রাগ সংবরণ করা যা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে

●|●নোমান আলী খান ●|●

কিছু লোক খুবই দুর্দশাগ্রস্থ জীবনযাপন করে কারণ তারা তাদের রাগ দূর করতে পারে না। তাদের ভেতর থেকে কোন কিছু তাদেরকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে অথচ তারা তার বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারছে না। ধীরে ধীরে তারা এটা মেনে নিচ্ছে যে “আমি আমার রাগ দূর করতে পারবো না এবং আমি নিশ্চিত আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন না কারণ আমি অনেক রাগী। আমি কাউকে মাফ করতে পারি না।”

সাহাবীরা হুদাইবিয়ার সন্ধি নিয়ে অনেক রাগান্বিত ছিলেন কিন্তু আল্লাহ রাগ দূর করা নিয়ে কি বলেছেন? “ হুওয়াল্লাযী য় আনযালাস সাকীনাতা ফী কুলূবিল্ মুমিনীনা” (৪৮ঃ৪)- তিনিই মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করেছিলেন । তিনি মুমিনদের অন্তরে শান্তি, ধৈর্য, প্রশান্তি নাযিল করেছিলেন আকাশ থেকে। ধৈর্যশীলতা নিজ থেকে আসে না আর আমরা নিজেদের ধৈর্যশীল বানাতে পারি না।

মূসা আ. এর মা চিন্তায়, ভয়ে মৃতপ্রায় ছিলেন যখন তিনি তার বাচ্চাকে পানিতে ভাসিয়ে দিচ্ছিলেন। আল্লাহ বলেন, “লাওলা আর রাবাতনা আলা ক্বালবিহা…”(২৮ঃ১০)- আমরা কি তাঁর হৃদয়কে দৃঢ় করিনি ও তাকে শক্ত রাখিনি? আল্লাহ তার অন্তরকে দৃঢ় করে দেন যার সাধ্য তাঁর ছিলো না। তিনি এটা নিয়ে ভয়ে ছিলেন, মানসিক অশান্তিতে ছিলেন। ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ আপনাকে সাহায্য করে শান্ত হতে।

কিছু লোক পাপ করে, নেশা করে, অশ্লীলতার প্রতি প্রলুব্ধ থাকে, অত্যাধিক রাগী হয় যে তারা তাদের রাগ সংবরণ করতে পারে না। কিছু লোক অতি লোভী, যারা সারাদিন টাকা নিয়ে ভাবে তারাও নিজেদের সাহায্য করতে পারে না। এই সকল সমস্যার সমাধান আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। এসব কারণেই আল্লাহ আকাশের দরজা দেন। আকাশের দরজা খুলে যায় এবং আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এটা আপনাকে পবিত্র করে দেয় যেমনভাবে পানি পৃথিবীকে পবিত্র করে।

আল্লাহ বলেন, “ইয়ুমদিদ কুম বি আমওয়ালিন ওয়াবানিন” (৭১ঃ১২)- তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, “ওয়াজা আল্লাকুম জান্নাতিন ওয়াজা আল্লাকুম আন নাহারান” (৭১ঃ১২)- তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন। তিনি আপনার জন্য বাগান প্রস্তুত করে দিবেন, আপনার জন্য নদী প্রবাহিত করে দিবেন।

আল্লাহ এভাবেই জিজ্ঞেস করেন, “আমি তোমাকে কি দিবো না? যদি তুমি শুধু ক্ষমা চাও।” আমি-আপনি মনে করি আমরা যখন ক্ষমা চাই তখন আল্লাহ শুধুই ক্ষমা করে দেন কিন্তু আল্লাহ বলেন “তুমি যখন ক্ষমা চাও তখন এমন কিছুই নেই যে আমি তোমাকে দেই না।”

বিষয়টা এমন যে আপনি অনেক কিছু চাইছেন অথবা আপনি শুধু ক্ষমা চাইছেন এবং সবকিছু তার সাথেই চলে আসছে। সবকিছুই এরমধ্যে চলে আসছে, কিছু কি বাকি থাকছে? অর্থ, সন্তান, আকাশের দরজা আপনার সকল সমস্যার জন্য খোলা। বাগান, নদী সবকিছুই আপনার জন্য প্রস্তুত। সাধারণত মানুষ চিন্তা করে যখন তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমার জন্য দুয়া করে এটা তাদের আখিরাতে সাহায্য করবে, এটা মৃত্যুর পরের জীবনে সাহায্য করবে। এই আয়াত আমাদের বলছে যে আল্লাহ শুধুমাত্র আমাদের আখিরাতে সাহায্য করবেন না, তিনি আমাদের কোথায় সাহায্য করবে? দুনিয়াতেও সাহায্য করবেন।

হজ্জ্বের ব্যাপারে চিন্তা করে দেখুন, আমাদের সবথেকে বড় ইচ্ছা হল হজ্জ্বে যাওয়া ও হজ্জ্ব কবুল হওয়া। যাতে আমাদের আগের পাপ মাফ হয় ও নতুন করে আমরা জীবন শুরু করতে পারি। শুধু এই কারণেই আপনি হজ্জ্বে যান। এমনকি হজ্জ্বেও আমরা যখন হেঁটে যাই, “সুম্মা আফিদু মিন হাইসু আফাদান নাস ওয়াস্তাগফিরুল্লাহ…”(২ঃ১৯৯)- “অতঃপর তওয়াফের জন্যে দ্রুতগতিতে সেখান থেকে ফিরে আস, যেখান থেকে সবাই ফিরে আর আল্লাহর কাছেই মাগফেরাত কামনা কর।”

হজ্জ্বের মূল বিষয় হলো আল্লাহর ক্ষমা লাভ। এটাই হজ্জ্বের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। হজ্জ্বের সময় আমরা আল্লাহর কাছে কি চাই? “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানা ওয়াফিল আখিরাতি হাসানা- হে আমার প্রভু! আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর, আখেরাতেও কল্যাণ দান কর। প্রতি তাওয়াফেই কুরআন থেকে প্রাপ্ত এই দুয়া করা হয় যেটা আমাদের বলে হজ্জ্বে আমাদের কি করা উচিত। “ওয়ামিন হুম মাইয়াকুলু রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানা ওয়াফিল আখিরাতি হাসানা ওয়াকিনা আযাবান নার”(২ঃ২০১)- হে আমার প্রভু! আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর, আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। আমাদেরকে এই জীবন ও পরের জীবনে ভালো কিছু প্রদান করো। অন্যভাবে বললে, “আমাদেরকে এই জীবনে এমন ভালো কিছু দেও যা আমাদের পরের জীবনে ভালো কিছু নিশ্চিত করে। আমরা সব কিছুই পেতে পারি যদি আমরা অন্তর থেকে ক্ষমা চাই।