—নোমান আলী খান।
ইব্রাহিম (আ) আল্লাহর নিকট দুআ করেন- رَبِّ اجْعَلْ هَٰذَا بَلَدًا آمِنًا وَارْزُقْ أَهْلَهُ مِنَ الثَّمَرَاتِ مَنْ آمَنَ مِنْهُم بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ – ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি এ শহরকে নিরাপদস্থল করুন এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান আনে, তাদেরকে ফলমূল হতে জীবিকা প্রদান করুন’। (২:১২৬)
এই উম্মাহর ভবিষ্যতের জন্য ইব্রাহিম (আ) এর মূল উদ্বেগ ছিল— নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধি। উম্মাহর নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধি নিয়েই তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন। অন্য যে কোনো কিছুর চেয়ে। যারা আল্লাহ এবং শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাস করে তাদের জন্য তিনি এটাই চেয়েছেন।
আমাদেরকে এই ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের ধর্ম এই দুনিয়াতে আপনার জীবনকে সৌন্দর্যময় করে তোলে, একই সাথে এটা আপনাকে এমন এক আখিরাতের জন্য প্রস্তুত করে যা আরো সৌন্দর্যময়। এটা যেমন আপনাকে দুনিয়ার সামগ্রীর জন্য অতিরিক্ত ভোগ বিলাসী করে তোলে না, একই সাথে এটা আপনার জীবনকে দুর্দশাগ্রস্তও করে তোলে না। আল্লাহ আপনাকে এই দুনিয়াতে সুখী করতে চান এবং পরকালেও তিনি আপনাকে সুখী করতে চান।
আল্লাহ বলেন, وَ جَعَلۡنَا لَکُمۡ فِیۡهَا مَعَایِشَ ؕ قَلِیۡلًا مَّا تَشۡکُرُوۡنَ – “তোমাদের জন্য তাতে রেখেছি জীবনোপকরণ। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞ হও।” (৭:১০)
তিনি এই পৃথিবীতে এমন সব উপকরণ রেখেছেন যা ব্যবহার করে তোমরা ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারবে।
এমনকি আমরা যখন জান্নাতের কথা বলি, তিনি জান্নাতের কোন কোন নিয়ামতের বর্ণনা দিয়েছেন? গাছপালা, বাগান, ঝর্ণাধারা, সম্পদ, সুন্দর জামাকাপড়, অলংকার, সুন্দর স্বামী স্ত্রী। যদি এগুলোর কোনোটার কোনো আনন্দ এই দুনিয়াতে উপভোগ না করতেন তাহলে কোনোদিন কি জান্নাতের গুলোর জন্য আকৃষ্ট হতেন? কল্পনা করুন, এই দুনিয়াতে কোনো গাছ নেই। আল্লাহ যখন বলেন— জাওয়াতা আফনান (উভয় উদ্যানই ঘন শাখা-পল্লববিশিষ্ট) , মুদহাম্মাতান (কালোমত ঘন সবুজ)। আপনি তখন বুঝতেন? এগুলো কী?
আল্লাহ যদি এই দুনিয়াতে আমাদেরকে ঝর্ণাধারা না দেখাতেন এবং কুরআনে বলতেন, “আইনানি তাজরিয়ান” (উভয় উদ্যানে আছে বহমান দুই ঝর্ণাধারা) আপনি তখন এর আগামাথা কিছুই বুঝতেন না। আল্লাহ যদি আমাদেরকে ফল আহারের কিছু স্বাদ না দিতেন, এরপর বলতেন, فِيهِمَا فَاكِهَةٌ وَنَخْلٌ وَرُمَّانٌ – “তথায় আছে ফল-মূল, খর্জুর ও আনার।” এর দ্বারা তখন কী বুঝতেন?
এই দুনিয়াতে যত ভোগ্য সামগ্রী আল্লাহ আমাদের দান করেছেন সবগুলোই হলো জান্নাতে যা দিবেন তার একটা প্রিভিউ, সামান্য স্বাদ। যদি দুনিয়াতে এগুলো উপভোগ না করেন তাহলে জান্নাতের জন্য তো সঠিক অনুপ্রেরণা পাবেন না।
কিন্তু, এই দুনিয়ার উপভোগে সীমা থাকতে হবে। অবশ্যই সীমা থাকতে হবে। কারণ, যদি সীমা নির্ধারণ না করেন তাহলে এই দুনিয়ার আনন্দের মাঝেই নিজেকে ডুবিয়ে রাখবেন আর পরকালের কথা পুরোপুরি ভুলে যাবেন। আমি এমন মুসলিমের সাক্ষাৎও পেয়েছি যে আমাকে বলেছিলো, আমি মরতে চাই না। কারণ, আমি এখানে অনেক বেশি সুখী।
যখন এই পৃথিবী উপভোগের ক্ষেত্রে সীমা নির্ধারণ না করেন, তখন আপনি শুধু এই পৃথিবীর মানুষে পরিণত হবেন আর পরকালের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। যেখানে একদিন আপনাকে যেতেই হবে।
এই দুনিয়াকে শুধু এতটুকু পরিমাণেই উপভোগ্য করা হয়েছে যেন আপনি উপলব্ধি করতে পারেন এরচেয়ে অনেক বেশি উপভোগ্য জগৎ সামনে আসছে। অনেক ভালো এক জগৎ সামনে আসছে। হ্যাঁ, এখানে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু, আমাদের ধর্ম আপনার কাছে দুর্দশা দাবি করে না। সত্যিই এটা আপনার কাছে দুরবস্থা দাবি করে না। এটা দারুণ সুন্দর এক জীবন ব্যবস্থা।