নোমান আলী খান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন- وَإِذَآ أَنْعَمْنَا عَلَى الْإِنسٰنِ أَعْرَضَ وَنَـَٔا بِجَانِبِهِۦ ۖ وَإِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ كَانَ يَـُٔوسًا যখন আমরা মানুষকে নেয়ামত দান করি – (আ’রাদ) – মানুষ তা অগ্রাহ্য করে। ইচ্ছাকৃতভাবেই তা আমলে নেয় না। এখানে যা ইঙ্গিত করা হচ্ছে তা হল যখন মানুষকে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে অনেক নেয়ামত দান করা হয়, মানুষ তখন একটা মোহের মধ্যে ঢুকে পড়ে। তারা ভাবতে শুরু করতে কোনভাবে তারা এসবের যোগ্য বা তারা এসবের সত্ত্বাধিকারী অথবা এসব তাদের নিজস্ব কর্মের ফল বা তাদের নিজস্ব অর্জন বা সক্ষমতা। এসব যে নেয়ামত এই বাস্তবতা তারা সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করতে শুরু করে। তারা ভাবতে শুরু করে যে তারা এসবের মালিক বা কোন না কোনভাবে তারা এসবের স্বত্তাধিকারী। ওয়া নাআ বিজানিবিহি- এবং সে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অন্যকথায় বলতে গেলে- আপনাদের একটি ইংরেজি অনুবাদ দিই। নাআ বিজানিবিহির একটি অনুবাদ দিই। “হাহ্!” এটাই নাআ বিজানিবিহি। যখন কেউ বলে আল্লাহ্ আপনাকে অনেক নেয়ামত দিয়েছেন তখন বলে- হাহ্! এই অর্থই আক্ষরিকভাবে ভাষার মধ্যে প্রকাশ পায়। তাই সে আল্লাহ্ যেসব নেয়ামত দিয়েছেন সেসবের ব্যাপারে বিরক্তি প্রকাশ করে এবং এসব যে খোদায়ী উপহার হতে পারে এই ধারণাটিকেই সে উড়িয়ে দেয়। ওয়া ইজা মাসসাহুশশার- এবং যখন তাকে কোন অনিষ্ট স্পর্শ করে, কানা ইয়াউসা- তখন সে একদম হতাশ হয়ে পড়ে, দুঃখভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। আল্লাহ্ আমার প্রতি এমনটা করেছেন। কেন আমাকে এসবের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে? আমি কি এমন করেছি যে আমাকে এসবের মুখোমুখি হতে হচ্ছে? যখন ভাল কিছু ঘটে তখন- আমি এসবের হকদার। এবং এটা আমারই অর্জন ছিল। যখন খারাপ কিছু ঘটে- এটা আমার কর্মের ফসল না। এটা আল্লাহর কাজ। তিনি আমার প্রতি এটা করেছেন। কানা ইয়াউসা। এমনই তার বক্র চিন্তা। এই আয়াতের সবচেয়ে অসাধারণ বিষয়টি হচ্ছে এটি আদবের ব্যাপারে একটি ভাল...
— উস্তাদ নোমান আলী খান এই আত্মিক শক্তির ধারণাটি আরও পরিষ্কার করার জন্য আমি আপনাদের নিকট একটি উদাহরণ পেশ করব। শক্তিকে আমরা বিভিন্ন জিনিসের সাথে সংযুক্ত করি। আমি বহু বছর আগে এই ঘটনাটি নিয়ে কথা বলেছিলাম। কিন্তু এখনো এটি আমাকে অনুপ্রাণিত করে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্স অঙ্গরাজ্যের একটি পরিবারের ঘটনা এটি। পরিবারটি ছিল অত্যন্ত ধনী। তাদের ‘গাড়ি ডিলারশিপের’ ব্যবসা ছিল। নিউ অরলিন্স হল একটি সমুদ্র উপকূলীয় অঙ্গরাজ্য। তাদের দোকান ছিল একেবারে সমুদ্র সৈকতের পাশে। লাক্সারি সব গাড়ির বাহার ছিল তাদের। তারা দামি দামি গাড়ি আমদানি করত এবং বিক্রি করত। এরপর হারিক্যান ক্যাটরিনা আঘাত হানল। ক্যাটরিনা এসেছিল বিশাল জলোচ্ছ্বাস নিয়ে। ফলে নগদ ক্রয় করা তাদের সকল গাড়ি জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেল। একমাত্র লেক্সাস এলএস মডেলের একটি গাড়ি বর্তমান ছিল। পরিবারটি এই গাড়িতে করেই হারিক্যান আক্রান্ত এলাকা থেকে পালিয়েছিল, আমার এখনও মনে আছে। দুর্যোগ শেষ হওয়ার কয়েক মাস পরে, ষ্টেটের সবকিছু খুলে দেয়ার পর আমি আবার তাদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। যে পরিবারটি মাসে প্রায় দুই কোটি টাকা আয় করত, তারাই এখন সেই লেক্সাস গাড়িতে করে পিজা ডেলিভারি দিচ্ছে। পরিবারটি এখন এই কাজ করছে। এক ব্যক্তির পিজা দোকানের জন্য তাদেরকে হায়ার করা হয়েছিল। মা-বাবা দোকানে পিজা বানাতো আর ছেলে লেক্সাসে করে সেই পিজা ডেলিভারি দিত। আমি যখন এটা প্রত্যক্ষ করলাম…কল্পনা করতে পারেন অন্য কেউ যদি এইরকম পরিস্থিতিতে পড়ত, অন্য কোন মিলিওনিয়ার যদি এভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়ত, তাদের ক্ষেত্রে কী হয় জানেন? তারা মদের বোতল হাতে নিয়ে জীবন সম্পর্কে সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে যেত। কারণ, তারা মনে করত, যা তাদের ছিল তাই তাদের শক্তিশালী করত, এখন যেহেতু এই সম্পদ হারিয়ে গেছে আমার পক্ষে আর এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এই ধরণের ক্ষতি সহ্য করা সম্ভব নয়। কিন্তু এই পরিবারের ক্ষেত্রে, যখন আমি তাদের সাথে...
— উস্তাদ নোমান আলী খান রাসূলুল্লাহ (স) এর নবুয়তী জিন্দেগীর তেইশ বছরে যখনই কেউ ইসলামে প্রবেশ করেছে তার জন্য শুধু সাধারণ মুসলিম হিসেবে বসে থাকার সুযোগ ছিল না। তাকে ইসলামের মিশনকে তার নিজের জীবনের মিশন হিসেবে গ্রহণ করে নিতে হয়েছিল। তুমি এই মিশনে যোগ দিয়েছ। এই মিশন সফল হউক বা ব্যর্থ হউক তাতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু তোমাকে এই মিশনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে যেতে হবে। তোমাকে এই মিশনের জন্য জীবনও দেয়া লাগতে পারে। তুমি এই উদ্দেশ্যে অবদান রেখেছ, মারা যাচ্ছ। যতদিন তুমি অবদান রেখে যাবে ততদিন তোমার জীবনের মূল্য আছে। এই উদ্দেশ্যে কুরবানী করার ক্ষেত্রে তুমি কখনো পিছপা হওনা। কারণ তুমি এটাকে কুরবানী হিসেবে দেখো না, তুমি এটাকে দেখো – إِنْ أَحْسَنتُمْ أَحْسَنتُمْ لِأَنفُسِكُمْ – “তোমরা ভাল কাজ করলে নিজেদের কল্যাণের জন্যই তা করবে।” (১৭:৭) এখন মাইন্ডসেটটি বোঝার চেষ্টা করুন। একজন সাধারণ মুসলিম এবং আল্লাহর পথে প্রচেষ্টারত সংগ্রামী ব্যক্তির মনোভঙ্গীর মাঝে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। আমি এখন এই ধরণের লোকদের ‘সংগ্রামী’ বলছি কিন্তু আসলে এদের মু’মিন বলা উচিত। একজন মুসলিম উদ্বিগ্ন থাকে ‘আমাকে সর্বনিম্ন কতটুকু করতে হবে, তা নিয়ে। ”আমি কি এটা খেতে পারবো? এটা কি হালাল? কত ওয়াক্ত নামাজ আমাকে আদায় করতে হবে? ৫ ওয়াক্ত, ঠিক? তাহাজ্জুদ পড়া কি বাধ্যতামূলক? ঠিকাছে, আমি তাহলে পাঁচ ওয়াক্তই পড়বো। আমাকে কি সব নফল পালন করতে হবে? আচ্ছা ঠিকাছে আমাকে শুধু মিনিমামটুকু দিন। আমি কি অমুক অমুক কাজগুলো করতে পারবো? আমাকে জাস্ট বলুন, কোনটা হালাল কোনটা হারাম। আমার তাহলে আর কোনো সমস্যা নেই। আমাকে কয়টি হজ্জ্ব করতে হবে? একটা? ঠিকাছে। যখন আমার হজ্জে যাওয়ার সামর্থ্য থাকবে, ঠিক না? হ্যাঁ। ঠিকাছে , আমি এগুলো করবো। ” এটাই মুসলিমের সংজ্ঞা। যে ইসলামের মিশনে যোগদান করে সে কখনো জিজ্ঞেস করে না ‘আমাকে সর্বনিম্ন কতটুকু...
– উস্তাদ নুমান আলী খান আমরা মুসলিম জাতি কোনো বিষয়কে জটিল করতে ভালবাসি। কুর’আন ভালবাসে সহজ করতে। ইবরাহিম (আলাইহিসালাম) কোনো বিষয় সহজ করতে ভালবাসতেন। তিনি কোনো বিষয়কে জটিল করতেন না। তাঁকে যে পরীক্ষা দেওয়া হয়েছিল আমাদের সেই পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। তিনি সোজাসুজি কথা বলতেন। আমরা হচ্ছি তাঁর জাতি। আমাদের উচিৎ কোনো বিষয়কে সহজ করে দেখা। এটা আমাদের শিখতে হবে। এই শিক্ষা নিতে হবে কুর’আন থেকে। কুর’আন সমস্ত বড় দার্শনিক ইস্যু, সন্দেহজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো সমাধান দেয় নবীগণ যেভাবে দিয়েছেন সেইভাবে। আমরা আল্লাহ প্রদত্ত পাঠ্যসূচি বদলিয়ে নিজেদের খেয়ালখুশি মত করে নিই। আপনি যদি ইসলাম এর আকিদা বিষয়ের উপর PHD করতে চান, করুন। খুব ভালো কথা। কিন্তু তার আগে আপনার উচিৎ হবে ইব্রাহীম আলাইহিসালাম এর আকিদার (বিশ্বাস) উপর শিক্ষা নিন। মহান আল্লাহ্ সুবহানআল্লাহ সূরা ফাতিহায় ঈমান কি তা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নিজের সম্পর্কে মানবজাতিকে শিক্ষা দিয়েছেন। এটা কি যথেষ্ট নয়? আপনি হয়তো বলবেন আমি সূরা ফাতিহা পড়েছি কিন্তু আকিদা সম্পর্কে আরও বিশুদ্ধ ধারণা দরকার। মানুষজন হয়তো আপনাকে বলবে, আকিদা সম্পর্কে জটিল বিষয়গুলো নিয়ে অভিজ্ঞ কোনো শাইখের সাথে অলোচনা না করলে আপনার ঈমান মজবুত হবে না। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন রাসূল সালাল্লাহু আলাইহিসালাম একদা কুর’আন পাঠরত অবস্থায় একদল জ্বিন তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তারা কূর’আন এর আয়াত শুনে মুগ্ধ হয়ে অতীব সুন্দর কিছু কথা বল্লো। যা আল্লাহ্ তাআলা পবিত্র কুর’আনে লিপিবদ্ধ করে রাখলেন। জ্বিনরা কি অনেক বড় কোনো আলেম, দাঈ ছিল? বা নবীজির (রা:) সাথে সাথে থাকতো? না। এরা এসবের কিছুই ছিল না। এরা ছিল ঈমানের অযোগ্য সাধারণ ছাত্র। মাত্র কয়েক মূহুর্ত কুর’আন শুনে এরা এতটাই মুগ্ধ ও আশ্চর্যান্বিত হলো যে তারা কুর’আন সম্পর্কে অত্যন্ত সুন্দর কিছু কথা বললো আর এ কথাগুলো এতটাই মূল্যবান যে আল্লাহ তায়ালা সেগুলো কুর’আনে...
উস্তাদ নোমান আলী খান (সূরা আলাম নাশরাহ এর তাফসীর) ১। আজকের খুতবাহ কুরআনের একটি আয়াত নিয়ে। যা আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা দুইবার উল্লেখ করেছেন সূরা ইনশিরাহ এর মাঝখানে, একে সূরা শার’ও বলা হয়। আল্লাহ বলেছেন – ” ফাইন্না মা’য়াল উস্রি ইয়ুস্রা, ইন্না মা’য়াল উস্রি ইয়ুস্রা।” সাধারণত এর অনুবাদ করা হয় – “কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে, নিঃসন্দেহে কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে।” এই আয়াতের এটাই গড়পড়তা অনুবাদ। তবে, সবার আগে কীভাবে ছোট ছোট সূরাগুলোর কদর করতে হয় সে ব্যাপারে কিছুটা আলোকপাত করতে চাই। আপনাদের অনেকেই এই সূরাটি মুখস্ত করেছেন, আপনাদের বাচ্চারাও হয়তো মুখস্ত করেছে। এটা আমাদের ধর্মের খুবই সুন্দর একটি শিক্ষা এবং আমাদের জীবনের জন্যেও সুন্দর একটি শিক্ষা। আল-কুরআনের কিছু কিছু ছোট সূরার মাঝে গভীরতম শিক্ষা লুকিয়ে আছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর অপরিসীম প্রজ্ঞা থেকে সূরাগুলোকে সংক্ষিপ্ত রেখেছেন যেন মানুষ সহজেই এগুলো মুখস্ত করতে পারে। এবং এগুলো থেকে জীবনের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী কিছু শিক্ষা সহজে মনে রাখতে পারে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এমন একটি সময়ের কথা বর্ণনা করছেন যখন রাসূলুল্লাহ (স) তাঁর জীবনের কঠিন একটি সময়কাল অতিবাহিত করছিলেন। প্রথমদিকে তিনি যখন দীনের দাওয়াত প্রচার করে যাচ্ছিলেন, বেশিরভাগ মানুষ এই দাওয়াত শোনার প্রতি আগ্রহী ছিল না। আমাদের সময়কালের মত সময় সেটা ছিল না। সেই সময়টা হুদায়বিয়ার সন্ধি পরবর্তী সময়কালের মতও ছিল না, যখন দলে দলে মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছিল। নবুয়তী মিশনের প্রথম দিকে মানুষ তাঁর জন্য কাজটা অনেক কঠিন করে তুলেছিল। যে কেউ রাসুলুল্লাহ (স) এর দাওয়াত গ্রহণ করতো, তাকে পাগল আখ্যা দেয়া হত, সুফাহা তথা বোকা এবং বুদ্ধিহীন বলা হত, অথবা বলা হত তিনি এদেরকে বোকা বানিয়েছেন। কেউ ইসলাম গ্রহণ করলেই তাকে এই সমস্ত অভিযোগে অভিযুক্ত করা হত। সেই সময় আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা এই গভীর অর্থপূর্ণ সূরাটি...
কুরআন তেলাওয়াতে পারদর্শী নয় এইরকম একজন যুবক ভাই একদিন আমাকে একটা প্রশ্ন করেছিলেন। প্রশ্নটা ছিল এইরকম – ‘আমি সবসময় ভালো করে কুরআন পড়ার চেষ্টা করি কিন্তু এত চেষ্টা করার পরও আমি শুদ্ধ করে পড়তে পারি না’। যুবকের কথা শুনে মনে হচ্ছিল সে খুবই আবেগী প্রকৃতির মানুষ। একদিন সে রেডিও তে কোন এক প্রোগ্রামে একটা ছোট বাচ্চার কুরআন তেলাওয়াত শুনছিল। সেই বাচ্চাটা এত সুন্দর করে পড়ছিল যে ওই প্রোগ্রাম এর শিক্ষক বলছিলেন, ‘সুবহানআল্লাহ! তোমার নফ্স, তোমার মন খুব পবিত্র। তুমি খুব পবিত্র। আর এই কারণে আল্লাহ তোমাকে এত সহজে, এত সুন্দর করে তেলাওয়াত করার ক্ষমতা দিয়েছেন’। তো এই কথা শুনে ওই যুবক চিন্তায় পড়ে গেল এবং ভাবতে লাগলো – আমি মনে হয় ভালো মানুষ না, এজন্যে আমি ভালো করে কুরআন পড়তে পারি না, আমার আত্মা পবিত্র না। এসব ভেবে সে মানসিকভাবে কষ্ট পেতে লাগলো। যদিও আমি নিশ্চিত ওই রেডিও প্রোগ্রামের শিক্ষক এইরকম কিছু বোঝাতে চান নি, তিনি নিছক সেই বাচ্চা ছেলেকে উংসাহ দেয়ার জন্য এইরকম কিছু বলেছিলেন। এই প্রেক্ষিতে আসুন আমরা একটা হাদিস দেখি, রাসুল (স) বলেছেন ‘কুরআন তেলাওয়াতে পারদর্শী ব্যক্তিরা উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। কিন্তু যারা উচ্চারণগত বা অন্য কোন সমস্যা থাকা সত্বেও কষ্ট করে পড়ার চেষ্টা করে, তারা এর দ্বিগুন পুরস্কার পাবে। (সহি মুসলিম)’ এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঐসব লোক কাদের তুলনায় এই দ্বিগুন পুরস্কার পাবে? সাধারণ তেলাওয়াতকারীদের তুলনায়? নাকি তেলাওয়াতে পারদর্শিদের তুলনায়? আমার মতে তেলাওয়াতে পারদর্শীদের তুলনায় এই দ্বিগুন পুরস্কার দেয়া হবে। কারণ একজন মানুষ কতটুকু অর্জন করলো আল্লাহ সেটাকে গুরুত্ব দেন না, আল্লাহ গুরত্ব দেন সে কী পরিমান চেষ্টা করলো সেটাকে। আমরা মানুষরাই অর্জনকে বেশি গুরুত্ব দেই, সবসময় দেখতে চাই ফলাফল কি, লাভ কতটুকু হলো? আমরা কতটুকু জানি, কতটুকু মুখস্ত করলাম, কতটুকু পড়লাম এই ধরনের...
— নোমান আলী খান। মানুষের মাঝে যাদের সবচেয়ে পরিপক্ক ঈমান রয়েছে কুরআনে তাদের জন্য একটি পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, আর তা হলো – উলুল আলবাব বা সবচেয়ে পরিশুদ্ধ বুদ্ধির মানুষ। আল্লাহ এই মানুষদের কথা সূরা আলে-ইমরানে বলেছেন – إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ – “নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিতে এবং রাত্র ও দিনের আবর্তনে জ্ঞানবানদের (উলুল আলবাবদের) জন্য বহু নিদর্শন আছে।” (৩:১৯০) তারা ঈমানের বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধানে এবং ঈমানের আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানে এক ধরণের পরিপক্কতায় পৌঁছে গিয়েছে, এমনকি কুরআনের সংস্পর্শে আসার পূর্বেই। সবচেয়ে পরিণত ঈমানের মানুষেরা ঐশী জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পাওয়ার পূর্বেই নিজেদের ভেতর বিশ্বাসের ভিত গড়ে তুলেছিলেন। চলুন দেখি, কীভাবে? আল্লাহ বলেন – “ইন্না ফিই খালকিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়াখতিলাফিল লাইলী ওয়ান নাহারি…” নিশ্চয়ই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টিতে এবং রাত্র ও দিনের আবর্তনে “লাআ-ইয়াতিন” অলোকিক নিদর্শন রয়েছে, শুধু একটা নয়, বহু বহু নিদর্শন রয়েছে এর প্রত্যেকটাতে। রাতের মাঝে অনেক শিক্ষা আছে, দিনের মাঝে অনেক শিক্ষা আছে, আকাশের মাঝে অনেক শিক্ষা আছে, পৃথিবীর মাঝেও অনেক শিক্ষা আছে। এর প্রত্যেকের মাঝে রয়েছে অনেক অনেক শিক্ষা। কার জন্য? উলুল আলবাব-দের জন্য। সবচেয়ে পরিশুদ্ধ বুদ্ধির মানুষদের জন্য, খাঁটি বুদ্ধিমত্তার অধিকারী মানুষদের জন্য। এখন, খাঁটি বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞা কী? আল্লাহ কিভাবে খাঁটি বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন? তিনি পরবর্তী আয়াতে “উলুল আলবাব-দের” পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন – الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ – যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে…. তাহলে উলুল আলবাবদের প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো, যারা সবসময় আল্লাহকে স্মরণ করে। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল, “ওয়া ইয়াতা ফাক্কারুনা ফিই খালিকস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ” এবং তারা আকাশ ও জমিনের সৃষ্টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে। তাহলে এখন দেখুন…...
কুরআনের যুক্তি হলো, মানুষ প্রকৃতিগতভাবে সৌজন্যপ্রবণ। আদব, শিষ্টাচার বা শালীনতার প্রতি মানুষের স্বাভাবিক ঝোঁক রয়েছে। মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই ভালো। অনেক নাস্তিক বা অজ্ঞেয়বাদীও এই বিষয়টা নিয়ে গর্ব করেন। তারা এভাবে বলবে – “আমার ভালো হতে ধর্মের দরকার নেই। আমি নিজে নিজেই ভালো থাকতে পারবো। আমার নৈতিক অনুভূতি রয়েছে। আমার বিবেক আছে।” তাহলে, বিবেকের ব্যাপারটি এমন ব্যক্তিও অস্বীকার করে না যে আধ্যাত্মিকতার সমগ্র আলোচনাকে অস্বীকার করে। যাদের একেবারে চরম অধঃপতন হয়নি তারা অন্তত নৈতিক কম্পাস থাকার কথা অস্বীকার করবে না। আর যারা একেবারে অধঃপতনের চরম সীমায় পৌঁছে গেছে তারা বলবে – “নৈতিকতা বলতে কিচ্ছু নেই, তোমার যা খুশি তাই করো। তুমি যা করো তাই সঠিক। যা করতে ভালো লাগে তাই ঠিক।” কেউ এমন পর্যায়ে পৌঁছলে তার এবং পশুর মাঝে আর কোনো পার্থক্য থাকে না। কারণ, পশু যাই করুক না কেন আপনি এর জন্য তাকে মন খারাপ করতে দেখবেন না। মুরগি খেয়ে ফেলার কারণে সিংহের মাঝে অপরাধবোধ জাগ্রত করতে পারবেন না। (অন্যের ক্ষেতের ফসল খেয়ে ফেলার কারণে কোন ছাগলের ভেতরেও অনুশোচনা জাগাতে পারবেন না।) তাদের কোনো বিবেক নেই। আপনাকে কামড় দেওয়ার কারণে মশা এসে ক্ষমা চাইবে না। তাদের কর্মের ভালো বা মন্দ ফলাফলের কোনো জ্ঞান নেই। ধর্ম অস্বীকার করতে করতে যদি এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেন যেখানে নৈতিক কম্পাস থাকার কথা অস্বীকার করেন, তাহলে কংগ্রাচুলেশন! আপনি জাস্ট একটি জানোয়ারে পরিণত হলেন। কুরআনে এসেছে – “সুম্মা রদাদনাহু আসফালা সাফিলিন।” (তারপর আমি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি হীনদের হীনতম রূপে।) যাইহোক, স্বাভাবিক ক্ষেত্রে, প্রকৃতিগতভাবে মানুষ সৌজন্যপ্রবণ। এই সৌজন্যের একটি অংশ হলো সমাদর করা, তারিফ করা। একজন ভদ্র মানুষ সুন্দর কিছু দেখলে তার কদর করে। একজন শিষ্টাচারী মানুষ বিমান থেকে চমৎকার কোন দৃশ্য দেখে বলে উঠে – ওয়াও! দৃশ্যটা খুবই সুন্দর। একজন শিষ্টাচারী মানুষ সুন্দর কোন চিত্র,...
যে কেউ গভীরভাবে কুরআন অধ্যয়ন করেছে জানে যে আল্লাহ বিভিন্ন সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন কিভাবে নবী-রাসূলগণ অপমানিত হয়েছেন। কীভাবে তাদেরকে নিয়ে বিদ্রূপ করা হয়েছে। কীভাবে খুব কদর্য ভাবে তাদেরকে বর্জন করা হয়েছে। এবং কিভাবে নবী-রাসূলগণ অবিশ্বাসীদের বিদ্রুপের কষ্ট নিজের সহ্য করেছেন। নূহ (আ) অভিযোগ করেছেন কিভাবে মানুষ তাকে জঘণ্য ভেবেছে। এবং কিভাবে তারা তাদের কানে আঙ্গুল দিয়ে তাঁর থেকে দূরে সরে গিয়েছে এবং তাদের কাপড় টেনে ধরেছে তাঁর প্রতি তাদের অশ্রদ্ধা প্রকাশ করতে। আমাদের রাসূল (স) ও এর ব্যতিক্রম নন। এই কুরআন যা আমাদের রাসূল (স) কে সম্মানিত করেছে, এখান থেকে আমরা এমন কিছু কষ্টদায়ক শব্দের কথাও জানতে পারি যা তাঁকে বলা হয়েছিল। ওসব রাসূল (স) কেও আওড়াতে হতো, স্মরণ করতে হতো যা তাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছিল। উদাহরণ স্বরূপ, সাহির (যাদুকর), মাজনুন (পাগল), কাজ্জাব (পাকা মিথ্যেবাদী) আরো কত অপবাদ আমাদের রাসূলের বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল এবং এর সবই কুরআনে আছে। আল্লাহ চান আমরা যেন এগুলো স্মরণে রাখি। এটা সত্যি যে, সব রাসূলগণ যদিও তাঁরা আল্লাহর সবচয়ে মহান সৃষ্টি এবং আল্লাহ নিজে তাদের সম্মানিত করেছেন পাশাপাশি তাঁরাই সবচয়ে কঠিন অপমান এবং বিদ্রুপের স্বীকার হয়েছেন। কিন্তু এর জবাব কেমন হওয়ার কথা? রাসূলুল্লাহ (স) এর অপমানে কারো যদি রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়ার কথা আমার মতে সেটা হবার কথা রাসূলুল্লাহ (স) এর সাহাবীদের। যাদের বিশ্বাসের সাথে আমার আপনার কোন তুলনাই চলে না। কিন্তু কই উনারা তো ঐভাবে জবাব দেননি যেভাবে আমাদের কেউ কেউ দেয়। কই উনারা তো মিছিল করেননি। কই উনারা তো রাগে ক্ষোভে চিৎকার-চেঁচামেচি করেননি। কারণ, তারা জানেন, কুরআন শুধু রাসূলুল্লাহ (স) এর জন্য তাদের ভালোবাসা দিতে আসেনি বরং কীভাবে সেই ভালোবাসাটা নিয়ন্ত্রণ করতে হয় সেটাও শেখাতে এসেছে। এবং কীভাবে এইসব অপমানের জবাব দিতে হয় তাও শেখাতে এসেছে। কীভাবে আমরা এটা জানি না...
— উস্তাদ নোমান আলী খান আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারার সাত নম্বর আয়াতে বলেন – “আল্লাহ তাদের অন্তরে এবং তাদের কানে মোহর লাগিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের চোখসমূহে রয়েছে পর্দা। আর তাদের জন্য রয়েছে মহাআযাব।” এখানে মোহর লাগানো অন্তর বলতে কোন অন্তরকে বুঝানো হয়েছে? অন্তর হলো ভালোবাসার জায়গা। আল্লাহ যখন কারো অন্তরে মোহর লাগিয়ে দেন, সিল মেরে দেন তখন সে অন্তর সেসব জিনিসকে ভালোবাসতে অপারগ হয়ে পড়ে যেগুলো তার ভালোবাসার কথা ছিল। যেসব বিষয় ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য তারা সেগুলো ঘৃণা করে। ঈমানদারদের ভালোবাসার কথা তাদের। কিন্তু তারা তাদের ঘৃণা করা শুরু করে। সত্যের প্রতি তাদের ভালোবাসা থাকার কথা, কিন্তু সত্যকে তারা ঘৃণা করা শুরু করে। ন্যায়কে তাদের ভালোবার কথা, কিন্তু ন্যায়কে তারা ঘৃণা করা শুরু করে। সুবহানাল্লাহ! অন্তর হলো দয়ার জায়গা। কিন্তু অন্তরে যখন মোহর মেরে দেয়া হয়, তখন ‘রাহমা’ হারিয়ে যায়। এই মানুষগুলো সবচেয়ে নিষ্ঠুর কথা বলতে পারে, নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারে কারণ তাদের অন্তর মোহরাংকিত। অন্তর হলো কৃতজ্ঞতার জায়গা। কৃতজ্ঞতা আসে অন্তর থেকে। যখন অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয় তখন এই মানুষগুলোর অন্তরে কৃতজ্ঞতার কোনো অনুভূতি আর জাগ্রত হয় না। তারা কাউকে কৃতজ্ঞতা জানানোর প্রয়োজন বোধ করে না। তারা মনে করে তাদের তো সব এমনিতেই পাওয়ার কথা। অন্তর হলো ভয়ের জায়গা। যখন অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয় তখন তারা তাদের কর্মফলের কোন ভয় করে না। অন্তর হলো প্রত্যাশার জায়গা। এই মানুষগুলো হতাশ। পরকালের ব্যাপারে তাদের কোনো আশা নেই। অন্য কারো ভালোর প্রতিও তাদের কোনো আশা নেই। তারা নিজেদের জন্যেও উন্নতির কোনো আশা করে না। তারা মনে করে সবকিছুই অর্থহীন। মন যা চায় তাই করো, কারণ যাই করো না কেন জীবন তো দুর্বিষহ এমনিতেই। এটাই তাদের মানসিকতা। তারা আশাহীন মানুষ, কারণ তাদের অন্তর তালাবদ্ধ। অন্তর হলো অনুশোচনার জায়গা। যখন খারাপ...
ক্ষমা চাওয়াটা দুইভাবে হয়ে থাকে। জিহ্বার মাধ্যমে ক্ষমা চাওয়া এবং অন্তরের মাধ্যমে ক্ষমা চাওয়া। মানুষ সাধারণত নিজের পক্ষে যুক্তি দিয়ে থাকে। আমি যদি কোনো কারণে আপনার সমালোচনা করি যেমন আমি কাউকে বললাম – ”এই যে, আমি আপনাকে অমুক কথা বলতে শুনেছি। আপনি কেন এটা বলেছেন?” সে তৎক্ষণাৎ হয়তো বলে উঠবে – ”আমি এমনটা বোঝাতে চাই নি, আপনি জানেন না আমি কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি! আপনি তো পুরো ঘটনাটাই জানেন না।” সুতরাং কেউ আপনাকে যদি বলে, ভাই আমি আপনাকে এটা এটা করতে দেখেছি। আপনি সাথে সাথে নিজের পক্ষে যুক্তি দিতে শুরু করেন, আত্মরক্ষামূলক হয়ে উঠেন। بَلِ الْإِنسَانُ عَلَىٰ نَفْسِهِ بَصِيرَةٌ – وَلَوْ أَلْقَىٰ مَعَاذِيرَهُ – ﴾বরং মানুষ নিজেই তার নিজের কাজ সম্পর্কে নিজেই পূর্ণ অবগত। তবুও তারা প্রচুর অজুহাত দেখায়﴿ [সূরা কিয়ামাহঃ ১৪]। আপনি যদি আসলেই আল্লাহর ক্ষমা চান। আপনাকে নিরিবিলি একটা সময় খুঁজে নিতে হবে। যদি আরবীতে দো’আ করতে না পারেন কোনো সমস্যা নেই। আপনি শুধু পাঞ্জাবি, বাংলা, বাহাসা বা উর্দু জানেন, কোনো ব্যাপার না, আপনি আপনার নিজস্ব ভাষাতেই আল্লাহর সাথে কথা বলুন। আন্তরিকতার সাথে আপনার অপরাধগুলো স্বীকার করে নিন। কোনো অজুহাত দেখাবেন না। এইরকম করতে পারা আসলেই অনেক কঠিন। কারণ আয়নার সামনে দাঁড়িয়েও আমরা নিজের সাথে মিথ্যা বলি। নিজেকে এভাবে প্রবোধ দেই – “আমি আসলে অতো খারাপ না। আমি যা করেছি তার কারণ আছে।” যখন আপনি আল্লাহর সামনে দাঁড়াবেন, নিজের কাজের বৈধতা দেয়ার কথা ভুলে যান। কারণ যেসব অজুহাতের মাধ্যমে আপনি আপনার কাজের বৈধতা দিতে চান, তিনি ইতোমধ্যে তার সবগুলোই জানেন। আল্লাহ জানেন আপনি কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তিনি জানেন এটা কঠিন সময় ছিল, তিনি জানেন অমুক অমুক বিষয় আপনাকে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে ফেলেছিলো। ” ইয়া রব, আমি অনেক চাপের মধ্যে ছিলাম তাই মদ খেয়েছি।” তাঁকে...
– নোমান আলী খান। আমাদের অনেকেরই, আলহামদুলিল্লাহ, এখনো পিতামাতা আছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের পিতামাতাকে বাঁচিয়ে রাখুন, তাদের হেদায়াত দিন, তাদের ভুলত্রুটি মাফ করুন, তাদের হেফাজত করুন। তবে কল্পনা করুন আপনার মা প্রচন্ড অসুস্থ, এবং পিতা ইন্তেকাল করেছেন, এবং কেবল তিনিই বাকি আছেন, তাঁর বয়স অনেক, নিজে নিজে খাট থেকেই উঠতে পারেন না। এতটাই বৃদ্ধ যে কথাই বলতে পারেন না। সে বৃদ্ধা মানুষটা, একটা সময় আপনি-আমি ছিলাম অসহায়, এখন তিনি অসহায়। তিনি একদমই অসহায় অবস্থায় আছেন। এ অবস্থায় তিনি কোনোভাবে আপনার সাথে যোগাযোগ করলেন। ১০০ টাকা ধার নিলেন, বললেন “দিয়ে দিবো শীঘ্রই। জানি না কবে পারবো, তবে দিয়ে দিবো। ওয়াদা করলাম।” যখন তিনি এটা বললেন, আপনার কেমন অনুভূতি হবে? আপনার অনুভূতি হবে, আমার অনুভূতি হবে, যে ইনি আমার মা। কেন আমি জানলাম না যে আপনার কিছু একটা দরকার ছিলো, আর অবস্থা এখন এমন, আপনাকে আমার কাছে চাইতে হচ্ছে! এমনকি এমনভাবে চাচ্ছেন, যা বলে দিচ্ছেন আপনি আমাকে কি ভাবেন। আপনি আমাকে এমন ভাবেন, যে শুধু মন থেকে আপনাকে কিছু দিবে না তাই না, বরং দেয়ার পর আবার ভাবতেও থাকবো, কবে ফেরত পাবো। তিনি কি আমাকে ফেরত দিবেন, নাকি অন্য কিছু? আমার মা ভাবছেন আমি এত লোভী! আমার মা ভাবছেন আমি মনে হয় টাকা কামড়ে পড়ে থাকি! তাঁর কি দরকার, তিনি কি চান, তা যেন চিন্তাতেই নেই! আমার সবচেয়ে বড় চিন্তা নাকি কবে আমি টাকা ফেরত পাবো! কবে টাকা দিবেন তিনি! কথাটা ছেলেমেয়েদের কাছে শুনতে খুবই অপমানকর। কেন? কারণ ছেলেমেয়েদের মাথায় চিন্তা আসবে, আমার মা আমাকে কি ভাবেন? মা আমাকে লোভী ভাবেন। মা আমাকে এমন ভাবেন, যেন আমি কিছু দিবোই না, সর্বোচ্চ গেলে কিছু ধার দিবো। আবার মনে মনে সেটা ফেরতও চাইবে। এ হয়ে গেলো আপনার মা এবং তিনি আপনাকে...
— নোমান আলী খানআমি আপনাদের আগেই সতর্ক করে দিচ্ছি। আজকের বক্তব্যটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করার চেষ্টা করবো কিন্তু ৪৫ মিনিটের কমে শেষ করতে পারব বলে মনে হয় না। আগেই বলে দিচ্ছি, যেন আপনারা বিরক্ত না হয়ে পড়েন। আবারো বলছি, আমি আগেও আপনাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছিলাম কীভাবে কোন শব্দ না করে চুপি চুপি মসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে হয়। পাশের দরজাগুলো দিয়ে কেউ চলে যেতে চাইলে যেতে পারেন, আমি মাইন্ড করব না।আজ আমি ভয়ানক একটি ব্যাপার নিয়ে বক্তব্য শুরু করতে চাই। আমাদের ধর্ম হল সত্য ধর্ম। আর সত্য সুখবর যেমন প্রদান করে তেমনি সাবধানবাণীও প্রদান করে। আমাদের সকল নবী রাসূলদের বিশেষত রাসূলুল্লাহ (স) কে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা বর্ণনা করেছেন “মুবাসশিরান ওয়া নাজিরান” হিসেবে। সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী। যদি কাউকে শুধু সুসংবাদ প্রদান করেন তাহলে সে সাবধানবাণীর কথা ভুলে যাবে। আর যদি শুধু সতর্ক করতে থাকেন তাহলে সে এতোই হতাশ হয়ে পড়ে যে মনে করে ভালো খবর বলতে কিছু নেই। বুঝতে পারছেন?আমি চেষ্টা করেছি এই ভারসাম্য রক্ষা করার। যেহেতু, এই মাসটি প্রত্যাশার মাস তাই আমি সুসংবাদের উপর একটু বেশি জোর দিয়েছি। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লার প্রতি আমাদের আশা এবং ভালবাসা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু, একই সময়ে এর মাঝে একটা ভারসাম্য থাকতে হবে। যদিও আজকের বক্তব্যের শেষ অংশে আশার খবর রয়েছে, কিন্তু শুরু করছি এমন একটা জায়গা থেকে যা অতটা আশাব্যঞ্জক নয়।দেখুন, আমাদের পূর্বের জাতি বনী ইসরাইলকে আল্লাহ বই দান করেছেন। আমাদের যেমন কুরআন রয়েছে তাদেরকেও অন্য কিতাব দেওয়া হয়েছিল। কুরআন যাকে বর্ণনা করেছে অন্য কুরআন হিসেবে, অর্থাৎ আগের কিতাব। তারা তাদের কিতাবকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেনি। তাদের মাঝে বেশ কিছু বিভ্রান্তিমূলক ধারণা গড়ে উঠে – ‘আমরা যদিও এতো ভালো মুসলমান নই, সমস্যা নেই, আল্লাহ যদি আমাদের দোজখে ফেলেনও- সবচেয়ে...
নোমান আলী খান আমি তোমাদের ছোট একটি উপমা দিতে চাই, যা তোমাদের এই বিষয়টি বুঝতে সাহায্য করবে যে, কুরআনে কেন কোনো কোনো মানুষের অন্তরে সিল মেরে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তোমাদের অনেকেই ব্যায়াম করার সাথে পরিচিত। মনে করো, কেউ একজন এক্সিডেন্টের কবলে পড়লো এবং হাসপাতালে ভর্তি হলো। তাকে ছয় মাস যাবৎ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে হলো। সে ছয় মাস থেকে এক বছর যাবৎ পা নাড়াতে পারেনি। শেষে, যখন সে উঠতে যাবে সে কি তার পা ব্যবহার করতে পারবে? না। সম্ভবত, সে উল্টে পড়ে যাবে। আমাদের মাংসপেশিগুলো যদি ব্যবহার করা না হয়, যদি এগুলোর অনুশীলন করা না হয়, তাহলে এগুলো কাজ করার শক্তি হারিয়ে ফেলতে থাকে। যেমন, তুমি যদি পাঁচ বছর যাবৎ তোমার চোখ বন্ধ করে রাখো, সম্ভবত চোখের জ্যোতি হারিয়ে ফেলবে। বুঝতে পারছো? হেদায়াত গ্রহণ করার সামর্থ, নিরপেক্ষভাবে কোনো কিছু চিন্তা-ভাবনা করার সামর্থ হলো আল্লাহর দেওয়া মাসল, আধ্যাত্মিক পেশী, বুদ্ধিবৃত্তিক পেশী। নবী করিম (স) এর সময়কালে মানুষকে এই পেশীগুলোর অনুশীলন করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা অস্বীকার করে। যখন সত্য তাদের নিকট এসেছিলো তারা সত্যকে গ্রহণ করার এবং গুরুত্বের সাথে একে বিবেচনা করার সামর্থ অনুশীলন করতে অস্বীকার করে। এখন, তুমি যদি এভাবে প্রতিনিয়ত তোমার এই সামর্থ অনুশীলন করতে অস্বীকার করো…. তুমি চিন্তা করতে অস্বীকার কর, তুমি তোমার অন্তর ব্যবহার করতে অস্বীকার কর, তুমি আন্তরিক হতে অস্বীকার কর, তাহলে কী হবে ভাবতে পারো? পরিশেষে, তোমার অন্তর শুরুতে যে কাজ করার সামর্থ রাখতো সেই সামর্থ হারিয়ে ফেলবে। তুমি সেই পেশী হারিয়ে ফেলেছো। সেই সামর্থ হারিয়ে ফেলেছো। এই উপমার মাধ্যমে আমরা অন্তর মোহরাংকিত হওয়ার মানে উপলব্ধির একটি চেষ্টা করলাম মাত্র। ব্যাপারটা এমন নয় যে, তাদের একটি বিলিফ সিস্টেম রয়েছে এবং সেটাতে সিল মেরে দেওয়া হয়েছে। একজন ব্যক্তি নাস্তিক হতে পারে বিভিন্ন কারণে,...
– নোমান আলী খান নামাজ আদায় করাকে আমরা বলি ‘ইকামাতুস সালাহ।’ ‘ইকামা’ শব্দের অর্থ হলো দাঁড়ানো। আর যখন আপনি দাঁড়ান আপনি এদিক ওদিক হেলে পড়েন না। বর্তমানে, পৃথিবীর সামাজিক মূল্যবোধে রয়েছে ‘ইওয়াজ বা বক্রতা।’ কিন্তু, এই কিতাবটি অনড় অটল, আর এটা আপনাকেও অনড় করে তোলে। এটা সোজা দাঁড়িয়ে থাকে, এর মূল্যবোধে সামান্যতম নড়াচড়াও পরিলক্ষিত হয় না। এখন, আল্লাহ আমাদেরকে এই ইস্পাত কঠিন মূল্যবোধগুলো দেয়ার পর আমরা কী করলাম? আল্লাহ বলেন – فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ – ১৯:৫৯ ”অতঃপর তাদের পরে এল অপদার্থ পরবর্তীরা। তারা নামায নষ্ট করল ….” তারা নামাজ নষ্ট করলো। আর যখন আপনি নামাজ নষ্ট করেন – নামাজের সাথে যে নৈতিক মূল্যবোধগুলো আপনি পেয়েছিলেন সবগুলো তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে। যখন আপনি নামাজ ছেড়ে দেন তখন এটাই ঘটে। এরপর কী হয়? وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ – ”এবং তারা কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। আজ আমরা কোন পৃথিবীতে বসবাস করছি? ভোগবাদী যে বিশ্বে আজ আমরা বসবাস করছি তার নিকট চূড়ান্ত নৈতিকতা মানে হলো – ”তোমার কামনা বাসনার অনুবর্তী হও, তোমার মন যা চায় তাই করো।” জাস্ট ডু ইট, শব্দগুলো পরিচিত মনে হয়? আমার নিজের কাছে যদি এটা সঠিক মনে হয় তার মানে এটা সঠিক। …আমরা অফিসিয়ালি এমন এক জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছি যারা وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। প্রথম পতন কোনটি ছিল? নামাজ। এরপরের আরও জঘন্য পতন হল, فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا (Then they will fall into deviation) غَي এর আক্ষরিক অর্থ হল, deviation বিচ্যুতি, নৈতিক অধঃপতন। অর্থাৎ, তাদের মূল্যবোধের ক্রমান্বয়ে অধঃপতন ঘটবে। অনৈতিকতার এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে ক্রমান্বয়ে নামতে থাকবে। আর এরপর তাদের চূড়ান্ত পতন হবে জাহান্নামে। আর তাই এই আয়াতের তাফসিরে বলা হয় – امطرت السماء نباتا – “আকাশ শাকসবজি বর্ষণ করেছে।” আকাশ শাকসবজি বর্ষণ করে না, আকাশ থেকে...
●|●নোমান আলী খান ●|● কিছু লোক খুবই দুর্দশাগ্রস্থ জীবনযাপন করে কারণ তারা তাদের রাগ দূর করতে পারে না। তাদের ভেতর থেকে কোন কিছু তাদেরকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে অথচ তারা তার বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারছে না। ধীরে ধীরে তারা এটা মেনে নিচ্ছে যে “আমি আমার রাগ দূর করতে পারবো না এবং আমি নিশ্চিত আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন না কারণ আমি অনেক রাগী। আমি কাউকে মাফ করতে পারি না।” সাহাবীরা হুদাইবিয়ার সন্ধি নিয়ে অনেক রাগান্বিত ছিলেন কিন্তু আল্লাহ রাগ দূর করা নিয়ে কি বলেছেন? “ হুওয়াল্লাযী য় আনযালাস সাকীনাতা ফী কুলূবিল্ মুমিনীনা” (৪৮ঃ৪)- তিনিই মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করেছিলেন । তিনি মুমিনদের অন্তরে শান্তি, ধৈর্য, প্রশান্তি নাযিল করেছিলেন আকাশ থেকে। ধৈর্যশীলতা নিজ থেকে আসে না আর আমরা নিজেদের ধৈর্যশীল বানাতে পারি না। মূসা আ. এর মা চিন্তায়, ভয়ে মৃতপ্রায় ছিলেন যখন তিনি তার বাচ্চাকে পানিতে ভাসিয়ে দিচ্ছিলেন। আল্লাহ বলেন, “লাওলা আর রাবাতনা আলা ক্বালবিহা…”(২৮ঃ১০)- আমরা কি তাঁর হৃদয়কে দৃঢ় করিনি ও তাকে শক্ত রাখিনি? আল্লাহ তার অন্তরকে দৃঢ় করে দেন যার সাধ্য তাঁর ছিলো না। তিনি এটা নিয়ে ভয়ে ছিলেন, মানসিক অশান্তিতে ছিলেন। ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ আপনাকে সাহায্য করে শান্ত হতে। কিছু লোক পাপ করে, নেশা করে, অশ্লীলতার প্রতি প্রলুব্ধ থাকে, অত্যাধিক রাগী হয় যে তারা তাদের রাগ সংবরণ করতে পারে না। কিছু লোক অতি লোভী, যারা সারাদিন টাকা নিয়ে ভাবে তারাও নিজেদের সাহায্য করতে পারে না। এই সকল সমস্যার সমাধান আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। এসব কারণেই আল্লাহ আকাশের দরজা দেন। আকাশের দরজা খুলে যায় এবং আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এটা আপনাকে পবিত্র করে দেয় যেমনভাবে পানি পৃথিবীকে পবিত্র করে। আল্লাহ বলেন, “ইয়ুমদিদ কুম বি আমওয়ালিন ওয়াবানিন” (৭১ঃ১২)- তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, “ওয়াজা...
— নোমান আলী খান ভাইদের ষড়যন্ত্রের কারণে দাস হিসেবে ইউসুফ (আ) বিক্রিত হন। ফলে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোনো সুযোগ পাননি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আপনাকে সার্টিফিকেট দেয়, অনেকাংশেই বাস্তব দুনিয়ার পরিবর্তিত কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা দেয় না। ফলে, এই তত্ত্বীয় সার্টিফিকেটও আপনার কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগে না অনেক ক্ষেত্রে। কারণ, এটা আপনার কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনমাফিক বাস্তব শিক্ষা দেয়নি। ইউসুফ (আ) ছিলেন মন্ত্রীর বাড়িতে। এটা প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষাকেন্দ্র না, অভিজ্ঞতার কেন্দ্র। তাই, তিনি সার্টিফিকেটকে কেন্দ্র আগান নাই জীবনে। তিনি বরং বাস্তবিক কর্মক্ষেত্র দেখে শিখেছেন মন্ত্রীর কাছ থেকে। মন্ত্রীর আস্থাভাজন ও প্রিয়ভাজন হওয়ার কারণে তিনি মন্ত্রীর কাজ দেখাশোনা করতেন। ফলে, মন্ত্রী যে বড় বড় লোকেদের সাথে কথাবার্তা বলতেন, কাজ নিয়ে দেনদরবার করতেন, আলাপ করতেন, সমস্যা নিয়ে কথা বলে সমাধান দিতেন – এসবই তিনি লক্ষ্য করতেন ও শিখতেন। এরপর তিনি আরেক বড় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে জেলে চলে যান। এখানে তিনি আল্লাহর দ্বীন প্রচার করতেন থাকেন। এমন অবস্থায় বাদশাহ খারাপ স্বপ্ন দেখেন। কেউ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে পারে না। ইউসুফ (আ) কে আল্লাহ এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা ও প্রজ্ঞা দিয়েছিলেন। ইউসুফ (আ) স্বপ্নের ব্যাখ্যা করে ছাড়া পান। ছাড়া পেয়ে তিনি অর্থমন্ত্রীর পদ তাকে দেওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি সেটা পান। রাজার স্বপ্নের ব্যাখা ছিলো আসন্ন ৭ বছরব্যাপী দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে। ৭ বছর ভালো ফলন হবে, এরপরের ৭ বছর দুর্ভিক্ষ হবে। টানা ৭ বছর দুর্ভিক্ষ মানে মিশর একদম শেষ হয়ে যাবে। না খেয়ে তো ৭ দিনও থাকা যায় না, আবার ৭ বছর! মানে বিরাট বিপদ, একটা জাতি পৃথিবীতে থেকে উজাড় হয়ে যাবে এই অবস্থার কারণে। ইউসুফ (আ) অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন কেন? কারণ তার এই বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা রয়েছে। প্রজ্ঞা(হিকমাহ) হলো সেই জ্ঞান যা বাস্তব অভিজ্ঞতা ও কল্যাণ দেয়; এটা সার্টিফিকেট বা তত্ত্বীয় কোনো জ্ঞান নয়। তো, মিশরে ঐ সময়ে যত ফসল হতো...
— উস্তাদ নোমান আলী খান কুরআন তেলাওয়াতে পারদর্শী নয় এইরকম একজন যুবক ভাই একদিন আমাকে একটা প্রশ্ন করেছিলেন। প্রশ্নটা ছিল এইরকম – ‘আমি সবসময় ভালো করে কুরআন পড়ার চেষ্টা করি কিন্তু এত চেষ্টা করার পরও আমি শুদ্ধ করে পড়তে পারি না’। যুবকের কথা শুনে মনে হচ্ছিল সে খুবই আবেগী প্রকৃতির মানুষ। একদিন সে রেডিও তে কোন এক প্রোগ্রামে একটা ছোট বাচ্চার কুরআন তেলাওয়াত শুনছিল। সেই বাচ্চাটা এত সুন্দর করে পড়ছিল যে ওই প্রোগ্রাম এর শিক্ষক বলছিলেন, ‘সুবহানআল্লাহ! তোমার নফ্স, তোমার মন খুব পবিত্র। তুমি খুব পবিত্র। আর এই কারণে আল্লাহ তোমাকে এত সহজে, এত সুন্দর করে তেলাওয়াত করার ক্ষমতা দিয়েছেন’। তো এই কথা শুনে ওই যুবক চিন্তায় পড়ে গেল এবং ভাবতে লাগলো – আমি মনে হয় ভালো মানুষ না, এজন্যে আমি ভালো করে কুরআন পড়তে পারি না, আমার আত্মা পবিত্র না। এসব ভেবে সে মানসিকভাবে কষ্ট পেতে লাগলো। যদিও আমি নিশ্চিত ওই রেডিও প্রোগ্রামের শিক্ষক এইরকম কিছু বোঝাতে চান নি, তিনি নিছক সেই বাচ্চা ছেলেকে উংসাহ দেয়ার জন্য এইরকম কিছু বলেছিলেন। এই প্রেক্ষিতে আসুন আমরা একটা হাদিস দেখি, রাসুল (স) বলেছেন ‘কুরআন তেলাওয়াতে পারদর্শী ব্যক্তিরা উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। কিন্তু যারা উচ্চারণগত বা অন্য কোন সমস্যা থাকা সত্বেও কষ্ট করে পড়ার চেষ্টা করে, তারা এর দ্বিগুন পুরস্কার পাবে। (সহি মুসলিম)’ এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঐসব লোক কাদের তুলনায় এই দ্বিগুন পুরস্কার পাবে? সাধারণ তেলাওয়াতকারীদের তুলনায়? নাকি তেলাওয়াতে পারদর্শিদের তুলনায়? আমার মতে তেলাওয়াতে পারদর্শীদের তুলনায় এই দ্বিগুন পুরস্কার দেয়া হবে। কারণ একজন মানুষ কতটুকু অর্জন করলো আল্লাহ সেটাকে গুরুত্ব দেন না, আল্লাহ গুরত্ব দেন সে কী পরিমান চেষ্টা করলো সেটাকে। আমরা মানুষরাই অর্জনকে বেশি গুরুত্ব দেই, সবসময় দেখতে চাই ফলাফল কি, লাভ কতটুকু হলো? আমরা কতটুকু জানি, কতটুকু মুখস্ত...