কুরআনের ভাষাগত মুজিযাঃ ঈসা (আঃ) এর সম্মান

কুরআনের ভাষাগত মুজিযাঃ ঈসা (আঃ) এর সম্মান

কুর’আন যে আল্লাহর কিতাব তার আরো একটি প্রমাণ হল কুর’আনে ঈসা (আঃ) কে আল্লাহ কী দারুনভাবে উপস্থাপন করেছেন। উস্তাদ নুমান আলী খানের এই লেকচারটিতে সেটাই তুলে ধরা হয়েছে।
…………

কুর’আনে ঈসা (আঃ) কে যে সম্মান দেয়া হয়েছে, আমি আপনাদেরকে এর একটি অনুপম দৃষ্টান্ত দিচ্ছি।

মুসা (আঃ) কে কোন জাতির কাছে পাঠানো হয়েছিল? বনি ইসরাইল, সবাই এটা জানে, বনি ইসরাইল। আর ঈসা (আঃ) এর প্রাথমিক শ্রোতা কারা ছিল? বনি ইসরাইল নাকি অন্য কেউ? অবশ্যই বনি ইসরাইল।

এখন দেখুন সূরা নম্বর ৬১, আস-সাআফ এ, এখানে একটি আয়াত আছে যেখানে মুসা (আঃ) তার জাতির উদ্দেশ্যে বলছেন, আর ঠিক তার পরের আয়াতেই ঈসা (আঃ) তার জাতিকে বলছেন। এটা মনে রাখুন যে, যদিও তাদের এই ঘটনার মধ্যে অনেক সময়ের পার্থক্য রয়েছে, কিন্তু তারা উভয়েই কোন জাতির উদ্দেশ্যে বলছেন? বনি ইসরাইল, তারা একই জাতি।

এখন মনোযোগ দিয়ে শুনুন, “ওয়া ইজ কালা মুসা লিকাওমিহি ইয়াকাওমি” – যখন মুসা তার জাতিকে বলল, “হে আমার জাতি”।

তিনি তাদেরকে সম্বোধন করার জন্য প্রথম কোন শব্দ ব্যবহার করলেন?

“হে আমার জাতি”। “ইয়াকাওমি”- “হে আমার জাতি”।

ঠিক আছে, আসুন দেখি ঈসা (আঃ) কি বলেছেন, “ওয়া ইয কালা ঈসা ইবনে মারিয়াম” – “এবং যখন মারিয়ামের পুত্র জিসাস বলল” ; “ইয়া বানী ইসরাইল” – “হে ইস্রাইলের সন্তানেরা”। “হে ইস্রাইলের সন্তানেরা”, তিনি কি বলেননি? মুসা (আঃ) কি বলেছেন যা ঈসা (আঃ) বলেননি?

তাহলে, মুসা (আঃ) বলেছেন “হে আমার জাতি” অথচ ঈসা (আঃ) বলেছেন, “হে ইস্রাইলের সন্তানেরা”। এখন আমরা জানি “হে ইস্রাইলের সন্তানেরা” আসলে বনি ইসরাইল কেই বুঝায়, তাইনা?

আপনারা জানেন এর থেকে আমরা কি জানতে পারি? সেমিটিক প্রথা এবং আরব প্রথা যা ইব্রাহীম (আঃ) এর সময় থেকে প্রতিষ্ঠিত তাতে বংশ পরিচয় হয় পিতার পরিচয়ের মাধ্যমে। ইসরাইল জাতির নামটি কিসের ভিত্তিতে? মাতৃ পরিচয়ের ভিত্তিতে নয়, পিতৃ পরিচয়ের ভিত্তিতে, “ইসরাইল” যার নাম। এমনকি কুরআনেও মানবজাতিকে “হাওয়া (আঃ) এর সন্তান বলা হয়নি, বরং আদম (আঃ) সন্তান বলা হয়েছে” কারন বংশ বা জাতির পরিচয় হয় পিতার মাধ্যমে। এবং এটা সব সমাজের সাধারণ একটি প্রথা, বংশ পদবি বাবার কাছ থেকে আসে, যদিও কিছু ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম হতে পারে।

আমি যা বলতে চাচ্ছি, কোন একটি জাতির অন্তর্ভুক্ত হতে হলে অবশ্যই তার বাবাকেও সেই জাতির হতে হবে, এটা নিশ্চয় পরিষ্কার হয়েছে? তাই সাধারণ ভাবেই বলা যায়, কেউ কোন একটি জাতির অন্তর্ভুক্ত হতে হলে অবশ্যই তার বাবাকেও সেই জাতির হতে হবে। তাই যখন মুসা (আঃ) বললেন “হে আমার জাতি”, তিনি আসলে কি বুঝাচ্ছেন? যে আমার বাবাও তোমাদের একজন।

কিন্তু কুরআনে আমরা কখনই ঈসা (আঃ) কে বলতে দেখিনা “হে আমার জাতি”, কখনই না। যখনই তিনি তাদের সম্বোধন করেন তিনি কী বলেন, “হে ইসরাইলের সন্তানেরা”।

কেন তিনি “হে আমার জাতি” বলেননা? কারন তার কোন পিতা নেই, তিনি আল্লাহ্‌র কুদরতে কুমারী মায়ের গর্ভে জন্ম নিয়েছেন। কুর’আন অস্বীকার করে যে ঈসা (আঃ) এর কোন পিতা ছিল, তাই বলা হয়েছে “হে ইসরাইলের সন্তানেরা।”

সুবহানআল্লাহ।