এই দলটি খুবই সুন্দর যাদের আল্লাহ ভালবাসেন। কারণ তারা আল্লাহকে কেবলমাত্র একটি অনুরোধই করে,
“হে আল্লাহ, আমি জাহান্নাম দেখতে চাই না।”
আমি চাই আমাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখো। আমি এর খেকে দূরে থাকতে চাই। জাহান্নামের শাস্তি অনেক কঠিন। এটা অনেক বড় শাস্তি, আমি তা সহ্য করতে পারব না, আমি এর সম্পর্কে চিন্তাও করতে পারি না। ইহা একটি ভয়ঙ্কর জায়গা- অল্প বা অধিক সময়ের জন্য।
আমি এই অংশটুকু আপনাদের কাছে ব্যাখ্যা করব। ইহা একটি ভয়ঙ্কর জায়গা “মুস্তাকাররান”-অল্প সময়ের জন্য, “ওয়া মুকামা”-অধিক সময়। এমন কিছু লোক আছে, যেমনটি আমি ছিলাম, আমি নিশ্চিত আপনারা এটা ইউটিউবে দেখেছেন, যদি আপনারা আমার ভিডিও ফলো করে থাকেন, ফ্লোরিডায় এক যুবতী মেয়ে একটি ইউথ প্রোগ্রামে আমাকে একটি লিখিত প্রশ্ন করেছিল। সে বলেছিল, “আমি অনেক হারাম কাজ করেছি, কিন্তু আমি চিরদিনের জন্য জাহান্নামে যাব না, তাই নয় কি? কারণ আমি মুসলিম। তাই আমি জাহান্নামে গেলেও তা চিরদিনের জন্য নয়।”
এই দোয়াটি বলে, “আমি জাহান্নামে যেতে চাই না, অধিক সময়ের জন্যও নয়, অল্প সময়ের জন্যও নয় আমি তা দেখতে চাই না”। আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন যারা বোঝে যে , তারা জাহান্নামের কোন অংশই চায় না- ছোট কিংবা বড়।কিছু মুসলিম আছে যারা বলে, “অবশ্যই আমি চিরদিনের জন্য জাহান্নামে যেতে চাই না। হয়তো এক সপ্তাহের জন্য। হয়তো আমরা এতটুকু খারাপ কাজ করতে পারি।”
আপনারা জানেন, এটা ইহুদীদের থেকে এসেছে।তারা বলেছিল, “অল্প দিনের জন্য আমরা তা সামলাতে পারব।এর পরেই জান্নাত।তাই দুনিয়ায় ফুর্তি কর, এক সপ্তাহ শাস্তি ভোগ কর এবং অতঃপর জান্নাতে ফিরে যাও! এ আর এমন কি?”
আল্লাহ বলেন, “তারা করুণাময়ের প্রকৃত গোলাম নয়”। করুণাময়ের প্রকৃত গোলাম সেই বিশেষ লোকেরা। যারা বলে, “হে আল্লাহ, আমি জাহান্নাম দেখতে চাই না, এক দিন বা দুই দিনের জন্য নয়, এক মিনিট বা এক সেকেন্ডের জন্যও নয়। এবং স্থায়ীভাবেও না, আমি জাহান্নামের কিছুই চাই না” ।
সূরা আম্বিয়ায় একটা আয়াত আছে,
وَلَئِن مَّسَّتْهُمْ نَفْحَةٌ مِّنْ عَذَابِ رَبِّكَ لَيَقُولُنَّ يَا وَيْلَنَا إِنَّا كُنَّا ظَالِمِينَ [২১; ৪৬]
যাতে জাহান্নামের ন্যূনতম শাস্তির কথা বলা হয়েছে। কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় জাহান্নামের বর্ণনা আছে কিন্তু ন্যূনতম অর্থাৎ জাহান্নামের সবচেয়ে সহজ শাস্তির বর্ণনা সূরা আম্বিয়ায় আছে। এটা কতটুকু সহজ? বর্ণিত ব্যক্তি জাহান্নামের আগুন আস্বাদন করেনি, তারা কেবল একটি হাওয়া আস্বাদন করেছিল। আপনারা জানেন, আগুনের একটি গরম বাতাস আছে। এই গরম বাতাসকে বলা হয় “লাফহা”, যাতে “লাম” আছে কিন্তু আয়াতটিতে “লাফহা” ব্যবহৃত হয়নি। ইহা বলে, “ওয়ালা-ইন-মাসসাত-হুম নাফহা” যাতে “নুন” আছে এবং “নাফহা” ব্যবহৃত হয়, আপনারা জানেন, যখন আপনি দরজা বন্ধ করেন, কিছু গরম বাতাস ভেতরে ঢোকে যখন আপনি দরজা বন্ধ করেন, যে বাতাস ঢুকে বা বের হয়ে যায়, তাকে “নাফহা” বলা হয়।আল্লাহ বলেন, “ওই লোকেরা নাফহা আস্বাদন করবে”, জাহান্নামের ভেতরে নয়, তবে কোথায়? জাহান্নামের বাইরে, তারা এখনও ভেতরে প্রবেশ করে নাই এবং তারা এখনও আগুন আস্বাদন করেনি, লাভা আস্বাদন করেনি, তারা কিছু খায়নি তারা কেবল বাতাসের সম্মুখীন হয়েছে এবং ইহা তাদের কেবল স্পর্শ করে, “মাসসাতুন”-ইহা কেবল স্পর্শ করে। আপনি যখন কিছু সিদ্ধ করেন বা ভাজেন, কিছু ছিটে আসে, এবং আপনাকে খুবই সামান্য স্পর্শ করে।কিন্তু এটা বাতাস নয়, এটা তরল।আল্লাহ বলেননি, তরল তোমাদের স্পর্শ করবে, তিনি কি বলেন?
বাতাস তোমাদের স্পর্শ করবে, এবং ইহা তোমাদের স্পর্শ করবে ক্ষুদ্র সময়ের জন্য ক্ষুদ্র সময়ের জন্য ইহা তোমাদের স্পর্শ করবে, এতটুকুই এবং ইহা সজোর বাতাসও হবে না।ইহা “নাফহাতু আযাবি রাব্বিক” নয়। ইহা “নাফহাতুন মিন আযাবি রাব্বিক” । “মিন” ব্যবহৃত হয়েছে বাতাসের সামান্য অংশ বোঝাতে কারণ দরজাটি পুরোপুরি খোলা ছিল না।সামান্য বাতাস ভেতরে ঢুকেছিল। ধরুন, আপনার বাসায় জানালার ভেতর জানালা আছে, এর সামান্য খোলা থাকলে কিছু বাতাস প্রবেশ করে।আর আপনি তা কিছু সময়ের জন্য অনুভব করেন।আর এই ব্যক্তিটি এতটুকু মাত্র শাস্তি ভোগ করে।এটা তো কিছুই না, তারা এখনও জাহান্নামের ভেতরে না, তারা এখনও বাইরে। “নাফহা” শব্দটি দ্বারা এটাই প্রতীয়মান। সে বলে, “ইয়া ওয়াইলানা”, লোকটি কসম খায়, “আমি আমার জীবনে কখনো এতো শাস্তি ভোগ করিনি। এটা সবচেয়ে জঘন্য, আমি নিশ্চয়ই জাহান্নামের সবচেয়ে খারাপ অংশে আছি” রাসুল(স) বলেন, “ওয়াইল” হচ্ছে জাহান্নামের আগুনের সবচেয়ে জঘন্য অংশ, এটা এতই ভয়ঙ্কর যে জাহান্নাম নিজেই একে ভয় পায়।আর এই ব্যক্তি বলে, আমি নিশ্চয়ই “ওয়াইল” এ। সে এখনও ভেতরেই ঢোকে নাই।
মুসলমানেরা বোঝে, ইমানদার আর কুরআনের ছাত্ররা বোঝে যে, আমি সেখানে অল্প সময়ের জন্যও থাকতে পারব না, অধিক সময়ের জন্যও না, আমি জানি আমার বনি-ইসরাইলদের মত মানসিকতা থাকা উচিত নয়। যারা বলে, মাত্র অল্পদিনের জন্য আমরা জাহান্নামের আজাব সামলাতে পারব। আমি লম্বা সময়ের জন্য গরম আবহাওয়ায় ভ্রমণে বেরিয়েছিলাম, আমার খুবই কষ্ট হয়েছিল না, এটা একটি স্বতন্ত্র গোষ্ঠী। এই লোকেরা আল্লাহর কাছে বিশেষ, তারা কেবল আল্লাহকে অনুরোধ করে, “হে আল্লাহ, আমি জাহান্নামে যেতে চাই না। আমি জাহান্নামে যেতে চাই না, কখনোই না”। এই দোয়াটি নিজেই আপনাকে আল্লাহর কাছে বিশেষ হিসেবে উত্তীর্ণ করে আল্লাহর পক্ষ থেকে কতই না করুণা!
“হে আমার বান্দারা তোমরা যারা সীমালঙ্ঘন করেছ, আমার ক্ষমা থেকে নিরাশ হয়ো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল গুনাহ মাফ করেন, যেহেতু তিনি পরম ক্ষমাশীল।”