দাওয়াত না ঝগড়া?

দাওয়াত না ঝগড়া?

মূর্খের মত মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার একটা উদাহরণ হচ্ছে,যখন আমরা ইসলামের বিভিন্ন দল নিয়ে কথা বলি। আমরা বলি এই দল বনাম সেই দল, এই শায়খ বনাম ওই শায়খ, এই মাজহাব বনাম সেই মাজহাব।

তুমি এইটা বলছ অথচ অমুক শায়খ এর বিপরীত বলেছে, তুমি কি ঝগড়া করতে চাও? আর এরপর, এমনও মানুষ আছে, যারা মনে করে তারা ইসলাম নিয়েই কথা বলে, কিন্তু আসলে তারা শুধু অমুক কী কী ভুল করেছে সেটা নিয়েই কথা বলে। তারা নিজেদের youtube চ্যানেল, ফেসবুক পেজ, ব্লগ সবকিছুতে এরা। আসলেই অনেক কষ্ট, সময় দিয়ে করে মানুষের ভুল ধরে যায়। এদের কি আর কোনো কাজ নাই??

যাই হোক, এরা এসবই করে। তারা বলে অমুক ভিডিওর ৮৭ মিনিটে …। ভাই, তুমি ৮৭ মিনিট ধরে ভিডিওটা শুনেছ শুধু উনি কী ভুল করে এটা বের করার জন্যে?? অবিশ্বাস্য!! এদের মনোযোগের মাত্রা দেখে আমি সত্যিই অভিভূত! এই ভাই এটা বলেছে, আস্তাগফিরুল্লাহ! এই ভাই এই সমাজের জন্যে ফিতনা। উনি আসলে মানুষকে জাহান্নামের দিকে ডেকে চলেছেন এবং উম্মাহ কে উনার থেকে বাঁচানোর জন্যে এই আমার ব্লগ কি…? এইসব কথা পরিচিত মনে হয়? এদের থেকে কি মানুষ উপকার পাবে? আমি কারো নাম নিতে চাইনা এদেরকে আমি পাত্তা দেইনা, আমার সম্পর্কে বললেও না। আমি সত্যিই এদেরকে গণনায় ধরি না। আমি মাঝে মাঝে ইউটিউবে এদের কমেন্ট পড়ি, শুধুমাত্র বিনোদনের জন্যে। কিন্তু ইনি, ইনার এই ভুল আছে .. অথবা লোকে বলে উনি অমুক বিপথগামী দলের লোক, লোকে বলে উনি ভালো শায়খ নন।এই সব কথাবার্তা শুনেছেন না? .. আহ ..এইসব ‘লোকে বলা’ জিনিস গুলা কোথায় থেকে পায় এরা?

এটা নবী (সা:) সুন্নাহ নয়, তবে এখন ‘মুসলিমদের সমাজের’ একটা সুন্নাহ চালু হয়েছে। যখনি কেউ মানুষের উপকারের জন্যে কাজ করবে আপনাকে তার ভুল বের করতেই হবে। এবং আমি গ্যারান্টির সাথে বলছি, আমি অথবা যে কেউ যে কখনও মাইকে কথা বলেছে আপনি কোথাও না কোথাও তার ভুল খুঁজে পাবেনই। কারণ আমরা মানুষ। তাই যদি আপনি ভুল খুঁজে বের করতে চান- আমি গ্যারান্টির সাথে বলতে পারি- আপনি কোথাও না কোথাও ভুল খুঁজে পাবেনই। মানুষ মাত্রই ভুল করে আর আপনি যদি কারো ভুল খুঁজে পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করে থাকেন – মানুষ ভুল করবেই এটাই স্বাভাবিক- আপনি কিছুই অর্জন করতে পারেননি। আপনি কোনো ‘আমর বিল মারুফ’ আর ‘নাহি আ’নিল মুনকার’ করেননি। কী সমস্যা এদের? এটা ‘আমর বিল ..’ কিছুই না, এর মানে হলো আপনার হাতে সময় আছে নষ্ট করার মত। এবং আপনি এই সময়ে ভালো কিছুই করতে জানেন না। তাই এর বদলে আপনি অন্যের ভুল নিয়ে গবেষণা করছেন। বলছি এর বদলে যান না, আপনার মাকে সাহায্য করেন, রান্না করেন, নিজের বাসা পরিষ্কার করেন। নিজের মোজা শুকে দেখেছেন কখনো? ওগুলো ধুয়ে ফেলেন। এসব ভুল ধরা বাদ দিয়ে নিজের জীবনে অর্থবহ কিছু করেন। এসব করে আপনি কারো জন্যই কিছু করছেন না । এটা হলো মূর্খদের প্রথম ধরনের কথোপকথন। আর এসব করে মুসলিমরা তাদের সব শক্তি ব্যয় করে ফেলে,সব শক্তি অপচয় করে। এই মতামত বনাম সেই মতামত, সেই মতামত বনাম এই মতামত, অনেক হয়েছে .. যথেষ্ঠ..।

এখন দ্বিতীয় বিষয়, যে ধরনের বিষাক্ত…,-আমি মোটেও গম্ভীর আলোচনা বলতে চাই না এগুলোকে- ইসলামের নামে বিষাক্ত কথাবার্তা, এগুলো হল,যখন আমরা নিজেরাই একজন আরেকজন কে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাই। এরা আল্লাহর চেয়েও বেশি বিচার করতে চায়। এরা মানুষকে মুখের কথা দিয়েই জাহান্নামের আগুনে পাঠিয়ে দিতে চায়। এটা হারাম, ওটা হারাম, ফকিহরা এবিষয়ে কে কি বলেছে তার কোনো ধারণাই নাই। কিন্তু সে মনে করে এটা হারাম, তাই সে দুনিয়ায় তার ফতোয়া জারি করতে চায়। কি যোগ্যতা আছে তোমার ভাই? কোথা থেকে এসব পেয়েছ তুমি?

আমি একটা মজার ঘটনা বলি, আমার বন্ধু শেখ আব্দুল নাসের কেউ কেউ তাকে চিনে থাকবেন তো, সে আর আমি বাইরে রাতের খাবার জন্যে বসে ছিলাম।আমাদের পাশেই আরেক টেবিলে আরো দুইজন বসেছে। এক জনের ছোট খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আছে, খুবই ছোট দাঁড়ি আর তার পাশের জনের লম্বা দাঁড়ি। তো লম্বা দাঁড়ি ওলা লোকটা, ছোট দাঁড়ি ওলা কে বলছে- দেখো ভাই, তোমার চেহারা…হারাম, তোমার.. (ইশারায় .. লম্বা দাড়ি রাখা উচিত )। সে রেস্টুরেন্ট এ খেতে বসে, অন্য মানুষের সামনে তার বন্ধুকে অপমান করছে। আপনারা জানেন, যখন ফিকহের কোনো বিষয় আসে, আমি মুখ বন্ধ রাখি কারণ আমি ফকিহ নই, আমি আলেমও না। কিন্তু শায়খ আব্দুল নাসের একজন ফকিহ, আর উনি বসে বসে ওই দুইজনের কথা শুনছিলেন। আর আরেকটা কথা, ওই দুইজনের বয়সই ২০ এর কাছাকাছি। এটা হারাম, আর হাদিসে আছে, তোমার লম্বা দাঁড়ি রাখতেই হবে, এটা আবশ্যিক। এই সেই শায়খ আব্দুল নাসের ওহ ..মাঝে মাঝে এই মানুষ টা … সে কেবল মাত্র তার কাবাব মুখে দিতে যাবে। উনি খাবারটা প্লেটে রাখলেন, তারপর ওই ছেলে কে, ভাই ..এই হাদিস তা কোথায় যেন আছে? আম আম .. মনে হয় বুখারীতে ….কোন অধ্যায়ে? এটার রাবী কে? এটা কে বর্ণনা করেছে? এটা কে কাকে বর্ণনা করেছে? সাহাবারা এটাকে কিভাবে মেনে চলেছেন? তাবেইনরা এই হাদিসটাকে কিভাবে বুঝেছেন? ইমাম বুখারী নিজে এটা নিয়ে কী বলেছেন? এই হাদিসে ব্যাখ্যায় ফাতহুল বারীতে কী বলা আছে? মালিকি মাজহাবে এটা নিয়ে কী বলা হয়েছে? শাফেয়ী ইমামরা কী বলেছেন? সে বলে উঠলো আপনি আমাকে অপমান করছেন, অনুগ্রহ করে অপমান করবেন না। শায়খ বলল হ্যা আমি অপমান করছি কারণ একটু আগে তুমি ওকে অপমানিত করছিলে। তোমার এই বিষয়ে ধারণা নাই, তুমি কিছু পড়ে কোনো একটা বিষয় কে হারাম বা হালাল কর, তোমার এই বিষয়ে রায় দেয়ার কোনো অধিকার নাই। একটা বিষয়কে হারাম বলার আগে, সেটা নিয়ে সাবধান হওয়া উঠিত, আল্লাহ এটাকে হারাম করেছেন..(এটা বলার আগে)খুবই সতর্ক থাকা উচিত। এমন বলা কোনো তুচ্ছ বাপার না। এটা আল্লাহর ‘হুদুদ’ …. এটা আল্লাহর ‘হুদুদ’ .. তুমি সামনে যা পাও তাকেই ‘হারাম’ ‘হারাম’ বলতে পারোনা। এরকম বলার কোনো সুযোগই নাই তোমার। এবং এটা তুমি নির্ধারণ করনা কে জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ্ব হবে? কে সোজা পথে চলছে, কে ভুল পথে চলছে?

কুরআনের যে আয়াতটা নিয়ে আজকে আলোচনা করব, সেই আয়াতের শেষে বলা আছে

’’ইন্না রব্বাকা হুয়া আলাম, বি মান দল্লা আন সাবিলিহ (৬৮:৭)
তোমার রব, তিনি জানেন, কে পথভ্রষ্ট’

’ তুমি না ..তোমার এটা নিয়ে চিন্তা করার কথা না, কিন্তু আমরা একজন আরেকজনকে খুব তাড়াতাড়ি বিচার করতে পছন্দ করি। আর এটাতে আমরা এতই পারদর্শী যে কেউ মসজিদে ঢোকার সাথে সাথে আমরা তাকে নিয়ে কথা বলতে শুরু করে দেই, তার দিকে তাকিয়েই .. আহ..ছোট দাঁড়ি ..(হুহ …)..আমরা হা করে তাকিয়ে তার প্যান্ট-এর দৈর্ঘ্য দেখি,(আহ হুহ) …. এত দ্রুত .. আমরা দেখেই তাকে ‘নার’(জাহান্নাম)এ পাঠিয়ে দিলাম। এটা একটা জঘন্য কাজ, খুবই জঘন্য জঘন্য কাজ ইসলামের মাধ্যমে আরেকজনকে বিচার করা । এসব ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহই বিচারের ক্ষমতা রাখেন। এটা আমাদের কাজ না। এটা আমাদের স্থান না