আইনের ফাঁক-ফোকড় খুঁজবেন না

আইনের ফাঁক-ফোকড় খুঁজবেন না

উস্তাদ নুমান আলী খানের কুরআন উইকলি তে দেয়া “Quranic Gems” সিরিজ থেকে নেয়া।

আজকে আমরা নৈতিকতা ও আচরণের একটি বিষয় শিখব- তা হচ্ছে আদাব। উম্মাহর মধ্যে, মুসলিমদের লাইফস্টাইলের মধ্যে এবং এমন কিছু যা আল্লাহ আমাদের শিক্ষা দেন, যেটি সাধারণভাবে অবহেলিত। এবং আল্লাহ বলেন, “ইয়া আইউহাল্লাযিনা আমানু”– তোমরা যারা ঈমান এনেছ, তোমরা যারা ঈমানে প্রবেশ করেছ, লা তাসআলু আনইয়াশইয়াআ- জিজ্ঞেস করোনা বিষয়াদি সম্পর্কে, ইন তুবদালাকুম তাসু’কুম- যদি তা তোমাদের উপর প্রতীয়মান হয়, যদি উত্তরটি তোমাদের জন্য স্পষ্ট হয়ে যায়, তোমরা তা পছন্দ করবেনা। তা তোমাদের জন্য খারাপ হবে, তোমরা উত্তরটির জন্য কষ্ট পাবে।”

আমি আপনাদের একটি গল্প বলবো, আপনারা অনেকেই যারা আমাকে অনলাইনে ফলো করেন অথবা আমি যে ধরনের ভিডিও এবং লেকচার করি এগুলোর সাথে পরিচিত, আপনারা জানেন যে আমি ফাতওয়া দেই না। আমি ফিক্‌হ নিয়ে কথা বলিনা। লোকে আমাকে সবসময় জিজ্ঞেস করে কোনটা হালাল, কোনটা হারাম। আমি তাদের সবসময় বলি কোন প্রকৃত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছে যেতে। শেইখ ওমর সুলেমানকে জিজ্ঞেস করুন, শেইখ আব্দুন নাসেরকে জিজ্ঞেস করুন, অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করুন। আমাকে কুর’আন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন। আশা করি আমি আপনাদের উত্তর দিতে পারব অথবা আমি গবেষণা করে আপনার উত্তরটি দিতে চেষ্টা করব। কিন্তু হালাল এবং হারাম বড় বিষয়। 

তো একজন আমার কাছে আসলো এবং জিজ্ঞেস করল, এবং এটি একটি সত্য ঘটনা। আমি বলবোনা তারা আমাকে কি প্রশ্ন করেছিল, কিন্তু তারা বলল, “এক্স ওয়াই যেড…এটি কি হারাম?” আমি বললাম, “আমি জানিনা। আমি আপনাদের বলতে পারবনা।” তারা জিজ্ঞেস করল “আমি কি মনে করি?” “না, আমি কিছু জানিনা, আমি আপনাদের বলতে পারবনা, আপনাদের অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করতে হবে।” “তাহলে কাকে জিজ্ঞেস করা উচিত?” তো আমি একজন স্কলারের কথা বললাম, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি তাকে এই প্রশ্নটি করেছেন?” আমি বললাম, “হ্যাঁ, আমি তাঁকে প্রশ্নটি করেছি।” তখন মহিলা জিজ্ঞেস করলেন, “তিনি কি বললেন?” তখন আমি বললাম, “তারা বলেছেন এটা হারাম।”

“আপনি কি অন্য কোন স্কলারকে চিনেন যাকে আমি জিজ্ঞেস করতে পারব?” অন্য কথায়, তিনি লোকজনকে ততোক্ষণ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করতে থাকবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি কাউকে পাবেন যিনি বিষয়টির বৈধতা দিবেন। তাই না? 

কেউ আমাকে বলুন কোথাও কোন মতের ভিন্নতা আছে এবং এটা হালাল। আমি এটিই চাই। আপনি যদি আমাকে শুধু এটা দিতে পারেন,আমি আমার জীবন নিয়ে এগোতে পারবো এবং আমি সেই জিনিসটা করতে পারবো যা আমি চাই। সুবহানাল্লাহ। সেইসব বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন না যেগুলোর উত্তর আপনি পছন্দ করেন না। যেমন আপনি দুটি উত্তরের একটির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত নন। তখনই জিজ্ঞেস করুন যখন আপনি সত্যিকার অর্থে উত্তর জানতে চান, বৈধতা দেওয়ার জন্য নয়। আপনি কোন জিনিস হালাল বানাতে চাচ্ছেন না, আপনি কোন জিনিস হারাম বানাতে চাচ্ছেন না, আপনি সত্যিকার অর্থে খুঁজছেন আপনার জন্য কোন কাজটি সঠিক। তো এটা প্রশ্নের ব্যাপার নয়। দুইজন মানুষ একই প্রশ্ন করতে পারে কিন্তু তাদের মনোভাব হবে ভিন্ন। একজন ব্যক্তি জানতে চাইলেন এটি হালাল কি না। 

কারণ যদি আমি জানতে পারি এটি অনুমোদিত নয় আমি তা করবোনা। সেটাই। আমি শুধু এটাই জানতে চাই। আমার কোন কারণজনিত আগ্রহ নেই এবং আমি এটার উপর আসক্তও নই। যদি আল্লাহ বলেন এটা আমার জন্য ভাল না, যদি তাঁর রাসুল (সঃ) বলেন এটা আমার জন্য ভাল না, তা আমার জন্য যথেষ্ট। এটি আমার জন্য ভাল নয়। আরেকজন ব্যক্তি বলল, “আমার মনে হচ্ছে এটা হারাম এবং সেটাই হবে। কিন্তু যদি আমি এমন কাউকে পাই যিনি বলবেন কিছু স্কলার, কিছু মতানৈক্য, কোন একটা লাইব্রেরির কোন বইয়ের কোন লাইনের মধ্যে কিছু অস্পষ্ট লেখনী হয়তো কোনভাবে বলবে যে এটা ঠিক হতে পারে। তাহলে আমি এটা করতে পারবো। তাহলে আমি এটার উপর ভরসা করতে পারবো। আপনি এইভাবে প্রশ্ন করতে পারেন না। এটা আপনি আপনার জন্য রাস্তা খুঁজছেন। আল্লাহ বলেন, “এই ধরণের আচরণে সম্পৃক্ত হইয়োনা।” 

এটা কোন ব্যপার না যে প্রশ্নটা কি। ইস্যুটি হচ্ছে আপনার মনোভাব। সুবহানাল্লাহ। আমাদের প্রশ্নের পিছনের মনোভাব, উদ্দেশ্য, অভিপ্রায় ঠিক করতে হবে। প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা খারাপ কিছু না। যদি উত্তরটি আপনার প্রকৃত পছন্দমত না হয়,প্রকৃত প্রত্যাশা অনুযায়ী না হয় এবং তা যদি আপনি গ্রহণ করতে না পারেন তাহলে সেখানে সমস্যা আছে। আপনি যদি সত্যি ইসলাম ধর্মকে যার অর্থ আত্মসমর্পণ করা বলে মনে করেন তাহলে এটা আত্মসমর্পণ করার জন্য একটা ভাল পরীক্ষা। তাই নয় কি? এমন একটা উত্তর শুনলেন যা আপনি শুনতে চাননি এবং সত্যিকার অর্থে আত্মসমর্পণ করলেন। যদি আপনি নিশ্চিত হন অবশ্যই সেটা অন্য বিষয়। 

আপনি সত্যিকার অর্থে নিশ্চিত হন যে উত্তরটি ইসলাম থেকেই প্রাপ্ত এবং যুক্তিগুলো প্রকৃত পাণ্ডিত্তের মধ্যে নিহিত। এটা অনস্বীকার্য যে এক্স ওয়াই যেড যদি সুনির্দিষ্টভাবে হালাল অথবা সুনির্দিষ্টভাবে হারাম হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে তা মানতে হবে। এটাকেই বলে আত্মসমর্পণ করা। আত্মসমর্পণ মানে এটা নয় যে আপনি আপস করবেন এবং তর্ক করবেন এবং দুটি জিনিসের মধ্যে ততোক্ষণ পর্যন্ত ঘুরপাক খাবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি আপনার জন্য একটা রাস্তা বের করবেন এবং শুধু তা-ই করবেন যা আপনি করতে চেয়েছেন যেকোনো উপায়ে। আল্লাহ আয ওয়াযাল যেন আমাদের ওই ধরনের লোকদের মত না বানান যাদের প্রশ্নের মধ্যে ভুল উদ্দেশ্য থাকে অথবা ভুল মনোভাব থাকে। আল্লাহ যেন আমাদের তাদের মত বানান যারা সঠিক উত্তরের জন্য প্রশ্ন করে এবং আমাদের যেন সেই মানসিক শক্তি ও সাহস দেন যেন আমরা সেই উত্তর অনুযায়ী জীবনযাপন করতে পারি। বারাকাল্লাহু ওয়ালাকুম।