আপনার সন্তান শান্ত হোক অথবা বেয়াড়া/চঞ্চল, তাদেরকে দ্বীন শেখান

যে সকল বাবা-মার দশ বছরের কম বয়সী শিশু-সন্তান রয়েছে, তাদের জন্য, তারা হাত দেখান/উঠান দয়া করে,

দশ বছরের কম বয়সী শিশু-সন্তান…. ঠিক আছে, আপনারা কয়েক জনই আছেন ।

সুতরাং আমাদের জন্য, সবচেয়ে বড় কাজটি হচ্ছে আমাদের সন্তানদের ইসলাম শিক্ষা দেওয়া,

আমাদের, সন্তানদের ইসলাম শিক্ষা দেওয়া ।

নবীগণ যখন দ্বীন শিক্ষা দিতেন, তারা সবাইকেই দ্বীন শিক্ষা দিতেন ।

কিন্তু আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল যখন (পবিত্র) কুরআনে শিশুদের ইসলাম শিক্ষার ব্যাপারে কথা বলেন,

শিশুদের শেখানোর বিষয়ে, শিশুদের উপদেশ গ্রহণ করা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা খুব কমই বলেছেন ।

কিন্তু যখনই তিনি এ বিষয়ে কথা বলেছেন, সেটা ছিল বাবা-মার কাছ থেকে । 

আবার শুনুন।

মহান আল্লাহ তায়ালা যখনই (পবিত্র) কুরআনে শিশুদের পথনির্দেশনা গ্রহণ করা সম্পর্কে কথা বলেছেন, সেটা সবসময় ছিল বাবা-মার কাছ থেকে এবং বাবা-মার মধ্যে, সেটা সবসময় বাবার কাছ থেকে. কারণ মাতো সেখানে সবসময়ই আছেন । 

বাচ্চার কাছে সবসময় থাকার জন্য মাকে অতিরিক্ত কোন কাজ করতে হয় না, বাচ্চাকে সবসময় যত্ন করা এবং তাকে সবসময় উপদেশ দেওয়া, একজন মাকে আপনার প্রশিক্ষণ দিতে হবে না যে, কিভাবে একজন মা হতে হয়, এটা তার স্বাভাবিকভাবেই আসে । আল্লাহ সেটা তাদের ভিতরেই দিয়ে দিয়েছেন । 

তবে বাবাদের অবস্থা অবশ্য ভয়াবহ ।

প্রকৃত পিতা হবার জন্য আমাদেরকে (রীতিমতো) প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হয় । এটা আমাদের (ভিতরে) স্বাভাবিকভাবে আসে না । 

যখন একজন মায়ের সন্তান হয়,

তার অনুভূতি, তার আবেগ, সবকিছুর তখনই পরিবর্তন হয়, তাৎক্ষণাৎ পরিবর্তন হয়ে যায় । 

(আর) একজন বাবার ? ৩-৪ দিন চলে যাবার পর, যখন কোন বন্ধু বলে,

  • “আরে, শুনলাম তোমার নাকি একটা বাচ্চা হয়েছে ? ” 
  • “হ্যাঁ, ভাই, এটা আমাকে এখনও নাড়া/ধাক্কা দেয়নি ” 

somebody needs to hit you, so it hits you.

(মানে) কারো আপনাকে নাড়া/ধাক্কা দেয়া প্রয়োজন, তাহলেই সেটা আপনাকে “নাড়া/ধাক্কা” দিবে ।

আমি কি বলতে চাচ্ছি আপনারা বুঝতে পারছেন? – “ এটা আমাকে এখনও আঘাত/নাড়া/ধাক্কা দেয়নি ” 

কারণ পিতৃত্বের অনুভূতি, আমাদের কাছে স্বাভাবিক নয় । 

আমাদেরকে সেগুলো গড়ে তুলতে হয়, সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হয় ।

তাই আল্লাহ তায়ালা লুকমান (রা:) এর কথা উল্লেখ করেছেন, সময় তৈরী করা, সঠিক সুযোগ খুঁজে বের করা এবং তারপর তার ছেলের সাথে কথা বলা ।

আমরা দেখতে পাই, ইয়াকুব আলাইহিস সালাম তার ছেলেদের সাথে কথা বলেছেন,

…يَا بَنِيَّ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَىٰ لَكُمُ الدِّينَ

আমরা দেখতে পাই, ইব্রাহীম আলাইহিস সালামও তাঁর ছেলেদের সাথে এই কথাগুলো বলছেন, একই পরামর্শ যা ইয়াকুব আলাইহিস সালাম তাঁর ছেলেদেরকেও দিয়েছিলেন । 

এটা বেশ চমকপ্রদ, কারণ এটা আপনাকে বলছে যে, বাবা তার সন্তানকে শুধু নিজেকে কিভাবে বড় করা যায় শেখাননি, বরং শিখিয়েছেন কিভাবে একজন ভালো বাবা হতে হয় । (অথবা, বাবা তার সন্তানের জন্য (এমন) একটি কাজ করেছেন যেটা শুধু নিজেকে কিভাবে বড় করা যায় তা নয়, কিন্তু কিভাবে একজন বাবা হতে হয়)

আমরা আমাদের সন্তানদের শেখাব কিভাবে একদিন (তারাও) ভালো বাবা হতে পারবে। কারণ ইবরাহীম ইসহাককে (এই) শিক্ষা দিয়েছিলেন, আর ইসহাক ইয়াকুবকে (এই) শিক্ষাই দিয়েছিলেন ।

আর কুরআন কি বলছে ? ইব্রাহিম আর ইয়াকুব, মানে দাদা এবং নাতি, একদম একই কথা বলেছেন । 

তারা কি একই সময়েই (এই কথা) বলেছিলেন ? না, তারা এই কথা বলেছিলেন একে অপর থেকে দুই প্রজন্ম আলাদা হয়েও ।

ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম কথা বলেছিলেন, ইসমাইল ও ইসহাকের সাথে ।

ইয়াকুব আলাইহিস সালাম কথা বলেছিলেন, তাঁর এগারো জন ছেলের সাথে। 

কিন্তু তারা ঠিক একই কথা বলেছেন :

 …وَوَصَّىٰ بِهَا إِبْرَاهِيمُ بَنِيهِ وَيَعْقُوبُ

 …يَا بَنِيَّ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَىٰ لَكُمُ الدِّينَ

…..فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُ ن

এটা অবিশ্বাস্য যে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, দাদা ও নাতি ঠিক একই পরামর্শ দিয়েছিলেন । 

কেন? কারণ এই তারবিয়াহটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসছিল, শুধু একজন ভালো ছেলে হবার জন্য নয় কিন্তু কিভাবে একদিন একজন ভালো বাবা হওয়া যায় (সেজন্য) ।

কিভাবে একজন ভালো বাবা হওয়া যায়? এটাই তারবিয়াহ ।

অন্য কথায়, আমরা আমাদের সন্তানদের তারবিয়াহ দেব এমনকি যখন তারা বাবা হয়ে যাবে তখনও, এমনকি তারা যখন বড় হয়ে যাবে, আমরা তাদের সন্তান লালন-পালনের বিষয়ে পরামর্শ দেব এবং তারা সেটা দেখতে চাচ্ছে আমাদের কাছ থেকে । আর যদি আমরা আমাদের কাজগুলো সঠিকভাবে করি, আমরা যখন ফিরে তাকাবো…

আপনারা জানেন, এমন অনেক বাবা-মার সম্পর্কে আপনারা জানেন যে, তারা ছিলেন অভদ্র, অনেক বাবা-মাই ছিলেন আক্রমণাত্মক, আর তারা তাদের বাচ্চাদের সাথে চিৎকার করতেন এবং তাদেরকে অপমান করতেন এবং তাদেরকে দাবিয়ে রাখতেন… এই সব ধরনের জিনিস ।

আর তাই, যখন তাদের (বাচ্চাদের) সন্তান হয় তারা বলে, “আমি আমার বাবার থেকে আলাদা হব, আমি আমার বাবার মতন হব না, আমি আমার সন্তানকে ভালবাসব আমি এভাবেই থাকব…বা অন্য ভাবে” ইত্যাদি

আমরা শেষপর্যন্ত আমাদের বাবাদের মতোই হয়েছি, আমরা সেটা পছন্দ করি বা না করি, এক ভাবে বা অন্য ভাবে । 

কিন্তু এখানে আমরা যা শিখছি তা হল,  প্রজন্মের পর প্রজন্মের এক শক্তি সম্পর্কে, যদি আপনি আপনার সন্তানদের সাথে কাজগুলো সঠিকভাবে করেন, যদি আপনি আপনার কাজগুলো ঠিকঠাক মতন করেন । 

যাইহোক, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন : ইব্রাহিমের সন্তানরা কি ইয়াকুবের সন্তানদের মতোন একই রকম ছিলেন ? 

ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর সন্তান কারা ছিলেন ? ইসমাইল ও ইসহাক । 

ইয়াকুবের সন্তান কারা ছিলেন ? ইউসুফ আলাইহিস সালাম, বুনিয়ামিন, আর বাকি ভাইয়েরা । 

(তারা) কি একই রকম ছিলেন? নাকি না?

  • না ।

কিন্তু উপদেশ তো একই ছিল, তাই না? উপদেশ একদম একই ছিল । 

কিভাবে হল? 

আল্লাহ তায়ালা আমাদের যা বলছেন, এখানে আমাদের যা শিক্ষা দিচ্ছেন সেটা হল, এটা কোন বিষয়ই না আপনার সন্তান শান্ত অথবা বেয়াড়া/চঞ্চল.…… আপনাকে আপনার কাজ করতে হবে । 

প্যারেন্টিং এর কিছু অংশ আছে যার কোন পরিবর্তনই হবে না, অন্যান্য জিনিসকে পরিবর্তন করতে হবে ।

কিন্তু প্যারেন্টিং এই অংশটির মোটেও পরিবর্তন হবে না। 

আপনার সন্তানদের অবশ্যই দ্বীনের শিক্ষা দিতে হবে। এটা আপনার কাছ থেকেই আসবে। 

এটা কোন ক্বারী সাহেবের কাছ থেকে আসবে না, কোন ইমাম বা খতিবের কাছ থেকে আসবে না ।

এটা আপনার কাছ থেকেই আসবে।