বিচার দিবসে আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম


— নোমান আলী খান

আমি আপনাদের আগেই সতর্ক করে দিচ্ছি। আজকের বক্তব্যটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করার চেষ্টা করবো কিন্তু ৪৫ মিনিটের কমে শেষ করতে পারব বলে মনে হয় না। আগেই বলে দিচ্ছি, যেন আপনারা বিরক্ত না হয়ে পড়েন। আবারো বলছি, আমি আগেও আপনাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছিলাম কীভাবে কোন শব্দ না করে চুপি চুপি মসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে হয়। পাশের দরজাগুলো দিয়ে কেউ চলে যেতে চাইলে যেতে পারেন, আমি মাইন্ড করব না।

আজ আমি ভয়ানক একটি ব্যাপার নিয়ে বক্তব্য শুরু করতে চাই। আমাদের ধর্ম হল সত্য ধর্ম। আর সত্য সুখবর যেমন প্রদান করে তেমনি সাবধানবাণীও প্রদান করে। আমাদের সকল নবী রাসূলদের বিশেষত রাসূলুল্লাহ (স) কে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা বর্ণনা করেছেন “মুবাসশিরান ওয়া নাজিরান” হিসেবে। সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী। যদি কাউকে শুধু সুসংবাদ প্রদান করেন তাহলে সে সাবধানবাণীর কথা ভুলে যাবে। আর যদি শুধু সতর্ক করতে থাকেন তাহলে সে এতোই হতাশ হয়ে পড়ে যে মনে করে ভালো খবর বলতে কিছু নেই। বুঝতে পারছেন?

আমি চেষ্টা করেছি এই ভারসাম্য রক্ষা করার। যেহেতু, এই মাসটি প্রত্যাশার মাস তাই আমি সুসংবাদের উপর একটু বেশি জোর দিয়েছি। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লার প্রতি আমাদের আশা এবং ভালবাসা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু, একই সময়ে এর মাঝে একটা ভারসাম্য থাকতে হবে। যদিও আজকের বক্তব্যের শেষ অংশে আশার খবর রয়েছে, কিন্তু শুরু করছি এমন একটা জায়গা থেকে যা অতটা আশাব্যঞ্জক নয়।

দেখুন, আমাদের পূর্বের জাতি বনী ইসরাইলকে আল্লাহ বই দান করেছেন। আমাদের যেমন কুরআন রয়েছে তাদেরকেও অন্য কিতাব দেওয়া হয়েছিল। কুরআন যাকে বর্ণনা করেছে অন্য কুরআন হিসেবে, অর্থাৎ আগের কিতাব। তারা তাদের কিতাবকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেনি। তাদের মাঝে বেশ কিছু বিভ্রান্তিমূলক ধারণা গড়ে উঠে – ‘আমরা যদিও এতো ভালো মুসলমান নই, সমস্যা নেই, আল্লাহ যদি আমাদের দোজখে ফেলেনও- সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে আল্লাহ যদি আমাদের জাহান্নামে ফেলেনও, এটা হবে সাপ্তাহিক ছুটির মত কয়েক দিন মাত্র। কারণ তিনি আমাদের এতোই ভালবাসেন যে মুসলমানরা শেষমেশ তো জান্নাতে যাবেই। তাই, আমরা যদিও জাহান্নামে যাই সেটা হবে অল্প কিছু দিনের জন্য। সমস্যা নেই, ব্যাপারটা এতোটা খারাপ নয়। لَن تَمَسَّنَا النَّارُ إِلَّا أَيَّامًا مَّعْدُودَةً – “‘গুটি কয়েক দিন ছাড়া আগুন কক্ষনো আমাদেরকে স্পর্শ করবে না’।” (2:82) কিছু দিন মাত্র।

ব্যাপারটা হল, জান্নাত জাহান্নামের পূর্বে বিচার দিবস রয়েছে। আর বিচার দিবস – যেটি একদিনের জন্য – আল্লাহর কথা অনুযায়ী ৫০ হাজার বছর লম্বা হবে। জান্নাত বা জাহান্নাম নয়, শুধু বিচারের দিনটি এত লম্বা হবে। আর বিচারের দিনটি হবে মাত্র একদিনের। আর জান্নাত জাহান্নাম চিরকালের জন্য। তাই, কেউ যখন বলে, গুটি কয়েক দিন, তাকে এখনকার দিনের হিসেবে চিন্তা করলে তো হবে না। বর্তমানে, পৃথিবী তার অক্ষ বরাবর ঘুরে আর আমরা সূর্যের উদিত হওয়া এবং অস্ত যাওয়া দেখি। কিন্তু, কিয়ামতের দিন সূর্য, চাঁদ এবং পৃথিবী সবকিছুকে ধ্বংস করে নতুন একটি ব্যবস্থাপনা তৈরি করা হবে। তাই, আমরা এখন যেভাবে ২৪ ঘণ্টা হিসেব করি সেভাবে রাত দিনের হিসেব করলে তো চলবে না, যখন আখিরাত শুরু হবে। বুঝতে পারছেন? তাই, কেউ যখন বলে তারা কিছু দিনের জন্য জাহান্নামে যাবে, তাদের মনে রাখা উচিত তখনকার দিন তো এখনকার মত হবে না। চলুন, তাহলে সবার আগে এই ধারনাটি আমাদের মাথা থেকে ফেলে দেই।


কুরআনের বহু জায়গায় জাহান্নামের আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু আমি শুধু কুরআন থেকে একটি বর্ণনা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে চাই। আমার মতে, এটি আল কুরআনে জাহান্নামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনা। কুরআনের একজন ছাত্র হিসেবে আমি মনে করি, এই বর্ণনাটি জাহান্নাম সম্পর্কে জানার শুরু। কেউ যদি এই বর্ণনাটি বুঝতে পারে তাহলে সে জাহান্নাম সম্পর্কে যথেষ্ট জানে।

আয়াতটি শুরু হয়েছে এই কথা বলে – وَلَئِن مَّسَّتْهُمْ – ‘যদিও…’ যখন আমরা বাংলায় বলিঃ ” “যদি আমি সেখানে যাই তাহলে তোমার সাথে দেখা হবে।” কিন্তু কেউ যখন বলেঃ যদিও আমি যাই… এর মানে হল, যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই, আয়াতটি ‘যদিও…’ দিয়ে শুরু হওয়ার মাধ্যমে এমন কিছু ঘটার সম্ভাবনা কমিয়ে দিয়েছে। এভাবে বলার মাধ্যমে আল্লাহ কোন কিছুর উপর জোর কমিয়ে দেন। সহজ কথায়, তিনি বাক্যটিকে দুর্বল করে দিচ্ছেন। ‘যদিও…’ যদিও কী? ‘যদিও…মাসসাতহুম’ ‘যদিও এটা তাদের স্পর্শ করে।’ আরবিতে ‘মাসসা’ অর্থ কোন কিছু যখন আপনাকে সামান্যতম স্পর্শ করে। যেমন, কোন মাছি যখন কোনোমতে স্পর্শ করে। যদি সেকেন্ডের জন্য স্পর্শ করে তখন তাকে ‘মাছ’ বলা হয়।

সুতরাং, এটা যদি তাদেরকে কোনোমতে স্পর্শ করে, এক সেকেন্ডের জন্য… মাসসাতহুম। এখন, কী তাদের স্পর্শ করে? আপনারা হয়তো ভাবছেন, আগুন যদি তাদের স্পর্শ করে, হয়তো-বা শাস্তি যদি তাদের স্পর্শ করে। আল্লাহ বলেছেন – نَفْحَةٌ – “একটা হালকা বাতাস যদি তাদের স্পর্শ করে।” চলুন, এই বাতাস নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। আরবিতে ‘নাফহাতুন’ বলতে বুঝায়, দরজা বন্ধ করলে যখন সামান্য একটু বাতাস এসে পড়ে, পর্দা নড়ে উঠে; অথবা, কেউ জানালা বন্ধ করলে যেভাবে হালকা বাতাসে পর্দা নড়ে উঠে। এই বাতাসের – যা বাহির থেকে ভেতরে আসে বা ভেতর থেকে বাহিরে যায় – দুইটি ধরন আছে। একটি হল, লাফহা (লাম যোগে), আরেকটি হল, নাফহা (নুন যোগে)। লাম যোগে লাফহা মানে বাতাসটি গরম। আর নুন যোগে নাফহা মানে বাতাসটি ঠাণ্ডা।

আল্লাহ বলছেন এমনকি যদি ঠাণ্ডা বাতাস তাদেরকে স্পর্শ করে তোমার প্রতিপালকের শাস্তি থেকে।

তিনি এই আয়াতে জাহান্নাম কাউকে স্পর্শ করার কথা বলছেন না, তিনি এই আয়াতে আগুন কাউকে স্পর্শ করার কথা বলছেন না। তিনি এমনকি এখানে গরম বাতাস কাউকে স্পর্শ করার কথা বলছেন না। তিনি আগুনের ঠাণ্ডা অংশের কথা বলছেন, আর এটা আপনাকে চিরকালের জন্য স্পর্শ করছে না।

প্রসঙ্গত, আমরা ফিজিক্সে পদার্থের তিনটি অবস্থার কথা শিখেছি। সলিড, লিকুইড এবং গ্যাস। সলিড(কঠিন, শক্ত) কিছু যদি স্পর্শ করে আমরা তা অনুভব করতে পারি। যদি লিকুইড কিছু স্পর্শ করে তাহলেও আমরা বুঝতে পারি। আর যদি গ্যাস স্পর্শ করে আমরা কোনোমতে টের পাই। এই মুহূর্তে গ্যাস আমাদের স্পর্শ করছে। বাতাস এখন আমাদের স্পর্শ করছে। আমরা এটা অনুভব করি না। আর এই আয়াতে আল্লাহ বর্ণনা করছেন – কী তাদের স্পর্শ করছে? বাতাস তাদের স্পর্শ করছে। আর কোন ধরনের বাতাস? অপেক্ষাকৃত গরম বাতাস নাকি ঠাণ্ডা বাতাস? ঠাণ্ডা বাতাস। ঠাণ্ডা বাতাস কোনরকমে তাদের স্পর্শ করে।

এই আয়াতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, আমি একটু আগে নাফহা এবং লাফহার কথা বলেছিলাম, অন্য কথায় তারা এখনো জাহান্নামে প্রবেশ করেনি। তারা এর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আর জাহান্নামের অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা বাতাস এসে কোনোমতে তাদের স্পর্শ করল, তখন তাদের প্রতিক্রিয়া কী?

তারা চিৎকার করে বলে উঠবে – “ইয়া অইলানা! হায়! সবেচেয় কঠিনতম শাস্তি আমাদের জন্য শুরু হয়ে গিয়েছে! আমরা সবসময় সবসময় সবসময় অপরাধী ছিলাম।” [২১:৪৬] তারা সাথে সাথে তাদের সব অপরাধ স্বীকার করবে।

যে কারণে আমি এই আয়াতটি সংক্ষেপে আপনাদের নিকট উপস্থাপন করলাম তা হলঃ প্রথমত, এই আয়াতে আল্লাহ জাহান্নামের শাস্তির অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছেন না। (আল্লাহ সকল বিশ্বাসীকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত রাখুন।) কিন্তু আল্লাহ এখানে বর্ণনা করছেন – এমনকি জাহান্নামের আগুনের কাছে গেলে এবং ক্ষণিকের জন্য এর বাতাসের সামান্য স্পর্শ লাগলে একজন মানুষ চিন্তা করা শুরু করবে, এর চেয়ে আর ভয়ঙ্কর কোন শাস্তি হতে পারে না। এ জন্যই আল্লাহ দোজখের আগুন সম্পর্কে বলেছেন – ” اِنَّہَا سَآءَتۡ مُسۡتَقَرًّا وَّ مُقَامًا” – নিশ্চয় তা অবস্থানস্থল ও আবাসস্থল হিসেবে অত্যন্ত নিকৃষ্ট।” [২৫:৬৬] অর্থাৎ, অল্প এবং বেশি যে কোন সময়ের জন্য ওটা কত নিকৃষ্ট জায়গা!

এক সেকেন্ডের জন্যেও এটা ভাববেন না যে – আমি তো খারাপ, আল্লাহ যদি আমাকে জাহান্নামে ফেলেনও, এক সময় তো এখান থেকে মুক্তি পাবো। এই ধরনের চিন্তাকে কখনো প্রশ্রয় দিবেন না।
————— * —————-
এই ভূমিকা দেওয়ার পর…..যখন বিচার দিবস শুরু হবে সেদিন অসংখ্য ঘটনা ঘটবে। এরকম একটি ঘটনা হল, যখন সমগ্র মানবজাতি একত্রিত হবে, তারা জানে না কোথায় যাবে? তারা জানে না কোন দিকে ফিরবে? এই ঘটনা আসলে রাসূলুল্লাহ (স) এর একটি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।

জ্ঞানের প্রতি মুসলমানদের আগ্রহ ছিল সবসময়। তো, একবার, কিছু মানুষ বিখ্যাত সাহাবি আনাস ইবনে মালিক (রা) এর কাছে এলো। কারণ, লোকমুখে মানুষ এই খবর পেয়েছিল যে আনাস (রা) এই হাদিসটি জানতেন। আর এটি অনেক বড় একটি হাদিস। বুখারি শরীফে বর্ণিত আছে এটি। তো, তারা তাঁর কাছে গেলেন এই হাদিসটি শেখার জন্য। এই ঘটনা ঘটে রাসূলুল্লাহ (স) এর ইন্তেকালের পরে। তিনি বলেন, فَقَالَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم – এখন আনাস (রা) কথা বলছেন।

তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ (স) আমাদের বলেছেনঃ إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ مَاجَ النَّاسُ بَعْضُهُمْ فِي بَعْضٍ (মনোযোগ দিয়ে শুনুন) যখন বিচার দিবস শুরু হবে, মানুষ ঢেউয়ের মত একে অপরের উপর আছড়ে পড়বে। সর্বত্র বিশৃঙ্খলা, সবাই একে অন্যের দিকে ছুটতে থাকবে। (فَيَأْتُونَ آدَمَ) তারা কোন একভাবে আদম (আ) এর দেখা পাবে। সমগ্র মানব জাতি আদম (আ) এর কাছে ছুটে আসবে। (فَيَقُولُونَ اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ) তারা বলবে, আপনি কি দয়া করে আমাদের পক্ষ থেকে আল্লাহর সাথে কথা বলতে পারবেন? আমরা আল্লাহর ভয়ে ভীত। আপনি তো প্রথম মানুষ। আপনিই তো সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ ফেরেশতাদের সেজদা দিয়ে সম্মানিত করেছেন। আপনাকেই তো পছন্দ করা হয়েছে। আমরা সবাই আপনার সন্তান। আপনি আমাদের পিতা। তাই, দয়া করে আমাদের জন্য আল্লাহর সাথে কথা বলুন। আমরা খুবই ভীত।

এরপর তিনি বলবেন, (فَيَقُولُ لَسْتُ لَهَا ) আমি এর যোগ্য নই। আমি পারব না। (وَلَكِنْ عَلَيْكُمْ بِإِبْرَاهِيمَ) তিনি বলবেন, তোমরা কেন ইব্রাহিমের সাথে কথা বলছ না? তোমাদের উচিত ইব্রাহিমের সাথে কথা বলা। অতএব, মানব জাতি এখন কার খোঁজ করছে? ইব্রাহিম (আ) এর। (فَإِنَّهُ خَلِيلُ الرَّحْمَنِ ) তিনি বলবেন, তাঁর কাছে যাও, কারণ, তিনি আর রাহমানের খুবই কাছের বন্ধু। কুরআনে এসেছে – ” ۗ وَاتَّخَذَ اللَّهُ إِبْرَاهِيمَ خَلِيلًا” – আল্লাহ ইব্রাহিমকে তাঁর বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।(4:125) তাই, ইব্রাহিমের কাছে যাও, তিনি তোমাদের সাহায্য করতে পারবেন। তারা ইব্রাহিমের কাছে যাবেন। فَيَأْتُونَ إِبْرَاهِيمَ فَيَقُولُ لَسْتُ لَهَا তারা ইব্রাহিম (আ) এর কাছে গেলে তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য নই। আমাকে এই কাজের জন্য তৈরি করা হয়নি। আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর সাথে কথা বলতে পারব না।وَلَكِنْ عَلَيْكُمْ بِمُوسَى তোমরা কেন মুসা (আ) এর কাছে যাচ্ছ না? তো, মানব জাতি মুসা (আ) এর কাছে দৌড়ে যাবে। ( فَإِنَّهُ كَلِيمُ اللهِ ) তিনি হলেন কালিমুল্লাহ, তিনি আল্লাহর সাথে অনেক কথা বলতেন। কুরআনে এসেছে – وَكَلَّمَ اللَّهُ مُوسَىٰ تَكْلِيمًا – “আর আল্লাহ মূসার সাথে কথা বলেছেন সরাসরি।” (4:164)

সুতরাং, তিনি যেহেতু আল্লাহর সাথে কথা বলতে অভ্যস্ত, আজ তো কথা বলার উত্তম সময়। যাও, মুসার কাছে যাও, তিনি তোমাদের পক্ষ থেকে আল্লাহর সাথে কথা বলবেন। ( فَيَأْتُونَ مُوسَى فَيَقُولُ لَسْتُ لَهَا) তিনি বলবেন, না, আমি এর যোগ্য নই। আমি পারব না। (وَلَكِنْ عَلَيْكُمْ بِعِيسَى) ঈসা (আ) এর কাছে যাও। (فَإِنَّهُ رُوحُ اللهِ وَكَلِمَتُهُ) তিনি আল্লাহর দেওয়া রুহ এবং তিনি আল্লাহর কালিমা। “কুন ফায়াকুন”, আল্লাহর হুকুমে তিনি অলৌকিকভাবে জন্ম গ্রহণ করেন। অতএব, তিনি যেহেতু সকল রাসূলদের মধ্যে বিশেষ মর্যাদার তাঁর কাছে যাও। তাঁর সাথে কথা বল। (فَيَأْتُونَ عِيسَى) তারা ঈসা (আ) এর কাছে যাবে। (فَيَقُولُ لَسْتُ لَهَا) তিনি বলবেন, আমি পারব না। এই কাজ আমার জন্য নয়। আমাকে এই কাজের জন্য তৈরি করা হয়নি।

তারপর তিনি বলবেন, (وَلَكِنْ عَلَيْكُمْ بِمُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم) মানবজাতি, তোমাদের মুহাম্মাদ (স) এর কাছে যেতে হবে। মানবজাতি তখন রাসূলুল্লাহ (স) এর কাছে যাবে। (فَيَأْتُونِي فَأَقُولُ) সবাই আমার কাছে আসবে, আর আমি তাদের বলব…এখন রাসূল (স) আমাদের বলছেন। “আনা লাহা” আমার জন্যই এই কাজ। আমি এর যোগ্য। “আনা লাহা” (فَأَسْتَأْذِنُ عَلَى رَبِّي)

প্রসঙ্গত, আমি আপনাদের আরও বলার পূর্বে… বিচার দিনের একটি দৃশ্য হলঃ আল্লাহ বলেন, يَوْمَ يَقُومُ الرُّوحُ وَالْمَلَائِكَةُ صَفًّا ۖ لَّا يَتَكَلَّمُونَ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَٰنُ وَقَالَ صَوَابًا – যেদিন রূহ ও (দলে দলে) ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে (সেনাবাহিনীর মত)। এমন এক সময় থাকবে যখন কেউ কথা বলতে পারবে না। এমন এক ধরনের নীরবতা বিরাজ করবে যার কথা মানবজাতি কোনদিন শুনেনি, এমন ধরণের নীরবতার অস্তিত্ব কখনো কোনদিন ছিল না। সেই রকম পিন পতন নীরবতায়… আল্লাহ বলেন – لَّا يَتَكَلَّمُونَ – কেউ কথা বলতে পারবে না। إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَٰنُ – দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন সে ব্যতিত। আর তিনি হলেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (স)।

তো, তিনি এমন এক সময়ে আল্লাহর কাছে আসবেন যখন সৃষ্টির কারো একটি শব্দ করারও অনুমতি থাকবে না। সৃষ্টির কারো কোন আওয়াজ শোনা যাবে না। তিনি আল্লাহর সামনে এসে আল্লাহর কাছে কথা বলার অনুমতি চাইবেন। (فَيُؤْذَنُ لِي ) আমাকে কথা বলার অনুমতি দেওয়া হবে। তিনি বলেন – (وَيُلْهِمُنِي مَحَامِدَ أَحْمَدُهُ بِهَا لاَ تَحْضُرُنِي الْآنَ ) সেই দিন আল্লাহ আমাকে স্পেশাল একটি দোয়ার মাধ্যমে তাঁর প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা করা শিখাবেন – যা তিনি এখন আমাকে দেননি। এক স্পেশাল ওয়াহি রাসূলুল্লাহ (স) কে দেওয়া হবে বিচার দিবসে যা কোন সৃষ্টিকে কোনদিন প্রদান করা হয়নি।

আর তিনি সেইদিন সে স্পেশাল উপায়ে আল্লাহর প্রশংসা করবেন। لاَ تَحْضُرُنِي الْآنَ সেই ওয়াহি এখন আমার কাছে আসেনি। সেই দোয়া এখন আমি জানি না। فَأَحْمَدُهُ بِتِلْكَ الْمَحَامِدِ তারপর, আমি আল্লাহর দেওয়া সেই স্পেশাল বাক্যগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা করব। وَأَخِرُّ لَهُ سَاجِدًا আমি সেই বাক্যগুলো উচ্চারণ করার পর আল্লাহর সমীপে সেজদায় অবনত হব।

কিয়ামত দিনের দৃশ্যপটে রাসূল (স) এখন এমন অবস্থায় — প্রসঙ্গত, এই জায়গাকে “মাকামাম মাহমুদা” বলা হয়। একটা স্টেশন, অথবা বলতে পারেন এমন একটি স্টেজ যা প্রশংসিত। আর মানবজাতি সেটা প্রত্যক্ষ করবে। আমরা সবাই এটা দেখতে পাব। আমরা সবাই তখন নিশ্চুপ থাকব। আর তিনি সেজদায় পড়ে যাবেন। তিনি যখন সেজদায় পড়ে যাবেন আল্লাহ আজ্জা তাঁর সাথে কথা বলবেন। তিনি আল্লাহর সাথে কথা বলেছিলেন এখন আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা তাঁর সাথে কথা বলবেন। তিনি কী বলবেন? “ইয়া মুহাম্মাদ! ইরফা’ রা’সাক” তিনি বলবেন – “মুহাম্মাদ! তোমার মাথা উত্তোলন কর। وَقُلْ বল, يُسْمَعْ لَكَ তোমার কথা শোনা হবে।” শুধু যে আল্লাহ তাঁর কথা শুনবেন তা নয়, বরং বিচার দিনে উপস্থিত সবাই তাঁর কথা শুনবে। ইউস্মা’লাক। তারপর আল্লাহ বলবেন -وَسَلْ تُعْطَ ” চাও, তোমাকে দেওয়া হবে।” তুমি যা চাও, দেওয়া হবে।

ভাবতে পারেন? কিয়ামতের দিন আল্লাহর একটি সৃষ্টি কেমন পজিশনে থাকলে ……আমরা সবাই আল্লাহর নিকট ভিক্ষা চাচ্ছি। ” رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا ” – “ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের নূরকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন।” (66:8) এই কথা বলে আমরা আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লার কাছে কাকুতি মিনতি করতে থাকবো। আর এখানে আল্লাহ তাঁর এই সৃষ্টিকে বলছেন, তুমি চাও, তুমি যা চাও আমি দিবো। “সাল, তু’তা।” এই হল আমাদের রাসূল (স)। তারপর আল্লাহ বলবেন – “ওয়াস ফা’ ” তুমি যদি কারো পক্ষ থেকে কথা বলতে চাও, তুমি যদি কারো ব্যাপারে সুপারিশ করতে চাও যে আমি তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হই, যাও, সুপারিশ কর। “তুশাফফা’ ” আমি তোমাকে অন্য মানুষদের পক্ষ হয়ে কথা বলার অধিকার দিবো। “তুশাফফা’।

এই গ্যারান্টি আল্লাহ তাঁর রাসূল (স) কে দিয়েছেন। فَأَقُولُ يَا رَبِّ তখন, আমি বলবো, ইয়া রব! হে আমার প্রতিপালক!أُمَّتِي أُمَّتِي উম্মাতি, উম্মাতি। তিনি সর্বসাকুল্যে এই কথা বলবেন। এটাই তাঁর সম্পূর্ণ বাক্য। “আমার উম্মাহ, আমার উম্মাহ। আমার মানুষ! আমার মানুষ!” কিয়ামতের দিন সবাই বলবে, নাফসি নাফসি। “আমি নিজে, আমি নিজে।” আল্লাহর নবীরা, যারা মানুষকে আল্লাহর দ্বীনে আনার জন্য দিবারাত্রি পরিশ্রম করে গিয়েছেন, যেমন ইব্রাহিম (আ), যার এই দুনিয়ায় থাকাকালীন সময়ে শুধু একটাই উদ্বেগ ছিল মানুষর মুক্তি। বিচারের দিন তিনি বলবেন, না। যাও, অন্য কোথাও যাও। যাও, মুসার সাথে কথা বল। মুসা (আ) যিনি বনি ইসরাইল নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। তিনি বলবেন, না, যাও, ঈসা (আ) এর সাথে গিয়ে কথা বল। আর আমাদের রাসূল (স) বলবেন, উম্মাতি উম্মাতি।
————— * ————-
প্রসঙ্গত, কুরআনে কিয়ামত দিবসের যে ভয়াবহতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে তা একবার চিন্তা করে দেখুন। يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ – প্রত্যেক মা যে তার বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছে, সে তার বাচ্চাকে ফেলে দিবে যেন সে কিছুই না। (২২:২) يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ أَخِيهِ – وَأُمِّهِ وَأَبِيهِ – সেদিন মানুষ ভাইয়ের কাছ থেকে পালাবে, মায়ের কাছ থেকে পালাবে, বাবার কাছ থেকে পালাবে। وَصَاحِبَتِهِ وَبَنِيهِ – তার স্ত্রীর কাছ থেকে, তার ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে। (৮০ঃ৩৪-৩৬) আপনাদের কেউ কেউ হয়তো ইতোমধ্যে স্ত্রীর কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ান, তাই আপনার জন্য এটা হয়তো এতোটা ভীতিপ্রদ নয়। হা, হা, হা। এই আয়াত হয়তো আপনার জন্য ভয়ের নয়। কেউ কেউ ভাবছে, অবশেষে 🙂

যাইহউক, সমস্ত গুরুত্বের সাথে…সেই দিন সবাই কাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকবে? নিজেকে নিয়ে। প্রকৃতপক্ষে, এক ব্যক্তি বলবে – وَمَن فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا ثُمَّ يُنجِيهِ – ইয়া আল্লাহ! দুনিয়ার সবাইকে জাহান্নামে নিয়ে যান এবং বিনিময়ে আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করতে দিন। (৭০:১৪) এটাও কুরআনে এসেছে। মানুষ সেদিন এমন মরিয়া হয়ে উঠবে।

সেইদিন একজন মানুষ আল্লাহর সাথে কথা বলবেন, আর প্রথম যে শব্দগুলো তাঁর মুখ থেকে উচ্চারিত হবে তা হল, উম্মাতি উম্মাতি। আপনার জন্য আপনার রাসূলের ভালোবাসা এমনি প্রগাঢ়, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। “আমার উম্মাহ, আমার উম্মাহ।” যদি আমরা তাঁকে ভালবেসে থাকি তাহলে যেই উম্মতের জন্য আল্লাহর রাসূলের এতো ভালোবাসা, সেই উম্মতের জন্য আমাদের অন্তরে কীভাবে এতো ঘৃণার বাস! কীভাবে এটা সম্ভব? কেন আমাদের ভেতরে পরস্পরের প্রতি এতো বেশি ক্রোধ, বিচার, সমালোচনা, বিভক্তি, বিদ্বেষ, অনুমান, অহংকার? আর এই মানুষগুলোই দাবি করে তারা রাসূলুল্লাহ (স) কে ভালোবাসে। এসব তুচ্ছ বিষয় ভুলে যেতে এই ভালোবাসা কি যথেষ্ট নয়? আমাদের কোন পার্থক্যগুলো এর চেয়ে বড়? তো, যখন রাসূল (স) বলবেন উম্মাতি উম্মাতি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা জবাবে বলবেন – فَيَقُولُ انْطَلِقْ – এগিয়ে যাও। فَأَخْرِجْ مِنْهَا مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ شَعِيرَةٍ مِنْ إِيمَانٍ – মনোযোগ দিয়ে শুনুন কী বলা হচ্ছে – “যাও, এখান থেকে বের করে নাও যাদের আছে এমনকি এক — এখানে ‘শায়ীরা’ মানে বার্লির দানা যা সামান্য একটু লম্বা হয়, যাদের অন্তরে এতোটুকু পরিমাণ ঈমান আছে, যেকোনো ঈমান, যদি তাদের অন্তরে থেকে থাকে তাহলে তাদের বের করে নাও। আপনি এগিয়ে যান এবং বের করে নিন।”

দৃশ্যপটটি কল্পনা করুন। রাসূলুল্লাহ (স) মানুষকে ডাকছেন যাও, যাও, যাও এবং তিনি তাদেরকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিছু মানুষকে নিয়ে যাওয়ার পর ফেরেশতারা থামিয়ে দিলেন। কারণ, কারো কারো ঈমান এর চেয়েও ছোট। সামান্য পরিমাণ ঈমান বলতে আসলে কী বোঝায়? কেউ একজন হারাম কোন কাজে যুক্ত ছিল। সে ভয়ানক কিছু একটা করছিল, কাজটা করে ফেলার পর তার মনে অনুশোচনা জাগ্রত হল। তার ভেতর থেকে কিছু একটা বলছে, “এটা খারাপ কাজ, আমার এটা করা উচিত নয়। আল্লাহ আমাকে এই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন।” তারপর, কোন একভাবে তার এই চিন্তাটাকে সে দমিয়ে দিল, ‘থাক এখন চিন্তা করার দরকার নেই।’

কিন্তু পরবর্তীতে সে আল্লাহর কাছে দোয়া করে বলল, “ইয়া আল্লাহ! আমাকে এর থেকে মুক্তি দিন! আমি জানি না কীভাবে এই কুঅভ্যাস থেকে বাঁচবো। আমি জানি না কীভাবে এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসবো। আমি জানি না কীভাবে এই শয়তানী কাজ থেকে বিরত থাকবো। আমি চাই না এটা আমার জীবনে। কিন্তু, তবু আমি এতে আটকা পড়ে গিয়েছি।” অতি ক্ষুদ্র একটু ঈমান তার ভেতর থেকে চিৎকার করছে। অন্য কেউ এটা শুনতে পারছে না। তার অন্তর এটা শুনছে। আর আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা বলছেন তারা যদি এতোটুকু ঈমানও দেখাতে পারে আপনি এগিয়ে যান তাদের বের করে নিয়ে আসুন। আপনি তাদের বের করে নিয়ে আসুন। আর তিনি যখন এভাবে মানুষদের বের করে নিয়ে আসবেন তখন ফেরেশতারা একসময় থামিয়ে দিবেন। কারণ, অনেক মানুষের এতোটুকু ঈমানও নেই। সামান্য অনুতাপটুকুও তাদের ছিল না। তো, ফেরেশতারা মানুষদের থামিয়ে দিবেন। فَأَنْطَلِقُ فَأَفْعَلُ – “আমি গিয়ে এমনই করব।” ثُمَّ أَعُودُ – “তারপর আমি ফিরে আসব।” অর্থাৎ, ফেরেশতারা থামিয়ে দিবে। আর অন্য মানুষেরা সেখানে কাঁদতে থাকবে। আমাদের কী হবে? আমাদের কী হবে? তারপর রাসূলুল্লাহ (স) ফেরত আসবেন। তিনি বলেন – فَأَحْمَدُهُ بِتِلْكَ الْمَحَامِدِ – অতঃপর আমি পুনরায় সেসব প্রশংসা বাক্য দ্বারা আল্লাহর প্রশংসা করবো।

লক্ষ্য করুন, প্রথমবার তিনি প্রার্থনা করার জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন। তাই না? দ্বিতীয় বারের বেলায় অনুমতির কোন উল্লেখ নেই। লক্ষ্য করেছেন? তিনি আসলে সাথে সাথে আল্লাহর প্রশংসা করা শুরু করবেন। আল্লাহ কি তাঁকে এমনটি করতে বলেছেন? না। এটা হল নিজ উম্মতের প্রতি তাঁর অপরিসীম ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। তিনি আবারো আল্লাহর প্রশংসা করা শুরু করবেন। এই আশায় যে আল্লাহ তাঁকে অটোমেটিক অনুমতি দিবেন। তিনি তাঁর কাছে ভিক্ষা চাইতে শুরু করবেন। ثُمَّ أَخِرُّ لَهُ سَاجِدًا – “আর সিজদা্য় পড়ে যাবো।” فَيَقُولُ يَا مُحَمَّدُ – “আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ!” ارْفَعْ رَأْسَكَ – “তোমার মাথা উঠাও।” وَقُلْ يُسْمَعْ لَكَ – “বল, তোমার কথা শোনা হবে।” وَسَلْ تُعْطَ – “চাও, তোমাকে আবারো দেয়া হবে।” وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ – “সুপারিশ কর, গ্রহণ করা হবে।” তোমাকে সুযোগ দেওয়া হবে তাদেরকে বের করে নেওয়ার। তোমাকে তাদের জন্য সুপারিশ করার সুযোগ দেওয়া হবে। فَأَقُولُ يَا رَبِّ أُمَّتِي أُمَّتِي – “আমি তখন বলবো, হে আমার রবব, আমার উম্মাত! আমার উম্মাত! ” তিনি তো ইতোমধ্যে অল্প ঈমানের অধিকারীদের বের করে নিয়েছেন। فَيَقُولُ انْطَلِقْ – “এরপর আল্লাহ্ বলবেন, এগিয়ে যাও, فَأَخْرِجْ مِنْهَا مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ أَوْ خَرْدَلَةٍ مِنْ إِيمَانٍ – যাদের অন্তরে এক বিন্দু পরিমাণও ঈমান আছে – (বার্লির দানা নয়, বার্লির দানা তো এতোটুকু লম্বা, বরং বিন্দু পরিমাণ, ‘খারদালা মানে সরিষার দানা) অতি ক্ষুদ্র বিন্দুর মত – তাদেরকেও সেখান থেকে বের করে আন।

আর যখন আল্লাহ বলছেন এর ওজনের মত…বর্তমানে আমাদের কাছে ডিজিটাল ওজন মাপার যন্ত্র আছে। আগের দিনে পাল্লা ছিল। তাই, আপনি যখন এক মুষ্টি চাল এক পাল্লায় রাখতেন ঐটা হয়তো তেমন একটা ঝুঁকতো না। যদি একটু বেশি করে চাল রাখতেন তখন একটু করে ঝুঁকতো। এখন, ডিজিটাল ওজন মাপার যন্ত্র দিয়ে গ্রাম কিলোগ্রাম মাপা হয়। এমনকি সামান্য কয়ক দানা রাখলেও যন্ত্রের স্ক্রিনে ভেসে উঠে দশমিক শূন্য শূন্য এক গ্রাম। এখন, শুধু একটি চাল রেখে দেখুন বা একটি সরিষার দানা রেখে দেখুন স্ক্রিনে কিছু ভেসে উঠে কিনা। কিছুই হয় না। আর আল্লাহ বলছেন আমি তোমার সুপারিশের কারণে, রাসূলুল্লাহ (স) এর দোয়ার কারণে এমন মানুষদের ও মুক্তি দিব যাদের ঈমান এমনকি এই দুনিয়ায় মাপাও যায় না।

প্রসঙ্গত, আপনি যদি একটি দানা খান, বুঝতে পারবেন যে কিছু খেয়েছেন? আপনি এমনকি বুঝতেও পারবেন না। এটা হল এমন ধরণের ঈমান যার এটা আছে সেও এমনকি ভালোভাবে বুঝতে পারে না। এমনকি তারা নিজেরাও ঠিকমত বুঝে উঠেতে পারে না যে ঈমান আছে। আর অন্যরা কীভাবে বুঝবে। আর কেউ যদি একটি দানা আহার করে, এটা তাদের পুষ্টিসাধনে তেমন কোন ভূমিকা রাখতে পারবে না। এটা শরীরের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ খাবার নয়। ঠিক তেমনি যার সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান ছিল, সে ঈমানও একটি ভালো জীবন অতিবাহিত করার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না। কিন্তু, তাদের অন্তরের কোন এক জায়গায় একটু ঈমানের বাস ছিল, আল্লাহর প্রতি একটু খানি বিশ্বাস ছিল, আল্লাহর অগণিত দানের প্রতি সামান্য কিছু কৃতজ্ঞতা ছিল, সামান্য পরিমাণ আনুগত্য ছিল। কোথাও অতি অল্প কিছু ঈমান ছিল।

আল্লাহ বলছেন তুমি এমন যাদেরকে পাও তাদেরকেও বের করে নিয়ে আসো। রাসূলুল্লাহ (স) বলেন – “আমি যাবো এবং তাই করবো।”
————– * ———————-

আর এটা বিশাল এক জনগোষ্ঠী যারা আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে ছিল। তাদের ভেতরে একেবারে ক্ষুদ্র কিছু ঈমান ছিল। এরপর তো আর কিছু নেই মনে হচ্ছে। ঘটনা শেষ। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (স) এখানেই থেমে যাননি। তিনি আবারো ফিরে যাবেন এবং فَأَحْمَدُهُ بِتِلْكَ الْمَحَامِدِ ثُمَّ أَخِرُّ لَهُ سَاجِدًا – “আমি সেসব প্রশংসা বাক্য দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করবো এবং আবারো সিজদা্য় পড়ে যাবো।” فَيُقَالُ يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ – “আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও।” وَقُلْ يُسْمَعْ لَكَ – “বল, তোমার কথা শোনা হবে।” وَسَلْ تُعْطَ – “চাও, দেওয়া হবে।”

আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা সহজেই বলতে পারতেন – তুমি তো ইতোমধ্যে চেয়েছ এবং তোমাকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তৃতীয়বারের মত রাসূলুল্লাহ (স) কে বলা হচ্ছে – وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ – “এগিয়ে যাও মানুষের জন্য সুপারিশ কর, গ্রহণ করা হবে।” তোমাকে তাদের পক্ষ হয়ে চাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। আমি তোমাকে এটা দিচ্ছি। فَأَقُولُ يَا رَبِّ أُمَّتِي أُمَّتِي – “আমি তখন বলবো, হে আমার রবব, আমার উম্মাত! আমার উম্মাত!”

এখন, চলুন এখানে একটু থামি। যদি এই সুযোগ পেতেন, আল্লাহ যদি আপনাকে বলতেন – তুমি যা চাও তাই পাবে। তুমি চাও, দেওয়া হবে। যা কিছুই তুমি চাও না কেন দেওয়া হবে। আমাদের বিশাল একটা লিস্ট আছে। রাসূলুল্লাহ (স) কে এই সুযোগ কয়বার দেওয়া হয়েছে? তিন বার। কত মিলিয়ন মানুষকে ইতোমধ্যে রক্ষা করা হয়েছে? তৃতীয় বার তো তিনি নিজের জন্য কিছু চাইতে পারতেন? আমরা তো মানুষ। আল্লাহ যদি বলেন চাও, আমি দিবো। আর এই মানুষটি (স) আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আর তাঁকে বলা হচ্ছে – আমি তোমাকে দিবো তুমি যেটাই চাও। কিন্তু তারপরেও তাঁর জিহ্বায় উম্মাতি উম্মাতি।

তো, আল্লাহ বলবেন – فَيَقُولُ انْطَلِقْ – সামনে এগিয়ে যাও। فَأَخْرِجْ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ أَدْنَى أَدْنَى أَدْنَى مِثْقَالِ حَبَّةِ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ – যাও, সামনে এগিয়ে যাও এবং এমন প্রত্যক ব্যক্তিকে বের করে আন যার একটি সরিষার অতি ক্ষুদ্র অতি ক্ষুদ্র অতি ক্ষুদ্র অংশ পরিমাণ ঈমান আছে। এতো ক্ষুদ্র বিন্দু যাকে আপনারা হয়তো মাইক্রোস্কপিক বলবেন। যদি তাদের এক অ্যাটম, এক সাব-অ্যাটমিক কণার পরিমাণ ঈমান থাকে, এই পৃথিবীতে যা দেখা, শোনা বা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। যদি তাদের গভীর অবচেতন মনের কোথাও কণা পরিমাণ ঈমান থাকে, যার কথা তারা নিজেরাও বুঝতো না, যদি তাদের ততটুকু ঈমান থাকে, এগিয়ে যাও এবং তাদের বের করে নিয়ে আসো। যদি তাদের অন্তরে এতকুটুন ঈমান থাকে।

তো, আল্লাহ রাসূলুল্লাহ (স) বলেন – فَأَخْرِجْهُ مِنْ النَّارِ -“তাদেরকে আগুন থেকে বের করে আন।” কথাটা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তাদেরকে কোথা থেকে বের করে আন? আগুন থেকে। অর্থাৎ, কিছু মানুষ ইতোমধ্যে জাহান্নামে পতিত হয়ে গেছে। অনেক মানুষ এই হাদিস পড়ে মনে করে, আমরা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে যাবো, আগুন আমাদের স্পর্শ করবে না। কিন্তু, হাদিস এই কথা বলছে না। রাসূলুল্লাহ (স) আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতি করছেন। এই দিনটি হবে পঞ্চাশ হাজার বছর লম্বা। অনেক মানুষের বিচার ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। তারা ইতোমধ্যে জাহান্নামে পতিত হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে সেখানে চলে গেছে।

আর আমি আপনাদের সেই আগুন সম্পর্কে শুরুতে বলেছিলাম। আপনি যদি এর বাতাসের স্পর্শ পান এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের জন্য, আপনার মনে হবে এর চেয়ে ভয়ংকর কোন শাস্তি হতে পারে না। আর কিছু মানুষ ইতোমধ্যে সেই আগুনে পড়ে গেছে। আর আল্লাহর রাসূল (স) সেই মানুষগুলোর জন্যেও আশা ছেড়ে দেননি। তাদের জন্যেও হতাশ হয়ে পড়েননি। প্রসঙ্গত, তারা মুসলিম। তারা কিন্তু মুসলিম। কারণ, রাসূল (স) কী বলেছেন? তাঁর মুখ থেকে কোন কথাগুলো উচ্চারিত হয়েছে? উম্মাতি উম্মাতি। আগুনের মানুষগুলো মুসলমান। ঐগুলো অমুসলিম নয়, মুসলিম। আর তিনি তাদের মুক্তির জন্যেও আল্লাহর কাছে ভিক্ষা চাচ্ছেন। তো, রাসূলুল্লাহ (স) বলেন – فَأَنْطَلِقُ فَأَفْعَلُ – আমি যাবো এবং তাই করবো।

প্রসঙ্গত, রাসূলুল্লাহ (স) এর এই কথার সাথে হাদিসের সমাপ্তি হল। আনাস ইবেন মালিক (রা) তাঁর কাছে আসা লোকদের নিকট এতোটুকু বর্ণনা করলেন।قُلْتُ لِبَعْضِ أَصْحَابِنَا হযরত আনাসের কাছে হাদিস শিখতে আসা একজন বলল – “আমি আমার কিছু সঙ্গীকে বললাম…” لَوْ مَرَرْنَا بِالْحَسَنِ وَهُوَ مُتَوَارٍ فِي مَنْزِلِ أَبِي خَلِيفَةَ – চল, হাসান বস্রীর কাছে যাই। আমরা হাদিসটি আনাস (রা) এর কাছ থেকে শুনেছি। কিন্তু, আমরা জানি এই হাদিসটি হাসান বস্রীও জানেন। চল, তাঁর কাছে যাই। প্রসঙ্গত, আনাস (রা) এর তখন অনেক বয়স হয়ে গিয়েছিল। এই হাদিসে রাসূলুল্লাহ (স) কতবার আল্লাহর কাছে গেলেন? তিনবার। রাসূলুল্লাহ (স) ইন্তেকাল করেছেন বহু বছর আগে। আমরা জেনেছি, এই হাদিস হাসান বস্রী (র) ও জানেন। তারা আগে কখনো এই ধরণের কথা শুনেনি। খুবই আশ্চর্যজনক।

তাই তারা ব্যাপারটা যাচাই করতে চাচ্ছিলেন যে দেখা যাক হাসান বস্রীও একই হাদিস বর্ণনা করে কিনা। তারা শুনেছে হাসান বস্রী বাস করেন আবু খলিফার বাড়ির পেছনের একটি ঘরে। চল, তাঁকে খুঁজে বের করি। তাই তারা হাসান বস্রীকে খুঁজতে লাগলেন। তো, তারা হাসান (রা) কে খুঁজে পেলেন। فَحَدَّثْنَاهُ بِمَا حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ ( খুঁজে পাওয়ার আগে তারা বলছিলেন) চল, আনাস (রা) এর কাছে যা শুনেছি তা হাসানের নিকট বর্ণনা করি। ……فَأَتَيْنَاهُ فَسَلَّمْنَا عَلَيْهِ – “তো, আমরা তাঁর কাছে এলাম এবং তাঁকে সালাম দিলাম।” فَأَذِنَ لَنَا – তিনি “আমাদেরকে প্রবেশের অনুমতি দিলেন।” فَقُلْنَا لَهُ يَا أَبَا سَعِيدٍ – আমরা তাঁকে বললাম, হে সাঈদের পিতা! جِئْنَاكَ مِنْ عِنْدِ أَخِيكَ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ – “আমরা আপনারই ভাই আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর নিকট হতে আপনার কাছে আসলাম।” فَلَمْ نَرَ مِثْلَ مَا حَدَّثَنَا فِي الشَّفَاعَةِ – “শাফাআত বিষয়ে তিনি যেমন বর্ণনা দিয়েছেন, তেমন বর্ণনা করতে আমরা আর কাউকে দেখিনি।” فَقَالَ هِيهْ – তিনি বললেন, হুম। হ্যাঁ, তোমরা তা জানো। فَحَدَّثْنَاهُ بِالْحَدِيثِ – “আমার কাছে সেটি বর্ণনা কর।”

দেখি, তোমরা আনাসের কাছ থেকে কী শুনেছ। তো, তারা তাঁর নিকট সম্পূর্ণ হাদিসটি বর্ণনা করে শুনালেন। যা এতক্ষণ ধরে আমি আপনাদের বলেছি। فَانْتَهَى إِلَى هَذَا الْمَوْضِعِ – আমরা এই পর্যন্ত অর্থাৎ তিনবার রাসূল (স) এর সুপারিশের কথা বলে শেষ করলাম। فَقَالَ هِيهْ – তিনি বললেন, আরো বর্ণনা কর। আর কী আছে? فَقُلْنَا لَمْ يَزِدْ لَنَا عَلَى هَذَا – আমরা বললাম, তিনি তো এর অধিক আমাদের কাছে বর্ণনা করেননি। তিনি আমাদের এতোটুকুই বলেছেন। এখন হাসান কথা বলছেন – فَقَالَ لَقَدْ حَدَّثَنِي وَهُوَ جَمِيعٌ مُنْذُ عِشْرِينَ سَنَةً – তিনি অর্থাৎ আনাস (রা) আমার কাছে এই হাদিস বর্ণনা করেছেন যখন তিনি যুবক ছিলেন, বিশ বছর আগে। কতবছর আগে এই হাদিস বলেছেন? বিশ বছর আগে। فَلاَ أَدْرِي أَنَسِيَ أَمْ كَرِهَ أَنْ تَتَّكِلُوا – আমি নিশ্চিত না তিনি কি বাকিটুকু ভুলে গেলেন নাকি তিনি তোমাদের বাকিটুকু বলেননি কারণ তাহলে তোমরা অলস হয়ে পড়বে।

তিনি বলেন এই হাদিসের চতুর্থ একটি অংশ আছে। আর আমি নিশ্চিত নই তোমাদের বলা উচিত কিনা। কারণ, তাঁর বয়স এখন বিশ বছর বেশি হয়তো তাঁর স্মরণশক্তি ঐভাবে কাজ করছে না। কিন্তু, আমার সন্দেহ তিনি তোমাদের বলেননি কারণ তোমরা এতে অলস হয়ে পড়বে। قُلْنَا يَا أَبَا سَعِيدٍ فَحَدِّثْنَا – তারা বলল, হে আবু সাইদ! আপনি কি আমাদের বলতে পারেন? আমরা আসলেই জানতে চাই। فَضَحِكَ – তিনি হাসতে শুরু করলেন। وَقَالَ خُلِقَ الإِنْسَانُ عَجُولاً – তিনি কুরআনের একটি আয়াত উল্লেখ করে বললেন, মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে তাড়াহুড়োপ্রবণ করে। তারা তাড়াতাড়ি কোন জিনিস পেতে চায়। مَا ذَكَرْتُهُ إِلاَّ وَأَنَا أُرِيدُ أَنْ أُحَدِّثَكُمْ حَدَّثَنِي كَمَا حَدَّثَكُمْ بِهِ – আমি তো বর্ণনার উদ্দেশেই তোমাদের কাছে বিষয়টি উল্লেখ করলাম। তিনি তাদেরকে উৎসুক করে তুলছিলেন।

আমি তোমাদের বলবো। তিনি বিশ বছর পূর্বে আমার কাছে যেভাবে বর্ণনা করেছেন সেভাবে বর্ণনা করব। قَالَ ثُمَّ أَعُودُ الرَّابِعَةَ – তিনি তোমাদের নিকট যা বলেছেন তা সত্য। তিনি আরও বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, এরপর আমি চতুর্থবারের মত ফিরে আসবো। فَأَحْمَدُهُ بِتِلْكَ الْمَحَامِدِ – এবং সেসব প্রশংসা বাক্য দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করব যে বাক্যগুলো আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন, যা অন্য কোন সৃষ্টিকে এর পূর্বে দেওয়া হয়নি। ثُمَّ أَخِرُّ لَهُ سَاجِدًا – এবং সিজদায় পড়ে যাবো। فَيُقَالُ يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ – তখন বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। وَقُلْ يُسْمَعْ – বল, তোমার কথা শোনা হবে। وَسَلْ تُعْطَهْ – চাও, দেয়া হবে। وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ – শাফাআত কর, গ্রহণ করা হবে।

এই সময়ে এসে এতোটুকুর চেয়ে ছোট ঈমানও আর অবশিষ্ট নেই। সকল সম্ভাব্য ঈমান ওয়ালাদের মুক্তি হয়ে গেছে। ‘আদনা আদনা মিস কালা হাব্বা’ সবাই মুক্তি পেয়ে গেছে। فَأَقُولُ يَا رَبِّ ائْذَنْ لِي فِيمَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ – এখন রাসূলুল্লাহ (স) উম্মাতি বলেননি। এইবার তিনি উম্মাতি বলেননি। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি বলেছেন – হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তাদের সম্পর্কে শাফাআত করার অনুমতি দান কর, যারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ গ্রহণ করেছে। এমন কেউ যে এমনকি এই কথা বলেছে। “আচ্ছা, ঠিকাছে, আমার মনে হয় একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন।” একটি কলেজ ক্যাম্পাসে হয়তো এক দল ছাত্র মুসলিম ছাত্রদের সাথে আলোচনা করছে। তারা ঈশ্বর নিয়ে কথা বলছে। তখন, একজন বলল, আচ্ছা, ঠিকাছে, দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে মেনে নিলাম একজন ঈশ্বর রয়েছেন। ঠিকাছে, আমি মানলাম যে, একজন ঈশ্বর আছেন। আমি বলছি না যে আমি মুসলিম। যদি উপাসনা করতেই হয়, তাহলে শুধু এক ঈশ্বরের উপাসনা করতে হবে। তাদের অন্তরে কোন অনুভূতি নেই। তারা কারো ইবাদাত করছে না। তারা শুধু এই উপসংহারে পৌঁছেছে।

প্রসঙ্গত, এই ধরণের একটি সাদৃশ্য পাওয়ায় যায় সূরা হুজুরাতের একটি বর্ণনায়। যখন তিনি বলেছেন – قَالَتِ الْأَعْرَابُ آمَنَّا ۖ قُل لَّمْ تُؤْمِنُوا وَلَٰكِن قُولُوا أَسْلَمْنَا – “বেদুঈনরা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’। বল- ‘তোমরা ঈমান আননি, বরং তোমরা বল, ‘আমরা (মৌখিক) আনুগত্য স্বীকার করেছি’”(49:14) তোমরা শুধু ইসলামের ধারণা গ্রহণ করেছ। ধারণা থাকে এখানে (মাথায়)। আর ঈমান থাকে কোথায়? এখানে (অন্তরে)। যাদের অন্তরে কিছু ঈমান ছিল তাদের ইতোমধ্যে নেওয়া হয়ে গেছে। এখন, যাদের মাথায় কিছু ধারণা ছিল যে একজন রব আছেন। তারা কোনোদিন ধর্ম প্র্যাকটিস করেনি। তারা ধর্মীয় কোন কাজই করেনি। তারা শুধু এই ধারণা মেনে নিয়েছিল যে, শুধু একজন প্রভুর উপাসনা করতে হবে।

রাসূল (স) বলছেন যে কেউ এই সিদ্ধান্তে আসবে, যে কেউ বলবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তার জন্য শাফায়াৎ করার অনুমতি দান করুন, আল্লাহ। فَيَقُولُ وَعِزَّتِي وَجَلاَلِي وَكِبْرِيَائِي وَعَظَمَتِي – আল্লাহ বলবেন, আমি আমার কর্তৃত্বের শপথ করছি, আমি আমার স্বীয় গৌরবের শপথ করছি, আমি আমার স্বীয় বড়ত্বের শপথ করছি, আমি আমার স্বীয় মহত্ত্বের শপথ করছি, لأُخْرِجَنَّ مِنْهَا مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ – আমি স্বয়ং অবশ্য অবশ্যই তাদের সবাইকে জাহান্নাম থেকে বের করব, যারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলেছে। তোমার এই সুপারিশের কারণে। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

জাহান্নাম কতটা ভয়ংকর তার একটি ছোট্ট নমুনা দিয়ে আমি আজকের আলোচনাটি শুরু করেছিলাম। এখন, সবশেষে রাসূলুল্লাহ (স) আমাদের জন্য এই শাফাআত করছেন। এই হাদিসটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি হাদিস। এমনকি বিশ বছর পরে, আনাস ইবনে মালিক এখন বৃদ্ধ হয়ে গেছেন, মানুষ তখনও তাঁর কাছে শাফাআত বিষয়ে জানতে এসেছেন।

এমনকি আজকের দিনেও এই হাদিসটি অন্যতম শক্তিশালী একটি হাদিস এবং অন্যতম ভুলভাবে ব্যবহার করা একটি বক্তব্য, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর। কখনোই এর অপব্যবহারের কথা চিন্তাও করবেন না। এটা ফ্রি হয়ে যাওয়ার লাইসেন্স নয়, বুঝতে পারছেন তো? যদি আমরা মনোযোগের সাথে পড়ি তাহলে বুঝব – আল্লাহ তাঁর রাসূল (স) এর মাধ্যমে এমন মানুষদের জাহান্নাম থেকে বের করে আনার সুযোগ করে দিয়েছেন, যাদের যথেষ্ট ঈমান ছিলা না, যথেষ্ট সৎকাজ ছিল না।

পক্ষান্তরে, এমন অনেক মানুষ থাকবে যাদের অন্তরে ঈমান আছে, যাদের ডান হাতে সৎকাজ আছে…আর এই সৎকাজগুলো বিচারের দিন আলোতে পরিণত হবে, হৃদয়ের ঈমানও বিচারের দিন জ্যোতিতে পরিণত হবে। يَسْعَىٰ نُورُهُم بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِم – তাদের বুকের ভেতর থেকে আলো ছুটতে থাকবে এবং তাদের ডান হাত থেকে।(৫৭:১২) এই আলো টর্চে পরিণত হবে, গাড়ির হেডলাইটের মত। চারপাশ থাকবে অন্ধকারাচ্ছন্ন। আর আপনি জান্নাতের দিকে ছুটে চলছেন। আপনাকে জাহান্নাম অতিক্রম করে যেতে হবে। وَإِن مِّنكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا – এটা আল্লাহর নির্দেশ, জান্নাতে যেতে হলে সবাইকে জাহান্নাম অতিক্রম করে যেতে হবে।(১৯:৭১) সবাইকে, এর কোন ব্যতিক্রম নেই।

আর এই ব্রিজ অতিক্রম করতে হলে আলো লাগবে। যদি আলো না থাকে, তাহলে পড়ে যাবেন। তো, মানুষ যখন হেঁটে যাচ্ছে, তখন অনেকের এতো পরিমাণ আলো থাকবে যেন মক্কা থেকে সিরিয়া দেখা যাচ্ছে। আর কারো এতো অল্প পরিমাণ আলো থাকবে যে, তারা কোনোমতে পায়ের সামনের কিছু অংশ দেখতে পাবে, কারণ তাদের ঈমান ছিল দুর্বল।

কিন্তু এই হাদিস এমন মানুষদের সম্পর্কে নয় যাদের সামান্য কিছু আলো থাকবে বা অনেক বেশি আলো থাকবে। এই হাদিস এমন মানুষদের সম্পর্কে যাদের আলো এতো স্বল্প পরিমাণ যে এটি দিয়ে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বুঝতে পারছেন? এই হাদিসে এমন মানুষদের সম্পর্কেই বলা হচ্ছে।

আর যাদের আলো আছে তারা আল্লাহর কাছে ভিক্ষা করতে থাকবে, رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا – আমাদের আলোকে পূর্ণ করে দিন।(৬৬:৮) ব্যাটারি যেন শেষ হয়ে না যায়। আমাদেরকে জান্নাতের গেইটে পৌঁছিয়ে দিন। এবং আমাদের ক্ষমা করে দিন।

আমরা আল্লাহর কাছে ভিক্ষা চাচ্ছি যেন তিনি আমাদের কপালে রাসূলুল্লাহ (স) এর শাফায়াৎ জুড়ে দিন। আমরা আল্লাহর কাছে ভিক্ষা চাচ্ছি তিনি যেন আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন যারা আরশের ছায়ায় থাকবে। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন যাদের এমনকি জাহান্নামের আগুনের ঠাণ্ডা বাতাসও স্পর্শ করবে না। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর রাসূলের অনুগত উম্মাহয় পরিণত করে দিন। তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, যাদের ব্যাপারে তিনি অভিযোগ করবেন; বরং তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন যাদের জন্য তিনি সুপারিশ করবেন।

আগেরবার আমি বলেছিলাম, একদল মানুষ সম্পর্কে রাসূল (স) অভিযোগ করবেন। إِنَّ قَوْمِي اتَّخَذُوا هَٰذَا الْقُرْآنَ مَهْجُورًا – “আর রাসূল বলবে, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে।”(২৫:৩০) আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে চাই না। আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে চাই, যাদের জন্য তিনি আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে তাঁর রাসূলের শাফায়াতের যোগ্য করে দিন। আমি দোয়া করছি, আমাদের প্রত্যেকে যেন আমাদের রাসূলের সুন্দর দ্বীনের প্রতিনিধিত্ব করতে পারি। আর তাঁর জন্য আমাদের ভালোবাসা যেন আমাদের পরস্পরের মাঝেও প্রতিফলিত হয়।

——— সমাপ্ত ————