মধ্যমপন্থী জাতি ও অলৌকিক মু’জিযা

মধ্যমপন্থী জাতি ও অলৌকিক মু’জিযা

কোর’আনের সবচেয়ে বড় সূরাটি নিয়ে কথা বলছি এখন। এটি ২য় নং সূরা, সূরা বাকারাহ। আয়াত সংখ্যা- ২৮৬.

এই সূরার কোনো এক জায়গায় এই আয়াতটি এসেছে…


وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًاٌ
“এভাবে আমি তোমা্রকে একটি একটি মধ্যমপন্থী জাতি হিসেবে তৈরি করেছি”


এখানে ‘মধ্যমপন্থী’ এর আরবী কি? ‘ওয়াসাতা’।

কিন্তু মূল বিষয় ও এর সাজানোর ধরণ কি জানেন আপনি?

আপনি নিশ্চয় কোর’আন সংকলনের ইতিহাস, নাযিলের ইতিহাস ইত্যাদি জেনে থাকলে এটাও জানেন যে কোর’আন কখনই লিখিত আকারে অবতীর্ণ হয়নি। এটা বক্তব্য আকারে নাযিল হয়েছে; যা একবার বলার পর আর ফেরত নেওয়া যায় না। ঐতিহাসিক ডকুমেন্ট থেকে এটাও জানতে পারি যে এই সূরা একসাথে নাযিল হয়নি…প্রায় ১০ বছর ধরে ছোট্ট ছোট্ট অংশ করে নাযিল হচ্ছিল। এবং এই দশ বছরে আরো অন্যান্য সূরাও নাযিল হচ্ছিল। আর সাহাবাদেরকে ওহী(আল্লাহর অবতীর্ণ বাণী)অনুযায়ী নির্দেশ দেওয়া হত ‘এই আয়াতগুলো’ যাবে ‘অমুক’ সূরায়; ‘ঐ আয়াতগুলো’ যাবে ‘অমুক’ সূরায় আর ‘এইসব আয়াতগুলো’ যাবে ‘তমুক’ সূরায়। এভাবে প্রায় ১০ বছর শেষে অন্যান্য সূরার নাযিলের সাথে এই সুরা পূর্ণ একটি রূপ পায় যার আয়াত সংখ্যা হয় ২৮৬।

এই বিশাল সূরার ১৪৩ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন…

وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًاٌ
“এভাবে আমি তোমাদেরকে একটি মধ্যমপন্থী জাতি হিসেবে তৈরি করেছি”
এই সূরায় কতটি আয়াত? – ২৮৬

‘মধ্যমপন্থী জাতি’ বলা হয়েছে কত আয়াতে? – ১৪৩ অর্থাৎ পূর্ণ সূরার ঠিক মাঝের আয়াতে!!!!আল্লাহ আমাদেরকে ‘মধ্যমপন্থী জাতি’ বলেছেন ‘ঠিক মধ্যম আয়াতে’ সুবহানাল্লাহ। এটাই মু’জিযা- অলৌকিকত্ব, যা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।

কেন এটি মু’জিযা?

আপনি লিখিত বইতে হয়তো এভাবে মিলিয়ে লিখতে পারেন কিন্তু বক্তব্য আকারে কীভাবে সম্ভব?! আপনি ১০ বছর কারো সাথে কথা বললেন, কোন হিসাব না করে, সাথে অন্যান্য হাজার, লাখো রকম কথা বলেন, এই কথাগুলো কোনো একদিন রেকর্ড করে কি এভাবে কোনো কিছু মেলাতে পারবেন?…আমাদের তো ১মাস আগের কথাই মনে থাকে না…আবার ১০ বছরের সব কথা মনে রেখে, সাথে হাজার ও লাখো ধরণের কথা কত শত হাজার মানুষের সাথে কথা!! একজন নিরক্ষর নবীর তো এরকম করার প্রশ্নই উঠে না।!! সুবহানাল্লাহ!

আরো আশ্চর্যের বিষয় হল রাসূল(সা)এর সময় আয়াতের নাম্বারের ধারণা ছিল না!! তারা বলতো না, বলতো ২ নাম্বার সূরার ৩৩ নাম্বার আয়াতটা। না, তারা এভাবে বলতো না। তারা কেবল আয়াতগুলো পড়ে যেত। আয়াতের নাম্বার সংযোজন হয়েছিল যখন এটাকে বই আকারে সংকলন করা হয়েছিল। অথচ এই জেনারেশনের আগের জেনারেশনের কাছে এটা বই আকারে ছিল না। তারা এটাকে মুখস্থ রেখেছিল, স্মৃতিতে সংরক্ষিত ছিল…এভাবে যখন সবাই এই পূর্ণ কোর’আন সংকলন করেছিল ঠিক একইভাবে এই সূরা সংকলিত হয়েছিল অন্যান্য ১১৩টি সূরার সাথে…তারা এভাবে দেখেওনি যে আল্লাহ মধ্য আয়াতে মধ্যমপন্থী জাতির কথা বলেছে…এটাতো আমাদের আলেমদের বহু পরের আবিষ্কার…অথচ এটা যুগ যুগ ধরেই ছিল…এটাই কোর’আনের মু’জিযা, এর ভেতরে আল্লাহর জ্ঞানের, হিকমাহর কোন শেষ নেই, অসীম জ্ঞানের হেদায়েতের ঝর্ণাধারা প্রবাহিত এই পবিত্র কোর’আনে নিদর্শনের মাঝে।