নামাজের পূর্বে সুন্দর পোশাক পরিধান করুন

নামাজের পূর্বে সুন্দর পোশাক পরিধান করুন

আল্লাহ্‌ বলেন, “ইয়া বানী আদাম, খুজু ঝিনাতা ইনদা কুল্লি মাসজিদ”।

নামাজের পূর্বে যেকোনো স্থানে তুমি তোমার পোশাকের প্রতি যত্নবান হও, তোমার সৌন্দর্যের প্রতি মনোনিবেশ করো। আমার সামনে দাঁড়াবার পূর্বে নিজেকে প্রশংসনীয় রূপে উপস্থাপন করো। নামাজের পূর্বে সুন্দর পোশাক পরিধান করো। বিছানার পরিহিত পোশাক পড়ে ফজর নামাজ আদায় করতে এসো না। সুন্দর পোশাকের ব্যাপারে যত্নশীল হও।

আচ্ছা মনে করুন, আপনার অফিসের সিইও এর সাথে, অথবা আপনার ভার্সিটির ডীনের সাথে অথবা ইমিগ্রেশন অফিসারের সাথে দেখা করতে গেলে কি আপনি ময়লা পোশাক পড়ে যাবেন? বরং আপনার সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পড়েই তাদের সাথে দেখা করতে যাবেন। তাহলে আল্লাহ্‌র সামনে আপনি এইভাবে কেন দাঁড়াচ্ছেন? আল্লাহ্‌র সামনে সুন্দর ভাবে দাঁড়ানোর ব্যাপারে যত্নশীল হোন। বলুনতো কেন এটা এতো গুরুত্বপূর্ণ? আপনি যখন সালাতের জন্য আপনার কাপড় ইস্ত্রি করবেন মনে রাখবেন আপনি সালাতের সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করছেন। যখন আপনি আপনার পছন্দের পোশাক নির্বাচন করছেন আপনি সালাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মানুষ সাধারনত পার্টিতে গেলে সুন্দর পোশাক পরিধান করে, তাইনা? কিন্তু কেন? কারণ তার আশেপাশের লোকগুলো তার দিকে বারবার তাকাবে, হয়তো দুই একটা ছবিও তুলে ফেলতে পারে। কিন্তু যদি তাকানোর মতো কেউ না থাকে আপনি কি সেজেগুজে থাকবেন? পার্টিতে কেউ নিজেকে জবুথবু রূপে উপস্থাপন করে না অথবা করতে চায় না। এটাই সত্যি কথা।

আমার একটা ছাত্র ছিল যে কাপড় ইস্ত্রি না করেই ক্লাসে চলে আসতো। তার বাবা একদিন বাঁধা দিয়ে বললেন, হয় নিজের কাপড় ইস্ত্রি করে পরিধান করো, নয়তো ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করো। আমরা যখন সুন্দর পোশাক পড়ি আমরা আশেপাশের মানুষের রুচির কথা খেয়াল রেখেই পোশাক পড়ি। তাহলে আপনি যদি সালাতের জন্য উত্তম পোশাক পরিধান করেন আপনার সচেতন মন স্বাভাবিক ভাবেই আল্লাহ্‌র দিকে নিজেকে রজ্জু করবে কারণ আপনি জানেন আল্লাহ্‌ আপনার দিকে তাকিয়ে আছেন। এই সামান্য কাজটা আপনার সালাতে মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করবে। আল্লাহ্‌ তার বান্দাদের সালাতে মনোযোগ বাড়ানোর উপায় বাতলে দিচ্ছেন।

মানুষ প্রায় বলে আমি কিভাবে সালাতে মনোযোগী হবো? সালাতে কিভাবে ধৈর্যশীল থাকা যায় বলতে পারেন? আমি কিভাবে তার পরিপূর্ণ উপস্থিতি বুঝতে পারবো? আল্লাহ্‌ তাদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, সুন্দর পোশাক পড়ে সালাতের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে আসো। 

তাহলে আমাদের প্রথম প্রথম কাজ হল নিজেকে উত্তম পোশাক দ্বারা আবৃত করা। আপনি যদি মনে করেন আল্লাহ্‌র সামনে সবচেয়ে উত্তম পোশাক পড়ে হাজির হয়েছেন তাহলে বুঝে নিন অন্য যেকোনো জায়গায় আপনার জন্য এই পোশাকটি সবচেয়ে উত্তম পোশাক। যে সকল বোন হিজাবের সঠিক দিক নির্দেশনা জেনেও হিজাব পালন করেনা তারাও যখন মসজিদে সালাত আদায় করতে যায় সঠিক ভাবে হিজাব পালন করেই যায়। তারা জানে তারা ঐ মুহূর্তে আল্লাহ্‌র সাথে সাক্ষাৎ করতে যায়। ছেলেদের ক্ষেত্রেও একি কথা প্রযোজ্য। আচ্ছা প্রতিদিন আমরা কয়বার সালাত আদায় করি? পাঁচ বার। তাই যখন আপনি সত্যিকার অর্থে উপলব্ধি করতে পারবেন আপনাকে সত্যি আল্লাহ্‌র কাছে সুন্দর লাগছে তখন বুঝে নিবেন আপনার এই পোশাকটি অন্য লোকদের কাছেও গ্রহণীয় হবে। এমন যেন না হয় সালাতের জন্য জবুথবু পোশাক পড়লেন আর অন্য জায়গায় সুন্দর পোশাক পড়ে গেলেন। তাহলে মনে রাখবেন আপনি সালাতের সঠিক ড্রেস কোড অনুসরণ করলেন না। ঠিক যে মুহূর্তে আপনি পোশাকের ব্যাপারে সাবধান হবেন, নিজেকে সুন্দর করে আল্লাহ্‌র কাছে প্রকাশ করবেন, ঠিক সেই মুহূর্তে আপনি পোশাকের হালাল হারামের বিতর্ক থেকে বেঁচে গেলেন কারণ এ বিতর্ক আপনার জন্য অর্থহীন। আর পোশাকের ব্যাপারে আপনি যদি যত্নশীল থাকেন তাহলে আপনি সত্যিকার অর্থেই নিজের সালাতকে সৌন্দর্যমন্দিত করলেন।