কুর’আন কী? – পর্বঃ ২

কুর’আন কী? – পর্বঃ ২

অন্যের ধর্মের ভাই বোনেরা যদি জিজ্ঞাসা করেন কুর’আন কী? আমরা কী বলব?
— ঠিক এই প্রশ্নের উত্তর নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন উস্তাদ নুমান আলী খান অন্য ধর্মের মানুষদের সামনে।

লিখে রাখার যে রীতি ছিল সেগুলোকে একত্রিত করা হয়েছিল অনেক পরে!মুখস্থ করার রীতি সেখানে অনেক কাল ধরেই চলে আসছিল।অনেক অনেক কাল আগে থেকে।যাই হোক,এটা মৌখিক ঐতিহ্য ছিল। আমি আপনাদের বলেছিলাম আমাদের নবীর একটি অপারগতার কথা…সেটি কি বলতে পারবেন?তিনি কি যেন করতে পারতেন না?ওহ্‌, মনে পড়েছে… তিনি লিখতে পারতেন না।তো এখন…একটি সূরা…কতগুলো যেন সূরা আছে কুরআনে? ১১৪ টি!এগুলো বড় কিংবা ছোট। সূরাগুলো বড়ও হতে পারে ছোটও তে পারে।সবচেয়ে বড় সূরাটিতে ২৮৬ টি স্তবক (আয়াত) আছে! আমি স্তবক বলছি আপনাদের জন্যে… আমি একে স্তবক বলি না। আপনাদের জন্যে ২৮৬ টি স্তবক। স্তবক গুলি সব একসাথে নাযিল হয়নি বরং প্রথমে সূরাটির অল্প কিছু অংশ নাযিল হয়, আর ইতোমধ্যেই অন্য সূরার অন্য কিছু স্তবক ও নাযিল হতে থাকে।আবার আর এক সূরার আরও কিছু স্তবক নাযিল হতে থাকে।আমাদের নবী সেসব পড়তেন আর তার সঙ্গীদের বলে দিতেন… আসলে এই স্তবকগুলো এই সূরার অন্তর্ভুক্ত…আর ঐ স্তবক গুলো ঐ সূরার অন্তর্ভুক্ত…আর তিনি সব সময় এভাবে বলে দিতেন।তো তাঁর কাছে ধরুন ২০ টি সূয়া নাযিল হচ্ছে…সবগুলোই আংশিক ভাবে…সব গুলোই অল্প অল্প করে নাযিল হচ্ছে আর তিনি তাঁর সঙ্গীদের বলছেন কোন স্তবক কোথায় বসবে। তাঁর সামনে কোন কাগজে সেসব লিখাও ছিল না…থাকলেও কোন লাভ হত না কারণ তিনি পড়তে জানতেন না।এসব কিছুই ঘটছিল মুখে মুখে।একটা সময়ে সম্পূর্ণটা বলা ও সাজানো শেষ হয়ে গেল।আর আমরা একে একটা বই হিসেবে পেলাম যা কালানুক্রমিক নয়, যার আকারের বা বিষয়ের কোন ধারাবাহিকতা নেই।মনে আছে আমি যে বলেছিলাম?তো কুরআনের যেটি সবচেয়ে বড় সূরা… ইতিহাসবেত্তা গণের মতে এটি নাযিল হতে ১০-১২ বছর সময় লেগেছিল।এই সূরাটি যখন নাযিল হচ্ছিল তখনই কুরআনের অনেক বড় একটা অংশও নাযিল হচ্ছিল…যেগুলো ছিল অন্য সূরার অন্তর্ভূক্ত।সূরাটি নাযিল হল…মানুষ তা মুখস্থও করে ফেলল।কিন্তু সে সময় তারা স্তবকে নম্বর দিত না! আমি যেমন বললাম সূরাটিতে ২৮৬ টি স্তবক আছে…এটা আমি বলতে পেরেছি কারণ কুরআনের একটা ছাপানো কপিতে স্তবকের সংখ্যা দেওয়া থাকে।কিন্তু প্রকৃত কুরআনে কি তা ছিল?না!আর তারা এমন ভাবে নিজেদের সাথে কথাও বলতে পারত না যে,”তুমি কি স্তবক নম্বর ৪৩ শুনেছ?”… তারা এভাবে কথা বলতেন না।সে সময় এমন ক্রমবিন্যাস ছিল না। তারা কেবলই পড়ে যেতেন।

সূরা বাকারাহ যেটি কুরআনের ২য় সূরা…সবচেয়ে বড় সূরা। একদিন আমি পড়ছিলাম আর কুরআনের literary nuance(সুক্ষ্ম তারতম্য) গুলো খেয়াল করছিলাম।২৮৬ এর অর্ধেক কত হয়?১৪৩! বেশ ভাল…সবাই দেখি ম্যাথ মেজর! এই সূরার ১৪৩ নম্বর স্তবকে বলা হচ্ছে “এভাবে আমি তোমাদের মধ্যম জাতিতে পরিণত করলাম”। ‘মধ্যম’ কথাটি সূরাটির আর অন্য কোথাও উল্লেখ নেই এই মধ্যম স্তবকটিতে ছাড়া। যেটা কেবল মানুষের মুখে মুখেই প্রচলিত ছিল এবং ১০-১২ বছর সময় নিয়ে নাযিল হয়েছিল, যার কোন স্তবক সংখ্যা দেওয়া ছিল না।

বোর্ডে যা দেখতে পাচ্ছেন আপনারা এটা কে বলতে পারেন একটিমাত্র আয়াতের সংক্ষিপ্ত সারাংশ।একটি স্তবকের সংক্ষিপ্ত সারাংশ।একে বলা হয় ‘আয়াতুল কুরসি’। অর্থাৎ ‘সিংহাসনের আয়াত’।এতে আল্লাহর সম্পর্কে বলা হয়েছে।এ স্তবকে ৯ টি বাক্য আছে।একটি স্তবক কিন্তু বাক্য কয়টি? ৯ টি।
এখন দেখুন…
প্রথম বাক্যটিঃ ”আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া আল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুমঃ আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নয়, তিনি চিরঞ্জীব এবং সকলের প্রতিপালক”। তিনি সব কিছুর দেখাশুনা করেন। কোন কিছুই অক্ষুণ্ণ থাকে না যদি না তিনি সেটি অটুট রাখতে চান।এটাই হল প্রথম বাক্য।প্রথম বাক্যে আল্লাহ তাআলার দুটি বিশেষ গুণের কথা বলা হয়েছে।একটি হল তিনি চিরঞ্জীব অপরটি প্রতিপালক।
দ্বিতীয় বাক্যটিতে বলছেঃ ”লা তা’ খুজুহু সিনাতু ওয়ালা না’ওমঃ তন্দ্রা ও নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করে না।” তন্দ্রা বলতে বুঝানো হয়েছে নিদ্রার পূর্ববর্তী অবস্থাকে… অর্থাৎ একটু পরেই আপনি ঘুমিয়ে পড়বেন।আপনি কোন ক্লাসরুমে বসে থাকলে সচরাচর যা অনুভব করেন…প্রথমে তন্দ্রা আর এর পরপরই নিদ্রা।এরপর তিনি বলছেনঃ লাহুমা ফিস সামাওয়াতি…এর আগেরটা কিন্তু ২য় বাক্য ছিল।’বাক্য’ কি সে সম্পর্কে যদি আপনার ধারণা কম থাকে প্রশ্ন করুন।
তৃতীয় বাক্যঃ ”লাহুমা ফিস সামাওয়াতি ওয়ামা ফীল ওয়াল আরদঃ তিনি আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সব কিছুর মালিক।আমি একে সংক্ষেপে বলতে পারি সবকিছুই তাঁর।আসমান ও জমিনে যা কিছু থাকা সম্ভব সবই তাঁর।
চতুর্থ বাক্যঃ মান যাল্লাযী ইয়াশ ফা’উ ‘ইংদাহু ইল্লা বিইযনিহীঃ কে আল্লাহর কাছে মধ্যস্থতা করবে…আমি মধ্যস্থতা শব্দটি ব্যাখ্যা করব কারণ আমি যখন অনুবাদ পড়েছি আমি এই শব্দটির মানে বুঝতে পারিনি আর আমি ধারণা করছি আপনাদের মধ্যেও কেউ কেউ এই শব্দটির মানে বুঝতে পারছেন না।কে আল্লাহর কাছে মধ্যস্থতা করবে তাঁর অনুমতি ছাড়া?এর মানে হল আপনি যখন কোন সমস্যায় পড়েন… চাকরির ক্ষেত্রে… এবং আপনাকে এখনি বের করে দেওয়া হবে।কিন্তু অফিসের ম্যানেজার হল আপনার মামা…আর তিনি আপনার এবং কোম্পানির সিইও এর মাঝে এসে দাঁড়িয়ে বললেনঃ ” সে তো আমার ভাগ্নে, ওকে দয়া করে আর একটি সুযোগ দিন, এত কঠোর হবেন না” এখানে মামা মধ্যস্থতা করলেন।আপনি একটি ঝামেলায় পড়তে যাচ্ছিলেন কিন্তু আপনার মামা ছিল বলে তিনি আপনাকে বাঁচিয়ে দিলেন।অথবা পথে পুলিশের আটকানো…আপনার গাড়ির জানালা দিয়ে পুলিশকে দেখতে পেলেন…আপনি নিজেকে বাঁচাতে চাইছেন সে সময় বললেনঃ আপনার হ্যাট টা খুব সুন্দর, স্যার! কিন্তু এ কথায় কাজ হল না ।এরপর আপনি যখন লাইসেন্স বের করছেন তখন বললেনঃ জানেন, আমার ভাইও কিন্তু পুলিশের চাকরি করে।(পুলিশ অফিসার বললঃ) তাই নাকি!কোন এলাকার?ওহ, ফ্র্যাঙ্ক! আমি তো চিনি ওকে।আচ্ছা আপনি যান, সাবধানে চালাবেন। ফ্র্যাঙ্কের নামে সেই আইডি কার্ডটি মধ্যস্থতা করেছে!বুঝতে পারছেন?যখন আপনি এমন কাউকে চিনেন যে ঝামেলায় পড়লে আপনাকে সাহায্য করতে পারবে সে-ই হল মধ্যস্থতাকারী।আল্লাহ বলছেনঃ কার সাহস আছে তাঁর সামনে মধ্যস্থতা করার যাঁকে তিনি অনুমতি দিয়েছেন সে ছাড়া।কেউ আল্লাহর সামনে এসে বলতে পারবে নাঃ আল্লাহ প্লিজ দাঁড়ান, আমি জানি আপনি তাকে দোযখে নিক্ষেপ করতে যাচ্ছেন, কিন্তু সে আমার লোক! এরকম ঘটা সম্ভব নয়! যদি না আল্লাহ এর অনুমতি দিয়ে থাকেন।তো তিনি এমন ঘটনার বর্ণনা দিলেন যা হওয়া সম্ভব নয় তবে কিছু ব্যাতিক্রম রয়েছে।এই ব্যাতিক্রমটা কেমন আমরা তা এখনও জানি না।আমরা শুধু জানি তাঁর অনুমতি ছাড়া এমন হওয়া সম্ভব নয়।এটা ছিল ৪র্থ বাক্য।
৫ম বাক্যঃ তিনি জানেন তাদের সামনে কি আছে অর্থাৎ তাদের ভবিষ্যৎ এবং তাদের পিছনে কি আছে অর্থাৎ তাদের অতীত।তিনি তাদের ভবিষ্যৎ ও অতীত জানেন।
এরপর তিনি বলছেনঃ ওয়ালা ইউহিতুনা বিশাইয়্যিম মিন ‘ইলমিহী ইল্লা বিমাশাআঃ তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা জানেনা তিনি যতটুকু জানতে দিয়েছেন তা ছাড়া।তিনি সব কিছুই জানেন আর আমরা কিছুই জানিনা, তাও যতটুকু জানি সেটা জানতে পেরেছি কারণ তিনি তা জানতে দিয়েছেন।সুতরাং আমরা যা জানি সেটা হল ব্যতিক্রম, খুবই নগণ্য পরিমাণ যা তিনি আমাদের জানতে দিয়েছেন।তারপর তিনি বলছেনঃ ওয়াসি আ’ কুরসিয়্যুহুস সামাওয়ায়তি ওয়াল আরদঃ তাঁর রাজকীয় সিংহাসন বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে ব্যপৃত। অর্থাৎ তাঁর সকল সৃষ্টিই তাঁর রাজত্বে রয়েছে, তাঁর আ’রশের নিচে। আমরা জানি সিংহাসন প্রাসাদের খুবই ছোট একটা অংশ জুড়ে থাকে। প্রাসাদের সবচেয়ে গহীনে থাকে রাজকীয় আসন। আপনার সিংহাসন হয়ত বিশাল কিন্তু তারপরেও প্রাসাদের তুলনায় তা খুবই ক্ষুদ্র স্থাপত্যকর্ম । আল্লাহ বলছেন তাঁর সিংহাসনটাই সারা বিশ্বকে ছাড়িয়ে গিয়েছে! শুধু সিংহাসন…প্রাসাদের কথা তো বাদই দিলাম! এভাবে তিনি তাঁর মহিমান্বিত ঐশ্বর্য বর্ণনা করছেন।যাই হোক,

এরপর তিনি বলছেনঃ ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফযুহুমাঃ আসমান সমূহের রক্ষণাবেক্ষণে…জমিনের রক্ষণাবেক্ষণে…আসমান-জমিনের রক্ষণাবেক্ষণে তিনি ক্লান্ত হন না। ক্লান্তির অনুভুতি কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের সাথে জড়িত।Action movie গুলোতে সিকিউরিটি গার্ডরা সব সময় কি করে বলুন তো?(ঘুমের অভিনয়) সেই সুযোগেই সবাই পার পেয়ে যায়!কারণ সিকিউরিটি গার্ড ঘুমিয়ে পড়ে। আপনি যখন কোন কিছু পাহারা দিবেন স্বভাবগতভাবেই আপনার ঘুম পাবে।আল্লাহ বলছেন আসমান ও জমিন পাহারা দিয়ে তিনি ক্লান্ত হন না।

এরপর বলেছেনঃ ওয়া হুয়াল আ’লিয়্যুল আ’যীমঃ তিনিই সর্বোচ্চ, সর্বশ্রেষ্ঠ।এটাই সর্বশেষ বাক্য।

৯টা বাক্য হল তো তাই না?১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯।সবাই নয়টা বাক্য দেখতে পাচ্ছেন তো?এবার একটা মজার জিনিস দেখুন।
প্রথম বাক্যে আল্লাহর দুটি বিশেষ গুণের কথা বলা হয়েছে।নবম বাক্যেও আল্লাহর দুটি বিশেষ গুণের কথা বলা হয়েছে।দেখতে পাচ্ছেন?
দ্বিতীয় বাক্য বলছে তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না।আর তন্দ্রা এবং নিদ্রা কিসের কারণে আসে?… অষ্টম বাক্য দেখুন, কি লিখা আছে? ‘ক্লান্তি’।
তৃতীয় বাক্য বলছে তিনি সব কিছুর মালিক আর শেষ থেকে তৃতীয় বাক্য বলছে তার আসন সব কিছুকে ব্যপৃত করেছে।
৪র্থ বাক্যে বলছেন, কেউ আল্লাহর কাছে মধ্যস্থতা করতে আসবে না… ব্যতিক্রম হল যাকে তিনি অনুমতি দিয়েছেন।আর শেষ থেকে ৪র্থ বাক্যে বলছেন, তারা কিছুই জানেনা… ব্যতিক্রম হল যা তিনি জানতে দিয়েছেন। এ দুটি বাক্যে দুই ধরনের ব্যতিক্রমের কথা বলছেন।
আর একদম মাঝের বাক্যটিতে বলছেনঃ তিনি জানেন সামনে যা আছে এবং পিছনে যা আছে।এতে যেন বুঝা গেল সাহিত্যিক দিক থেকে তিনি বলছেন যে তিনি জানেন প্রথমের আর শেষের বাক্যগুলোতে মিল রয়েছে।এখানে একটা সিমেট্রি (প্রতিসাম্য) কাজ করছে।

এটাই একমাত্র সিমেট্রির উদাহরণ নয়। এরকম আরও শত শত উদাহরণ আছে কুরআনে…এমন literary nuance এর।আর কুরআনের literary nuance এর এটা কেবল একটা বিভাগ।আমি আপনাদের এরকম আর একটা উদাহরণ দেখাতে চাই।আমি আগেও বলেছি কুরআন ছিল মৌখিক ঐতিহ্য।আর মৌখিক ঐতিহ্যে যদি আপনি একবার কিছু মুখস্থ করে ফেলেন তা আর পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।আপনি যা শুনেছেন তাই বলতে থাকেন।১০০ বার পুনরাবৃত্তি করেন।তার মানে এক্ষেত্রে কোন পরিবর্তনের এর সুযোগ নেই।কুরআনের অনেক গুলো ঘোষণার মধ্যে আমার একটা প্রিয় ঘোষণা হল ‘ওয়া রব্বাকা ফাকাব্বির’।
সংক্ষেপে অনুবাদ করলে দাঁড়ায়ঃ কেবলমাত্র তোমার রবের মহিমা প্রকাশ কর…তাহমিন, বোর্ডে এটা লিখে দিতে পারবেন,প্লিজ? অক্ষর গুলো আলাদা আলাদা করে…আপনি তো জানেন ই আমি কি দেখাতে চাচ্ছি।আপনি যেহেতু এখন এটা লিখবেন আমি অন্য কিছু নিয়ে কথা বলি…বোর্ড মুছে ফেলুন।আমি আপনাদের কুরআনের একটা গভীর বিষয়ের উদাহরণ দিতে চাই…কুরআনকে কিভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে সে বিষয়ে।কুরআনে অনেক কাহিনী রয়েছে।আমার খুব প্রিয় একটা কাহিনী হল জোসেফ (ইউসুফ (আ)) এর কাহিনী।জোসেফের গল্প।কুরআনের ১২ নম্বর সূরাটি জোসেফের জীবনকাহিনী নিয়ে উৎসর্গিত…( তাহমিনঃ আমি কি আরবিতেই লিখব?)।(উস্তাদঃ) হ্যাঁ, অবশ্যই…আচ্ছা আমিই লিখে ফেলি…বোর্ড মুছে পরিষ্কার করাতে এখন আমারই লিখতে ইচ্ছা হচ্ছে!… অন্য সব কিছু আপনি মুছে ফেলতে পারেন… খুবই বাজে মার্কার ছিল!( জনৈক ছাত্রঃ উস্তাদ, আপনি একটা কাফ লিখতে ভুলে গিয়েছেন)…(উস্তাদঃ) ওহ, ‘ফা’ এর পরে ‘কাফ’ হবে…আমি জানি দেখতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।তাও আমি আপনাদের বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব…এরপর জোসেফের কাহিনী বলব…এখানে বলছে, ‘ওয়া রব্বাকা ফাকাব্বির’ অর্থাৎ, কেবলমাত্র তোমার রবের মহিমা প্রকাশ কর।অনেক গুলো আয়াতের মধ্যে এটি একটি।এই কথাটা একটা আলোচনার অংশবিশেষ।একটা প্যারা থেকে আমি একটি বাক্য বলছি।এটা চমৎকার একটি বিবৃতি।অন্য কোন কিছুর মহিমার দাবি তোমার রবের মাহাত্মের সমতুল্য নয়।আপনারা আরবি পড়তে না জানলেও এটা বুঝবেন…এখানে আলাদা আলাদা করে সব গুলো অক্ষর লিখা হয়েছে।আরবি অক্ষর গুলোকে একসাথে লাগিয়ে লিখা হয়।কিন্তু আমি এখানে ব্লক লেটারে লিখেছি…আলাদা করে।যাতে আপনারা বুঝতে পারেন।বোর্ডে প্রথম আকৃতিটি দেখতে পাচ্ছেন? ইংরেজি অক্ষর ‘R’ কে আরবিতে এভাবে প্রকাশ করা হয়।’রব’ শব্দটি তে এবং এই বাক্যের প্রথম অক্ষর এটি।শেষের অক্ষরটি কি?আপনারা একই রকম আকৃতি দেখতে পাচ্ছেন তো?এরপর দেখা যাচ্ছে দুটি বাটির মত আকৃতি যাদের নিচে একটি করে বিন্দু আছে।শেষেও ঠিক তাই… দুইটা বাটির নিচে বিন্দু।এরপর একটা অদ্ভূত সুপারম্যানের মত আকৃতি দেখা যাচ্ছে, একটা অক্ষর পরেই সেই সুপারম্যানকে আবার দেখা যাচ্ছে।এধরনের বাক্য কে বলা হয় palindrome (শেষ দিক থেকে উলটো করে পড়লেও একই অর্থ থাকে) ।ইংরেজিতে এমন palindrome হল ‘bob’, ‘racecar’, ‘anna’. আপনি যদি কোন palindrome সৃষ্টি করতে চান আপনাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে কিসের ব্যাপারে? ধরুন আপনি ইংরেজিতে palindrome বানাতে চাচ্ছেন আপনাকে কি নিয়ে ভাবতে হবে? ( কোন উত্তর নেই) আমি (আপনাদের উত্তরের)অপেক্ষা করব, সমস্যা নেই…এরকম নীরবতায় যখন সবাই অপ্রস্তুত হয়ে যায় আমার বেশ মজা লাগে…আপনাকে বানানের দিকটায় নজর দিতে হবে।কিন্তু আমরা যখন কথা বলি আমরা সাধারণত আমাদের বক্তব্য নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকি।আপনি কি বিষয় নিয়ে কথা বলবেন তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। কিন্তু palindrome সৃষ্টি করতে হলে আপনাকে আপনার বক্তব্যের কিছু বিষয়ে আপোষ করতে হবে, বানানের ব্যাপারটা ঠিক রাখার জন্যে। আর বানান ঠিক রাখতে হলে আপনাকে মূল বিষয়ে কিছুটা পরিবর্তন করতে হবে!কারণ এক্ষেত্রে আপনি এটা ভাবছেন না আপনি কি বলতে চাইছেন বরং ভাবছেন এটা কেমন শুনাবে।সেটাই অগ্রাধিকার পাবে।তো ইংরেজিতে যখন palindrome লিখি আমরা শব্দটির অর্থের বা প্রয়োগের দিকে বেশি নজর দেই না…সেটি আমাদের মূল চিন্তা নয়।বিবৃতিটি ছিল “কেবলমাত্র তোমার রবের মহিমা প্রকাশ কর”…এটা কি কোন অর্থপূর্ণ বাক্য? হ্যাঁ! আর এটা প্রকৃতপক্ষে একটা অনুচ্ছেদের অংশ। এটা কোন বিচ্ছিন্ন বাক্য নয়।এমন না যে নবীজি একদিন বললেন, দেখ দেখ এই আয়াত টা! অবশ্য সেটা সম্ভবও নয়…কারণ তিনি কি করতে জানেন না?পড়তে জানেন না।তিনি যদি সকলকে অক্ষরগুলি দেখাতে চাইতেন তাঁকে সে অক্ষরগুলি চিনতে হত! কিন্তু তিনি তো আরবি অক্ষর চিনতেন না! তিনি শুধু বলে যেতেন।আর এই চমৎকার ব্যাপার গুলো আবিষ্কার হয়েছে শত শত বছর পরে কুরআনের ছাপানো কপি পাওয়াতে।’ এই আয়াত টা দেখ!…না, ঐ আয়াত টা! এই যে এখানে একটা সিমেট্রি…আবার এখানে!দেখ, এই সম্পূর্ণ অনুচ্ছেদটাই সিমেট্রি! আমি আপনাদের জোসেফের গল্প বলছিলাম, তাই না? জোসেফের গল্প সম্পর্কে কিছু বলছিলাম… জোসেফের কাহিনী চমৎকার একটা গল্প…অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এটা ১২ নম্বর সূরা যাকে ১২ ভাগে বিভক্ত করা যায়।জোসেফের গল্পের ১২টি অংশ।গল্পের প্রথম ৬ ভাগে সমস্যা তৈরি হয়েছে আর পরবর্তী ৬ ভাগে শেষ দিক থেকে যথাক্রমে সেই সমস্যা গুলোকে সমাধান করা হয়েছে।প্রথম ভাগে তিনি একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন আর একদম শেষ ভাগে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তরিত হয়।এভাবেই সব ঘটনা কেন্দ্রে এসে মিলে যায়…মুখে মুখে প্রচলিত একটি কাহিনীতে। আজকে আমি কেবল সিমেট্রি ব্যাপারটার প্রতি আকৃষ্ট করতে চেয়েছি…এটা কুরআনের সে অংশ যা সাধারণ মানুষ জানে না…অনুবাদ করলে এই সৌন্দর্য হারিয়ে যায়।আর কুরআনকে সাহিত্য হিসেবে কে পড়তে যায়!কিন্তু এই বিষয়গুলো আমাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করে। আমাকে মুগ্ধ করে।

 

অনুবাদ : নুরতাজ চৌধুরী