরে ঘুরে সবাইকে বলত, “এখানে পড়তে যেও না, তারা তোমার কাজ চুরি করে ফেলবে। তারা তোমার জীবন ধ্বংস করে ফেলবে। এখানে শিখতে যেও না, এরা একদল প্রতারক।” আর কাউকে কোন কাগজ জমা দিতে দেখলে বলত – “তাদেরকে এটা দিও না, তারা এটা হারিয়ে ফেলবে।” তাকে কয়েক সপ্তাহ পর পর মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হত। তারপর ছেড়ে দিলে সে আবার NYU ক্যাম্পাসে ফিরে আসতো। আমরা যখন ক্লাসে এটা নিয়ে আলোচনা করছিলাম। আমি ভাবলাম – সুবহানাল্লাহ! দয়ুফাত তলিবু ওয়াল মাতলুব। সে বছরগুলোতে এই মানুষটির মাথায় সবচেয়ে বড় জিনিস ছিল কোনটি? তার ডিগ্রী। “আমি এর জন্যই কাজ করছি, এটাই আমার সব। আমি যখন এই ডিগ্রী পাবো আমি সফল হব। আমার নামের সাথে এই লেবেল লাগানো হবে। অবশেষে, আমি আমার পরিশ্রমের ফল পেতে যাচ্ছি। এত বছরের কঠিন পরিশ্রম এখন এসে অর্থপূর্ণ হবে।” সে এই একটি জিনিসের প্রতি খুবই দুর্বল ছিল, অন্য কিছুর কোন দাম নেই। আর যখন এই জিনিসটি হারিয়ে গেল…। কারণ যে জিনিসটির তুমি আকাঙ্ক্ষা করছ, সেটি শক্তিশালী কোন জিনিস নয়। এটি হারিয়ে গেছে। আর যখন এটি হারিয়ে গেল, তুমি ভেঙ্গে পড়েছ। তাই আল্লাহ আমাদের একটি ব্যাপার শিক্ষা দিচ্ছেন – আমরা যেসব জিনিসের পেছনে ছুটে বেড়াই, সেগুলো আসলে দুর্বল।

আমরা ভাবি, এগুলো কোনভাবে আমাদের শক্তিশালী করে তুলবে, আমাদের এক ধরনের স্বীকৃতি দিবে বা আমাদের আরও বেশী নিরাপদ করে তুলবে। আমরা যদি আরও টাকা কামাতে পারি তাহলে আরও বেশি সুখী হব। যদি এই সমস্যাটি কেটে যায়, তাহলে সবকিছু নিখুঁত হয়ে যাবে। “ইস! আমাদের যদি একটা বাড়ি থাকতো। আমরা বহু দিন ধরে এই এপার্টমেন্টে বাস করছি, প্রতি মাসে অনেক টাকা ভাড়া দিচ্ছি, কত টাকা নষ্ট হচ্ছে। যদি নিজেদের একটা বাড়ি থাকতো, তাহলে সব কিছু ঠিক হয়ে যেত।” তারপর যখন বাড়ির মালিক হন – প্রপার্টি ট্যাক্স, বাথরুমের প্লাম্বিং কাজ করে না, রান্নাঘরে সমস্যা, ফাউন্ডেশন কাঁপছে, দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে, শেওলা জমেছে, প্রতিবেশীরা পাগল বানিয়ে দিচ্ছে, জানালা ভেঙ্গে গেছে…এভাবে হাজারো রকম সমস্যা এসে জড়ো হয়। ভেবেছিলেন নিজের বাড়িতে উঠলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এখন শুধু সমস্যা আর সমস্যা। আমরা এমনসব জিনিসের পেছনে ছুটে বেড়াই, সেগুলো কী? দুর্বল। আর প্রতিবার যখন আমরা এমনটা করি, এটা প্রমাণ করে দেয় আমরা কতটা দুর্বল। আপনি যদি সারাক্ষণ চিন্তা করতে থাকেন, আমার যদি ঐ জিনিসটি থাকতো তাহলে আমি সুখী হতাম। যদি অমুক সমস্যাটি চলে যেত! ঐ মানুষটা আমার জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে, যদি সে একটা বাসের ধাক্কা খেত! আমার জীবনটা কত ভাল হয়ে যেত!

প্রতিবার বাস দেখলেই আমি এই দোয়া করি 🙂 আমরা সবসময় নিজেদের একথা বলে বুঝাই – যদি অমুক মানুষটি বা অমুক সমস্যাটি জীবন থেকে চলে যেত তাহলে জীবন কত সুন্দর হয়ে যেত! অথবা, যদি অমুক দুঃখটি দূর হয়ে যেত তাহলে সবকিছু পারফেক্ট হয়ে যেত। যদি মানুষের পরিবর্তন হত, যদি পরিস্থিতির পরিবর্তন হত, যদি পরিবেশের পরিবর্তন হত…এভাবে আমরা ভাবতে থাকি সবকিছুর পরিবর্তন হলে জীবন সুন্দর হয়ে যেত। তাহলে, আমাকে আর দুর্বল থাকতে হত না। আমরা ভোগের উপর ভোগ করতে থাকি, আর এতে পুরোপুরি আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা বর্ণনা করছেন জানো তুমি কত দুর্বল? তুমি একটি মাছির চেয়েও দুর্বল। তুমি একটি মাছির চেয়েও দুর্বল। অন্বেষণকারী এবং যা অন্বেষণ করা হয় উভয়টি দুর্বল। যখন তিনি এভাবে বলছেন আমি আপনি মজ্জাগতভাবে, অবিশ্বাস্যভাবে কতটা দুর্বল…একটু চিন্তা করে দেখুন, প্রতিদিন কতকিছু আপনার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। আপনাদের প্রত্যেকের মাথায় বিভিন্ন জিনিসের চিন্তা আছে, প্রতিদিন।

আমরা এখন রোজা রাখছি, নামাজ পড়ছি, আর আলহামদুলিল্লাহ, নামাজ পড়ার সময় আমরা মনোযোগ ধরে রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু এর বাহিরে আপনার মাথায় কোন চিন্তা ঘুরঘুর করে? আপনি কী নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন? আপনি কী নিয়ে চিন্তা করেন? কোন চিন্তাটি আপনার মাথায় সারাক্ষণ ঘুরতে থাকে? কোন জিনিসটির ব্যাপারে ভাবেন এটা যদি থাকতো? আর কোন জিনিসটির ব্যাপারে ভাবেন এটা যদি না থাকতো? কারো জন্য অসুস্থতা, কারো জন্য ডিপ্রেশন, কারো জন্য দুঃখ, কারো জন্য হয়ত কোন ব্যক্তি…।

কেউ কেউ ভাবেন, যদি ঐ মানুষটি আমার ব্যাপারে খুশি থাকতো, তাহলে আমি ভাল থাকতাম। তারা অন্য একজনকে খুশি করার চিন্তায় মশগুল থাকেন। যদি আমার বাবা আমার উপর খুশি থাকতো, তাহলে আমি সুখী হয়ে যেতাম। সবকিছু ঠিক হয়ে যেত। কিন্তু আপনার বাবা তো একজন মানুষ মাত্র। তিনি আজ যদি খুশি হয়েও থাকেন, কাল হয়তো তাঁর জীবন প্রদীপ নিভে যেতে পারে।

তারপর আপনি কি করবেন? এরপর আপনি কোথায় দাঁড়াবেন? সুতরাং, আমি আর আপনি এভাবে এসব জিনিসের পেছনে ছুটতে থাকি। এর পরের আয়াতে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা বলেন

– مَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ – “ তারা আল্লাহকে যথাযথ মর্যাদা দেয় না।” إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ – নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিধর, মহাপরাক্রমশীল।

আমরা দুর্বল, কিন্তু আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনি আরও বলেন তোমরা আল্লাহকে যথাযথ মর্যাদা প্রদান করনি। জানেন? তিনি আমাকে আর আপনাকে কী বলছেন? তিনি বলছেন তোমরা বিভিন্ন জিনিসের পেছনে ছুটবে, তোমরা বিভিন্ন মানুষের পেছনে ছুটবে, তোমরা এই দুনিয়ায় যত কিছুর পেছনেই ছুটো না কেন – এর প্রতিটি জিনিসের একদিন সমাপ্তি হবে, এর প্রতিটি জিনিস দুর্বল। এই কারণে তুমিও দুর্বল হয়ে পড়েছ। এইজন্য তুমি বার বার দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছ। ফলশ্রুতিতে, তুমি বার বার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছ। কিন্তু, শেষবারের মত, যখন তুমি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে তোমার যত চাওয়া-পাওয়া আছে তাঁর মাঝে সবার চেয়ে বড় চাওয়া-পাওয়া হল তোমার মালিককে খুশি করা। যখন তুমি আল্লাহকে চাও, যখন তুমি সবকিছুর উপরে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিয়ে থাক, যখন তুমি সত্যিকার অর্থে তোমার অন্তর থেকে এটা করতে পারবে, একমাত্র তখনি তুমি শক্তিশালী হয়ে উঠবে। যেহেতু তিনি শক্তিধর। আল্লাহ এইমাত্র আমাদের শেখালেন, যখন তুমি দুর্বল কাউকে পেতে চাও, তখন তুমিও দুর্বল হয়ে পড়। কিন্তু তুমি যদি আল্লাহকে চাও – যিনি শক্তিধর এবং মহাপরাক্রমশালী – তাহলে এটা তোমাকে কেমন করে তুলবে? এটা তোমাকে শক্তিশালী করে তুলবে। আর যখন তুমি শক্তিশালী হয়ে উঠবে, জীবনে বিভিন্ন জিনিস আসবে যাবে কিন্তু তোমার শক্তিমত্তার কোন কমতি হবে না। যে জিনিসের পেছনে তুমি ছুটেছ তা ভেঙ্গে পড়ার কারণে তখন তুমি আর ভেঙ্গে পড়বে না। কারণ তুমি দুনিয়ার এসব তুচ্ছ জিনিসের চেয়েও অনেক অনেক উচ্চ একজনের সন্তুষ্টির অন্বেষণে আছ। দয়া করে বোঝার চেষ্টা করুন, আমি বলছি না যে আপনি এই দুনিয়ার কোন কিছু চাইতে পারবেন না। আমি এটা বলছি না। কিন্তু আয়াতটি আমাদের একটি ব্যাপারে শিক্ষা দিচ্ছে। এমনকি আমরা যখন এসব পার্থিব বিষয় কামনা করব, আমরা বুঝব যে এগুলো দুর্বল। পার্থিব এসব বিষয় জীবনে আসবে যাবে কিন্তু আমরা কখনো আল্লাহকে হারাতে পারব না। লক্ষ্য করুন, মানব জাতির ব্যর্থতা হল, যখন তারা পার্থিব কোন জিনিস পেতে ব্যর্থ হয়, তারা আল্লাহকে ভুলে যায়। তাদের চাওয়া-পাওয়ার জিনিসটি না পেলে তারা নামাজ পড়া ছেড়ে দেয়। তারা যা চায় তা যদি না পেয়ে থাকে, এভাবে বলে – আমি এত দোয়া করলাম কিছুই তো কবুল হল না। এভাবে দোয়া করার অর্থ কী? তারা যখন তাদের আকাঙ্ক্ষার বস্তুটি পায় না, তখন দুঃখ-হতাশায় একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। এবং বলে, আমি তো আল্লাহর সাথে কথা বলার শক্তিও পাচ্ছি না। এমনটি ঘটার কারণ হল, সমস্যায় পতিত হওয়ার পূর্বে আল্লাহর সাথে শক্তিশালী বন্ধন গড়ে উঠেনি। যদি সে বন্ধনটি আগে থেকেই বর্তমান থাকতো… যেমন মূল যদি শক্তভাবে গাঁথা থাকতো তাহলে ঝড় এলে এদিক ওদিক দুলতে থাকলেও সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে পড়তো না। মূলের উপর দাঁড়িয়ে থাকতো। আর ঝড় চলে গেলে আবার ফল দেয়া শুরু করত। এরকম একটি উপমার কথা কুরআনের অন্যত্র এসেছে – أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ হল এমন একটি বৃক্ষের মত যার শিকড় মজবুত এবং শাখা আকাশে উত্থিত। এটাই ঈমানের শক্তি।