কেমন করে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে কুফরী অবলম্বন করছ? অথচ তোমরা ছিলে মৃত। (বাকারা – ২৮)
এই আয়াতটি খুবই গভীর দার্শনিক অর্থ বহন করে। এই আয়াত সম্পর্কে অনেক কিছু বলা হয়েছে। যে মতামতগুলো আমার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে সেগুলো এখন আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আমি মরহুম ইসরার আহমেদের কাছে কৃতজ্ঞ। এই আয়াত থেকে সবচেয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টি আমি তার কাছ থেকেই পেয়েছি।
তিনি ১৯৮৬ সালে এই আয়াত নিয়ে একটি প্রবন্ধ রচনা করেন। ভারত পাকিস্তানের বহু আলেম তার এই প্রবন্ধের প্রশংসা করেন। আমি এখন আপনাদের নিকট তার একটি সারমর্ম তুলে ধরবো। কারণ আমি মনে করি এটি অনেক মূল্যবান।
আল্লাহ আজ্জা বলেন, كَيْفَ تَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَكُنتُمْ أَمْوَاتًا – কেমন করে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে কুফরী অবলম্বন করছ? অথচ তোমরা ছিলে মৃত।
প্রথম পর্যায় – وَكُنتُمْ أَمْوَاتًا তোমরা মৃত ছিলে।
দ্বিতীয় পর্যায় – فَأَحْيَاكُمْ অতঃপর তিনি তোমাদের জীবন দান করেছেন।
৩য় পর্যায় – ثُمَّ يُمِيتُكُمْ তারপর তিনি তোমাদের মৃত্যু দান করবেন;
৪র্থ পর্যায় – ثُمَّ يُحْيِيكُمْ তারপর তিনি তোমাদের আবার জীবিত করবেন।
প্রথম পর্যায়টা কী ছিল? তোমরা মৃত ছিলে। আমাদেরকে প্রথম যে বিষয়টি বুঝতে হবে তা হলো – মৃত আর অস্তিত্ব না থাকা একই বিষয় নয়। যেমন, মৃত কাউকে কফিনে রাখা হয়েছে এবং তার জানাজা হচ্ছে – এর মানে এই নয় যে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবীর যে কোনো ভাষায় মৃত বলতে এমন কাউকে বোঝায় যার পূর্বে জীবন ছিল। সুতরাং এই আয়াতে মনে হয় যেন একটি ইঙ্গিত রয়েছে…(আমরা একটু পর আবার এ বিষয়ে আলোচনা করবো, তার পূর্বে কিছু বিষয় বুঝে নেয়া জরুরি)
কুরআন এবং রাসূল (স) এর সুন্নায় – মৃত্যুকে ঘুমের কাছাকাছি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। মৃত্যু এবং ঘুম একে অন্যের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। ঘুমাতে যাওয়ার সময় আমরা কী পড়ি? ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমূতু ওয়া অাহ্ইয়া’ – ”হে আল্লাহ, আপনার নামে আমি মৃত্যুবরণ করি এবং আপনার নামে জীবন ফিরে পাই। আর ঘুম থেকে জেগে উঠার পর কী পড়ি? ‘ আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন্নুশুর।’ “সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদের মৃত্যুর পর আবার জীবন দান করেছেন, আর তার নিকটেই আমাদের প্রত্যাবর্তন।” আমরা এভাবে বলি না যে, যিনি আমাদের ঘুমের পর জীবন দান করেছেন; বরং বলি যিনি মৃত্যুর পর জীবন দান করেছেন। সুতরাং ঘুম এবং মৃত্যু খুব কাছাকাছি। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
আয়াতটি এভাবে শুরু হয়নি যে, কিভাবে তুমি আল্লাহকে অস্বীকার করো, তোমাদের কোনো অস্তিত্বই ছিল না, আর আল্লাহ তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ এটা বলেন নি। তিনি বলেছেন – তোমরা মৃত ছিলে; খুবই নিদৃষ্ট বাক্যাংশ। আরো যে বিষয়টি এটিকে প্রাসঙ্গিক করে তোলে তা হলো, সূরা গাফিরে আল্লাহ বিচার দিবসে অবিশ্বাসীদের একটি বক্তব্যের উদৃতি করেন। অবিশ্বাসীরা কিয়ামতের দিন নিজেদের উপর এতো বেশি বিতৃষ্ণ থাকবে যে তারা আল্লাহকে বলবে তাদেরকে আরেকটি সুযোগ দান করার জন্য। কিন্তু আজব এক যুক্তি উত্থাপন করে তারা আরেকটি সুযোগ চাইবে। قَالُوا رَبَّنَا أَمَتَّنَا اثْنَتَيْنِ وَأَحْيَيْتَنَا اثْنَتَيْنِ فَاعْتَرَفْنَا بِذُنُوبِنَا فَهَلْ إِلَىٰ خُرُوجٍ مِّن سَبِيلٍ – “তারা বলবে হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদেরকে দুইবার মৃত্যু দিয়েছেন এবং দুইবার জীবন দিয়েছেন। এখন আমাদের অপরাধ স্বীকার করছি। অতঃপর এখন ও নিস্কৃতির কোন উপায় আছে কি?”(40:11) আপনি তো পূর্বে আমাদের দুইবার জীবন দিয়েছেন, দুইবার মৃত্যু দিয়েছেন। দয়া করে আরেকবার দিতে পারবেন?
যে বিষয়ে এখানে আমি আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করছি তা হলো – প্রথমে আল্লাহ তাদেরকে দুইবার কী দিয়েছেন? মৃত্যু। তাহলে কাউকে কেবল তখনি মৃত্যু দেয়া যায় যখন তার জীবন থাকে, তাই না? কারো জীবন না থাকলে তো মৃত্যু দেয়া যায় না। তাহলে, আমরা আবার সূরা বাকারার আয়াতটিতে ফিরে আসছি। ” কীভাবে তোমরা আল্লাহকে অস্বীকার করো, অথচ তোমরা ছিলে মৃত।” এই বক্তব্য ইঙ্গিত করে যে, এই জীবনের পূর্বে আরেকটি জীবন ছিল। সুতরাং এটা প্রথম পর্যায় নয়। এটা দ্বিতীয় পর্যায়। প্রথম পর্যায়টি হলো পূর্বের জীবন। তারপর – ঘুম। আমি এখন মৃত্যুর পরিবর্তে ঘুম/নিদ্রা ব্যবহার করছি; কারণ মৃত্যু এবং ঘুম কাছাকাছি বিষয়। কিয়ামতের দিন যখন আমরা আমাদের কবর থেকে জেগে উঠবো, কিছু মানুষ তখন বলবে – قَالُوا يَا وَيْلَنَا مَن بَعَثَنَا مِن مَّرْقَدِنَا – তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে নিদ্রাস্থল থেকে উখিত করল? আমাদের আমাদের বিছানা থেকে। আমাদের শোয়ার জায়গা থেকে, মারকাদিনা।
যাইহোক, প্রথম পর্যায় ছিল – জীবন। তারপর আল্লাহ আমাদের নিদ্রা দিয়েছেন বা মৃত্যু দিয়েছেন। তারপর আবার জীবন, তারপর আবার মরণ। চলুন, এই ভ্রমণটা বোঝার চেষ্টা করি। এটা হলো আমাদের জীবনের ভ্রমণ।
প্রথমে আল্লাহ যা করলেন তা হলো – তিনি আমাদের সবাইকে একই সাথে একই সময়ে সৃষ্টি করলেন। সৃষ্টির এই পর্যায়কে বলা হয় রূহ। আমাদের সবাইকে একত্রে সৃষ্টি করা হলো। যখন আমরা সবাই একত্রে আল্লাহর কাছে ছিলাম …. রূহের কোনো বয়স নেই, লিঙ্গ নেই এর এসব কিছু ছিল না; এটা ছিল এর বাইরের কিছু। তখন সেখানে আমি নোমান ছিলাম, আপনি ওয়াছিফ ছিলেন, আব্দুল্লাহ ছিল, হুসনা ছিল, জুলিয়া ছিল। আমরা সবাই সেখানে ছিলাম। আর তখন আমাদের মাঝে কেউ ছোট বড় ছিল না। আমরা ছিলাম আলমে আরওয়াহতে। আমরা সবাই জীবিত এবং সুস্থ অবস্থায় আল্লাহর নিকটে ছিলাম।
আমাদের তখনো কোনো শরীর ছিল না; শুধু ছিল রূহ। আর রূহ হলো এমন একটি সৃষ্টি যা আলো থেকে তৈরী করা হয়েছে। আমরা তখন সরাসরি আল্লাহর সাথে কথা বলতাম। আল্লাহ আমাদের ঐসব কথোপকথনের বিস্তারিত কোনো বর্ণনা দেন নি। কিন্তু তিনি খুবই ক্ষুদ্র একটি চিত্র কুরআনে উপস্থাপন করেছেন। একদিন আল্লাহ সমগ্র মানব জাতিকে উদ্দেশ্য করে বললেন – ‘আলাস্তু বিরাব্বিকুম’ – “আমি কি তোমাদের রব নই?” তখন আমরা সবাই বলেছিলাম – “অবশ্যই, আপনি আমাদের রব। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি। ” আল্লাহ একই আয়াতে বলেছেন আমি তোমাদের নিকট থেকে এই সাক্ষ্য নিচ্ছি কেননা, আবার না কেয়ামতের দিন বলতে শুরু কর যে, এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না।
সেই আলো, সেই রূহ কার সংস্পর্শে ছিল? আল্লাহর। আর এটা কার নিকট থেকে এর আলো গ্রহণ করতো? আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল এর নিকট থেকে। وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي – এবং তাতে আমার রূহ থেকে ফুঁকে দেব।
তারপর আল্লাহ আমাদের সবাইকে আবার ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। এক ধরণের মৃত্যু। সেই মৃত্যুর কথাই এই আয়াতে বলা হয়েছে। “কেমন করে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে কুফরী অবলম্বন করছ? অথচ তোমরা ছিলে মৃত। “
তারপর আমাদের বাবা আমাদের মা’কে গর্ভবতী করেন। আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা সেই ঘুমন্ত রূহগুলো থেকে একটি রূহ এনে গর্ভের বাচ্চাটিকে দিয়ে দেন। এখন আপনি এই পৃথিবীতে। তারপর আপনি আপনার মায়ের পেট থেকে এই পৃথিবীতে আসবেন। এভাবেই আল্লাহ আপনাকে জীবন দিয়েছেন। এখন এটা হলো আপনার দ্বিতীয় জীবন। আপনার প্রথম জীবন ছিল আল্লাহর সাহচর্যে। এখনকার জীবন হলো আপনার দ্বিতীয় জীবন। এর পর থেকে তো বিষয়টা আমাদের নিকট সুস্পষ্ট। তারপর আমরা আবার মৃত্যুবরণ করবো; কবরে থাকবো। আমাদের রূহ আবার ভ্রমণ করে উপরে যাবে। তারপর আবার কবরে রাখা হবে। তারপর আমাদেরকে কিয়ামতের দিন আবার উঠানো হবে। আর সেটা হবে আমাদের চূড়ান্ত জীবন। ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ – অতঃপর তারই প্রতি তোমরা প্রত্যাবর্তন করবে।
এখন, এই ভ্রমণটি বুঝতে পারা গুরুত্বপূর্ণ। আমি এই বিষয়টি নিয়ে গভীর কোনো আলোচনায় যেতে চাই না। তবে আমি একটি বা দুইটি বিষয় আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। অন্য কারো সাহচর্যের পূর্বে মানব জাতি কার সাহচর্যে ছিল? আল্লাহর সাহচর্যে। আর সেই সাহচর্য টি এতোই মধুর ছিল যে, শুধু আল্লাহই আমাদের সাথে সরাসরি কথা বলতেন, তা নয়; বরং আমরাও সরাসরি তার সাথে কথা বলতাম।
জানেন, যখন আপনি ভালো কারো সাহচর্যে থাকেন, আপনি তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েন। এটা ন্যাচারাল, তাই না? আমাদের পক্ষে এটা কল্পনা করা অসম্ভব যে আমরা আল্লাহর সাহচর্যে ছিলাম অথচ প্রভাবিত হই নি। এটা অসম্ভব। আল্লাহ প্রত্যেকটি রূহকে প্রভাবিত করেছেন। এজন্য আল্লাহ বলেছেন – فِطْرَتَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا ۚ – “আল্লাহর প্রকৃতি*, যে প্রকৃতির উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন।” (৩০:৩০) তাঁর সাহচর্যে আমাদের প্রকৃতি গড়ে উঠেছিল, আমাদের ব্যক্তিত্ব গঠিত হয়েছিল। প্রসঙ্গত, আল্লাহর প্রত্যেকটি গুণাবলীর কোনো না কোনো অংশ মানুষের মাঝে বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে দেখা যায়।
আল্লাহ হলেন ‘আর রাহমান, আর রাহিম’ – আমরা কি দয়া প্রদর্শন করি? আল্লাহ হলেন – আল হাকিম – আমাদের মাঝে ও কি কিছু ‘বিজ্ঞতা’ দেখা যায়? আল্লাহ হলেন – ‘আস সামি’ (যিনি শ্রবণ করেন) – আমরাও কি শুনতে ভালোবাসি? আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল হলেন – ‘খালেক’, তিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন; মানুষেরও কি বিভিন্ন জিনিস সৃষ্টি করার ইচ্ছা জাগ্রত হয়? এমনকি শিশুকাল থেকেই আমরা লেগো দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরী করতে ভালোবাসি। আল্লাহর প্রত্যেকটি গুণাবলীর ক্ষুদ্র কিছু রূপ আপনি আদম সন্তানের মাঝে দেখতে পাবেন। এজন্য ই রাসূল (স) এর হাদিসে আমরা পাই -إن الله خلق آدم على صورته ‘আল্লাহ আদম (আ) কে তার নিজ গুণাবলী দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।’
এখন সেই মানুষটি যে আল্লাহর সাহচর্যে ছিল তাকে মায়ের গর্ভে রাখা হলো, তারপর সে পৃথিবীতে আসলো এবং বড়ো হতে শুরু করে। এভাবে যখন সে বড় হতে শুরু করে সে তার শারীরিক চাহিদা দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু সে তার ভেতরে কিছু একটার অভাব বোধ করে। যেহেতু আপনি আল্লাহর সাহচর্যে ছিলেন, তাই অবশ্যই আপনি আল্লাহ কে মিস করবেন, তাঁর অভাব বোধ করবেন। কিছু একটার অভাব আপনার অন্তরে সব সময় থাকবে।
তাই মানুষ যখন বড় হতে শুরু করে সে যে সংস্কৃতি থেকেই আসুক না কেন, প্রত্যেকটি মানুষেরই উন্নত বাড়ির আকাঙ্খা আছে, সৌন্দর্য্যের আকাঙ্খা আছে, ভালো পোশাক-পরিচ্ছদের আকাঙ্খা আছে, সব কিছু নিখুঁত হওয়ার আকাঙ্খা আছে। কয়েক সপ্তাহ পর পর বাসার ফার্নিচারগুলো নতুন করে সাজাতে চান কেন? ‘এভাবে ভালো লাগে, না, ঐভাবে, এভাবে চেষ্টা করে দেখি, আচ্ছা ওখানে রাখলে দেখি কেমন দেখায়।’ আমরা প্রতিনিয়ত সৌন্দর্যের খোঁজে থাকি। তাই না?
পাখি কি এমন করে? কুমির কি এভাবে সৌন্দর্য্য খোঁজে? বানর কি এমন করে? বিবর্তনবাদ আর্টের প্রতি মানুষের প্রবণতাকে ব্যাখ্যা করতে পারে না। তারা এটা পারে না। কারণ কখনই এর অস্তিত্ব ছিল না। কারণ বেঁচে থাকার জন্য আঁকা-আঁকির প্রয়োজন নেই। বেঁচে থাকার জন্য আপনার আর্টের কি প্রয়োজন? বেঁচে থাকার জন্য আপনার কবিতার কি প্রয়োজন? মৌলিক যোগাযোগের বাইরে আপনার ভাষার কি প্রয়োজন? এ ও আওয়াজ আর ইঙ্গিত ই তো যথেষ্ট। আমাদের এর চেয়ে বেশি কিছুর প্রয়োজন ছিল না। মায়েরা জানে বাচ্চাদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় – ‘ইঙ্গিতে থাপ্পড় দেখিয়ে একটু আওয়াজ করলেই হলো’ ব্যাস সব ঠিক। ষোলো বছর পর্যন্ত আপনার এতটুকুই দরকার 🙂
প্রকৃতপক্ষে, আমাদের যে সুন্দর ভাষা আছে, আমরা যে বিমূর্ত বিষয় যেমন আর্ট এবং সৌন্দর্য নিয়ে চিন্তা করতে পারি, আমাদের ভেতরে এগুলো কোথা থেকে এলো? আমরা কেন প্রতিনিয়ত নিখুঁত এবং পারফেকশন এর খোঁজ করি? কারণ এই পারফেকশন খোঁজার আকাঙ্খা এমনকি বস্তুগত দিক থেকেও, এই বিষয়টা আসলে আমাদের রুহের মধ্যে এসেছে যখন আমরা মহান আল্লাহর সাহচর্যে ছিলাম। ‘আল্লাহ নিজে সুন্দর, তাই আল্লাহ সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন’ -আর ঠিক এ কারণে মানুষও সৌন্দর্য প্রিয়।
মানুষ সুন্দর বাড়ি চায়, সুন্দর গাড়ি চায়, সুন্দর শরীর চায়, সব কিছু সুন্দর চায়; কিন্তু তার এই চাহিদা কি কখনো পরিতৃপ্তি লাভ করে? না, কারণ আল্লাহর সাহচর্যে থেকে আপনি যে সৌন্দর্য পেয়েছেন তা কোনো কিছু দিয়েই মিটবে না।
আর পরিশেষে, যখন একজন বিশ্বাসী আবার তার মালিকের নিকট ফেরত যাবে, তখন সে সম্পূর্ণরূপে সন্তুষ্ট হয়ে যাবে। যখন আপনি পরিপূর্ণরূপে সন্তুষ্ট হয়ে যান, তখন ‘মুতমাইন’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
আর তাই আল্লাহ বলেছেন – يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ – ارْجِعِي إِلَىٰ رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً – হে প্রশান্ত আত্মা, তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে আসো সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে।”
কেন তিনি বলেছেন, ফিরে আসো – কারণ আপনি শুরুতে তাঁর সাহচর্যে ছিলেন। আর তাই জীবনের প্রথম এবং শেষ পর্যায় একত্রে মিলে গেলো। আপনি সেই প্রভুর সাথে আবারো সাক্ষাৎ লাভ করে পরিতৃপ্ত হয়ে গেলেন।
কেমন করে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে কুফরী অবলম্বন করছ? অথচ তোমরা ছিলে মৃত। তিনি তোমাদের মায়ের গর্ভে তোমাদের জীবন দিয়েছেন। তারপর তিনি তোমাদের আবার মৃত্যু দিবেন। ثُمَّ يُمِيتُكُمْ – ‘ছুম্মা’ একটু দেরি বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। তিনি তোমাদের একটু সময় দিবেন তারপর আবার মৃত্যু দিবেন। ثُمَّ يُحْيِيكُمْ তারপর তিনি তোমাদের আবার জীবিত করবেন। ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ – অতঃপর তারই প্রতি প্রত্যাবর্তন করবে। আল্লাহ আমাদেরকে আবার তাঁর সাথে সর্বোত্তম পন্থায় একত্রিত করে দিন।
—————— * ——————-