অন্যের ধর্মের ভাই বোনেরা যদি জিজ্ঞাসা করেন কুর’আন কী? আমরা কী বলব?
— ঠিক এই প্রশ্নের উত্তর নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন উস্তাদ নুমান আলী খান অন্য ধর্মের মানুষদের সামনে।
আপনারা প্রস্তুত? তাহলে আমরা শুরু করছি। এই পর্বে নিজের ব্যাপারে আমি আপনাদের কিছু বলব। এটা কুরআনের সাথে প্রাথমিক পরিচয় পর্ব হবার কথা ছিল। আর আমি যেভাবে কুরআনকে মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই, সেটা খুবই ব্যক্তিগতভাবে। গতানুগতিক কোনও নিয়মে নয়, যেমন আগে থেকে বানানো কোনও পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বক্তব্য উপস্থাপন সম্পর্কিত কিছু নয়। আসলে আমি আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে কুরআনের সাথে সবাইকে পরিচয় করাতে চাচ্ছি। আমি মুসলিম ঘরেই বড় হয়েছি। কিন্তু আমি এমন কোন পরিবেশে বড় হইনি যেন ছোটবেলা থেকেই কুরআন পড়েছি, অর্থ জেনেছি কিংবা পুরোটা একবার হলেও অর্থ সহকারে পড়েছি। এগুলোর কোনটাই করিনি কখনও। এইজন্য আমি ঠিকভাবে জানতামও না এটা আসলে কি। আর এমনকি নিউইয়র্ক সিটিতে কলেজে যাই যখন তার আগ পর্যন্ত ওইভাবে ধর্মের সাথে আমার যোগাযোগও ছিলনা। নিউইয়র্ক সিটিতেই আমি স্কুলে গিয়েছি। যখন আমি আমার ধর্মকে নতুন করে আবিষ্কার করা শুরু করলাম। তখন আমি আসলে একাই থাকছিলাম নিজের মত করে, আমার বাবা মা ততদিনে এখান থেকে চলে গেছেন। নিজের মত করে ছিলাম, নিজের মত করেই ধর্মকে শিখছিলাম। পরিবারের কোনও হস্থক্ষেপ, কোনও প্রতিষ্ঠানের প্রভাব ছাড়া। খানিকটা নিজের আবিষ্কারের মত। কুরআন পড়ার খুব কম সময়ের মাঝেই এটা বুঝে যাই যে এইরকম সেক্সপিয়রিয় অনুবাদ দিয়ে আমি খুব বেশি কিছু বুঝব না আর সঠিক ভাবটা বুঝব না। লিখনটি আমার জন্য বোঝা খুব কঠিন ছিল। এইরকম বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের আমি সহ আরও অনেকেই সম্মুখীন হয়েছে, কুরআনকে বুঝতে গিয়ে।
এদের মাঝে প্রথমটি ছিল, এটা অন্য সব বইয়ের মত পড়া যায়না। এখানে ১১৪ টি ভাগ আছে, আপনারা বলেন চ্যাপ্টার, আমরা বলি সূরা। এগুলো আসলে চ্যাপ্টার নয়, কারণ সংজ্ঞা অনুযায়ী একটি চ্যাপ্টারকে অবশ্যই প্রগতিশীল হতে হবে। অর্থাৎ, আপনি যখন কোন বইয়ের চ্যাপ্টার এক শেষ করবেন, চ্যাপ্টার দুই তখন চ্যাপ্টার একের উপরে ভিত্তি করেই হবে। চ্যাপ্টার এক থেকে কোন কিছু চলে আসলে, লেখক লিখে দেন চ্যাপ্টার একের রেফারেন্স, যে ওখানে আছে। অত নাম্বার পেজ, অত নম্বর সেকশন। চ্যাপ্টারগুলো এইভাবেই কাজ করে। আর এই চ্যাপ্টারগুলোর সিরিয়াল ও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আপনি একটি বারো চ্যাপ্টারের বই নিয়ে, শুধু চ্যাপ্টার তিন থেকে বারো পর্যন্ত পড়তে পারেন না। লেখকের উদ্দেশ্য এতে সফল হয়না। কিন্তু আপনি যদি কুরআনের দিকে তাকান, প্রথমেই যেই ব্যাপারটি আপনি লক্ষ্য করবেন, সেটা হল এখানে কয়েকটি ক্রম/সিরিয়াল আছে। যেমন ১১৪ টি সূরা আছে। চ্যাপ্টারের বদলে সূরা। লিখে ফেলুন। চ্যাপ্টারের বদলে সূরা। কতগুলো আছে? ১১৪ টি। এইগুলোকে বিভিন্নভাবে সিরিয়াল করা যেত।
প্রথমত, এগুলোকে বিষয় অনুযায়ী সিরিয়াল করা যেত, যেটা সাধারণত সব বইয়েই করা হয়। কিন্তু সেটা করা হয়নি। বিষয় অনুযায়ী কুরআনকে এইভাবে ভাগ করা হয়নি। আরেকভাবে ভাগ করা যেত সেটা হল সময় অনুযায়ী ক্রমানুসারে। তবে আমরা বিশ্বাস করি, কুরআন আমাদের নিকট নাযিল করা হয়েছে ২৩ বছর ধরে! মহানবীর কাছে অল্প অল্প করে ওহী এসেছিল, আর ওটা তখন মুখস্ত করা হয়েছে। এটি একটি মৌখিক প্র্যাকটিস ছিল, লৈখিক নয়। এটা মুখস্ত করা হত। তাহলে আপনার মনে হতে পারে যে, প্রথমে যেটি মুখস্ত করা হয়েছিলো, সেটি চ্যাপ্টার এক, এরপর চ্যাপ্টার দুই। কিন্তু আসলে সর্বপ্রথম যে ওহী এসেছিল, আপনি সেটাকে বইয়ের একদম শেষের দিকে পাবেন। এটি প্রায় ছয়শত পৃষ্ঠা, আপনি হয়তো পাঁচশ আশির দিকে পাবেন। ওটা ছিল একদম প্রথম ওহী। তাহলে এটা পরিষ্কার যে এটি সময় অনুসারে ক্রম করা হয়নি। তাহলে এটি বিষয় অনুসারেও নয়, আবার সময়ের ক্রমানুসারেও নয়। অনেক আধুনিক পাঠকের জন্যই এটি দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ।
এখন আধুনিক পাঠকদের জন্য তৃতীয় যে চ্যালেঞ্জ হতে পারে সেটি হল এটি সাইজ অনুসারেও নেই। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, একদম বড় চ্যাপ্টার গুলো প্রথমে, এরপর একদম ছোটগুলো শেষে। না ওইভাবেও নয়। প্রথমটি বেশ ছোট, এরপরেরটি বেশ বড়, আসলে সবচেয়ে বড়, এরপরেরটি ও বেশ বড়, এরপর কিছু বেশ বড়, আবার কিছু ছোট, আবার বড়, আবার ছোট। তাহলে এটি সাইজ অনুসারেও নেই, বিষয় অনুসারেও নেই, সময় অনুসারেও নেই। আমার মত একজন পশ্চিমা পাঠক, যখন আমি একদম প্রথম এটি পড়ছিলাম, যে এখানে তো কোন ক্রমই নেই! কোন ক্রমই তো খুজে পাচ্ছিনা, আমি এটা বুঝতেই পারছিনা। খুব বেশি এনক্রিপ্ট করা, সবকিছু একেবারে ছড়ানো, ছিটানো। এরপর এত কিছুর পরে, আপনাদের আমি বলেছিলাম, কারও কি মনে আছে, মুসা (আ) কে নিয়ে কয়টি প্যারা আছে? ৭০ টি! এইগুলো সব এক জায়গায় নেই। সবখানে ছড়ানো ছিটানো। এমনকি ওইগুলোও সময়ের ক্রম অনুসারে নেই! কয়েক রকমের ক্রমে আছে এগুলো! আর আমার প্রতিক্রিয়া ছিল, এটা আবার কেমন বই! আমি বুঝেই উঠতে পারছিলামনা। এইরকমই ছিল আমার অনুভূতি যখন আমি প্রথম কুরআন পড়েছিলাম; কুরআনের অনুবাদ পড়ে। আমি আরব নই, আমি আরবি জানিনা। অনুবাদ পড়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিলনা।
এরপর হঠাত মাথায় কি কাজ করলো আমি জানিনা, কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমি আরবি শিখব। আমি ততটুকু আরবি শিখব যাতে এই বইটি আমি অনুবাদ ছাড়াই পড়তে পারি। এটি ১৯৯৯ সালে, আমার ভাগ্য খুব ভালো ছিল, আল্লাহ পাক আমাকে দারুন প্রতিভাবান একজন শিক্ষক রহমত হিসেবে দিলেন। আমার স্কুল ছিল, চাকরী ছিল, এরপর আমি প্রতিদিন ৩ ঘন্টা করে আরবি পড়তাম আমার শিক্ষকের কাছে। প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা এভাবেই যেত। আরবি পড়ার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল কুরআনকে বোঝা। এটাই ছিল আমার একমাত্র উদ্দেশ্য। আমি আরবিতে কথা বলার জন্য শিখিনি, আরবি লেখার জন্য না, আমার আরব দেশগুলোতে ভ্রমণের উদ্দেশ্য ছিলনা, আরব বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার উদ্দেশ্য ছিলনা। এগুলো আমার প্রেরণা ছিলনা, আমার একমাত্র প্রেরণা ছিল এই কুরআনকে বুঝা, অনুবাদের সাহায্য ছাড়া। সারমর্ম বলা যায়, এরপর থেকেই আমি আরবি নিয়ে পড়াশোনা করছি। তখন থেকেই আমি কুরআনকে পড়ছি। আর যখন আমি কুরআনকে আরবিতে বুঝার অল্প একটু স্বাদ পেলাম, তখন আমার একটা অবিশ্বাস্য উপলব্ধি হল যে,ভাষাগতভাবে এই বইটি এমনভাবে সাজানো, আর কোন বই ইতিহাসে একিভাবে সাজানো নেই! প্রতিটি দিক থেকেই এটি অনন্য। আর এটির কিছু সাহিত্যিক তারতম্য আছে যেগুলোর সঠিক মুল্যায়ন করতে হলে অন্যান্য সাহিত্যিক কাজগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে চলবে না। এটার নিজের উপরেই ভিত্তি করে এটিকে তুলনা করতে হবে।
মাঝে মাঝে, এটি খুব ভালো কোন উদাহরণ নয়, কিন্তু এটি আপনাদের অল্প হলেও ধারণা দিবে। কোন সময়ে কেউ একটি নতুন ধরনের মিউজিক আবিষ্কার করল। আর প্রথম প্রথম মানুষ যখন সেটি শুনল, তাদের প্রতিক্রিয়া হল, এটা আবার কি! কিন্তু এরপর এটাই হয়ে যায় রক এন্ড রোল। বুঝতে পারছেন? কেউ এমন কিছু একটা করল, যা এর আগে কেউ কখনও করেনি। হয়তো অতীতে এর কিছু উপাদান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কিন্তু এটি পুরোপুরি নতুন ও অনন্য। আপনি এটাকে মোজার্টের সঙ্গে তুলনা করে বিচার করতে পারবেন না। এটা ভিন্ন। এটা ঠিক ঐটির মত নয়। মিউজিক কিন্তু অন্য রকম। ঐ রকমই কুরআনও সাহিত্য কিন্তু আপনি অন্যান্য যেসব কর্মের মানের সাথে অভ্যস্ত ঐ অনুযায়ী নাও হতে পারে। এইজন্য আমি আজ এই ব্যাপারটা হাইলাইট করতে চাই যে কী আসলে কুরআনকে অনন্য করেছে? আর ব্যক্তিগতভাবে আমি সম্মোহিত। আজ পর্যন্ত এই বইটির দ্বারা আমি সম্মোহিত। যত আমি গবেষণা করি, ততই আমি বসে বসে ভাবি যে “ওয়াও! আল্লাহ পাকের বাণী!” এটি আমি ব্যক্তিগতভাবে করি, কারুর উপরে এটা চাপিয়ে দিচ্ছি না। আমি নিজের মোহের কারনে এটা করে ফেলি।
যারা জানেনা তাদের জন্য, ইসলাম শিক্ষা ঘটনাক্রমে কয়েকটি বিষয়ে বিভক্ত। কেউ যদি বলে সে ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করবে, সে কয়েকটি বিষয় নিয়ে পড়তে পারে। আরও ১৫ বছর আগে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, আমি শুধু আরবি ও কুরআন পড়ব। আর এই দুটি বিষয় নিয়ে আমি এতই মুগ্ধ যে আমি আর কোন কিছু নিয়েই পড়াশোনা করিনি। ইসলামের অন্যান্য বিষয় নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে, হাদীস শিক্ষা, সীরাহ শিক্ষা, আরও অনেক ভাগ আছে। আইন, শরীয়াহ, থিওলজী ইত্যাদি। এসব বিষয়ে আমার মনে প্রশ্ন আসলে আমি আমার বন্ধুদের জিজ্ঞেস করি যারা অইসব বিষয়ের আলেম। ওদের জবাবই আমার কাছে যথেষ্ট। এসব বিষয়ে আমার প্রাথমিক জ্ঞানটুকু আছে। কিন্তু কুরআনের ব্যাপারে আমি নিজেকে সামলাতে পারিনি। আমি আপনাদের সাথে তার মাঝে কিছু কিছু ব্যাপার শেয়ার করতে চাই, আপনাদের অন্তত কিছু ধারণা দেয়া যে কেন কুরআন অনন্য সাহিত্যের দিক দিয়ে।
আপনাদের তো বলেছিলাম এটা কি প্র্যাকটিস ছিল। মৌখিক নাকি লৈখিক? মৌখিক। তাহলে এটি একটি মৌখিকভাবে সংরক্ষিত টেক্সট। এখন আপনারাই আমাকে বলুন, কোনটা সংরক্ষন করা কঠিন? লৈখিক কিছু নাকি মৌখিক কিছু?মৌখিক। সবাই তাহলে স্বীকার করছেন, মৌখিক এমন কোন ঐতিহ্য সংরক্ষন করে রাখা বেশ কঠিন। উদাহরণ দেই একটি। যদি আমি চুপি চুপি এরিকার কানে কিছু বলি, তাকে বলি যে আপনি একইভাবে এটি পাশের জনকে বলুন, আপনি তার পাশে, সে তার পাশে, এভাবে পুরো ক্লাস। আমরা শেষ মানুষটির কাছে যদি যাই। আর আমি এরিকাকে বলেছিলাম, বব জোকে ধাক্কা দিয়েছে। এরপর এটি সে চুপি চুপি বলেছে, এরপর সে আরেকজনকে, এরপর সে আরেকজনকে, এভাবে চলছে। আসল কথাটি কি ছিল? বব জোকে ধাক্কা দিয়েছে। এবং শেষ মানুষটির কাছে যাওয়া পর্যন্ত হবে- বব জো’য়ের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, তার গাড়ি চুরি করেছে এবং গ্রামের সবাইকে মেরে ফেলেছে। মৌখিক প্রাকটিসে এমন কিছু হয়ে যায়, কেউ ইচ্ছা করে আসল কথাটিকে পরিবর্তন করেনা। কেউ ব্যাপারটাকে তার নিজের মত করে বলতে যায় আর অল্প একটু পরিবর্তন করে ফেলে। কেউ অর্ধেক ভাগ, কেউ আরও অর্ধেক ভাগ, কেউ এক ভাগ, কেউ দুই ভাগ করে পরিবর্তন করলো। দুই শতাংশ কোন ক্ষতি করার কথা না তাইনা? কিন্তু এটি যখন একটি বিপুল পরিমান লোকজনের মাঝ দিয়ে যায়, তখন আর এটাকে চেনাই যায়না। এই ধরনের পরীক্ষা যোগাযোগ মনোবিজ্ঞ্যানে সব সময়ই করা হয়। মৌখিকভাবে এভাবে কিছু সংরক্ষন করা প্রায় অসম্ভব। আর যতই এটা ছড়াবে, ততই পরিবর্তিত হবে। এটাই যৌক্তিক, যত ছড়াবে ততই পরিবর্তন আসবে। তুলনা করলে দেখা যাবে, লিখিত কিছু সংরক্ষন করা নিরাপদ। একেবারেই যে নিরাপদ তা নয়, এমন না যেন তাদের ব্যাকআপ স্ক্যান কপি আছে, ক্লাউড ড্রাইভ আছে ঐ সময়ে। কিন্তু আপনার কাছে বই হিসেবে লেখা থাকলেও বই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, পৃষ্ঠা ছিঁড়ে হারিয়ে যেতে পারে, এরপর নিজের স্মৃতি থেকে হয়তো আবার লিখতে হতে পারে। তাহলে আপনার কাছে কিছু লেখা থাকলেও সেটি ১০০ ভাগ নিরাপদ নয়। এরপর এই লেখার সত্যতার ব্যাপারে কিছু সংশয় থাকতে পারে। আমার মতে যৌক্তিক। কোনও লেখার উৎস নিয়ে কারও সংশয় থাকতেই পারে। কুরআনের যে যুক্তি, আমাদের নবীর যে দাবি, এমনকি ঐ সময়ের কিছু সংশয়বাদীরা প্রশ্ন করছিলো যে তার উপর কি করে কোন বই নাযীল হবে, তিনি (স) তো পড়তেই পারেন না । তিনি যে কোন বই লিখতে পারবেন না, তা তো স্পষ্ট! কিন্তু তিনি তো পড়তেও পারেননা, তাহলে তিনি কিভাবে লিখবে্ন!এটি ছিল শুধুই মৌখিক। এরপরে বইটি যখন সংকলন করা হয়, তখন সেটি মৌখিক ছিলনা। এটি লিখিত ছিল। কিন্তু ঐ মৌখিক ক্রমে ছিলনা যেটা আমি বলেছি। যেটি আরেকটি জটিলতা বাড়িয়ে দেয়।
এখন মুগ্ধ করার ব্যাপার হল, তার এই ক্যারিয়ারের, রাসুল (সা) ২৩ বছর কাটিয়েছেন একজন রাসুল হিসেবে। এই সময়ের মাঝে প্রায় লক্ষের পর্যায়ে মানুষ মুসলমান হয়েছে। এর মাঝের অনেকেই, বেশ কিছু মানুষ পুরো কুরআনটা মুখস্ত করছে। পুরো আজকের ৬০০ পৃষ্ঠা। আজকেও মুসলিম বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় ঐতিহ্য হল কুরআন মুখস্ত করা। এই মানুষগুলো শুধু কুরআন মুখস্ত করে বসে থাকেনি, বরং অনেক দুরের দেশে ভ্রমন করেছে। তারা মূল ভুমি থেকে তখন বিচ্ছিন্ন। এমন না যে ইমেইলের মাধ্যমে তারা নিজেদের মাঝে যোগাযোগ রাখত। প্রাচীন যুগের ব্যাপার এটি। একবার চলে আসলে যোগাযোগের ব্যাবস্থা নেই। যদি কোন বার্তা পাঠাতেই হয়, কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। কারণ ঘোড়া তার মত করে সময় নেয়। এই মানুষগুলো ছড়িয়ে পড়লো, আর তারা তাদের নিজেদের গ্রামে কুরআন শিখানো শুরু করলো, নিজেদের শহরে। যদি আপনি যৌক্তিক ভাবে দেখেন, এরকম অনুমান করতে পারেন যে, এক বছরের মাঝে তাদের মধ্যে ১০০০ রকম কুরআন থাকার কথা। থাকা উচিত। এরকম একটি মৌখিক লিখনির অগনিত পরিবর্তিত রুপ থাকা উচিত। এমনটাই হওয়া উচিত। আমরা সময় টেনে আজকের দিনে, ২০১৩ তে চলে আসি। আরভিং মসজিদে কুরআন মুখস্তের একটি প্রোগ্রাম আছে। ছেলেপেলেরা এখানে কুরআন মুখস্ত করে। আমার মেয়ে কুরআন মুখস্ত করে পার্ট টাইম, আমিও কুরআন মুখস্ত করি পার্ট টাইম। এইভাবে পার্ট টাইমে আমি প্রায় অর্ধেকটা মুখস্ত করেছি। বেশ অলস আমি, এতদিনে আমার এটা শেষ করে ফেলা উচিত ছিল। পার্ট টাইমে অর্ধেকটা মুখস্ত করেছি এইজন্য না যে আমার ফটোগ্রাফিক মেমোরি আছে, বরং কি যেন আছে এই বইটাতে, এটি মুখস্ত করা বেশ সহজ। বেশ অবাক করার ব্যাপার। আরও অবাক ব্যাপার হল, আমি কুরআনের কিছু অংশ মুখস্ত করেছি, আমি এরপর মালয়েশিয়ায় গেলাম, আমি মালয় ভাষা জানিনা। আমি এরপর নামাজে ইমাম দাঁড়ালাম। আর যখন আমরা নামাজে ইমামতি করি, আমরা নিজের স্মৃতি থেকে কুরআনের কিছু অংশ তিলাওয়াত করি, আমি ইমামতি করছি, কুরআন জোরে তিলাওয়াত করছি, আমার পিছনে কিছু ছোট বাচ্চারা আছে যারা কুরআন মুখস্ত করছে, আমি একটি শব্দ ভুল করলে তিন বাচ্চা সেটি সংশোধন করে দেয়। আমি তাদের ভাষা জানিনা। তাদের সাথে আগে দেখাও হয়নি। তারা আমাকে এয়ারপোর্টে নামাজ পড়তে দেখেছে, তাই তারাও যোগ দিল। মুসলিমরা এমনটাই করে। তারা যদি আপনাকে নামজ পড়তে দেখে, আর তখন নামাজের সময়, তারাও আপনার সাথে যোগ দেয় ও পিছনে দাঁড়িয়ে একসাথে জামাতে নামাজ পড়ে, যদিও একে অপরকে তারা চিনেনা, তবুও। ঐভাবে ব্যাপারটা কাজ করে। আর আমাদের নামাজের দীর্ঘতম অংশ হল দাঁড়িয়ে থাকা, এবং দাঁড়িয়ে কুরআন তিলাওয়াত করা। আর যদি একজন এক শব্দে ভুল করে, বা শব্দেরও একটি অংশ ভুল করে, সঙ্গে সঙ্গে পিছনের কেউ তাকে সংশোধন করে দিবে, আর ইমাম তখন তা ঠিক করে নিবে, শব্দাংশ পর্যন্ত।
আরও অবাক করা ব্যাপার, আমরা আরভিংএ আছি, মনে করুন, কোন ইন্টারনেট নেই, কোন লাইব্রেরী নেই, কোন বই নেই, কোন সেল ফোন নেই, কম্পিউটার ও নেই। যত তথ্য আমাদের কাছে থাকে, কিছুই নেই। আমেরিকার সংবিধানের কোন কপি নেই, বাইবেলের কোন কপি নেই, কিছুই নেই। কোন বই নেই, কোন তথ্য নেই। আমি চ্যালেঞ্জ করতে পারি, ২৪ ঘন্টার মাঝে আমরা কুরআন পেয়ে যাব। আরভিং এই। আসলে পুরো আরভিং ও খোঁজার দরকার নেই। এখান থেকে পাঁচ ব্লকের মাঝেই চলবে। পুরো কুরআনটা আমরা পেয়ে যাব, কেন? স্মৃতি। কিন্তু ওটাকে আবার লিখনিতে রুপ দিতে হবে। কিছু ছেলে পেলেকে বসিয়ে দিতে হবে, সবাই এক পৃষ্ঠা করে লিখবে, হয়ে যাবে কিছুক্ষনের মাঝে। লেখার পর তারা যদি একটি লাইব্রেরি কপির সাথে তুলনা করে, কি হবে? একই জিনিস। এমনকি শব্দাংশ পর্যন্ত, দাড়ি, কমা পর্যন্ত। এটা আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে। কিভাবে একটি বই এতটাই বদ্ধমুলভাবে মানুষের মনে গেঁথে থাকে। যাতে এত সহজেই এটা পুনরুদ্ধার করা যায়! আর এটা শধুমাত্র আরভিং এ নয়, আমি ইউলিস এ এটা করতে পারি, এটা ফোরট ওরথেও করতে পারি, এমনকি মিকেনিতেও! আমি এটা আর যেকোনো জায়গায়ই করতে পারি। এতেই আমি মুগ্ধ হচ্ছি যে একটি মৌখিক কিছু এতটাই দারুনভাবে সংরক্ষিত ও একীভুত। অথচ যুক্তিগত দিক দিয়ে এটির লাখ লাখ ভার্সন থাকা উচিত ছিল।
ইউটিউব লিংক –
অনুবাদ: মুনেম চৌধুরী