নোমান আলী খান কিছু দিন আগে,আমি আসলে একটি গির্জার সমাবেশে অংশ নিয়েছিলাম,শুধু দেখার জন্যে যে তারা আসলে কি করে।সেটা ছিল বুধবার রাতে,এবং যাজক মতামতই পাঁচ মিনিটের মতো কথা বলে।তার যা বলার প্রথমে সে তা বলে। এবং তারপরে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঘটনাটি ঘটে।তিনি সমাবেত লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এখানে কার কি সমস্যা হচ্ছে? আমাকে খলখুলি এই সম্পর্কে বলুন!” কিছু লোক বলল, “আমি সবেমাত্র আমার চাকরি হারিয়েছি। আমার কঠিন সময় পার হচ্ছে। “ “ঠিক আছে সবাই, জেফের জন্য প্রার্থনা করুন!” এবং প্রত্যেকে জেফের জন্য প্রার্থনা শুরু করে। তারপর কেউ বলল যে , “আমি সবে তালাক পেয়েছি, আমার স্ত্রী সকল সম্পদ নিয়ে নিয়েছে। “ প্রত্যেকে এই ব্যক্তির জন্য প্রার্থনা করুন… এবং তারপর এক মহিলা বলল, “আমি সবেমাত্র ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছি” এবং প্রত্যেকে তার জন্য প্রার্থনা করল। এবং কোনে বসে থাকা এক লোক বলল, “সে একটা চাকরি হারিয়েছে? আমার সাথে পরে কথা বলতে বলুন। আমার প্রতিষ্ঠানে পদ খালি আছে। “ এবং তারা শুরু যা তাদের একসাথে একতাবদ্ধ করল তা কিন্তু এটা না যে এই লোকটি ঘন্টা পড় ঘন্টা কথা বলে যাচ্ছে এবং তারা সেখানে বসে বসে শুনছে, আসলে তারা এই সমাবেশে জড়ো হয়েছিল কারণ তাদের এমন একটি জায়গা আছে যেখানে তাদের শোনার মানুষ আছে। যেখানে তারা সমর্থিত বোধ করতে পারে। রসুলুল্লাহ (ﷺ) একজন আশ্চর্য শ্রোতা ছিলেন।আমরা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে আশ্চর্য বক্তা মনে করি।হ্যাঁ অবশ্যই তিনি তা ছিলেন.তবে তিনি অবিশ্বাস্য শ্রোতাও ছিলেন। অনেক সময়, যাদের হৃদয় আপনি প্রভাবিত করতে চান, অনেক সময় আমরা চিন্তা করি যে আমরা যদি কেবল তাদের সাথে কথা বলি তবে তাদের পরিবর্তন হবে। কিন্তু আমি আপনাদের বলব যে, মানুষের সাথে কথা বলার চেয়ে জরুরি হল, আমাদের লোকের কথা শুনতে শিখতে হবে,আমাদের লোকের কথা শুনতে শিখতে হবে।আপনি কেবল উত্তর দেয়ার জন্য তাদের কথা...
যে সকল বাবা-মার দশ বছরের কম বয়সী শিশু-সন্তান রয়েছে, তাদের জন্য, তারা হাত দেখান/উঠান দয়া করে, দশ বছরের কম বয়সী শিশু-সন্তান…. ঠিক আছে, আপনারা কয়েক জনই আছেন । সুতরাং আমাদের জন্য, সবচেয়ে বড় কাজটি হচ্ছে আমাদের সন্তানদের ইসলাম শিক্ষা দেওয়া, আমাদের, সন্তানদের ইসলাম শিক্ষা দেওয়া । নবীগণ যখন দ্বীন শিক্ষা দিতেন, তারা সবাইকেই দ্বীন শিক্ষা দিতেন । কিন্তু আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল যখন (পবিত্র) কুরআনে শিশুদের ইসলাম শিক্ষার ব্যাপারে কথা বলেন, শিশুদের শেখানোর বিষয়ে, শিশুদের উপদেশ গ্রহণ করা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা খুব কমই বলেছেন । কিন্তু যখনই তিনি এ বিষয়ে কথা বলেছেন, সেটা ছিল বাবা-মার কাছ থেকে । আবার শুনুন। মহান আল্লাহ তায়ালা যখনই (পবিত্র) কুরআনে শিশুদের পথনির্দেশনা গ্রহণ করা সম্পর্কে কথা বলেছেন, সেটা সবসময় ছিল বাবা-মার কাছ থেকে এবং বাবা-মার মধ্যে, সেটা সবসময় বাবার কাছ থেকে. কারণ মাতো সেখানে সবসময়ই আছেন । বাচ্চার কাছে সবসময় থাকার জন্য মাকে অতিরিক্ত কোন কাজ করতে হয় না, বাচ্চাকে সবসময় যত্ন করা এবং তাকে সবসময় উপদেশ দেওয়া, একজন মাকে আপনার প্রশিক্ষণ দিতে হবে না যে, কিভাবে একজন মা হতে হয়, এটা তার স্বাভাবিকভাবেই আসে । আল্লাহ সেটা তাদের ভিতরেই দিয়ে দিয়েছেন । তবে বাবাদের অবস্থা অবশ্য ভয়াবহ । প্রকৃত পিতা হবার জন্য আমাদেরকে (রীতিমতো) প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হয় । এটা আমাদের (ভিতরে) স্বাভাবিকভাবে আসে না । যখন একজন মায়ের সন্তান হয়, তার অনুভূতি, তার আবেগ, সবকিছুর তখনই পরিবর্তন হয়, তাৎক্ষণাৎ পরিবর্তন হয়ে যায় । (আর) একজন বাবার ? ৩-৪ দিন চলে যাবার পর, যখন কোন বন্ধু বলে, “আরে, শুনলাম তোমার নাকি একটা বাচ্চা হয়েছে ? ” “হ্যাঁ, ভাই, এটা আমাকে এখনও নাড়া/ধাক্কা দেয়নি ” somebody needs to hit you, so it hits you. (মানে) কারো আপনাকে নাড়া/ধাক্কা দেয়া প্রয়োজন, তাহলেই সেটা...
পঞ্চম পারায় সূরাহ নিসা থেকে একটি আয়াত নিয়েছি, উনত্রিশ নম্বর আয়াত। খুবই শক্তিশালী শব্দচয়ন। ইসলামের অন্যতম বড় একটি মূলনীতি আনা হয়েছে আয়াতটিতে। “তোমরা যারা ঈমানের দাবি করো…” يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ) “… পরস্পরের টাকা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে খেয়ে ফেলো না।” কর্মক্ষেত্রে কর্মঘন্টার ব্যাপারে মিথ্যা বলবেন। যখন কার্ড পাঞ্চ করবেন, মিথ্যার আশ্রয় নিবেন না। ধরুন আপনি একজন কনসালটেন্ট। নির্দিষ্ট কিছু ঘন্টার বিনিময়ে আপনাকে টাকা দেয়া হয়। হয়তো কোনো কাজ করে, বা কিছু ঘন্টা ব্যয় করে। তো আপনি বসে বসে কফি খেলেন, মজা করলেন, আয়েশ করলেন। সেসবের জন্যেও আপনাকে টাকা দেয়া হয়। এভাবে উপার্জন করবেন না, যদি না আপনার নিয়োগকর্তা বিষয়টি জেনে থাকেন। لَّا أَنْ تَكُونَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِنْكُمْ) “… তবে ব্যবসা হয়ে থাকলে ভিন্নকথা, যে ব্যবসা পরস্পরের মধ্যে বোঝাপড়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে।” অন্যকথায়, কেউ সবসময় একশভাগ প্রোডাক্টিভ থাকতে পারে না। মানবিকভাবেই তা সম্ভব নয়। তাই, আপনার মনে হতে পারে, “আচ্ছা, ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কাজ করবো, তবে মাঝেমাঝে চল্লিশ মিনিটের ব্রেক নিবো। বসে থাকব, কথা বলব। করা যাবে?” যদি আপনার নিয়োগকর্তা জানেন আপনি তা করছেন, আর এটা তিনি মেনে নেন, তাহলে ঠিক আছে, কারণ এটা পারস্পরিক সম্মতিতেই হচ্ছে। لَّا أَنْ تَكُونَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِنْكُمْ) যদি এটা ব্যবসা হয়, পরস্পরের সম্মতিক্রমে হয়, তবে ভিন্নকথা। এ ছাড়া মানুষ থেকে জোচ্চুরি করে টাকা আদায় করবেন না। জিনিসের দাম মাত্রাতিরিক্ত ধরবেন না। আপনার কাজের জন্য মাত্রাতিরিক্ত মূল্য চাইবে না। যদি গাড়ির মেকানিক হয়ে থাকেন, আপনার দাম বাড়িয়ে দিবেন না। কারণ এই দশ মাইলের মধ্যে আপনি একাই মেকানিক। আপনি জানেন লোকটার গাড়ির ট্রান্সমিশনে সমস্যা, টাইমিং বেল্টে সমস্যা, ইঞ্জিন ফ্লুইড, আরো বিভিন্নরকম সমস্যা আছে। সে কি করবে? আপনি যদি ডাক্তার হন, মানুষের কাছে মাত্রাতিরিক্ত বিল চাইবেন না। একের পর...
— নোমান আলী খান। মানুষের মাঝে যাদের সবচেয়ে পরিপক্ক ঈমান রয়েছে কুরআনে তাদের জন্য একটি পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, আর তা হলো – উলুল আলবাব বা সবচেয়ে পরিশুদ্ধ বুদ্ধির মানুষ। আল্লাহ এই মানুষদের কথা সূরা আলে-ইমরানে বলেছেন – إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ – “নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিতে এবং রাত্র ও দিনের আবর্তনে জ্ঞানবানদের (উলুল আলবাবদের) জন্য বহু নিদর্শন আছে।” (৩:১৯০) তারা ঈমানের বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধানে এবং ঈমানের আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানে এক ধরণের পরিপক্কতায় পৌঁছে গিয়েছে, এমনকি কুরআনের সংস্পর্শে আসার পূর্বেই। সবচেয়ে পরিণত ঈমানের মানুষেরা ঐশী জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পাওয়ার পূর্বেই নিজেদের ভেতর বিশ্বাসের ভিত গড়ে তুলেছিলেন। চলুন দেখি, কীভাবে? আল্লাহ বলেন – “ইন্না ফিই খালকিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়াখতিলাফিল লাইলী ওয়ান নাহারি…” নিশ্চয়ই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টিতে এবং রাত্র ও দিনের আবর্তনে “লাআ-ইয়াতিন” অলোকিক নিদর্শন রয়েছে, শুধু একটা নয়, বহু বহু নিদর্শন রয়েছে এর প্রত্যেকটাতে। রাতের মাঝে অনেক শিক্ষা আছে, দিনের মাঝে অনেক শিক্ষা আছে, আকাশের মাঝে অনেক শিক্ষা আছে, পৃথিবীর মাঝেও অনেক শিক্ষা আছে। এর প্রত্যেকের মাঝে রয়েছে অনেক অনেক শিক্ষা। কার জন্য? উলুল আলবাব-দের জন্য। সবচেয়ে পরিশুদ্ধ বুদ্ধির মানুষদের জন্য, খাঁটি বুদ্ধিমত্তার অধিকারী মানুষদের জন্য। এখন, খাঁটি বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞা কী? আল্লাহ কিভাবে খাঁটি বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন? তিনি পরবর্তী আয়াতে “উলুল আলবাব-দের” পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন – الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ – যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে…. তাহলে উলুল আলবাবদের প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো, যারা সবসময় আল্লাহকে স্মরণ করে। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল, “ওয়া ইয়াতা ফাক্কারুনা ফিই খালিকস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ” এবং তারা আকাশ ও জমিনের সৃষ্টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে। তাহলে এখন দেখুন…...
এখন আল্লাহ কথা বলবেন আদমের সাথে। তিনি বললেন, وَيٰٓـَٔادَمُ اسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ -আদম! তুমি আর তোমার স্ত্রী বসবাস করো জান্নাতে, সাময়ীকভাবে। (7:19) উসকুন। উসকুন এসেছে সুকুন থেকে। যারা একটু একটু তাজউইদ জানেন, সুকুন করলে পুরোপুরি থেমে যেতে হয় নাকি বিরতি নিতে হয়? সুকুনের আক্ষরিক অর্থ বিরতি। শাব্দিকভাবেই এর অর্থ হলো বিরতি। আর উসকুনের বিপরীত হলো উখলুদ। উখলুদ মানে চিরকাল। উসকুন মানে স্বল্প সময়ের জন্য। আল্লাহ আগেই তো ঘোষণা দিয়েছেন, “তোমরা সবাই কোথায় যাচ্ছো? তোমরা পৃথিবীতে যাচ্ছো। কিন্তু আদম, তুমি আর তোমার স্ত্রী কয়েকদিন জান্নাতে থেকেই দেখো না। কোথায় যাবার আগে? পৃথিবীতে যাবার আগে। কিন্তু কেনই বা তারা…? যেন আপনি সাধারণ এপার্টমেন্ট পেয়েছেন, কিন্তু তাতে যাবার আগে ফাইভ স্টার হোটেলে এক সপ্তাহ থেকে আসুন। এক্সেকিউটিভ লাউঞ্জে। ফ্রি খাবার সহ। কেন সেখানে আগে থাকতে হবে? কেন? কারণ তিনি চাচ্ছিলেন যেন প্রথম মানুষটি দেখে নেয় চিরকালের জন্য তার সন্তানরা কী অর্জন করতে যাচ্ছে। তিনি চাচ্ছিলেন যেন সে জান্নাতের একটি ভালো ধারণা পেয়ে নিজের সন্তানদের সেটার প্রতি উৎসাহ দিতে পারে। আর সেই উৎসাহ চলতেই থাকবে। বুঝতে পারছেন? তাই তিনি বলছেন, কিছু সময়ের জন্য চাই এখানে থাকো। তুমি আর তোমার স্ত্রী। অন্যদিকে, আদমকে সৃষ্টি করা হলো, কিন্তু স্ত্রীর তো কোন উল্লেখ ছিল না তাই না? স্ত্রীর কোন উল্লেখই ছিল না এতোক্ষণ। হঠাৎ করেই আল্লাহ বলছেন, “তুমি আর তোমার স্ত্রী”। এই স্ত্রী কোত্থেকে এলো? এটার কারণ বর্ণনায় কিছু মুফাসসিরুনের মন্তব্য আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। তারা বলেন, বিয়ে ছাড়া জান্নাত ঠিক জান্নাত হয় না। প্রথমবার পড়ে খুব হেসেছিলাম। খুব সুন্দর কোথাও বেড়াতে গেলেন। পৃথিবীতে খুব সুন্দর কিছু স্থান আছে। সেই সুন্দর স্থানে গেলেন, একা। নিজের হোটেল রুমে আছেন। ঘুম থেকে উঠে ভাবছেন, “স্থান পরিদর্শনে যাবো, পর্বত দেখবো”। একা! আপনার কি যাবার আর ইচ্ছে হচ্ছে? না।...
আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, তা দ্বারা যমীনকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন। নিশ্চয় এতে মনোযোগ দিয়ে শ্রবণকারীদের জন্যে রয়েছে নিদর্শন। [নাহল: ৬৫] এখানে আসলে বৃষ্টির কথা বলা মুখ্য উদ্দেশ্য না৷ উদ্দেশ্য পূর্বের আয়াত। আগের আয়াতে যা বলা হয়েছে তা হচ্ছে: আমি আপনার প্রতি এ জন্যেই কিতাব নাযিল করেছি। (নাযিলের উদ্দেশ্য) যাতে আপনি সরল পথ প্রদর্শনের জন্যে তাদেরকে পরিষ্কার বর্ণনা করে দেন (ঐসব বিষয়ে) যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছে এবং(এই কিতাব) ঈমানদারকে হেদায়াত ও তাদের জন্যে ক্ষমা (নিয়ে আসবে)। [সূরা নাহল: ৬৪] পূর্বের আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ তা’আলা আসমান থেকে কিতাব নাযিল করেন। পরের আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। সুতরাং আপনি যদি পৃথিবীতে আল্লাহর কিতাবের গুরুত্ব বুঝতে চান, তাহলে আপনাকে পৃথিবীতে পানির ভূমিকা বুঝতে হবে। বলুন তো পানির কাজ কী? পানি পৃথিবীতে জীবন তৈরি করে৷ পৃথিবীতে জীবন ধারণের জন্য পানি অপরিহার্য। ঠিক তেমনি জগতের যেসব জায়গা নীতি-নৈতিকতার দিক থেকে মৃত, সেখানে আল্লাহর কিতাবের শিক্ষা অনিবার্য৷ আধ্যাত্মিকভাবে মৃত জগতকে জাগাতে চাই কুর’আনের শিক্ষা৷ হাজার বছরের মৃতপুরীকে জাগিয়ে তুলতে পারে পানি৷ পৃথিবীর রাজনৈতিক অবস্থা যতই খারাপ হোক না কেন, পৃথিবীর নৈতিক অবস্থা যতই খারাপ হোক না কেন, দিন রাতে যেকোনো অবস্থাতেই মিডিয়া যতই খারাপ হোক না কেন, মুসলিমরা যতই নীচে নামুক না কেন — এই কিতাব (মহিমান্বিত কুর’আন) সেই মৃত লোকদের মধ্যে জীবন আনার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু পানি যখন বর্ষিত হয় তখন দুই ধরনের উদ্ভিদ জন্মায় পানি বর্ষণের ফলে। এক ধরনের উদ্ভিদ যা নিজে নিজে জন্মায়। আরেক ধরনের উদ্ভিদ হচ্ছে ফসল৷ এর জন্য শ্রম দিতে হয়৷ পৃথিবীতে কি এমন লোক নেই যাদেরকে কোনো প্রকার সরাসরি দাওয়াত ছাড়া ইসলাম গ্রহণ করেছে? অনেকে করেছে। যাদের সাথে কোনো অবস্থাতেই আমার দেখা হয়নি। আমি শুধু একটি ইউটিউব ভিডিও তৈরি করেছি...
—নোমান আলী খান গুনাহ বা মন্দ কাজগুলো আমাদের হতাশ করে দেয়। এগুলো এমন অনুভুতি আনে যে— “আল্লাহ তো আর আমাকে ক্ষমা করবে না। আমার অবস্থা তো খুব খারাপ। ক্ষমা চাবার অর্থটাই বা আর কি? আমি কী করছি জানেন? আমি কি কি কাজ করি সেগুলো জানেন? আপনি না জানলেই ভালো ভাই। আমি খুব খারাপ।” ভাবছেন, এই সময়ে এসে ক্ষমা চাবার মানেটাই বা কি? আর আল্লাহ জানেন এই চিন্তাগুলো ওসব মন্দ কাজের থেকেই উৎপন্ন হয়। আবার কেউ বলে, “ক্ষমা চাওয়া নিয়ে আমি আর ভাবতে পারবো না। আসলে যারা ভালো মানুষ তারা তো ইস্তিগফার ইত্যাদি করে। আমি তো অনেক খারাপ কাজের মধ্যে জড়িত। তাছাড়া এসব থেকে দূরে থাকবো সেটাও আপাতত হচ্ছে না।” আল্লাহ বলছেন—لَا تَقۡنَطُوۡا مِنۡ رَّحۡمَۃِ اللّٰهِ নিজেদের আলাদা করে ফেলো না। আশাহত হয়ো না। আল্লাহর রহমত থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলো না। আল্লাহ্র ভালোবাসা, যত্ন আর ক্ষমা থেকে একেবারেই আশাহীন হয়ে যেয়ো না। আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসা বন্ধ করেননি, তোমার খেয়াল রাখাও বন্ধ করেননি। এমন কখনোই না যে আল্লাহ তোমার প্রতি ক্ষমা দেখাতে আর আগ্রহী নন। এমন কিছুই না। আপনি নিজেকে বলেন, “আল্লাহ মনে হয় আমাকে শাস্তি দিতেই চান।” না! এটা আপনার ধারণা! আল্লাহ বলেননি, আপনিই বলছেন। আল্লাহ কুরআনে কখনোই বলেন না যে আপনাকে শাস্তি দিতে চান। বরং তিনি উল্টোটাই বলেন। مَّا يَفْعَلُ اللَّهُ بِعَذَابِكُمْ আপনাকে শাস্তি দিয়ে আল্লাহ্র কি লাভ? তিনি কেন শাস্তি দেবেন আপনাকে? হুবুহু এটাই বলছেন আল্লাহ! আল্লাহ আযযা ওয়াজাল এই আয়াতে বলছেন, إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا – দয়া করে খোলা কানে এই আয়াতগুলো শুনুন। নিজের জন্যে আর আপনার পরিবারের জন্যে হলেও। “আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন সমস্ত গুনাহ, সব একত্রেই।” এটা কুরআনের একটি মিরাকল, কুরআনে সবচাইতে বড় উপহারগুলোর একটি যে আল্লাহ বলছেন যুনুব, তিনি সায়্যিআত বলেননি। কারণ...
– নোমান আলী খান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এরশাদ করেনঃ اِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ جَزُوۡعًا ۙ “সে(মানুষ)বিপদগ্রস্থ হলে হা-হুতাশ করতে থাকে।” (৭০ : ২০) অর্থাৎ, যখন মানুষ ব্যর্থ হয় কিংবা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তারা খুব তাড়াতাড়ি অধৈর্য হয়ে পড়ে আর হতাশায় ভেঙ্গে পড়ে। এমনকি আল্লাহর নির্দেশ না মেনে পাপ কাজে লিপ্ত হয় বা অসংযত আচরণ করে। এখানে ‘জুজুয়া’(جَزُوۡعًا)শব্দটি ‘সবর’(صَبْر)এর বিপরীত। মূলতঃ এটি দ্বারা মানুষের মনের অসহনশীল প্রকৃতিকেই তুলে ধরা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক- আমরা কোন পরীক্ষায় খারাপ করলাম কিংবা ব্যবসায় বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হলাম। এরপর সচরাচর আমরা যা করি তা হলো প্রথমেই মন খারাপ করে বসে বসে ভাবি আমি হয়তো শেষ। ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আমাকে পরিত্যাগ করেছেন, তিনি আর আমার দুঃখ-দুর্দশা বা প্রয়োজনের দিকে খেয়াল করেন না।.. এমনকি মানুষকে এটাও বলতে শোনা যায়, ‘আমি যতই আল্লাহর আনুগত্য করি না কেন, জীবনে স্বস্তি তো আসেই না বরং তা আরও কঠিন থেকে কঠিনতর হয়। এসব আল্লাহর ইবাদাত করে আমার ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হচ্ছে না’। হতাশা কাটানোর জন্য তারা বিভিন্ন নিষিদ্ধ কার্যকলাপে আসক্ত হয়ে পড়ে, যেমন- মদ, ড্রাগ, অবৈধ মেলামেশা ইত্যাদি। … মজার বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন আমাদের এই স্বভাবগত অসহনশীল প্রবণতা সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত আছেন। তাই এই আয়াতে আমাদেরকে কোনো দোষারোপ করছেন না, বরং তিনি জানেনই যে মানুষ আসলেই মানসিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল এবং তীব্র প্রতিক্রিয়াশীল; কঠিন পরিস্থিতিতে তারা ধৈর্য হারাবে এবং নিজেকে আত্মসংবরণ করতে না পেরে ভুল পথে পা বাড়াবে, পাপাচারে লিপ্ত হবে; তারা আসলেই অস্থির বা ‘জুজুয়া’(جَزُوۡعًا)। এর পরের আয়াতে আল্লাহ্ উল্লেখ করেছেন – وَاِذَا مَسَّهُ الۡخَيۡرُ مَنُوۡعًا ۙ ” আবার যখন(সে)ঐশ্বর্যশালী হয় তখন কৃপণ হয়ে যায়।”(৭০:২১) তার মানে, আল্লাহ্ তাআলা মানুষের উপর কোন রহমত দান করেন তখন তারা এতটাই কৃপণ আর ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে যে, সবকিছু একাই...
— নোমান আলী খান আল্লাহ তায়ালা বলেন – لِيُوَفِّيَهُمْ أُجُورَهُمْ وَيَزِيدَهُم مِّن فَضْلِهِ ۚ إِنَّهُ غَفُورٌ شَكُورٌ – “যাতে তিনি তাদেরকে তাদের পূর্ণ প্রতিফল দান করেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বাড়িয়ে দেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, মহাগুণগ্রাহী।” (৩৫:৩০) আজ আমি আপনাদের সাথে আল কুরআনে বর্ণিত আল্লাহর একটি অনন্য এবং অসাধারণ নাম সম্পর্কে আলোচনা করবো। এই নামটি অনন্য কারণ আল্লাহ এই একই নাম তাঁর নিজের জন্য ব্যবহার করেছেন আবার বিশ্বাসীদেরকেও এমন হতে বলেছেন। আল্লাহ আমাদের সম্পর্কে বলেছেন – وَقَلِيلٌ مِّنْ عِبَادِيَ الشَّكُورُ – “এবং আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই শাকুর”। (৩৪:১৩) ‘শাকুর’ অর্থ – চরম কৃতজ্ঞ এবং চরম গুণগ্রাহী।(appreciative) আর কৃতজ্ঞ হওয়া এবং গুণগ্রাহী হওয়া দুটি ভিন্ন ভিন্ন জিনিস। কৃতজ্ঞ মানে কেউ যদি আপনার কোনো উপকার করে, তাহলে আপনি তাকে ‘থ্যাংক ইউ বা ধন্যবাদ’ বলেন এবং মনে মনে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা অনুভব করেন। ‘গুণগ্রাহী’ মানে আপনি সবকিছুতে ইতিবাচকতা প্রত্যক্ষ করেন। সব পরিস্থিতিতেই আপনি ভালো কিছুর সন্ধান পেয়ে থাকেন। আপাতদৃষ্টিতে পরিস্থিতি খারাপ হলেও আপনি তাতে ভালো কিছু হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী থাকেন। আমাদের রাসূলুল্লাহ (স) এর জীবনে অন্যতম দুর্বিষহ একটি ঘটনা ছিল ‘ইফকের ঘটনা’, যখন মদীনাতে তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে অপমানজনক অপবাদ রটনা করা হয়। আর এই মিথ্যা অপবাদ রটনার কাজ ত্রিশ দিন পর্যন্ত চলতে থাকে। ত্রিশ দিন পর আল্লাহ নাজিল করেন – لَا تَحْسَبُوهُ شَرًّا لَّكُم ۖ بَلْ هُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ – “এটাকে তোমাদের জন্য ক্ষতিকর মনে করো না, বরং তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর।” (২৪:১১) তো, এভাবে আল্লাহ আমাদের মনোভাব পরিবর্তন করেন এবং তিনি চান আমরা যেন শাকুর হই। যার অর্থ চরম গুণগ্রাহী হওয়া, চরম তারিফ করা, আল্লাহর তারিফ করার জন্য উপায় খোঁজা, কৃতজ্ঞ হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা। ‘শাকুর’ এর এই অর্থ আমাদের জন্য। আর আমাদের জন্য ব্যাপারটা উপলব্ধি করা সহজ। কিন্তু...
খুব সংক্ষেপে বলছি। এক নাম্বার: তাওবা করার ক্ষেত্রে আন্তরিক হওয়া। তাওবা হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। দুই নাম্বার: সত্যিকারের অনুশোচনা থাকতে হবে এবং নিজেকে অপরাধী মনে করতে হবে। এটা ছাড়া কোনো তাওবা নেই। তাওবা অন্তর থেকে আসতে হবে। আর অন্তরকে উপলব্ধি করতে হবে যে, আমি অন্যায় করেছি। আমি ভুল করেছি। আমার ঐ টাকাটা নেওয়া উচিত হয়নি। আমার অমুক কাজটি করা ঠিক হয়নি। আমার ঐটা খাওয়া বা পান করা উচিত হয়নি। যে কাজটি আমি করেছি তা করা উচিত হয়নি। অন্তরে খাঁটি অনুতাপ থাকতে হবে। আমাদের রাসূল (স) বলেছেন – তাওবার মূল হল অনুশোচনা অনুভব করা। (আন-নাদামু তাওবা) অনুতাপ অনুভব করা তাওবার অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। তাহলে, দুই নাম্বার হল, অনুশোচনা অনুভব করা। তিন নাম্বার: ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা জিহ্বা দিয়ে। আপনি আল্লাহর কাছে এভাবে চাইবেন – ইয়া গাফ্ফার! ইয়া তাউয়াব! ইয়া রাহমান! আমাকে মাফ করে দিন। এরপর, তাওবা যথাযথ করতে হলে ….. এতক্ষণ যা বলেছি তা হল সর্বনিম্ন। আর তাওবাকে পূর্ণ করতে হলে….আর আল্লাহ আমাদের কাছে পূর্ণাঙ্গ তাওবা আশা করেন, তিনি বলেন – হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাঁটি তাওবা। একটি যথাযথ তাওবা। আর তাওবাকে যথাযথ করতে হলে আমাদেরকে আরো দুইটি শর্ত এর সাথে যোগ করতে হবে। যদি এই দুইটি শর্ত পূরণ করা না হয়, তাহলে তাওবা পরিপূর্ণ হবে না। এটা হয়তো সি গ্রেইড, এ গ্রেইড নয়। তাওবাটা পূর্ণাঙ্গ নয়। শেষ দুইটি শর্ত একটি যথাযথ তাওবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তা হল, পাপটি ভবিষ্যতে আর না করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। কারণ, যে ব্যক্তি এটা জেনে তাওবা করে যে সে এই পাপটি আবার করবে, সে তাওবাকে পূর্ণ করলো না। এটি পরিপূর্ণ আন্তরিক তাওবা নয়। আমি বলছি না যে এটা মিথ্যা তাওবা। না, এটা অর্ধ-হৃদয়ের তাওবা। এটা খাঁটি তাওবা নয়। কোন...
— উস্তাদ নোমান আলী খান আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা বলেন – اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ مَثَلُ نُورِهِ كَمِشْكَاةٍ فِيهَا مِصْبَاحٌ الْمِصْبَاحُ فِي زُجَاجَةٍ الزُّجَاجَةُ كَأَنَّهَا كَوْكَبٌ دُرِّيٌّ يُوقَدُ مِن شَجَرَةٍ مُّبَارَكَةٍ زَيْتُونِةٍ لَّا شَرْقِيَّةٍ وَلَا غَرْبِيَّةٍ يَكَادُ زَيْتُهَا يُضِيءُ وَلَوْ لَمْ تَمْسَسْهُ نَارٌ نُّورٌ عَلَى نُورٍ يَهْدِي اللَّهُ لِنُورِهِ مَن يَشَاء وَيَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ আল্লাহ হলেন সমস্ত আসমান ও যমীনের নূর (আলো)। তাঁর নূরের দৃষ্টান্ত হলো যেন একটি তাক – যার ভিতরে রয়েছে একটি প্রদীপ; প্রদীপটি রয়েছে একটি স্বচ্ছ কাঁচপাত্রের আবরণের ভিতরে; কাঁচটি (নিজেও) যেন একটি উজ্জ্বল তারকা, যা প্রজ্জ্বলিত করা হয় বরকতময় যায়তুন গাছ (থেকে নিসৃত তেল) দ্বারা; যা পূর্বমুখি নয়, আবার পশ্চিমমুখিও নয় (বরং উভয়দিক থেকেই আলোপ্রাপ্ত, সর্বদা প্রজ্জ্বলিত)। আগুন তাকে স্পর্শ না করলেও সেই তেল এতই বিশুদ্ধ স্বচ্ছ যে (তাতে আগুন না দিলেও) তা যেন নিজে নিজেই জ্বলে উঠার নিকটবর্তী। আলোর উপরে আলো। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে করেন তার নূরের দিকে পথ দেখান। আল্লাহ মানুষের (বোঝানোর) জন্য (এসব) দৃষ্টান্ত পেশ করেন। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। [সূরা নূরঃ ৩৫] আপনাদের অনেকেই এই আয়াতের সাথে পরিচিত। এর সাধারন অনুবাদ করা হয় “আল্লাহ হলেন আকাশ এবং পৃথিবীর জ্যোতি।” পরবর্তী কয়েক মিনিটে আমি এই আয়াতগুলো নিয়ে আপনাদের সাথে কথা বলতে চাই। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে আমি বলতে পারি, আল্লাহর কিতাবকে গভীরতার বিভিন্ন ধাপে অধ্যয়ন করা যায়। আর আল্লাহর এই কিতাবের গভীরতার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। এর কোনো শেষ নেই। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে এই কিতাব নিয়ে অধ্যয়ন করছি। এই অভিজ্ঞতার ফলে আমি একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, এমনকি একটি আয়াত নিয়ে অনেক অধ্যয়ন করার পরও আপনি কেবল আপনার সামর্থ অনুযায়ী অল্পই জ্ঞান লাভ করতে পারেন। তারপর যখন এই আয়াত নিয়ে এমন কারো ব্যাখ্যার সন্ধান পান...
— নোমান আলী খান আল্লাহ তায়ালা বলেন – وَأَوْحَىٰ رَبُّكَ إِلَى النَّحْلِ أَنِ اتَّخِذِي مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا وَمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُونَ – আর তোমার রব মৌমাছিকে আদেশ দিলেনঃ ‘তুমি পাহাড়ে ও গাছে এবং তারা যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে নিবাস বানাও।’ ثُمَّ كُلِي مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِي سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًا ۚ يَخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِّلنَّاسِ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ – “অতঃপর প্রত্যেক ফল থেকে আহার কর, অতঃপর তোমার প্রতিপালকের (শিখানো) সহজ পদ্ধতি অনুসরণ কর। এর পেট থেকে রং-বেরং এর পানীয় বের হয়। এতে মানুষের জন্য আছে আরোগ্য। চিন্তাশীল মানুষের জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শন আছে।” (16:68-70) একজন মুসলিমের চিন্তাপদ্ধতি অন্য সবার চেয়ে ভিন্ন। এর কারণ হল আল্লাহর বই। এটা আমাদের চিন্তা ধারাকে রূপদান করে। বস্তুত, আজ আমি আলোচনা শুরু করতে চাই সূরা মূলকের একটি আয়াত দিয়ে। যেখানে বলা হয়েছে – লোকেরা জাহান্নামে প্রবেশ করছে, আর প্রবেশ করা কালে তাদেরকে তাদের অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। তখন, তারা উত্তরে বলবে, وَ قَالُوۡا لَوۡ کُنَّا نَسۡمَعُ اَوۡ نَعۡقِلُ مَا کُنَّا فِیۡۤ اَصۡحٰبِ السَّعِیۡرِ – বিখ্যাত একটি আয়াত – “এবং তারা বলবেঃ যদি আমরা শুনতাম…চলুন, এখানে একটু থামি। এখানে কী শুনার কথা বলা হচ্ছে? যদি কুরআন শুনতাম! যদি ইসলামের বার্তা শুনতাম! যদি উপদেশগুলো শুনতাম! এই অংশটি সবাই বুঝে। কিন্তু এরপর আয়াতে ‘ও না’কিলু’ বলা হয়নি, বলা হয়েছেঃ ‘আও না’কিলু’, লাও কুন্না নাস্মাউ’ আও না’কিলু। আর আরবিতে ‘আও’ অর্থঃ অথবা। যদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতাম। অর্থাৎ, যদি শুনতাম অথবা অন্ততপক্ষে চিন্তাভাবনা করতাম। কথাগুলো এভাবে উপস্থাপনের পেছনে শক্তিশালী উদ্দেশ্য রয়েছে। একদিকে, মুসলমানরা কিছু শুনলে সেখান থেকে শেখার চেষ্টা করবে। আমরা খুৎবা শুনি, রিমাইন্ডার শুনি, লেকচার শুনি, কিছু পড়লেও আমরা ঐখান থেকে শিখি। এগুলো থেকে আমরা...
إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌۢ بِمَا يَصْنَعُونَ ﴾ নিশ্চয় তারা যা পরিকল্পনা তৈরি করে আল্লাহ তা খুব ভালোভাবে খবর রাখেন।﴿ [সূরা নূর: ৩০] “এবং তিনি জানেন যা তোমরা ম্যানুফ্যাকচার (Manufacture) করো”। আল্লাহ এখানে ছেলেদের একটা উদ্দেশ্যের কথা বলছেন। সেটা হলো ছেলেরা যে কৌশল অবলম্বন করে একটা মেয়েকে নিজের ফাঁদে টানে; প্রেম, যিনা বা মেলামেশার দিকে টানে। এই কৌশলী পরিকল্পনার ইংরেজি প্রতিশব্দ Manufacture (ম্যানুফ্যাকচার)। এই ‘ম্যানুফ্যাকচার’ মানে কী? ‘ম্যানুফ্যাকচার’ মানে উৎপাদন করা, উদ্ভাবন করা। উৎপাদনে কী থাকে? একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা! হ্যাঁ, একটা ছেলে যেকোনো মেয়েকে কৌশলে নিজের আয়ত্বে আনতে পরিকল্পনা অনুযায়ীই আগাতে থাকে। ধরুন, একটা গাড়ি তৈরি করতে কতগুলো অংশ (পার্টস) লাগবে, কী কী রঙ লাগবে, কোন অংশ আগে জোড়া দিতে হবে, কোন অংশ শক্ত হতে হবে, কোন অংশ নরম হবে, কোনটিকে কত বছরের জন্য টেকসই হিসেবে দিতে হবে, গাড়িটি তৈরি করতে কত সময় লাগবে, মার্কেটিং কীভাবে করবো, বিক্রি করবো কোথায়, কীভাবে ইত্যাদি সবই পূর্ব-পরিকল্পনা করা থাকে। এই প্ল্যান (পরিকল্পনা) আশাপূর্ণ ফল লাভের জন্য খুবই কার্যকরী আর সুপরিকল্পিত কাজ না থাকলে কোম্পানির জিনিসটি ভালো চলে না। এভাবে একটা ছেলে যখন মেয়েকে নিয়ে গেমের মতো বিস্তারিত প্ল্যান করে, সেটাও আল্লাহ জানেন বলে এই আয়াতে উল্লেখ করেছেন। প্রথমে ছেলেটা মেয়ের দিকে তাকায়। এরপর পিটপিট করে করে তাকানো, মিটমিট করে হাসা চলতে থাকে। তারপর একটু কৌশলে জিজ্ঞেস করে তোমার ফেইসবুকে আইডি আছে? কী নামে? এভাবে কৌশলে একটু কাছে এসে বলে, ‘আমি আসলে তোমাকে ইসলাম বিষয়ে জানতে আরো সহযোগিতা করতে চাই’। ‘ঐ জায়গায় কিন্তু ইসলামী আলোচনা হয়, চলো না যাই একদিন’। ‘ঐ ফেইসবুক গ্রুপে অনেক সুন্দর আলোচনা হয়, ঐখানে জয়েন করাই?’ আর মেয়েটিও এভাবে বলে, ‘হ্যা, অবশ্যই, এই যে আমার ফেইসবুক একাউন্ট, আমাকে ভালো ভালো গ্রুপে এড করে দিবেন দয়া করে’। এভাবে ছেলের সাথেও ফেইসবুকে বন্ধু...
— নোমান আলী খান সবাইকে আসসালামু আলাইকুম। আজকে আলোচনা করার প্ল্যান ছিল না। আমি একটা চিঠি পেয়েছি। এরপর আর নিজেকে থামাতে পারিনি। আপনাদের চিঠিটি পড়ে শুনাচ্ছি। আমি আমার ভাইয়ের নাম গোপন রাখবো। “আমার নাম …(আমি তাকে আমার প্রিয় ভাই বলবো।) চিঠির পোস্ট মার্ক থেকে আপনি বুঝবেন, আমি বর্তমানে জেলে বন্দী আছি। জীবনে এমন কিছু ভুল কাজ করেছি, যা নিয়ে আমি গর্বিত নই। কিন্তু এই রামাদানে, আমার মন বলছে আল্লাহ্ আমাকে পরিবর্তন করে দিবেন, আমার জানার চেয়েও বেশি উপায়ে। আপনাদের সবার মত ইসলাম সম্পর্কে আমি অতটা জ্ঞানী নই। দেখুন, আল্লাহর রহমতে আমি অনেকটা স্বশিক্ষিত, আমার প্রতিনিয়ত অনুসন্ধান এবং অধ্যয়নের মাধ্যেম। আমার অন্তরে ইসলাম আমার ধর্ম এবং মুহাম্মাদ (স) আমার নবী, শেষ নবী হিসেবে। আমি গত বছর থেকে কুরআন এবং হাদিস অধ্যয়ন করার চেষ্টা করছি। আমি অন্য ভাইদের কাছে সাহায্যের আবেদন করিনি। কারণ, আমি ভয় পাচ্ছি সমাজের লোকজন আমাকে অপমান করে থামিয়ে দিবে। সত্যি বলতে, আমার সাহায্য দরকার আরও শিখার ক্ষেত্রে। কারণ, আমি একা একা ভালভাবে শিখতে পারবো না। যে কারণে আমি আপনাকে এই চিঠি পাঠিয়েছি, আমি জেলে থেকে আমার ট্যাবলেটে নোমান আলী খানের অডিও পডকাস্ট শুনছি। এই খুৎবাগুলো প্রতিদিন আমাকে শক্তি এবং অনুপ্রেরণা যোগায়। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আমি এগুলোর জন্য অনেক বেশি বাধিত এবং কৃতজ্ঞ। কারণ, আল্লাহ আমাকে আমার এই ভ্রমণে এতো বেশি সাহায্য করেছেন যে, আমি নিজের ভেতরে পরিবর্তন অনুভব করছি। আর আমার ঈমান দিন দিন আরো শক্তিশালী হচ্ছে। এমনকি এমন দিনগুলোতেও যখন মুসলিম থাকা খুবই কঠিন। যাইহোক, আগামী কাল রামাদান। (চিঠিটি রামাদান শুরু হওয়ার পূর্বে লিখা হয়।) আমার কাছে পড়ার উপকরণ খুবই কম। এবং ভালোভাবে শেখানোর জন্য তেমন কোনো ভাইও নেই। তাই, আমি আমার বোনকে বলেছি গুগুলে আপনার ঠিকানা খুঁজতে। যাইহোক, ভাই প্লিজ, আমি কি...
— নোমান আলী খান আল্লাহ আজ্জা ওয়া জ্বাল বলেন – وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ – “আর আমার বান্দারা যখন আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে।” আল্লাহ এখানে বলেন নি, যদি আমার বান্দারা জিজ্ঞেস করে, তিনি বলেছেন, যখন আমার বান্দারা জিজ্ঞেস করে। কারণ তিনি আশা করেন যে, এটা অবশ্যই ঘটবে। তিনি আপনার সম্পর্কে আশাবাদী। আপনি হয়তো আপনার সম্পর্কে আশাবাদী নাও হতে পারেন, কিন্তু আল্লাহ আপনাকে নিয়ে আশাবাদী। তিনি রাসূল (স) কে বলেন, যখন তারা আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে….. সাধারণভাবে আয়াতটি তো এমন হওয়ার কথা ছিল, যখন তারা আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, আপনি তাদের বলে দিন আমি নিকটে। কিন্তু আয়াতের বক্তব্য এটা নয়, আয়াতের বক্তব্য হলো – যখন তারা আপনার নিকট আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে… এটা বলার পর তিনি তাঁর রাসূলের সাথে কথা বলা বন্ধ করে আমার আপনার সাথে সরাসরি কথা বলা শুরু করলেন এবং বলেন – নিশ্চিতভাবেই আমি সন্নিকটে। আয়াতের মাঝখানে এসে বক্তব্যটি আর আল্লাহ এবং রাসূল (স) এর সাথে না হয়ে আল্লাহ এবং আমার আপনার সাথে সরাসরি হয়ে গেলো। বহুদিন যাবৎ আপনি হয়তো আল্লাহর সাথে কথা বলেন না। আপনি যদি কারো সাথে অনেক দিন কথা না বলেন, আপনার মনে হতে পারে সেও হয়তো আপনার সাথে কথা বলতে চায় না। “এতদিন কোথায় ছিলে তুমি?” আপনি অন্য একজনের মাধ্যমে তার সাথে কথা বলতে চান। সে কি এখনো আমার প্রতি রাগান্বিত?আপনি তার সাথে সরাসরি কোনো যোগাযোগ করতে চান না। কিন্তু আল্লাহ আজ্জা ওয়া জ্বাল সেই দেয়ালটি ভেঙে সরাসরি আপনার কাছে আসেন এবং আপনাকে বলেন – নিশ্চয় আমি নিকটে। ‘ফা-ইন্নি ক্বারীব।’ তারপর আপনার হয়তো মনে হতে পারে, আমি তাঁর নিকট থেকে এতো দূরে…. তিনি কেন আমার দোয়ার জবাব দিতে যাবেন? কিন্তু আল্লাহ বলেন – ……أُجِيبُ...
আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, তা দ্বারা যমীনকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন। নিশ্চয় এতে মনোযোগ দিয়ে শ্রবণকারীদের জন্যে রয়েছে নিদর্শন। [নাহল: ৬৫] এখানে আসলে বৃষ্টির কথা বলা মুখ্য উদ্দেশ্য না৷ উদ্দেশ্য পূর্বের আয়াত। আগের আয়াতে যা বলা হয়েছে তা হচ্ছে: আমি আপনার প্রতি এ জন্যেই কিতাব নাযিল করেছি। (নাযিলের উদ্দেশ্য) যাতে আপনি সরল পথ প্রদর্শনের জন্যে তাদেরকে পরিষ্কার বর্ণনা করে দেন (ঐসব বিষয়ে) যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছে এবং(এই কিতাব) ঈমানদারকে হেদায়াত ও তাদের জন্যে ক্ষমা (নিয়ে আসবে)। [সূরা নাহল: ৬৪] পূর্বের আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ তা’আলা আসমান থেকে কিতাব নাযিল করেন। পরের আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। সুতরাং আপনি যদি পৃথিবীতে আল্লাহর কিতাবের গুরুত্ব বুঝতে চান, তাহলে আপনাকে পৃথিবীতে পানির ভূমিকা বুঝতে হবে। বলুন তো পানির কাজ কী? পানি পৃথিবীতে জীবন তৈরি করে৷ পৃথিবীতে জীবন ধারণের জন্য পানি অপরিহার্য। ঠিক তেমনি জগতের যেসব জায়গা নীতি-নৈতিকতার দিক থেকে মৃত, সেখানে আল্লাহর কিতাবের শিক্ষা অনিবার্য৷ আধ্যাত্মিকভাবে মৃত জগতকে জাগাতে চাই কুর’আনের শিক্ষা৷ হাজার বছরের মৃতপুরীকে জাগিয়ে তুলতে পারে পানি৷ পৃথিবীর রাজনৈতিক অবস্থা যতই খারাপ হোক না কেন, পৃথিবীর নৈতিক অবস্থা যতই খারাপ হোক না কেন, দিন রাতে যেকোনো অবস্থাতেই মিডিয়া যতই খারাপ হোক না কেন, মুসলিমরা যতই নীচে নামুক না কেন — এই কিতাব (মহিমান্বিত কুর’আন) সেই মৃত লোকদের মধ্যে জীবন আনার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু পানি যখন বর্ষিত হয় তখন দুই ধরনের উদ্ভিদ জন্মায় পানি বর্ষণের ফলে। এক ধরনের উদ্ভিদ যা নিজে নিজে জন্মায়। আরেক ধরনের উদ্ভিদ হচ্ছে ফসল৷ এর জন্য শ্রম দিতে হয়৷ পৃথিবীতে কি এমন লোক নেই যাদেরকে কোনো প্রকার সরাসরি দাওয়াত ছাড়া ইসলাম গ্রহণ করেছে? অনেকে করেছে। যাদের সাথে কোনো অবস্থাতেই আমার দেখা হয়নি। আমি শুধু একটি ইউটিউব ভিডিও তৈরি করেছি...
– উস্তাদ নোমান আলী খান ইনশাআল্লাহ, আজ আমি আপনাদের নিকট আল্লাহর একটি নাম القوي – এর উপকারিতা বর্ণনা করবো। القوي অর্থ – শক্তিশালী, ক্ষমতাশালী। এই অসাধারণ শব্দটি দ্বারা আল্লাহর একটি নাম প্রকাশ করা হয়। শব্দটি শুনলেই আপনি বুঝতে পারেন এর মানে হল আল্লাহ সর্বশক্তিমান। কিন্তু সুরাতুল হাজ্জের শেষের দিকে আল্লাহ যেভাবে এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন তা অসাধারণ চমকপ্রদ। আমি যুক্তি দেখাবো, একজন বিশ্বাসীর জন্য আল্লাহর ‘القوي’ হওয়ার মানে কী তা উপলব্ধি করার জন্য আল কুরআনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোর একটি হল সুরাতুল হাজ্জের এই অংশটি। আমরা তাঁর সকল নামে বিশ্বাস করি কিন্তু তাঁর প্রত্যেকটি নাম কোন না কোনভাবে আমাদের উপকার করে। কোন না কোনভাবে আমাদের সাহায্য করে। القوي কীভাবে আমাদের সাহায্য করে? এটা শেখার অন্যতম একটি সেরা জায়গা হল ২২তম সূরা, সুরাতুল হাজ্জের শেষের অংশ। এই সূরায় আল্লাহ একটি উপমা পেশ করেন যেন মানুষ তাঁর সম্পর্কে একটি ব্যাপার উপলব্ধি করতে পারে। তিনি বলেন – يَا أَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوا لَهُ – “হে লোক সকল! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো, অতএব তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন;” এভাবেই তিনি শুরু করেছেন, একটি উপমা দেয়া হল মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করো। তিনি সাধারণত এভাবে বলেন – আল্লাহ একটি উপমা বর্ণনা করলেন। কিন্তু এখানে বলেছেন, একটি উপমা প্রদান করা হলো। ‘আমি একটি উপমা দিচ্ছি’ বলার পরিবর্তে। তিনি এখানে বক্তাকে আলোচনা থেকে গোপন করে ফেললেন। এটি একটি সাইড নোট – কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি – যা আমাদের জানা থাকা প্রয়োজন। আমি এখন আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার একটি নির্দিষ্ট রূপ আছে, আমার দাঁড়ি আছে, আমার পোশাক এইরকম, আমার মাথায় টুপি আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আপনারা সরাসরি আমাকে দেখতে পাচ্ছেন। আমি কুরআন থেকে কিছু তিলাওয়াত করলে বা কোন আলোচনা করলে সেটাও আপনারা দেখতে পান। কিন্তু এমন একটি পরিস্থিতির...
রাসূলুল্লাহ (স) এর নবুয়তী জিন্দেগীর তেইশ বছরে যখনই কেউ ইসলামে প্রবেশ করেছে তার জন্য শুধু সাধারণ মুসলিম হিসেবে বসে থাকার সুযোগ ছিল না। তাকে ইসলামের মিশনকে তার নিজের জীবনের মিশন হিসেবে গ্রহণ করে নিতে হয়েছিল। তুমি এই মিশনে যোগ দিয়েছ। এই মিশন সফল হউক বা ব্যর্থ হউক তাতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু তোমাকে এই মিশনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে যেতে হবে। তোমাকে এই মিশনের জন্য জীবনও দেয়া লাগতে পারে। তুমি এই উদ্দেশ্যে অবদান রেখেছ, মারা যাচ্ছ। যতদিন তুমি অবদান রেখে যাবে ততদিন তোমার জীবনের মূল্য আছে। এই উদ্দেশ্যে কুরবানী করার ক্ষেত্রে তুমি কখনো পিছপা হওনা। কারণ তুমি এটাকে কুরবানী হিসেবে দেখো না, তুমি এটাকে দেখো – إِنْ أَحْسَنتُمْ أَحْسَنتُمْ لِأَنفُسِكُمْ – “তোমরা ভাল কাজ করলে নিজেদের কল্যাণের জন্যই তা করবে।” (১৭:৭) এখন মাইন্ডসেটটি বোঝার চেষ্টা করুন। একজন সাধারণ মুসলিম এবং আল্লাহর পথে প্রচেষ্টারত সংগ্রামী ব্যক্তির মনোভঙ্গীর মাঝে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। আমি এখন এই ধরণের লোকদের ‘সংগ্রামী’ বলছি কিন্তু আসলে এদের মু’মিন বলা উচিত। একজন মুসলিম উদ্বিগ্ন থাকে ‘আমাকে সর্বনিম্ন কতটুকু করতে হবে, তা নিয়ে। ”আমি কি এটা খেতে পারবো? এটা কি হালাল? কত ওয়াক্ত নামাজ আমাকে আদায় করতে হবে? ৫ ওয়াক্ত, ঠিক? তাহাজ্জুদ পড়া কি বাধ্যতামূলক? ঠিকাছে, আমি তাহলে পাঁচ ওয়াক্তই পড়বো। আমাকে কি সব নফল পালন করতে হবে? আচ্ছা ঠিকাছে আমাকে শুধু মিনিমামটুকু দিন। আমি কি অমুক অমুক কাজগুলো করতে পারবো? আমাকে জাস্ট বলুন, কোনটা হালাল কোনটা হারাম। আমার তাহলে আর কোনো সমস্যা নেই। আমাকে কয়টি হজ্জ্ব করতে হবে? একটা? ঠিকাছে। যখন আমার হজ্জে যাওয়ার সামর্থ্য থাকবে, ঠিক না? হ্যাঁ। ঠিকাছে , আমি এগুলো করবো। ” এটাই মুসলিমের সংজ্ঞা। যে ইসলামের মিশনে যোগদান করে সে কখনো জিজ্ঞেস করে না ‘আমাকে সর্বনিম্ন কতটুকু করতে হবে।’ প্রকৃতপক্ষে তারা সবসময়...