— নোমান আলী খান
আল্লাহ আজ্জা ওয়া জ্বাল বলেন –
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ –
“আর আমার বান্দারা যখন আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে।”
আল্লাহ এখানে বলেন নি, যদি আমার বান্দারা জিজ্ঞেস করে, তিনি বলেছেন, যখন আমার বান্দারা জিজ্ঞেস করে। কারণ তিনি আশা করেন যে, এটা অবশ্যই ঘটবে। তিনি আপনার সম্পর্কে আশাবাদী। আপনি হয়তো আপনার সম্পর্কে আশাবাদী নাও হতে পারেন, কিন্তু আল্লাহ আপনাকে নিয়ে আশাবাদী। তিনি রাসূল (স) কে বলেন, যখন তারা আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে….. সাধারণভাবে আয়াতটি তো এমন হওয়ার কথা ছিল, যখন তারা আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, আপনি তাদের বলে দিন আমি নিকটে। কিন্তু আয়াতের বক্তব্য এটা নয়, আয়াতের বক্তব্য হলো – যখন তারা আপনার নিকট আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে… এটা বলার পর তিনি তাঁর রাসূলের সাথে কথা বলা বন্ধ করে আমার আপনার সাথে সরাসরি কথা বলা শুরু করলেন এবং বলেন – নিশ্চিতভাবেই আমি সন্নিকটে।
আয়াতের মাঝখানে এসে বক্তব্যটি আর আল্লাহ এবং রাসূল (স) এর সাথে না হয়ে আল্লাহ এবং আমার আপনার সাথে সরাসরি হয়ে গেলো। বহুদিন যাবৎ আপনি হয়তো আল্লাহর সাথে কথা বলেন না। আপনি যদি কারো সাথে অনেক দিন কথা না বলেন, আপনার মনে হতে পারে সেও হয়তো আপনার সাথে কথা বলতে চায় না। “এতদিন কোথায় ছিলে তুমি?” আপনি অন্য একজনের মাধ্যমে তার সাথে কথা বলতে চান। সে কি এখনো আমার প্রতি রাগান্বিত?আপনি তার সাথে সরাসরি কোনো যোগাযোগ করতে চান না। কিন্তু আল্লাহ আজ্জা ওয়া জ্বাল সেই দেয়ালটি ভেঙে সরাসরি আপনার কাছে আসেন এবং আপনাকে বলেন – নিশ্চয় আমি নিকটে। ‘ফা-ইন্নি ক্বারীব।’
তারপর আপনার হয়তো মনে হতে পারে, আমি তাঁর নিকট থেকে এতো দূরে…. তিনি কেন আমার দোয়ার জবাব দিতে যাবেন? কিন্তু আল্লাহ বলেন –
……أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ – একটি মাত্র দোয়া করা হলেও আমি সাথে সাথে তার জবাব দেই।
যে দোয়া করে সে একটি দোআ করলেও আমি তার জবাব সাথে সাথেই দেই। অন্য কথায়, এই আয়াতে আল্লাহ সে লোক সম্পর্কে বলছেন না, যে ঘন্টার পর ঘন্টা দোয়া করতে থাকে। তিনি এমন একজন সম্পর্কে বলছেন যে মাত্র একটি দোয়া করেছে, একটি মাত্র দোয়া করেছে। আল্লাহ এমন করে বলেন না যে, ওহ, সারা বছর ধরে তুমি পার্টি করে বেড়াতে! আর এখন তোমার কিছু একটার প্রয়োজন হয়েছে তাই আমার কাছে ছুটে এসেছো? দূর হও এখান থেকে। না, না, না, আল্লাহ এভাবে কথা বলেন নি। বরং আল্লাহ বলেছেন – এমনকি আমি এমন ব্যক্তির দোয়ারও জবাব দান করবো। তার এই একবারের দোয়া। আর সেই ব্যক্তির যোগ্যতা কী? আমরা অনেক সময় মনে করি, আপনি যদি বড় কারো সাথে কথা বলতে চান, আপনার কিছু যোগ্যতা থাকা দরকার। এরকমই হয় সবসময়। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও মানুষ মনে করে, আপনি যদি আল্লাহর নিকট কোনো প্রার্থনা করতে চান, আপনার উচিত ভালো পোশাক পরা, মসজিদে যাওয়া, দোয়া করার শ্রেষ্ঠ জায়গা হলো মসজিদে হারাম, কাবা অথবা মসজিদে নববী, আরো ভালো হয় আপনি যদি পাপ করা ক্ষান্ত দিয়ে দোয়া করতে পারেন….আর এর সবগুলোই সত্য।
কিন্তু প্রত্যাশার এই আয়াতে আল্লাহ বলছেন দোয়া করার জন্য তোমার যে যোগ্যতা থাকা চাই তা হলো- তুমি দোয়া করার জন্য প্রস্তুত, শুধু এটাই। আপনি হয়তো চরম অন্ধকারে নিমজ্জিত কেউ হতে পারেন, শুধু আল্লাহর নিকট ফিরে আসুন। আপনি কাউকে চমৎকৃত করার জন্য এটা করছেন না, আপনি কতটা ধার্মিক! কাউকে এটা দেখানোর জন্যেও করছেন না। অথবা আপনার আশ-পাশের কারো মন্তব্যেরও আপনি তোয়াক্কা করেন না। মানুষের সমস্যা হলো, মানুষ হয় আপনাকে অতিরিক্ত ভালো মনে করবে অথবা অতিরিক্ত খারাপ মনে করবে। মানুষ মনে করতে পারে, আপনি খুবই ভালো মানুষ। কিন্তু আপনি তো ভালো করেই জানেন আপনি কেমন। অথবা তারা মনে করতে পারে, আপনি চরম কু-প্রকৃতির একজন মানুষ। আপনার মাঝে ভালো কিছুর অস্তিত্ব নেই। তারা আসলে আপনার সত্যিকারের অবস্থা জানে না। কিন্তু আল্লাহ জানেন এবং আপনি নিজে জানেন। মানুষের ভুল মন্তব্যের কারণে নিজেকে প্রতারিত হতে দিবেন না। এটা হতে দিবেন না। অনেক সময় এমনকি আপনি নিজেও আপনার প্রকৃত অবস্থা জানেন না। কিন্তু আল্লাহ জানেন। লোকে আপনার সম্পর্কে ভালো বা মন্দ যাই বলুক না কেন এর প্রতি কোনো গুরুত্ব দিবেন না। আপনি শুধু আল্লাহর নিকট ফিরে আসুন এবং তাঁর নিকট দোয়া করুন। আশে পাশের সব কোলাহল ভুলে যান। -উস্তাদ নোমান আলী খান