জেলখানা থেকে এক ভাইয়ের চিঠি।

— নোমান আলী খান

সবাইকে আসসালামু আলাইকুম। আজকে আলোচনা করার প্ল্যান ছিল না। আমি একটা চিঠি পেয়েছি। এরপর আর নিজেকে থামাতে পারিনি। আপনাদের চিঠিটি পড়ে শুনাচ্ছি। আমি আমার ভাইয়ের নাম গোপন রাখবো।

“আমার নাম …(আমি তাকে আমার প্রিয় ভাই বলবো।) চিঠির পোস্ট মার্ক থেকে আপনি বুঝবেন, আমি বর্তমানে জেলে বন্দী আছি। জীবনে এমন কিছু ভুল কাজ করেছি, যা নিয়ে আমি গর্বিত নই। কিন্তু এই রামাদানে, আমার মন বলছে আল্লাহ্‌ আমাকে পরিবর্তন করে দিবেন, আমার জানার চেয়েও বেশি উপায়ে। আপনাদের সবার মত ইসলাম সম্পর্কে আমি অতটা জ্ঞানী নই। দেখুন, আল্লাহর রহমতে আমি অনেকটা স্বশিক্ষিত, আমার প্রতিনিয়ত অনুসন্ধান এবং অধ্যয়নের মাধ্যেম। আমার অন্তরে ইসলাম আমার ধর্ম এবং মুহাম্মাদ (স) আমার নবী, শেষ নবী হিসেবে। আমি গত বছর থেকে কুরআন এবং হাদিস অধ্যয়ন করার চেষ্টা করছি। আমি অন্য ভাইদের কাছে সাহায্যের আবেদন করিনি। কারণ, আমি ভয় পাচ্ছি সমাজের লোকজন আমাকে অপমান করে থামিয়ে দিবে। সত্যি বলতে, আমার সাহায্য দরকার আরও শিখার ক্ষেত্রে। কারণ, আমি একা একা ভালভাবে শিখতে পারবো না। যে কারণে আমি আপনাকে এই চিঠি পাঠিয়েছি, আমি জেলে থেকে আমার ট্যাবলেটে নোমান আলী খানের অডিও পডকাস্ট শুনছি। এই খুৎবাগুলো প্রতিদিন আমাকে শক্তি এবং অনুপ্রেরণা যোগায়। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আমি এগুলোর জন্য অনেক বেশি বাধিত এবং কৃতজ্ঞ। কারণ, আল্লাহ আমাকে আমার এই ভ্রমণে এতো বেশি সাহায্য করেছেন যে, আমি নিজের ভেতরে পরিবর্তন অনুভব করছি। আর আমার ঈমান দিন দিন আরো শক্তিশালী হচ্ছে। এমনকি এমন দিনগুলোতেও যখন মুসলিম থাকা খুবই কঠিন।

যাইহোক, আগামী কাল রামাদান। (চিঠিটি রামাদান শুরু হওয়ার পূর্বে লিখা হয়।) আমার কাছে পড়ার উপকরণ খুবই কম। এবং ভালোভাবে শেখানোর জন্য তেমন কোনো ভাইও নেই। তাই, আমি আমার বোনকে বলেছি গুগুলে আপনার ঠিকানা খুঁজতে। যাইহোক, ভাই প্লিজ, আমি কি আপনার কমিউনিটির অংশ হতে পারবো? আপনার কি এমন কোনো কোর্স আছে যা আমাকে আরবি শেখার ক্ষেত্রে এবং আমার ঈমান শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে? আমি এমন একটি জেলে বন্দি যেখানে শুধু খ্রিস্টান ধর্মের শিক্ষা প্রদান করা হয়। আপনার খুৎবাগুলো ছাড়া আমি কোনো ইসলামী শিক্ষা লাভ করতে পারতাম না। আরেকটি কথা, আপনার পডকাস্টে সর্বশেষ খুৎবা অক্টবোর ২০১৭ এর। (তো, সে কয়েক বছর আগের জিনিস শুনছে।) যদি সম্ভব হয়, দয়া করে এগুলো আপডেট করবেন। আমি যেমন বলেছি, আমার এখানে শুধু খ্রিস্টান সার্ভিস আছে। আর তারা মুসলিমদের সাহায্য করবে না। আমি একটি নতুন টাওয়েলে সালাত আদায় করছি। নিজের একটি রুমালকে টুপি হিসেবে ব্যবহার করি। আমার মনে হচ্ছে, রামাদান পালন করতে হলে আমাকে আমার খাবার জমা করে রাখতে হবে। দৃঢ়তার সাথে বলছি ভাই, কোনো কিছুই আমাকে সিয়াম পালন থেকে বিরত রাখতে পারবে না। তাই, আপনি যদি দয়া করে কোর্স এবং পড়ার উপকরণ দিয়ে সাহায্য করতে পারেন এবং একটি টুপি দিয়ে, আমি কৃতজ্ঞতার সাথে তার তারিফ করবো। আমার কথাগুলো একজন ভাই হিসেবে লিখেছি। ভাই, আপনি যদি আমাকে সাহায্য করেন প্লিজ আলাদা করে একটি চিঠিও লিখে পাঠাবেন যে, আপনি সাহায্য পাঠিয়েছেন। কারণ, আমার মনে হয় তারা জিনিসগুলো গ্রহণ করে আমার জিনিসপত্রের সাথে রেখে দিবে আর আমাকে কখনো জানাবে না। থ্যাংক ইউ। আপনার মুসলিম ভাই।”

এই চিঠিটা আজকে পড়লাম। পড়ার পর নিজের অন্যান্য কাজগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলাম। এবং এই আয়াগুলো নিয়ে চিন্তা করতে বাধ্য হলাম। তো, আমি আপনাদের সবার সামনে এই আয়াগুলো পড়ছি।

قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ – “বল, ‘হে আল্লাহ! তুমি সমুদয় রাজ্যের মালিক।”

মালিকানা এবং রাজত্ব দুটি ভিন্ন জিনিস। আপনি যখন কিছুর মালিক তখন তা ছোট জিনিসের প্রতি নির্দেশ করে। যেমন, আমি একটি কলমের মালিক। আমি একটি গাড়ির মালিক। আমি একটি চেয়ারের মালিক, এরকম কিছু। ছোট ছোট জিনিস। এটা হল মালিকানা। কিন্তু রাজত্ব ছোট ছোট জিনিসের জন্য নয়। রাজত্ব হল কোন রাজ্যের জন্য, দেশের জন্য, সাম্রাজ্যের জন্য। এটা হল রাজত্ব। আল্লাহ্‌ মালিক শব্দটিকে মূলকের প্রতি ইদাফাত করার মাধ্যমে আমাদের জানাচ্ছেন, তিনি একই সাথে মালিক এবং রাজা। আমাদের পার্থক্যটা জানা উচিত। কেন আল্লাহর এই নাম – যেই নামে আমরা তাঁকে ডাকি – কেন এতো শক্তিশালী? যখন আমি কোন কিছুর মালিক, এর নিয়ন্ত্রণ আমার হাতে। আমি যদি আমার গাড়ির মালিক হই, আমি তেল পরিবর্তন করতে পারি, গ্যাস নিতে পারি, এর ভেতরে পরিষ্কার করতে পারি। আমি নিজে নিজে এর যত্ন নিতে পারবো। কারণ, আয়তনের দিক থেকে এটি ছোট। কিন্তু, আমি যদি একটি সাম্রাজ্যের সম্রাট হই, আমার পক্ষে এর প্রতিটি রাস্তার দিকে লক্ষ্য রাখা সম্ভব নয়। আমার পক্ষে প্রতিটি সরকারি অফিসে কী হচ্ছে তা দেখা সম্ভব নয়। আমার বিভিন্ন লোক নিয়োগ করা আছে। কারণ, আমি রাজা। তাই, আমি অন্য মানুষদের নিয়োগ করি বিভিন্ন বিভাগের দেখাশোনা করার জন্য। কারণ, আমার পক্ষে তো মাইক্রো-মেনেজ করা সম্ভব নয়। অতএব, মালিক ছোটো খাটো জিনিসের যত্ন নিতে পারেন। কিন্তু বড় কোনো জিনিসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তার থাকে না। কারণ, এটা তার সামর্থ্যের অধিক। আর যখন সে বিশাল কোনো রাজ্যের মালিক হয়ে যায়, তখন সে আর মালিক থাকে না, রাজায় পরিণত হয়।

তখন তার পক্ষে আর প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ের খবর সম্ভব হয় না। আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা আমাদের মালিক এবং সকল রাজত্বের মালিকানাও তাঁর। তাই রাজ্য যত বড়ই হোক না কেন, তিনি প্রত্যেকের যত্ন নিচ্ছেন এবং প্রতিটি জিনিসের যত্ন নিচ্ছেন। তিনি মাইক্রো এবং ম্যাক্রো উভয় বিষয়কে এই আয়াতে এক করে দিলেন। তো, আল্লাহ্‌ আমাদেরকে বলছেন তিনি শুধু আমাদেরকে মালিকানাই প্রদান করেন না, তিনি রাজত্বও প্রদান করে থাকেন। যদি চান তিনি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দিতে পারেন।

“তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর।” وَتَنزِعُ الْمُلْكَ مِمَّن تَشَاءُ – একজন ফকিরকেও আল্লাহ্‌ বিশাল রাজ্য প্রদান করতে পারেন।

আবার কারো বিশাল রাজত্ব থাকতে পারে, আল্লাহ্‌ চাইলে তাদের থেকে তা কেড়ে নিতে পারেন। তাদের হাতে তখন আর কিছুই থাকবে না। وَتُعِزُّ مَن تَشَاءُ – “আর যাকে ইচ্ছা তুমি সম্মান দান করো।” যাকে ইচ্ছা তুমি কর্তৃত্ব প্রদান করো। وَتُذِلُّ مَن تَشَاءُ – “আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর।” بِيَدِكَ الْخَيْرُ – তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ – নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল। تُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ – তুমি রাতকে দিনের ভেতরে প্রবেশ করাও। وَتُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ – এবং দিনকে রাতের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দাও। وَتُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ – আর তুমিই জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করে আন। وَتُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ – এবং মৃতকে জীবিতের ভেতর থেকে বের কর। وَتَرْزُقُ مَن تَشَاءُ – আর তুমিই যাকে ইচ্ছা রিজিক প্রদান করো بِغَيْرِ حِسَابٍ – “হিসাব ছাড়া।” কেউ এর জন্য আপনার উপর তদারকি করতে পারে না, কেউ আপনাকে প্রশ্ন করতে পারে না। ‘কেন আপনি অমুকে এতো বেশি দিলেন আর অমুকে দিলেন না?’ আপনি যাকে ইচ্ছা তাকে প্রদান করেন আপনার আদেশ অনুযায়ী। আমি এই আয়াত নিয়ে চিন্তা করছিলাম। কারণ, এই ব্যক্তি, এই অসাধারণ ব্যক্তি, তার চিঠি শুরু করলো এই বলে- ‘আমি জীবনে এমনসব কাজ করেছি যা নিয়ে আমি গর্বিত নই।’

সে আরও লিখল, ‘আমি মুসলিম কমিউনিটির কাউকে লিখতে লজ্জা পাচ্ছিলাম পরিত্যক্ত হওয়ার ভয়ে।’ তার ভেতরে এক ধরণের লজ্জা কাজ করছে…কারণ সে জেলে বন্দী, একটি অপরাধে দোষী, যার জন্য তাকে জেলে থাকতে হচ্ছে। কোনো মানুষই নিজের জন্য এমন পরিস্থিতি চাইবে না। এমন বোঝা নিয়ে হাঁটা চলা করা এবং চিন্তা করা অপমানকর। কেমন ধরণের মানসিক যন্ত্রণা তৈরি করবে যদি কেউ জেনে যায় যে, আমি জেলে ছিলাম। সে জেল থেকে বের হওয়ার পরেও এই ভয় থেকে যাবে। বা আমি অমুক অপরাধ করেছি। অপমানের এমন এক বিশাল বোঝা সে বহন করে চলছে এখনো লিখতে গিয়ে যে, অন্যরা আমাকে পরিত্যাগ করবে। আমরা মানুষের দ্বারা অপমানিত হই। আল্লাহ্‌ এই মানুষের জন্য কী করলেন? সে এমন এক জেলে বন্দী যেখানে শুধু খ্রিষ্টানরা দাওয়াতি কাজ করে। আমি এমনকি বাইয়্যিনার ফ্রি অডিও পেইজ এখনো আপডেট করিনি। সর্বশেষ ২০১৭ তে করা হয়েছিল। আর সে এই অডিও লেকচারগুলো শুনছে। কারণ, তার কাছে শুধু এগুলোর এক্সেস আছে। আল্লাহ্‌ তার জন্য কী করলেন? তিনি ফেরেশতা পাঠিয়ে সে ব্যক্তির অন্তর খুলে দিলেন, ফলে সে একবছর ধরে ইসলাম অধ্যয়ন করছে। কত মানুষ মুক্ত, তাদের টাকা আছে, সুস্থ্যতা আছে, স্বাধীনতা আছে, সময় আছে। আর তারা জীবনে একটি বারের জন্যেও বইটি খুলে দেখল না- ‘দেখি, আমার রব কী বলেছেন। দেখি, আমার রাসূল কী বলেছেন। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অন্তত শুনে দেখি।’

কতজন মানুষ এটা করে? সে মানুষগুলো চিন্তা করে তাদের বড় বড় ডিগ্রি আছে, বাড়ি আছে, গাড়ি আছে। আর তারা আল্লাহর কথা একেবারেই ভুলে গেছে। মানুষ আল্লাহর কথা পুরোপুরি ভুলে যেতে পারে। আর অন্যদিকে, এই মানুষটার এসবের কিছুই নেই। আমরা চিন্তা করি- দেখো, ঐ মানুষটা সমাজে সম্মানীয়, তার চাকরিটা দেখেছো! সে কত টাকার মালিক! জানো! কি দামি জামাকাপড় সে পরে! তার গাড়িটাও অনেক দামি। এই জিনিসগুলোকে আমরা প্রেস্টিজের সাথে যুক্ত করি। আল্লাহর নিকট এগুলোর সাথে প্রেস্টিজের কোনোই সম্পর্ক নেই। আর এই লোকটি জেলে থেকে নিজের ব্যাপারে লজ্জা অনুভব করছেন, এমনকি অন্য কোনো মুসলিমের সাথে যোগাযোগ করতেও লজ্জা পাচ্ছেন। এই লোকটি আল্লাহর নিকট ঐসব মানুষদের চেয়ে অনেক বেশি মর্যাদাবান। আকাশ থেকে ফেরেশতারা এসে তার অন্তরে এই ধারণা গেঁথে দিল যে, তোমার উচিত আল্লাহ্‌ এবং তার রাসূলকে খোঁজা। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহ্‌ বলেছেন, তিনি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান করেন। আপনাদের কি মনে হয়, এই ধরণের মানুষেরা কিয়ামতের দিনও বন্দী থাকবে? আপনাদের কি মনে হয়, এই ধরণের মানুষেরা কিয়ামতের দিনও অপমানিত হবে, লজ্জিত হবে? কিয়ামতের দিন এরাই হবে সেলেব্রিটি। আল্লাহ্‌ তাকে ক্ষমা করে দিন এবং ঈমানের পথে আরও উন্নতি লাভে সাহায্য করুন।

আমি তার সাথে যোগাযোগ করবো এবং হয়তো দেখা করার চেষ্টা করবো। ইনশাআল্লাহ্‌। আমাদেরকে সম্মানিত হওয়ার মানে কী এটাকে আবার সংজ্ঞায়িত করতে হবে। নিজেকে মূল্যবান মনে করার অর্থ কী। আমাকে আমার নিজের জন্য। আপনাকে আপনার নিজের জন্য। কারণ, আমাদের চারপাশের মানুষেরা, আমাদের চারপাশের দুনিয়া…যেমন, যদি একমাসের জন্য বাড়ি ছেড়ে কোথাও যান, বাড়িতে তখন কী পরিমান ধুলা-বালি জমা হয়! তো, এই দুনিয়া প্রতিনিয়ত ধুলা-বালি সংগ্রহ করছে। বাস্তবতা সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধি, বাস্তবতা সম্পর্কে আমাদের আধ্যাত্মিক উপলব্ধিও প্রতিনিয়ত ধুলা-বালি সংগ্রহ করছে। এই ধরণের আয়াতগুলো আমাদের তখন স্মরণ করিয়ে দেয়, সম্মান কোথা থেকে আসে। অপমান কোথা থেকে আসে। রাজত্ব কোথা থেকে আসে। কে দিন রাতের পরিবর্তন ঘটায়। আল্লাহ্‌ এখানে শুধু রাত দিন নিয়ে কথা বলছেন না। তিনি এমন সময়ের কথা বলছেন- যখন আপনি আলোতে থাকবেন, আপনার ভালো জীবন থাকবে, শক্তি থাকবে, পুষ্টি থাকবে। আবার এমন সময়ও আসবে যখন আপনাকে তমসাচ্ছন্ন পরীক্ষাও অতিক্রম করতে হবে।

এরপর তিনি আবার আপনাকে আলোতে ফিরিয়ে আনবেন। আবার অন্ধকারে…আপনি আবার অন্ধকারে পতিত হবেন, তিনি আপনাকে আবার আলোতে ফিরিয়ে আনবেন। আল্লাহ্‌ তাঁর দাসদের জন্য এমনটি করেন। তিনি দেখতে চান তারা কী করে। لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا – যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? (67:2) সুতরাং, প্রথমত, আল্লাহর কাছে সত্যিকারের সেলেব্রিটি তারা হবে না, যাদেরকে আমরা সেলেব্রিটি মনে করি। আমার মত মানুষেরা হবে না। যাদের অনেক ফলোয়ার রয়েছে বা যাদের ভিডিওর লক্ষ লক্ষ ভিউ হয়। সবার পরিচিত বা খ্যাতনামা ব্যক্তিরা হবে না। আল্লাহর নিকট সত্যিকারের কিছু সেলেব্রিটি হবে – ফেরেশতারা যাদের নিয়ে উৎসবে মেতে উঠবেন- এমন মানুষেরা যাদের নামও কেউ কোনোদিন শুনেনি। আল্লাহর কাছে তাদের মূল্য অন্য সবার চেয়ে বেশি হবে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। আমি আল্লাহর নিকট মূল্যবান হতে চাই। আমি এমন মানুষদের অন্তর্ভুক্ত হতে চাই ذكرهم الله فيمن عنده – আল্লাহ্‌ যাদের কথা সেরা সেরা ফেরেশতাদের সাথে আলোচনা করেন। ভাবতে পারেন? এই মানুষটি জেলখানায় বসে বসে একাকীত্ব অনুভব করছে। আর সর্বোচ্চ আকাশে ফেরেশতাদের জমায়েতে আল্লাহ তাঁর এইসব বান্দাদের নিয়ে গর্ব প্রকাশ করছেন। দেখো, আমার বান্দাহ কী করছে। দেখো, কিভাবে সে আরো শেখার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। চিন্তা করে দেখুন, এরকম একটা চিঠি লেখার জন্য কতটুকু মনোবল থাকা দরকার। মেইল বক্সে রাখার জন্য। একটা তোয়ালেতে নামাজ পড়তে পেরে সে কতই না কৃতজ্ঞ। শুধু চিন্তা করে দেখুন, আল্লাহ আমাদের কতকিছু দিয়েছেন। তবু, আমাদের সার্বক্ষণিক মনোযোগ শুধু কি কি নেই তার উপর। আর এমন পরিস্থিতিতে থেকে এই মানুষটি ভাবছে আমি যদি আমার দ্বীন সম্পর্কে আরেকটু শিখতে পারি, তবে আমি সুখী হয়ে যাবো। “আপনি কি আমাকে কিছু পাঠাতে পারেন যেন আমি আরো শিখতে পারি।”