– নোমান আলী খান
নামাজ আদায় করাকে আমরা বলি ‘ইকামাতুস সালাহ।’ ‘ইকামা’ শব্দের অর্থ হলো দাঁড়ানো। আর যখন আপনি দাঁড়ান আপনি এদিক ওদিক হেলে পড়েন না। বর্তমানে, পৃথিবীর সামাজিক মূল্যবোধে রয়েছে ‘ইওয়াজ বা বক্রতা।’ কিন্তু, এই কিতাবটি অনড় অটল, আর এটা আপনাকেও অনড় করে তোলে। এটা সোজা দাঁড়িয়ে থাকে, এর মূল্যবোধে সামান্যতম নড়াচড়াও পরিলক্ষিত হয় না।
এখন, আল্লাহ আমাদেরকে এই ইস্পাত কঠিন মূল্যবোধগুলো দেয়ার পর আমরা কী করলাম? আল্লাহ বলেন – فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ – ১৯:৫৯ ”অতঃপর তাদের পরে এল অপদার্থ পরবর্তীরা। তারা নামায নষ্ট করল ….” তারা নামাজ নষ্ট করলো। আর যখন আপনি নামাজ নষ্ট করেন – নামাজের সাথে যে নৈতিক মূল্যবোধগুলো আপনি পেয়েছিলেন সবগুলো তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে। যখন আপনি নামাজ ছেড়ে দেন তখন এটাই ঘটে। এরপর কী হয়? وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ – ”এবং তারা কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল।
আজ আমরা কোন পৃথিবীতে বসবাস করছি? ভোগবাদী যে বিশ্বে আজ আমরা বসবাস করছি তার নিকট চূড়ান্ত নৈতিকতা মানে হলো – ”তোমার কামনা বাসনার অনুবর্তী হও, তোমার মন যা চায় তাই করো।” জাস্ট ডু ইট, শব্দগুলো পরিচিত মনে হয়? আমার নিজের কাছে যদি এটা সঠিক মনে হয় তার মানে এটা সঠিক। …আমরা অফিসিয়ালি এমন এক জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছি যারা وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল।
প্রথম পতন কোনটি ছিল? নামাজ। এরপরের আরও জঘন্য পতন হল, فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا (Then they will fall into deviation) غَي এর আক্ষরিক অর্থ হল, deviation বিচ্যুতি, নৈতিক অধঃপতন। অর্থাৎ, তাদের মূল্যবোধের ক্রমান্বয়ে অধঃপতন ঘটবে।
অনৈতিকতার এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে ক্রমান্বয়ে নামতে থাকবে। আর এরপর তাদের চূড়ান্ত পতন হবে জাহান্নামে। আর তাই এই আয়াতের তাফসিরে বলা হয় – امطرت السماء نباتا – “আকাশ শাকসবজি বর্ষণ করেছে।” আকাশ শাকসবজি বর্ষণ করে না, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হয় যার ফলে শাকসবজি উৎপন্ন হয়। এখানে বলা হয়েছে তারা বিচ্যুতি অনুসরণ করবে, তারপর সেই বিচ্যুতির ফলশ্রুতিতে জাহান্নামে পতিত হবে। غَي এর প্রথম অর্থ হল – “আদ্দলাল ওয়াল খাইবা।” মনোযোগ দিয়ে শুনুন, গাই (غَي) এর প্রথম অর্থ হল, পথভ্রষ্টতা। মানে, তাঁদের জীবন পরিচালনার কোন গাইডেন্স নেই, কোন নির্দেশনা নেই, কোন স্ট্যান্ডার্ড নেই।
আর দ্বিতীয় অর্থ হল – হতাশা। তো, তারা শয়তানী কিছু একটার অনুসরণ করবে কিন্তু আসল আনন্দ পাবে না, তারপর আরও খারাপ কিছু অনুসরণ করবে তাতেও শান্তি পাবে না। এভাবে তারা বার বার হতাশ হতে থাকবে। আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাবে। মানুষ দুর্দশাগ্রস্ত জীবন অতিবাহিত করবে, বিষণ্ণতা বেড়ে যাবে, উদ্বেগ বেড়ে যাবে। মানুষের সুন্দর গাড়ি থাকবে, বাড়ি থাকবে; কিন্তু তারা সুখী হবে না। তারা শোচনীয় জীবন যাপন করবে। ডিপ্রেশন থেকে বাঁচার জন্য প্রচুর ঔষধ খেতে হবে। কারণ তারা বাস্তবতার মুখোমুখি হতে চায় না, তারা চরম হতাশ। তারা গাই (غَي) অবস্থায় পতিত।
গাই (غَي) এর তৃতীয় অর্থ হল – ফ্যাসাদ, দুর্নীতি। তারা মনে করেছিল আল্লাহর দাসত্ব থেকে বেরিয়ে গেলে দুনিয়া ভালো হবে, আরও বেশি উপভোগ্য হবে। কিন্তু আসলে দুনিয়া বাইরে থেকে চাকচিক্যময় মনে হবে আর ভেতরটা হবে কুৎসিত দুর্নীতিগ্রস্ত, যা আপনি কোনদিন কল্পনাও করেননি। তাই কোন শপিং মলের লাইটিং এবং ডিজাইন দেখে আপনি হয়তো চমৎকৃত হয়ে যাবেন, কিন্তু খোঁজ নিলে জানবেন যারা ওখানে কাজ করে খুব কম বেতনে চাকরি করে এবং মানবেতর জীবন যাপন করে। এরকম ফ্যাসাদে পূর্ণ হয়ে যাবে, দেখতে আকর্ষণীয় কিন্তু ভেতরটা কুৎসিত। কাপড়ের দোকানগুলো দশ হাজার/বিশ হাজার টাকা দামের সুন্দর দামি দামি কাপড়ে সাজানো থাকবে এবং তারা ২০০%, ৩০০% লাভে বিক্রি করবে, কিন্তু যারা কাপড় তৈরি করে তারা বসবাস করবে অতীতের দাস-দাসীদের মত। এমনকি কোন প্রাণীরও এমন নিষ্ঠুর আচরণ পাওয়ার কথা নয়।
——- * ———-