আমাদের জবাব কেমন হওয়ার কথা?

যে কেউ গভীরভাবে কুরআন অধ্যয়ন করেছে জানে যে আল্লাহ বিভিন্ন সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন কিভাবে নবী-রাসূলগণ অপমানিত হয়েছেন। কীভাবে তাদেরকে নিয়ে বিদ্রূপ করা হয়েছে। কীভাবে খুব কদর্য ভাবে তাদেরকে বর্জন করা হয়েছে। এবং কিভাবে নবী-রাসূলগণ অবিশ্বাসীদের বিদ্রুপের কষ্ট নিজের সহ্য করেছেন। নূহ (আ) অভিযোগ করেছেন কিভাবে মানুষ তাকে জঘণ্য ভেবেছে। এবং কিভাবে তারা তাদের কানে আঙ্গুল দিয়ে তাঁর থেকে দূরে সরে গিয়েছে এবং তাদের কাপড় টেনে ধরেছে তাঁর প্রতি তাদের অশ্রদ্ধা প্রকাশ করতে।

আমাদের রাসূল (স) ও এর ব্যতিক্রম নন। এই কুরআন যা আমাদের রাসূল (স) কে সম্মানিত করেছে, এখান থেকে আমরা এমন কিছু কষ্টদায়ক শব্দের কথাও জানতে পারি যা তাঁকে বলা হয়েছিল। ওসব রাসূল (স) কেও আওড়াতে হতো, স্মরণ করতে হতো যা তাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছিল। উদাহরণ স্বরূপ, সাহির (যাদুকর), মাজনুন (পাগল), কাজ্জাব (পাকা মিথ্যেবাদী) আরো কত অপবাদ আমাদের রাসূলের বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল এবং এর সবই কুরআনে আছে। আল্লাহ চান আমরা যেন এগুলো স্মরণে রাখি। এটা সত্যি যে, সব রাসূলগণ যদিও তাঁরা আল্লাহর সবচয়ে মহান সৃষ্টি এবং আল্লাহ নিজে তাদের সম্মানিত করেছেন পাশাপাশি তাঁরাই সবচয়ে কঠিন অপমান এবং বিদ্রুপের স্বীকার হয়েছেন।

কিন্তু এর জবাব কেমন হওয়ার কথা? রাসূলুল্লাহ (স) এর অপমানে কারো যদি রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়ার কথা আমার মতে সেটা হবার কথা রাসূলুল্লাহ (স) এর সাহাবীদের। যাদের বিশ্বাসের সাথে আমার আপনার কোন তুলনাই চলে না।

কিন্তু কই উনারা তো ঐভাবে জবাব দেননি যেভাবে আমাদের কেউ কেউ দেয়। কই উনারা তো মিছিল করেননি। কই উনারা তো রাগে ক্ষোভে চিৎকার-চেঁচামেচি করেননি। কারণ, তারা জানেন, কুরআন শুধু রাসূলুল্লাহ (স) এর জন্য তাদের ভালোবাসা দিতে আসেনি বরং কীভাবে সেই ভালোবাসাটা নিয়ন্ত্রণ করতে হয় সেটাও শেখাতে এসেছে। এবং কীভাবে এইসব অপমানের জবাব দিতে হয় তাও শেখাতে এসেছে। কীভাবে আমরা এটা জানি না যে রাসূল (স) কে বলা হয়েছে – “ওয়াসবির আলা মা ইয়াকুলুন” “তারা যা কিছু বলে ধৈর্য ধারণ করুন।” আমি এই আয়াতে বিমোহিত। কারণ, ‘মা’ মানে যা কিছু। যা কিছু। যা কিছু তারা বলেছে শুধু নয়, বরং যা কিছুই তারা বলতে আসুক। এই বাক্যের মুদারে ফর্ম ইঙ্গিত করে তারা অতীতে যা কিছু বলেছে, বর্তমানে যা বলছে এবং ভবিষ্যতে যা কিছু বলবে। আজকের দিন পর্যন্ত। রাসূল (স) এর নীতি ছিল নিজে ধৈর্য ধারণ করা। কুরআনের কোন জায়গায় এই ধরণের রাগের বহিঃপ্রকাশ সমর্থন করে?

আমাদের রাগ যদি যৌক্তিকও হয়। এই বিষয়ে আমি কেবল একটা যুক্তি দেখাবো যারা আমাদের ঘৃণা করে, আমাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ কথা বলে তাদের প্রতি আমরা কেবল একটা জিনিস অনুভব করতে পারি ‘দুঃখ।’ এই মানুষগুলোর জন্য আমাদের দুঃখ বোধ করা উচিত। তাদের কোন ক্ষমতা নেই আমাদের নবীর ক্ষতি করার। তারা তাঁর সম্মান কেড়ে নিতে পারবে না। এই মর্যাদা তো তিনি স্বয়ং আল্লাহর কাছ থেকে পেয়েছেন। দুনিয়ার কোন কিছুই এটা কেড়ে নিতে পারবে না। না কোন প্রবন্ধ, না কোন কার্টুন, না কোন ফিল্ম, না কোন বক্তা, না কোন ঘৃণা ছড়ানো কথা, না কোন ধরণের চিত্র, কিছুই তাঁর সম্মানে ঘাটতি আনবে না।

একবার ভেবে দেখুন, আমাদের এরকম আবেগপ্রবণ পন্থায় প্রতিক্রিয়া দেখানো আর এসব অর্থহীন হিংস্রতায় অংশ নেওয়া এগুলোর মধ্য দিয়ে কি ইসলামকে ভুলভাবে তুলে ধরা হচ্ছে না? আমরা কি সেটাই করছি না যা ইসলামের শত্রুরা চায়? যদি কোন কিছু আমাকে রাগান্বিত করে তবে তা হল আমাদের নিজেদের প্রতি যে আমরা কুরআনের অর্থ বুঝি না আর কীভাবে এসব অপমানের জবাব দিতে হয় তাও জানি না। “ঈদ ফা’ বিল্লাতি হিয়া আহসান।” “মন্দের জবাবে তাই বলুন যা উত্তম।” (ফুসসিলাত, ৩৪)

সূরা আলে ইমরানের ১৮৬ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন – “অবশ্যই অবশ্যই তোমরা শুনবে পূর্ববর্তী আহলে কিতাবদের কাছে এবং মুশরেকদের কাছে বহু অশোভন উক্তি।”

আল্লাহ আমাদেরকে মানসিকভাবে এমন ঘটনার জন্য প্রস্তুত করেছেন। কিন্তু এমন হলে আমাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে? আল্লাহ নিজেই বলেছেন –

“আর যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর এবং পরহেযগারী অবলম্বন কর, তবে তা হবে একান্ত সৎসাহসের ব্যাপার।”

মুসলিমদের জবাব এমনই হওয়ার কথা।

— নোমান আলী খান