নোমান আলী খান
আমি তোমাদের ছোট একটি উপমা দিতে চাই, যা তোমাদের এই বিষয়টি বুঝতে সাহায্য করবে যে, কুরআনে কেন কোনো কোনো মানুষের অন্তরে সিল মেরে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তোমাদের অনেকেই ব্যায়াম করার সাথে পরিচিত। মনে করো, কেউ একজন এক্সিডেন্টের কবলে পড়লো এবং হাসপাতালে ভর্তি হলো। তাকে ছয় মাস যাবৎ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে হলো। সে ছয় মাস থেকে এক বছর যাবৎ পা নাড়াতে পারেনি। শেষে, যখন সে উঠতে যাবে সে কি তার পা ব্যবহার করতে পারবে? না। সম্ভবত, সে উল্টে পড়ে যাবে।
আমাদের মাংসপেশিগুলো যদি ব্যবহার করা না হয়, যদি এগুলোর অনুশীলন করা না হয়, তাহলে এগুলো কাজ করার শক্তি হারিয়ে ফেলতে থাকে। যেমন, তুমি যদি পাঁচ বছর যাবৎ তোমার চোখ বন্ধ করে রাখো, সম্ভবত চোখের জ্যোতি হারিয়ে ফেলবে। বুঝতে পারছো?
হেদায়াত গ্রহণ করার সামর্থ, নিরপেক্ষভাবে কোনো কিছু চিন্তা-ভাবনা করার সামর্থ হলো আল্লাহর দেওয়া মাসল, আধ্যাত্মিক পেশী, বুদ্ধিবৃত্তিক পেশী। নবী করিম (স) এর সময়কালে মানুষকে এই পেশীগুলোর অনুশীলন করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা অস্বীকার করে। যখন সত্য তাদের নিকট এসেছিলো তারা সত্যকে গ্রহণ করার এবং গুরুত্বের সাথে একে বিবেচনা করার সামর্থ অনুশীলন করতে অস্বীকার করে।
এখন, তুমি যদি এভাবে প্রতিনিয়ত তোমার এই সামর্থ অনুশীলন করতে অস্বীকার করো…. তুমি চিন্তা করতে অস্বীকার কর, তুমি তোমার অন্তর ব্যবহার করতে অস্বীকার কর, তুমি আন্তরিক হতে অস্বীকার কর, তাহলে কী হবে ভাবতে পারো? পরিশেষে, তোমার অন্তর শুরুতে যে কাজ করার সামর্থ রাখতো সেই সামর্থ হারিয়ে ফেলবে। তুমি সেই পেশী হারিয়ে ফেলেছো। সেই সামর্থ হারিয়ে ফেলেছো।
এই উপমার মাধ্যমে আমরা অন্তর মোহরাংকিত হওয়ার মানে উপলব্ধির একটি চেষ্টা করলাম মাত্র। ব্যাপারটা এমন নয় যে, তাদের একটি বিলিফ সিস্টেম রয়েছে এবং সেটাতে সিল মেরে দেওয়া হয়েছে।
একজন ব্যক্তি নাস্তিক হতে পারে বিভিন্ন কারণে, দার্শনিক কারণে বা সাইকোলজিক্যাল কারণে। আমরা জানি না কার অন্তরে কী হচ্ছে। আমরা জানি না। এটা একমাত্র আল্লাহ জানেন। বস্তুত, কার অন্তরে সিল মারা হয়েছে আর কার অন্তরে হয়নি এই ব্যাপারে কুরআনে বর্ণিত আমার সবচেয় প্রিয় উদাহরণ হলো, ফেরাউনের উদাহরণ। সম্ভবত, কুরআনে বর্ণিত সবচেয়ে জঘন্য চরিত্র, শয়তানও হয়তো তার কাছ থেকে অটোগ্রাফ চাইতো। সে নিজেকে রব ঘোষণা দিয়েছিল, ভয়াবহ গণ হত্যা চালিয়েছিল। হেডোনিজম(প্রবৃত্তি পূজা), ইগো, অহংকার, এমন কোনো চারিত্রিক দোষ নেই যা তার মাঝে ছিল না।
তথাপি, যখন মুসা (আ) কে তার নিকট প্রেরণ করা হয়, তাঁকে তার অন্তর বিচার করতে বলা হয়নি। মুসা (আ) কে বলা হয়, তাকে বল – فَقُلْ هَل لَّكَ إِلَىٰ أَن تَزَكَّىٰ – “অতঃপর বলঃ তোমার পবিত্র হওয়ার আগ্রহ আছে কি?” সম্ভবত, তুমি এখন ভালো হতে চাও। এমনকি তুমিও পরিবর্তিত হতে চাও, মিস্টার শিশু হত্যাকারী! এমনকি তোমারও নিজেকে পরিবর্তন করার সুযোগ আছে।
মৃত অন্তরের কারো কথা যদি ভাবতে চাও, তাহলে তোমরা হয়তো একজন হত্যাকারীর কথা চিন্তা করবে। কিন্তু, হাজার হাজার শিশু হত্যাকারী ফেরাউন!! এটা এমনকি কল্পনারও বাহিরে। এমনকি তার অন্তরকেও এখনো নিন্দা করা হয়নি। এমনকি তাকেও সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
তাহলে, শেষ কথা হল, কার অন্তরে সিল মারা হয়েছে আর কার অন্তরে হয়নি, আমার আপনি এ ব্যাপারে কোনো ধারণা নেই। আমরা কারো অন্তরে প্রবেশ করতে দেখতে পারি না কার অন্তরে সিল মারা হয়েছে আর কার অন্তরে হয়নি। আর এই জন্য আল্লাহর প্রশংসা করছি। আল্লাহ প্রভুত্বের জায়গা থেকে কথা বলেন এবং তিনি কারো অন্তর সম্পর্কে যা চান বলতে পারেন। আমি এভাবে কথা বলতে পারি না। কারণ, আমি তো প্রভু নই, আমি দাস মাত্র। তিনি একটি কর্তৃত্বের জায়গা থেকে কথা বলতে পারেন বলে আমিও একই কর্তৃত্বের জায়গা থেকে কথা বলতে পারি না। প্রকৃতপক্ষে, এটা আমাকে তাঁর কর্তৃত্ব আরো বেশি করে বুঝতে সাহায্য করে।
— নোমান আলী খান