দুঃখ কষ্টের মাহাত্ম্য

– – নোমান আলী খান

আপনি জানেন এই জীবনে আমরা কিছু জিনিস চাই।একজন যুবক বিয়ে করতে চায় অথবা মহিলা বিয়ে করতে চায়।আপনি একটি ভালো চাকরি চান।আপনি একটি ঘর চান।আপনি চান আপনার পরিবার ঠিক থাকুক।আপনি আপনারা সন্তানদের জন্য করতে চান তাদের জন্য ভালো শিক্ষা চান আপনার সন্তানদের বিয়ে দিতে চান।কিছু ব্যাপার আছে যেগুলোর অগ্রাধিকার আমাদের জীবনে আছে।আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল তার কিতাবে আমাদের শিখাচ্ছেন একটা জিনিস আপনি যদি এই জীবনে পেয়ে থাকেন তা অন্য সব কিছুর থেকে মূল্যবান।আর সেই একটি জিনিস হলো আল্লাহর নৈকট্য।

আল্লাহর সাথে ভালো হওয়া এবং সত্যিকার অর্থে তার সাথে সম্পর্ক তৈরি করা।মানুষের সমস্যা হচ্ছে যখন জীবন ভালো যায় অনেক মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পরে।আপনি ভিডিও গেম খেলেন,মুভি দেখেন,সোস্যাল মিডিয়া স্ট্যাটাস চ্যাক করেন,বন্ধুদের সাথে হ্যাং আউট করেন রেস্টুরেন্টে,ঘুমান।আল্লাহকে এই সব কিছুর বাইরে রাখেন।এখানে আল্লাহ নেই।এটা আপনি চিল করছেন,সেখানেই সব।এবং তারপর কঠিন সময় আসে।বন্ধুরা সেখানে নেই।গেম আর ভালো লাগে না গাড়িটাও সুন্দর লাগেনা কারন সুস্থতা নেই আর যখন অসুস্থ থাকি তখন কোন কিছুই ভালো লাগেনা।আর তখন আপনার শুধুমাত্র আশা থাকে “আমি এই হাসপাতালের বিছানা থেকে বের হতে চাই।আমি আবার হাটতে পারলেই চলবে।”

মানুষজন আপনার প্রিয় খাবার নিয়ে আসবে আপনি খেতে চাবেননা।আপনাকে মুভি দেখাতে চাবে আপনি দেখতে চাবেননা।যাকিছু যেগুলো নিয়ে আপনি বেচে ছিলেন a,b,c,d সব কিছু নাই হয়ে গিয়েছে।আপনি আর এগুলোর প্রতি পরোয়া করেননা।কারন একটা নিয়ামত আল্লাহ আপনার জন্য একটু কমিয়ে দিয়েছেন।এবং এই পর্যায়ে আপনার দুটি রাস্তা আছে।আপনি যদি এই মানুষদের মধ্যে হন যারা একদম দারপ্রান্তে আছে, আপনি আল্লাহর কাছে অভিযোগ শুরু করতে পারেন “কেন আপনি আমার সাথে এমন করলেন? আপনার কি পছন্দ হয়নি আমি সুখী ছিলাম।” অথবা আপনি সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সম্পদ লাভ করতে পারেন আর সেটা হলো নম্রতা এবং আল্লাহর নৈকট্য ।অসলে উপলদ্ধি করা এমনকি যখন আমি সুস্থ ছিলাম, এমনকি যখন আমি ধনী ছিলাম, এমনকি যখন আমি ভালো করছিলাম,সবকিছু ঠিক ছিলো, আমি উপলব্ধি করিনি এমনকি তখনো আমি লাইফ সাপোর্টে ছিলাম।আল্লাহ আমাকে প্রতি মুহুর্তে সরবরাহ করছিল।আমি নিজ থেকে কোন কিছু উপার্জন করিনি।আমি কোন কিছুর প্রাপ্য ছিলামনা।

এই জন্য আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল বলেন [উলা ইকালাহুম নাসিবুন মিম্মা কাসাব] [তারা যা অর্জন করেছে তার অংশীদার হবে]৷ আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল ব্যাখ্যা করেন এমনকি {ফাদাল} (অবতাহু ফাদলা মিনাল্লা), কাসাবা মিনাল্লা নয়।আপনি কিছু উপার্জন করতে পারেননা।এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহ যা কিছু আপনাকে দিয়েছেন কিন্তু সেই সময় আপনি উপলব্ধি করতে পারেননা কারন এটা সহজে এসেছে।কিন্তু তারপর আল্লাহর নিকট ভিক্ষা শুরু করেন,আল্লাহর কাছে চান,আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করেন এবং আল্লাহর কাছে এমনভাবে দোয়া শুরু করেন যেমনটা আগে কখনো করেননি।আল্লাহর নৈকট্য এমনভাবে অনুভব শুরু করেন যেমনটি আগে কখনো অনুভব করেনি এবং তারপর আল্লাহ আপনাকে সুস্থ করে তোলে এবং উপলব্ধি করেন সেই মুহুর্তগুলো যখন কেউ হাসপাতাল রুমে ছিলোনা শুধু আপনি ছিলেন,আল্লাহর নিকট কানছিলেন,সেগুলো আপনার জীবনের সবচেয়ে মধুর সময় ছিলো।সেই মুহুর্ত গুলোতে আপনার এবং আল্লাহর মাঝে আর কিছু ছিলোনা।আর সেগুলো হয়তো সেই মুহুর্তগুলো যা আপনাকে আখিরাতে বাচাবে।সেটা হতে পারে আল্লাহর পক্ষ হতে সবচেয়ে বড় উপহার।

কিন্তু কিছু মানুষের জন্য যারা দারপ্রান্তে আছে যখন কঠিন সময় আসে (arabic) “(ফা ইন আসাবাতু ফিতনাতু ইন কালাবা আলা ওয়াজইহি)।” সে তার মুখ ঘুরিয়ে নেয়, সে তার মুখ ফিরিয়ে নেয়।এটার মানে কি? এর মানে “আমি আল্লাহর সাথে কিছু করতে চাইনা।তিনি কিভাবে আমাকে ত্যাগ করতে পারেন?তিনি কিভাবে আমাকে কঠিন সময় দেয়?” এবং এটা আমাদের সময় খুব সহজেই বোঝা যায়।আমরা একটি হাইপারকনসিউমার সোসাইটিতে বাস করছি।তো সবকিছু দ্রুত আসছে।আপনি বিনোদন চান,আপনার ফোনের একটি আ্যপ খুলে ফেলুন।আপনি কিছু কিনতে চান,

আ্যামাজনে অর্ডার করুন, সেটা আপনার দরজায় পৌছে যাবে।সবকিছু অনায়েসে হয়েযাচ্ছে এবং তাৎক্ষনিক হয়ে যাচ্ছে।আপনি কিছু চান,আপনার সেটার জন্য যাওয়া লাগবেনা সেটা আপনার কাছে চলে আসবে।সবকিছু দ্রুত দ্রুত দ্রুত দ্রুত।এখন আমরা সেবা পেয়ে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি এবং যদি কোন অর্ডার দুই তিন দিন দেরী করে আপনি সেখানে ওয়ান স্টার,ডিসলাইক,খারাপ রেটিং দিবেন।এবং এখন আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।আপনি আশা করেন আল্লাহ আপনার কিছু সমস্যার সমাধান করবেন কিন্তু আপনি কাজগুলো দ্রুত এবং তাৎক্ষনিক হওয়ায় অভস্ত্য হয়ে গিয়েছেন এবং যখন এটা হয়না “খারাপ সেবা, আমার আরো ভালো কাস্টমার সার্ভিস দরকার।আমি আর আল্লাহর কাছে কিছু অর্ডার করতে যাবোনা।”কারন এখন আপনি একজন কাস্টমার।আপনি এখন অধিকারী।আপনি আল্লাহর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেন।তিনি আমার কথা শুনলেননা।তিনি আমার সমস্যার সমাধান করলোনা।

বুঝুন আল্লাহ আজ্জা ওয়াজালের সবার জন্য পরিকল্পনা আছে এবং আপনাকে একটি তুলনা দিতে, ইয়াকুব আলাহিসসালামের ক্ষেত্রে যিনি কিনা তার সন্তান হারিয়েছিলেন।আল্লাহ তার সন্তানকে অনেক অনেক বছর পর ফিরিয়ে দেন।মুসা আলাহিসসালামের ক্ষেত্রে তার মাও সন্তানকে হারিয়ে ফেলেন, সে তাকে পানির মধ্যে ছেড়ে দেন এবং আল্লাহ কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তার সন্তানকে ফিরিয়ে দেন।কারন সন্তানের ক্ষুধার্ত হওয়ার সময় পরবর্তী খাওয়ানো সেই একই মায়ের থেকে ছিলো।কারন সে অন্য কারো থেকে পান করতোনা।আমি কি পেতে চেস্টা করছি।এই দুনিয়ায় কখনো কখনো আল্লাহ আপনার কস্টের জবাব দিবেন,কখনো আল্লাহ তাৎক্ষনাত দূর করে দিবেন কখনো কখনো আল্লাহ অনেক অনেক বছর পর দূর করবেন কিন্তু সবকিছুর মধ্যেই ভালো আছে।আমি বিশেষভাবে মুসা আলাহিস সালামের গল্পটি ভালোবাসি।কারন এটা খায়ের।এটিতে খায়ের সম্পর্কে চিন্তা করুন।সেই সমস্ত বছর তার বাবা কেদেছিলেন।তার বাবা প্রায় তার চোখের দৃস্টি হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং অবশেষে (ওবিয়াতু আইনাহু) কোরান বলে।কিছু উলামা যেমন আলুসী রাহমাতুল্লাহ মন্তব্য করেন “আমিয়া” এবং সে কান্নাকাটির থেকে অন্ধ হয়ে যায়।কিন্তু এই পুরো সময় ইউসুফ কই ছিলেন? ইউসুফ কারাগারে ছিলেন।

ইউসুফ একজন শিশু দাস ছিলেন এবং যখন তার পরিনত বয়স হয় তাকে কারাবন্দী করা হয়।সে অনেক বছর কারাবন্দী ছিলো।সুতরাং হয় সে দাস হয়ে কাজ করেছিলো অথবা কারাবন্দী হয়েছিলো।একটি ভালো জীবননা।এটি একটি ভালো জীবননা।কিন্তু সবকিছুর শেষে যখন সে রাজার সপ্ন ব্যাখ্যা করলেন এবং সেই সপ্নের অর্থ ছিলো পুরো অর্থনীতি সাত বছরের মধ্যে ধসে যেতে যাচ্ছে এবং মানুষজন অনাহারে মারা যাবে।ইউসুফি এমন একজন ছিলেন যিনি জানতেন কিভাবে এই সংকট মোকাবেলা করতে হয়।তিনি কারাগারে না থাকলে কখনোই রাজাকে সাহায্য করতে পারতেননা।কিন্তু তখন ইউসুফ সেখানে সপ্ন ব্যাখ্যা করার জন্য ছিলো এবং বললো ” ইন্নি হাফিজুর আমিন” ” আমিই এই দাহীত্বটি পালন করতে পারি।আমাকে কোষাগারের সেক্রেটারি করে দিন।আমাকে এই দায়িত্ব দিন।”যখন সে সেটা করে এবং সেটার যত্ন নেয় তার পরবর্তীতে হাজার হাজার পিতামাতাকে তাদের সন্তান অনাহারে মারা যাবে বলে কানতে হয়নি।একজন পিতা অনেক বছর ধরে কেদেছেন কিন্তু তার কান্নার জন্য আল্লাহ হাজার হাজার মানুষকে কান্নাকাটির থেকে বাচালেন।কারন সে যদি সেই অর্থনীতি না বাচাতেন এবং সে যদি সেই শস্য না বাচাতেন, পুরো জমি পচে যেতো এবং মানুষ অনাহারে মারা যেতো সবধরনের সংকট দেখা দিতো।কখনো কখনো যে সমস্যার মধ্যে দিয়ে আপনি যান সেটা শুধু আপনার জন্য ভালো নয় হয়তোবা আপনার সমস্যা সাদকায় জারিয়া হয়ে যায় অন্য অনেকের জন্য।আপনি এমনকি জানেনোনা।