– নোমান আলী খান।
আমাদের অনেকেরই, আলহামদুলিল্লাহ, এখনো পিতামাতা আছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের পিতামাতাকে বাঁচিয়ে রাখুন, তাদের হেদায়াত দিন, তাদের ভুলত্রুটি মাফ করুন, তাদের হেফাজত করুন। তবে কল্পনা করুন আপনার মা প্রচন্ড অসুস্থ, এবং পিতা ইন্তেকাল করেছেন, এবং কেবল তিনিই বাকি আছেন, তাঁর বয়স অনেক, নিজে নিজে খাট থেকেই উঠতে পারেন না। এতটাই বৃদ্ধ যে কথাই বলতে পারেন না। সে বৃদ্ধা মানুষটা, একটা সময় আপনি-আমি ছিলাম অসহায়, এখন তিনি অসহায়। তিনি একদমই অসহায় অবস্থায় আছেন।
এ অবস্থায় তিনি কোনোভাবে আপনার সাথে যোগাযোগ করলেন। ১০০ টাকা ধার নিলেন, বললেন “দিয়ে দিবো শীঘ্রই। জানি না কবে পারবো, তবে দিয়ে দিবো। ওয়াদা করলাম।” যখন তিনি এটা বললেন, আপনার কেমন অনুভূতি হবে? আপনার অনুভূতি হবে, আমার অনুভূতি হবে, যে ইনি আমার মা। কেন আমি জানলাম না যে আপনার কিছু একটা দরকার ছিলো, আর অবস্থা এখন এমন, আপনাকে আমার কাছে চাইতে হচ্ছে! এমনকি এমনভাবে চাচ্ছেন, যা বলে দিচ্ছেন আপনি আমাকে কি ভাবেন। আপনি আমাকে এমন ভাবেন, যে শুধু মন থেকে আপনাকে কিছু দিবে না তাই না, বরং দেয়ার পর আবার ভাবতেও থাকবো, কবে ফেরত পাবো। তিনি কি আমাকে ফেরত দিবেন, নাকি অন্য কিছু? আমার মা ভাবছেন আমি এত লোভী! আমার মা ভাবছেন আমি মনে হয় টাকা কামড়ে পড়ে থাকি! তাঁর কি দরকার, তিনি কি চান, তা যেন চিন্তাতেই নেই! আমার সবচেয়ে বড় চিন্তা নাকি কবে আমি টাকা ফেরত পাবো! কবে টাকা দিবেন তিনি!
কথাটা ছেলেমেয়েদের কাছে শুনতে খুবই অপমানকর। কেন? কারণ ছেলেমেয়েদের মাথায় চিন্তা আসবে, আমার মা আমাকে কি ভাবেন? মা আমাকে লোভী ভাবেন। মা আমাকে এমন ভাবেন, যেন আমি কিছু দিবোই না, সর্বোচ্চ গেলে কিছু ধার দিবো। আবার মনে মনে সেটা ফেরতও চাইবে।
এ হয়ে গেলো আপনার মা এবং তিনি আপনাকে কেমন ভাবেন, তার ব্যাখ্যা। এরকমটাই হয়ে যায়।
যখন আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্ল একজন মুমিনকে বলেন, আমাকে কিছু ধার দাও। যিনি আপনাকে-আমাকে সব দিয়েছেন, তিনি বললেন, আমাকে কিছু ধার দাও। তিনি জানেন মানুষ কেমন হয়ে যায়।
ছোট্টো একটা পরীক্ষণ দেই। আমার বাচ্চাদের সাথে এটা অনেকবার করেছি, বিশেষ করে তারা যখন ছোটো ছিলো। আমি জানি কে কোন ধরণের আইসক্রিম পছন্দ করে। তো তাদের প্রিয় আইসক্রিম নিয়ে আসলাম, এবং নিজে খাওয়া শুরু করলাম। খাচ্ছি তো খাচ্ছি তো খাচ্ছি। তিন বছরের বাচ্চাটা এসে বললো, “আব্বা, এটা খেতে পারি?” বললাম, “না, খেতে পারবে না।” বললো, “একটু খাই?” বললাম, “আচ্ছা, মাত্র দুই কামড়। এরপর দিয়ে দিয়ো।”
তাকে আইসক্রিমটা দিলাম। কি হলো এরপর? সে দৌঁড়ে চলে গেলো। এরপর ধরে যদি বলি, “আমার আইসক্রিম কোথায়?” সে বলে, “ওটা আমার!” সাথে সাথে! তারা ভুলেই যায় যে এটা তাদের ছিলো না, আসলে ছিলো আমার। আমি কেবল কয়েক সেকেন্ডের জন্য ধরতে দিয়েছি, আর হঠাৎ এটা তোমার হয়ে গেলো? আর সেটা ফেরত নেয়ার আগে তারা জীবনের সবচেয়ে বড় কামড়টা খেয়ে নেয়, কেননা তারা যতটা সম্ভব নিতে চায়।
মানুষ হিসেবে, যখন আমরা অস্থায়ীভাবে হলেও কোনো কিছুর মালিক হই, ভুলে যাই যে এটা আমাদের না। আল্লাহই দেন। আল্লাহই দেন। আল্লাহই দেন। এরপর মাঝেমাঝে, “আমাকে ফেরত দাও। খরচ করো।” আর সর্বপ্রথম কোন বিষয়টা আমার মনে, আপনার মনে আসে? “জিনিসটা আমার!” “আপনি চান আপনাকে দিবো আমার টাকা থেকে? আপনি চান আপনাকে দিবো আমার সঞ্চয় থেকে? এসব সঞ্চয়ের জন্য প্রচন্ড পরিশ্রম করেছি। আপনি চান এগুলো ছেড়ে দিবো! এটা আমার প্রিয় জিনিস! আপনি চান এ গাড়িটা দিয়ে দিবো? তা তো করতে পারি না। খুব বেশি চাওয়া হয়ে যাচ্ছে।”
এজন্য আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্ল মানুষের সহজাত লোভের স্বীকৃতি দিয়েছেন। ওয়া মাই ইউকা শুহহা নাফসিহি। আল্লাহ বলছেন, যাকে রক্ষা হয়েছে নিজের ভেতরের গভীর লোভ থেকে, তারাই সফলকাম হয়েছে।
তাই আল্লাহ তাদের লোভের ব্যাপারে কথা বললেন। জানালেন, আপনি-আমি সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখতে পছন্দ করবোই। আল্লাহ বলছেন, আপনি কিছু দিলেও ভাববেন কবে ফেরত পাবেন। তাই যেন আল্লাহ বলছেন, তাহলে আমাকেই দাও? আমাকে ধার দাও। খুব কষ্ট হবে না। এটা আল্লাহর ওয়াদা। কারণ, এটা কেবল কর্জ। এটা আপনার সম্পদের ছোট্টো একটা অংশ। এটাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওয়াদাকে সত্যায়িত করছে, “মা নাকাসা মালুম মিন সাদাকাহ,” “দান করলে সম্পদ কমে না।” আল্লাহর জন্য কিছু ছেড়ে দিলে আপনার টাকাপয়সা কমবে না।