চলুন, সূরা হুজুরাত সম্পর্কে জানি

আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শাইতানের কাছ থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ – ৪৯:১ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহ মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। চলুন, কুরআনের ৪৯ তম সুরা হুজুরাত সম্পর্কে কিছু জানার চেষ্টা করি। বলা যায় যে এই সুন্দর সুরাটি তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়, প্রথম ভাগটি শুধু এবং শুধুমাত্র একটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছে, আর তা হলো আমাদের কী পরিমাণ শ্রদ্ধা, সম্মান, বিশ্বস্ততা, আনুগত্য প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি আমাদের দেখানোর কথা। উনার সামনে আমাদের গলার স্বর উঁচু করার কথা না, এমনকি উনি যখন কথা বলেন সেই সময় আমাদের কথা না বলাই উচিত, এবং এই ধরনের একটি বর্ননা এই আয়াতের সাথে জড়িত আছে। যেখানে উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) এবং আবু বকর (রাঃ) নবীজির সামনে কোন এক বিষয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন, সেই সময়ে আয়াত নাজিল হল – রাসুলুল্লাহর সামনে তোমরা উঁচু আওয়াজে কথা বলবে না। আর এই বিষয়ের গুরুত্ব… এই প্রথম অংশেই একটি চমৎকার বিপরীতমুখী বিষয় তুলে ধরা হয়েছে যা কুরআনের আর কোথাও পাওয়া যায় না। একদিকে উনি হলেন রাসুল, তাই উনি যখন কথা বলবেন, সেটা একধরনের ওহি, তাই আপনাকে কোন প্রশ্ন না করে সেটা বিনয়ের সাথে গ্রহণ করতে হবে, কে বলছে শুধু সেটা ভেবেই। কিন্তু সাথে সাথে এটাও মনে রাখতে হবে যে অহির প্রতি সম্মানের আরেকটি অংশ রয়েছে যা এর বিপরীত, সেটা হচ্ছে যদি কোন খারাপ ব্যক্তি আপনার কাছে কোন খবর নিয়ে আসে, অথবা কেউ যদি কোন মিথ্যা, দুর্নাম বা কারো মানহানিকর কিছুর খবর নিয়ে আসে তাহলে সেটা যাচাই করতে হবে। সমসাময়িক ভাবে দুইটা জিনিসই চলবে। একদিকে যেমন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যা বলেছেন তা গ্রহণ করতে হবে পুরোপুরি,...

এ রিয়ালিটি চেক ফ্রম সূরা আল-ক্বিয়ামাহ – ১ম পর্ব

শেষ যে দুইটা আলোচনা আমরা শুনেছি তা ছিল অসাধারণ অনুপ্রেরণার। আজ আমি সেরকম কোনো বক্তব্য পেশ করতে যাচ্ছি না। শুরু করার পূর্বে আপনাদের কিছুটা মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নিতে চাই। এখন আমি আপনাদের সাথে যা শেয়ার করতে যাচ্ছি….আমি মনে করি এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে বর্তমান সভ্যতার কিছুটা পটভূমি মুসলমানদের জানা থাকা উচিত। আমি এমন কিছু নিয়ে কথা বলবো যা বুঝতে হলে অনেক মগজ খাটাতে হবে। আপনারা সারাদিন ধরে এখানে বসে আছেন, মানসিকভাবে অনেকটা ক্লান্ত … তাই দোয়া করুন যেন আমি পরিষ্কারভাবে ধারণাগুলো আপনাদের নিকট উপস্থাপন করতে পারি এবং আপনারাও যেন আমার চিন্তা পদ্ধতির সাথে একাত্ম হতে পারেন। যে কারণে আমি এই ভূমিকাটা দিচ্ছি তা হলো, যখন আপনাদের কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবো …. এভাবেই আমি শিক্ষা দিয়ে থাকি, আমি শুধু প্রশ্ন করার নিমিত্তে কোনো প্রশ্ন করি না, যখন আমি কোনো কিছু জানতে চাইবো আশা করি আপনারা জোর আওয়াজে তার জবাব দিবেন। এর ফলে আমি বুঝতে পারবো, আপনারা জীবিত আছেন। একমাত্র এভাবেই আমি বুঝতে পারবো আপনারা এখনো নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। তাই বক্তব্য চলা অবস্থায় আমি আপনাদের নিকট অনেকবার বিভিন্ন প্রশ্ন করবো…আপনারা জবাব দিলেই কেবল আমি আলোচনা সুন্দরভাবে চালিয়ে যেতে পারবো। আমি আশা করছি, আধা ঘন্টার মধ্যে আলোচনা শেষ করতে পারবো। যদি না পারি ….তবে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ। আজ আমরা ইসলামের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা শুনেছি, আমরা রাসূল (স) সিরাহ নিয়েও আলোচনা শুনেছি। কিন্তু আমি আলোচনা শুরু করতে চাই ইউরোপের ইতিহাস নিয়ে, ইনশাল্লাহ। ইউরোপের কিছু ইতিহাস নিয়ে। আমাদের সময়ের সমস্যাগুলো উপলব্ধি করার জন্য এই প্রেক্ষাপট জানা জরুরি। আমি আপনাদের সে সময়ের ইউরোপে নিয়ে যাচ্ছি যখন চার্চের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে একটা বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিলো। আপনারা যদি এটা না জেনে থাকেন ….তার সারমর্ম হলো – তখনকার ইউরোপ ছিল একটি ধর্মীয় সমাজ, আর সমাজের উপর চার্চের ছিল...

এক ধনী মহিলার গল্প

একবার এক ধনী মুসলিম মহিলার সাথে আমার আজব এক কথোপকথন হয়েছিল। আমেরিকার একটি অঙ্গরাজ্যে যার নাম আমি বলবো না, একটি প্রোগ্রামে আলোচনার পর আমাকে রাতের খাবার খেতে এক বাসায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। আর সেটি ছিল ১৫ হাজার বর্গ ফুটের বিশাল এক প্রাসাদ। আমি গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করার সময় বাড়ির সৌন্দর্য দেখে মনে মনে ভাবতে লাগলাম, কে এই এল-ক্যাপনের (আমেরিকার এক বিখ্যাত গ্যাংষ্টার) বাড়িতে বাস করে!!! তারপর আমরা ম্যানশনে প্রবেশ করলাম। আমাদেরকে ডিনার পরিবেশন করা হয়েছিল কিং আর্থারের টেবিলের মত প্রকান্ড এক টেবিলে। সম্ভবত টেবিলের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে কথা পৌঁছাতে হলে মাইক্রোফোনের প্রয়োজন হবে, এত লম্বা এক টেবিল! যাইহোক, আমরা সবাই এক পাশে বসে খাবার খেলাম। তারপর কথা-বার্তা বলতে লাগলাম। বাড়ির কর্তী বললো – “আমার একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন আছে।” আমি বললাম – “ঠিকাছে, বলুন।” তিনি বললেন – “না, আমি সবার সামনে এটা বলতে পারবো না।” তখন আমি অন্য সবাইকে বললাম – “আপনারা টেবিলের অপর প্রান্তে গিয়ে বসুন, (যার অবস্থান ভিন্ন আরেকটি জিপ কোডে 🙂 ) যেন আমি তার সাথে কথা বলতে পারি।” সবাই দূরে গিয়ে বসলো। তারপর ঐ মহিলা বললেন – “আমি জানি, আমাদের সবাইকে মরতে হবে, এবং কিয়ামতের দিন উঠতে হবে….কিন্তু আমি এই বাড়ি ছেড়ে যেতে চাই না।” তাদের লিভিং রুমের আয়তন হবে এই মসজিদের আয়তনের মত। পেছনে রয়েছে কৃত্রিম ঝর্ণা, প্রায় সব ওয়ালে গ্লাস লাগানো। তাদের বাসার ভেতরের সিঁড়িটি ছিল অসম্ভব সুন্দর মার্বেল পাথরে ঝড়ানো, দেখে মনে হয় যেন উপর থেকে সিল্ক গড়িয়ে পড়ছে। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি এটা আসলে কী? পরে বুঝতে পেরে চমৎকৃত হয়ে গেলাম। তারা আমাকে জানালো, বাড়িতে ২৭ টি বেড রুম রয়েছে। আমি ভাবলাম – ঘুমান তো এক রুমে, বাকিগুলো দিয়ে কী করেন। কিন্তু ঐ মহিলা ম্যানসনটি নিয়ে এতো বেশি আচ্ছন্ন এবং সম্মোহিত…. প্রতিটি...

ধার্মিক ব্যক্তি যখন পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ে

খুৎবায় আলোচিত আয়াতসমূহ:  “আর আপনি তাদেরকে শুনিয়ে দিন, সে লোকের অবস্থা, যাকে আমি নিজের নিদর্শনসমূহ দান করেছিলাম, অথচ সে তা পরিহার করে বেরিয়ে গেছে। আর তার পেছনে লেগেছে শয়তান, ফলে সে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়েছে। আর আমি ইচ্ছা করলে উক্ত নিদর্শনাবলীর মাধ্যমে তাকে অবশ্যই উচ্চ মর্যাদা দিতাম, কিন্তু সে পৃথিবীর প্রতি ঝুঁকে পড়েছে এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে কুকুরের মত। যদি তার উপর বোঝা চাপিয়ে দাও তাহলে সে জিহবা বের করে হাঁপাবে অথবা যদি তাকে ছেড়ে দাও তাহলেও সে জিহবা বের করে হাঁপাবে। এটি হচ্ছে সে কওমের দৃষ্টান্ত যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে। অতএব তুমি কাহিনী বর্ণনা কর, যাতে তারা চিন্তা করে। তাদের উদাহরণ অতি নিকৃষ্ট, যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার আয়াত সমূহকে এবং তারা নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করেছে।” সূরা আ’রাফ, আয়াত ১৭৫ –...

অন্তর এবং বুদ্ধির সম্পর্ক

আমাদের ধর্মের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাঠ হলো অন্তর এবং বুদ্ধির সম্পর্ক। যখন আল্লাহ বলেন – ‘লাআল্লাকুম তা’কিলুন’, যেন তোমরা চিন্তা করতে পারো’… তিনি এখানে ‘আকল’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। ‘আকল’ এর অবস্থান আপনার মস্তিষ্কে। আরবিতে ‘আকালা’ শব্দের অর্থ হলো – বুঝতে পারা। এর আরেকটি অর্থ হলো – কোনো কিছু বাঁধা। তাহলে ‘আকালা’ দ্বারা দুইটি বিষয় বোঝায় – বুঝতে পারা এবং কোনো কিছুকে শৃঙ্খলিত করা। যখন আমরা কোনো কারণে মানসিকভাবে অভিভূত হয়ে পড়ি, আমরা ভালোভাবে চিন্তা করতে পারি না। যদি আপনি অতিমাত্রায় রাগান্বিত হয়ে পড়েন, আপনি চিন্তা ভাবনা ছাড়াই অনেক কিছু বলে ফেলেন। যদি কোনো কিছুতে চরম খুশি হয়ে পড়েন, তাহলেও চিন্তা ভাবনা ছাড়া কিছু একটা করে ফেলেন। যদি অতিশয় দুঃখিত হয়ে পড়েন, তখনও চিন্তা ভাবনা ছাড়া কাজ করে ফেলেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে কখনো কখনো আবেগ আপনাকে সঠিকভাবে চিন্তা ভাবনা করতে বিরত রাখে। এখন, আকল এর কাজ হলো আপনার আবেগকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যেন আপনি সঠিকভাবে চিন্তা করতে পারেন। তাই, আকল অর্থ শুধু বুঝতে পারা নয়, এর অর্থ হলো – প্রথমে আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং তারপর বুঝতে পারা। ঘৃণা, রাগ, ভয় এ ধরণের মানবীয় আবেগের প্রভাবমুক্ত হয়ে চিন্তা ভাবনা করতে পারার নামই হলো আকল। অনেক সময় দেখা যায়, আপনি যদি কাউকে ঘৃণা করেন সে সঠিক কথা বললেও আপনি তা মানতে চান না। বনী ইসরাইলের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাদের নিকট সকল প্রমান উপস্থাপন করা সত্ত্বেও তারা রাসূল (স) কে মেনে নিচ্ছিলো না। কারণ তাদের অন্তর তালাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। অহংকার তাদের ‘কলব বা অন্তর’ ঢেকে ফেলেছিলো। তাই তাদের বুদ্ধি সকল প্রমান দেখা সত্ত্বেও রাসূল (স) কে স্বীকার করেনি। “দেখো দেখো তাওরাতেও এ সম্পর্কে বলা হয়েছে…আর কুরআনে বলা হয়েছে ‘মুসাদ্দিকুল লিমা মা’আকুম, এটা তোমাদের নিকট যা নাজিল হয়েছিল তার সত্যতার সাক্ষী দিচ্ছে।’ না, আমি...