জীবনের উদ্দেশ্য

সমগ্র মানবজাতি কিসের প্রতি অনুপ্রানিত, কি তাকে আকর্ষণ করে সে বিষয়ে পবিত্র কুরআন খুব ভালভাবেই আলোচনা করে। একাধিকবার আল্লাহ পাক আলোচনা করেন এমন কিছু বিষয়ে, যেমন পুরুষদের মহিলাদের প্রতি আসক্তি, অথবা অর্থের প্রতি আসক্তি, আথবা সামাজিক পদ মর্যাদার প্রতি আসক্তি অথবা মানুষ আশা করে নিজের একটি বাসস্থানের মত সুন্দর কোন জিনিস। তাই মানুষ এগুলো পাওয়ার জন‍্য কাজ করে, কারন এগুলোর প্রতি তারা প্রবল আসক্তি অনুভব করে। এমনকি আজকালকার দিনেও অনেক যুবক-যুবতীরা হয়ত চায় তাদের ডিগ্রী শেষ করতে অথবা তাদের কর্মক্ষেত্র এগিয়ে যেতে অথবা একটি সম্পর্কের সুত্রপাত করতে চায় যার প্রত‍্যাশী তারা ছিল।

এ সবগুলো বিষয়ই সবসময় বিদ‍্যমান আছে, সবসময় বিদ‍্যমান ছিল। এগুলোর একটি আধুনিক রূপ আজকাল বিদ‍্যমান এবং আরেকটি পুরনো, মানে প্রাক-আধুনিক রূপ আগে বিদ‍্যমান ছিল। কিন্তু সুনিপুণভাবে  কোর’আন ঘোষনা দেয় যে, এগুলো মানুষের প্রকৃত লক্ষ‍্যবস্তু নয়। তাই কেউ হয়ত কাজ করে যাচ্ছে নিজেকে বিশেষ আকারে পরিবেশন করার লক্ষ্যে নয়ত কেউ কাজ করে যাচ্ছে অন‍্য কারো সান্নিধ‍্য পাওয়ার লক্ষ্যে অথবা কেউ কাজ করে যাচ্ছে অতিরিক্ত কিছু অর্থ উপার্জনের আশায়।
এগুলোর কোনটিই আসল লক্ষ‍্যবস্তু নয়। এগুলো হচ্ছে একটি বৃহত্তর সমাপ্তির মাধ‍্যম মাত্র এবং সেই সমাপ্তি আমরা আমাদের জীবনে যেসকল ক্ষুদ্র মাইলফলক অর্জন করি তার নির্দেশনা দেয়। প্রকৃতপক্ষে এই জীবন শুধুমাত্র বাস্তব কিছু অর্জন করার জন‍্যই নয়। অথবা শুধু শারীরিক সুখ অর্জনের জন্য নয়। এই জীবন হচ্ছে সঠিক লক্ষ‍্যবস্তু স্থির করা সম্পর্কে। সঠিক লক্ষ‍্যবস্তু পাওয়া যায় তখনই যখন আপনি জীবন যাপন করেন শুধুমাত্র আপনার নিজের অবস্থাকে ভাল করার জন‍্যই নয় বরং আপনার চারপাশের সবকিছু ভাল করার উদ্দেশ‍্যে।

ইসলাম মানে হচ্ছে নিজের ইচ্ছেগুলোকে আল্লাহর ইচ্ছার নিকট সমর্পন করা, যেন আপনি নিজেকে চিরস্থায়ী সুখের জন‍্য প্রস্তুত করতে পারেন। এবং এটা করার মাধ‍্যমে আপনি এসব পার্থিব সুখ-স্বাচ্ছন্দ‍্যের বিসর্জন দেন না, আপনি এই জীবনও উপভোগ করতে পারবেন।
– আল্লাহ পাক বলেন,

‘‘আমি এই পৃথিবীতে তোমাদের ভালোভাবে থাকার মাধ‍্যম তৈরী করে দিয়েছি’’

(১৫:২০)

তাই এই পৃথিবীতে  মানবকুলের সুন্দরভাবে জীবন যাপন করার সুযোগ বা অধীকারকে ইসলাম অস্বীকার করে না।  তবে একই সময়ে এই পৃথিবীতে অতিবাহিত প্রতিটি মুহুর্ত, হোক সেটা নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ‍্যের জন‍্যে কিংবা কঠোর পরিশ্রমের জন‍্যে, সেই ত্রিমাত্রিক মুহুর্তের চেয়ে বেশী কিছু মনে রাখতে হবে। অন‍্য কথায় আমি বাঁচব না পরবর্তী মুভীর জন‍্যে বা পরবর্তী খেলার জন‍্যে অথবা পরবর্তী যে ডলারটি আমি আয় করব তার জন‍্যে। এসব জিনিস আসবে আর যাবে কিন্তু যে জিনিষ কখনও যাবে না তা হচ্ছে আমার সৃষ্টিকর্তার সাথে আমার সম্পর্ক। সবচেয়ে উচ্চতর এবং মহিমান্বিত কিছু। তাই ইসলামের আপনাকে এবং আমাকে বলছে আমাদের জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ‍্য খুঁজে পেতে এবং সেই উদ্দেশ‍্য হবে আমাদের যিনি সৃষ্টি করেছেন তাঁকে খুঁজে বের করা। তারপর লক্ষ‍্য করা যে উনি আমাদের কিভাবে জীবন যাপন করতে বলেন।
এবং অনেকেই মনে করেন যে, আর এই ব‍্যাপারটিই আমি আপনাদের বিবেচনার জন‍্য রেখে দেবো। অনেক মানুষই মনে করে যে, তারা যদি আল্লাহ কিংবা আল্লাহর বানীতে উদ্দেশ‍্য খুঁজে পায় তাহলে তাদেরকে এমন কিছু জিনিষ হতে নিজেদের বঞ্চিত থাকতে হবে, অন‍্যথায় যা তারা উপভোগ করতে পারতো। তাদের উপর আগে কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল না এখন হঠাৎ করে এইসব আইন-কানুন তাদের জীবনকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করা হতে বিরত রাখছে। এবং তার উল্টোটা সত‍্য! বস্তুত যখন সত্যিকারভাবেই কেউ আল্লাহর ইচ্ছার কাছে নিজের ইচ্ছাগুলোকে সমর্পন করে এবং আল্লাহর বাণীকে স্বীকার করে নেয়, তখন তিনি আমাদের বোঝা হালকা করে দেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ পাক কুরআনে বলেন যে বরং তিনি আমাদের বোঝাগুলো হালকা করে দিবেন। জীবন আপনার জন‍্য অনেক সহজতর, অনেক দুর্ভাবনাহীন হয়ে যাবে, আপনি শান্তি পাবেন, সমন্বয় খুঁজে পাবেন আপনার এবং আপনার চারপাশের সবার সাথের সম্পর্কের মাঝে। তাই ইসলামে জীবনের উদ্দেশ‍্য হচ্ছে আমাদের নিজেদের এবং আমাদের সৃষ্টিকর্তার মাঝে শান্তি খুঁজে পাওয়া। সত‍্যিকার ও আন্তরিকভাবে আমাদের যিনি সৃষ্টি করেছেন তাঁর দাসে পরিনত হওয়ার মাধ‍্যমে।