কুরআন তেলাওয়াতে পারদর্শী নয় এইরকম একজন যুবক ভাই একদিন আমাকে একটা প্রশ্ন করেছিলেন। প্রশ্নটা ছিল এইরকম – ‘আমি সবসময় ভালো করে কুরআন পড়ার চেষ্টা করি কিন্তু এত চেষ্টা করার পর ও আমি শুদ্ধ করে পড়তে পারি না’। যুবকের কথা শুনে মনে হচ্ছিল সে খুবই আবেগী প্রকৃতির মানুষ। একদিন সে রেডিও তে কোন এক প্রোগ্রামে একটা ছোট বাচ্চার কুরআন তেলাওয়াত শুনছিল। সেই বাচ্চাটা এত সুন্দর করে পড়ছিল যে ওই প্রোগ্রাম এর শিক্ষক বলছিলেন, ‘সুবহানআল্লাহ! তোমার নফ্স, তোমার মন খুব পবিত্র। তুমি খুব পবিত্র। আর এই কারণে আল্লাহ তোমাকে এত সহজে, এত সুন্দর করে তেলাওয়াত করার ক্ষমতা দিয়েছেন’। তো এই কথা শুনে ওই যুবক চিন্তায় পড়ে গেল এবং ভাবতে লাগলো – আমি মনে হয় ভালো মানুষ না, এজন্যে আমি ভালো করে কুরআন পড়তে পারি না, আমার আত্মা পবিত্র না। এসব ভেবে সে মানসিকভাবে কষ্ট পেতে লাগলো। যদিও আমি নিশ্চিত ওই রেডিও প্রোগ্রামের শিক্ষক এইরকম কিছু বোঝাতে চান নি, তিনি নিছক সেই বাচ্চা ছেলেকে উংসাহ দেয়ার জন্য এইরকম কিছু বলেছিলেন। এই প্রেক্ষিতে আসুন আমরা একটা হাদিস দেখি, রাসুল (স) বলেছেন ‘কুরআন তেলাওয়াতে পারদর্শী ব্যক্তিরা উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। কিন্তু যারা উচ্চারণগত বা অন্য কোন সমস্যা থাকা সত্বেও কষ্ট করে পড়ার চেষ্টা করে, তারা এর দ্বিগুন পুরস্কার পাবে। (সহি মুসলিম)’ এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঐসব লোক কাদের তুলনায় এই দ্বিগুন পুরস্কার পাবে? সাধারণ তেলাওয়াতকারীদের তুলনায়? নাকি তেলাওয়াতে পারদর্শিদের তুলনায়? আমার মতে তেলাওয়াতে পারদর্শীদের তুলনায় এই দ্বিগুন পুরস্কার দেয়া হবে। কারণ একজন মানুষ কতটুকু অর্জন করলো আল্লাহ সেটাকে গুরুত্ব দেন না, আল্লাহ গুরত্ব দেন সে কী পরিমান চেষ্টা করলো সেটাকে। আমরা মানুষরাই অর্জনকে বেশি গুরুত্ব দেই, সবসময় দেখতে চাই ফলাফল কি, লাভ কতটুকু হলো? আমরা কতটুকু জানি, কতটুকু মুখস্ত করলাম, কতটুকু পড়লাম এই...
আমি দুয়া করি যেন আমরা সবাই, আমরা এই দর্শকদের সবাই, আমাদের পরিবারে কী করি, কী হয় সেটার দায়িত্ব নিই। আমি যদি বলি যে আমাদেরকে উম্মাহর সদস্য হিসাবে পরিবর্তন করতে হবে, তাহলে আপনি আসলে কোন দায়িত্ব নেওয়া ছাড়াই এখান থেকে বের হয়ে যাবেন। হ্যাঁ উম্মাহ! আমি জানি না এটা কী। আপনাকে দায়িত্ব নিতে হবে আসলে আপনার নিজের পরিবারে কি হচ্ছে সেটার। আপনার পরিবার হচ্ছে আপনার জন্য সরকারের মত, এবং সেখানে যখন দুর্নীতি হয় এর অর্থ আপনার ঘরের মাঝেই একটা ফ্যাসাদপূর্ন পরিবেশ চলছে। সেখানেই আপনার পরিবর্তন করতে হবে, যদি আপনার নিজের পরিবারেই পরিবর্তিত না হয়, দুনিয়া পরিবর্তনের কথা ভুলে যান। আপনি নিজে যদি ব্যক্তিগত ভাবে পরিবর্তিত না হয়ে থাকেন, তাহলে দুনিয়া পরিবর্তনের কথা বলবেন না। আপনি আসলে নিজের সাথেই রসিকতা করছেন। নিজেকে ধোঁকা দিচ্ছেন। কীভাবে এটা সম্ভব যে আপনি বলছেন আপনি নবীজী মুহাম্মদ (সঃ) এর উম্মাহকে ভালোবাসেন কিন্তু যেভাবে আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে ব্যবহার করছেন, তার সাথে নবীজী মুহাম্মদ (সঃ) উনার স্ত্রী- উম্মুল মু’মীনীনদের – সাথে যেভাবে ব্যবহার করতেন তার কোন মিলই নেই? কেমন করে এটা সম্ভব হতে পারে যে আপনি বলেন, আপনি নবীজী মুহাম্মদ (সঃ) কে ভালোবাসেন, বলেন যে আপনি পুরো বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ শিখে ফেলবেন, দুনিয়ার সব জ্ঞান আহরণ করে ফেলবেন, কিন্তু যেভাবে আপনি আপনার বাচ্চাদের সাথে কথা বলেন, তাদের সাথে আচরন করেন, তাতে কোন “রাহমা” নেই, যেখানে নবীজী মুহাম্মদ (সঃ) যখন উনার সন্তানদের সাথে আচরন করতেন “রাহমা” সহকারে? আপনি কেন শিখছেন এগুলো? কেন শিখছেন এসব? কীভাবে সম্ভব যে আপনি কিভাবে আপনার পরিবারের সাথে ব্যবহার করছেন তাতে কোন প্রভাবই ফেলছে না আপনার শিক্ষা? মাসজিদে পাশের মুসলিমের সাথে যে ব্যবহার করছেন তাতে কেন এর কোন প্রভাবই পড়ছেনা ? কীভাবে সম্ভব যে আপনি যেভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন তাতে এটা কোন প্রভাবই...
তাকে হিজাব পরার ব্যাপারে কিছুই বলবেন না। হিজাব বিষয়ে তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিন। একেবারেই বন্ধ করে দিন। আপনি যেটা করবেন, আসলে আপনি তার সাথে কথা বলবেন না(ইসলাম নিয়ে)… কারণ প্রায় সময়ই দেখা যায়, যেই মানুষেরা আমাদের প্রতি দাওয়াহ দিতে সবচেয়ে অকার্যকর তারা আসলে নিজস্ব পরিবারের সদস্য। তারা একজন অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে কথা শুনতে বেশি আগ্রহী এবং তার উপদেশ গ্রহণ করতে রাজি আছে কিন্তু নিজের পরিবারের কাছ থেকে তা শুনতে চাইবে না। এটা কিন্তু আমাদের মত বক্তাদেরও সমস্যা। তারা সারা দুনিয়াকে দাওয়াহ দিতে পারে। কিন্তু দেখা যায়, তারা অন্য কারও টেপ বা অন্য কারও সিডি নিয়ে আসে গাড়িতে শুনার জন্যে। (কারণ পরিবারের সদস্যরা বলতে থাকে) ‘তোমার কথা আর শুনতে চাই না! অনেক শুনেছি!’ তাই না? এমনটা হয়ে থাকে। তো প্রথমত আপনাকে বুঝতে হবে, যখন পরিবারের কাছে দ্বীনের শিক্ষা দিবেন আপনার একটু কৌশলী হতে হবে। আপনার ধাপে ধাপে আগাতে হবে। একজন খুব দক্ষ বক্তা খুঁজে বের করুন যিনি আখিরাত এবং শেষ বিচারের দিন সম্পর্কে বলেছেন। আপনার স্ত্রীর সবচেয়ে বড় সমস্যা এটা না যে, তিনি হিজাব করছেন না। হিজাব কেবল রোগের লক্ষণ, আসল অসুখ নয়। তার অসুখ হলো দুর্বল ঈমান। আপনি কিভাবে ঈমানকে পুনর্জীবিত করবেন? তাকে বার বার স্মরণ করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে। আর এর জন্যে সবচেয়ে শক্তিশালী গ্রন্থ কোনটি? কুরআন। আপনি যদি কুরআনের সেই আয়াত গুলো পর্যবেক্ষণ করেন যাতে অনুস্মরণের কথা বলা হয়েছে… সেখানে সব সময় কী বিষয়ে কথা বলা হয়েছে? আখিরাত আর অতীতের মানুষদের ধ্বংসের কারণ। এটাই শক্তিশালী উপদেশ। ‘যেই মানুষেরা উপদেশ গ্রাহ্য করেনি দেখ তাদের সাথে সাথে কি হয়েছিলো। দেখ, তাদের সাথে কি হতে যাচ্ছে।’ তাই না? আপনি যদি আপনার পরিবারে এমন অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন যে, প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ মিনিট আপনারা একত্রে কুরআনের কথা...
হরেক রকমের মানুষ আছে। আলহামদুলিল্লাহ। বিশেষ করে বর্তমানে মুসলিম সমাজে এমন মানুষ আছেন যারা ইসলাম মেনে চলার প্রতি অনুপ্রেরণা খুঁজে পেয়েছেন। তারা সত্যিই কিছু একটা করতে চান। আর তারা খুব হতাশ হয়ে পড়েন যখন দেখেন তার বন্ধুদের মাঝে সেই অনুপ্রেরণা নেই। তাই না? প্রথমত আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে তাদের ব্যাপারে কারণ আপনি নিজেই আগে এতটা অনুপ্রাণিত ছিলেন না। এই অবস্থায় আসতে আপনার বেশ সময় লেগেছে। আবার আপনি হাল ছেড়েও দিতে পারেন না। আপনি বলতে পারেন না, ‘ওদের কথা ভুলে যাও, এরপরের বার আমি ওদের আর ডাকব না।’ না! আপনি তাদের সব সময় ডাকবেন, তাদের দাওয়াত দিবেন। আপনি তাদের বলতে থাকবেন, বলতে থাকবেন, বলতে থাকবেন এবং একদিন এমন একটা সময় আসবে যখন সে আপনার কথা শুনতে রাজি হবে। কারণ কেবল একটা কথাই যথেষ্ট যেটা কারও মুখ থেকে বেরিয়ে এসে আল্লাহর সাহায্যে ঠিক একটা বুলেটের মত হয়ে যায়। যেটা যেকোন বুলেটপ্রুফ খোলসের মধ্য দিয়ে গিয়ে একজন মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করে। এটা তাদের এমনভাবে আঘাত করে যা তাদের জীবনকে আমূল পরিবর্তন করে দেয়। আমার কথা কিংবা আপনার কথা কাউকে বদলে দিবে না। কিন্তু আল্লাহ যখন আমাদের কথায় শক্তি সঞ্চার করে দেন… তিনি যখন কোনো একবার শুধু একজন মানুষের জন্যে… হয়ত লাখো মানুষেরা এই ভিডিওটি দেখছে কিন্তু কেবল একজন মানুষ বসে দেখেছে যার কাছে এই কথাগুলো পৌঁছে গিয়েছে এমনভাবে যে আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সে তার জীবন কে বদলে ফেলবে, আর সে পারবে। নুহ (আ) অবশ্যই একজন সুবক্তা, আমাদের কারও পক্ষেই তাঁর সমকক্ষ হওয়া সম্ভব নয়। তিনি কত দিন যাবৎ একই শ্রোতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন? ৯৫০ বছর! অথচ তেমন কোন পরিবর্তন দেখতে পাননি। তাই না? তার মানে আমরা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারি না। আর আমরা ভুলে যেতে পারিনা আল্লাহই মানুষকে...
আরবরা বলে, “হৃদয়ের নমনীয়তা হৃদয়ের কারাগারে পরিণত হতে পারে।” আপনি যদি কারও হৃদয়ে নমনীয়তা এনে দিতে পারেন এটা যেন তাকে পকেটে পুরে রাখার মতো! আপনি তাকে অর্জন করে ফেলেছেন। তারা বলে মানুষকে সুন্দর ব্যবহার দ্বারা বশ করে ফেলা যায়। আপনি কারও সাথে মনোরম ব্যবহার দেখালে সে আপনার হয়ে যাবে, তারা আপনার।এমনটাই ছিলেন আমাদের নবী (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম)। মানুষের সঙ্গে তাঁর ব্যবহার ছিলো অসাধারন। আমাদের নবীর সুন্দর ব্যবহার বিষয়ক আমার একটা প্রিয় গল্প হলো মক্কা বিজয়ের গল্প। যখন আল্লাহ তাঁকে মক্কার বিজয় দান করেছিলেন, যিনি কা’বা ঘরের রক্ষক ছিলেন তার কাছে এর চাবি ছিলো। তিনি ছিলেন একজন মুশরিক। আর তিনি মুসলিমদের চাবি দিতে আপত্তি জানালেন। ‘আমি যদি বিশ্বাস করতাম যে মুহাম্মাদ আল্লাহর বার্তাবাহক তবে চাবিটা দিয়ে দিতাম, কিন্তু সে কোনো বার্তাবাহক নয়। আমি চাবি দিব না।’ তো একজন সাহাবী নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে না বলেই জোর করে চাবিটি আদায় করে নবীর কাছে নিয়ে গেলেন। তারা কা’বা খুললেন তাতে নামায পড়লেন। তারা যখন বেরিয়ে আসছেন তখন এক আয়াত নাযিল হলো যাতে বলা হয়েছে চাবিটা সেই মুশরিক কে ফেরত দিতে এবং তার কাছে ক্ষমা চাইতে ওভাবে চাবিটা কেড়ে নেওয়ার জন্যে। আর মুসলিমদের কাছে এমন ব্যবহার পেয়ে তিনি মুসলিম হয়ে গিয়েছিলেন। অসাধারণ! আল্লাহ এমন বিজয়ঘন মুহূর্তে এই আয়াত নাযিল করেছিলেন। আর এ সমস্ত মানুষেরা তো তাঁদের উপর নির্যাতন চালিয়েছিলো, সেই সাহাবী তো তাকে নির্যাতন করেননি কিংবা হত্যা করেননি, আঘাত করেননি, তিনি কেবল চাবিটি কেড়ে নিয়েছিলেন। অপরদিকে চাবিটি তাঁর কাছে থাকার কথাও নয়, তিনি ছিলেন মুশরিক। কিন্তু আল্লাহ এমন ব্যবহার পছন্দ করলেন না, তাই আয়াত নাযিল হলো। “আল্লাহ তোমাদের আদেশ করছেন হকদার কে তাদের অধিকার বুঝিয়ে দিতে।” অভিনব দৃশ্য! দেখুন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে অন্যদের সঙ্গে ব্যবহার করতেন। একজন...
আল্লাহ আজ ওয়াজ্জাল বিবাহ সম্পর্কে বলেছেন, وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (৩০ঃ ২১) এটি কুরআনের অত্যন্ত সুন্দর কিছু বাণী। আপনারা যারা বিবাহিত তাদের পুরো বিবাহিত জীবনে এই বাণীর প্রযোজ্যতা খুঁজে পাবেন। আল্লাহ বলেন, তিনি আপনাদের মধ্যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা ‘মাওয়াদ্দা’, এবং প্রগাঢ় ভালোবাসা দিয়েছেন, ‘ওয়া রাহমা’ দৈবানুগ্রহ দিয়েছেন। কারণ, বিবাহের প্রথম দিকে ভালোবাসা প্রগাড় থাকে। আপনি আপনার স্ত্রীকে নিয়ে মুগ্ধ থাকেন। আপনি অন্য কিছুর কথা আর চিন্তা করতে পারেন না । আপনার বন্ধুরা যখন আপনাকে কল দেয়, তারা সরাসরি ভয়েস মেইল এ যায়। ঠিক? কারণ, আপনি সদ্য বিবাহিত। আপনারা জানেন, ছয় মাস ধরে আপনার কোন দেখা নেই, কেউ আপনাকে দেখে নি। কিন্তু তারপর যখন বিবাহিত জীবন আরও অগ্রসর হয়, কী আপনাদের বিবাহিত জীবন চাঙ্গা রাখে? এটা কি আগের মত থাকে? কারণ, অন্যান্য দায়িত্ব নিতে হয়। বাচ্চা হয়, কাজে ব্যস্ততার কারণে আর মধুর থাকে না। কিভাবে আপনার দাম্পত্য জীবন বজায় রাখবেন? রাহমা, আপনার স্ত্রীর প্রতি অনুগ্রহ থাকতে হবে। স্বামীর প্রতি অনুগ্রহ থাকতে হবে। একে অপরকে সম্মানপ্রদর্শন করতে হবে। একবার উমর (রাঃ) এর কাছে এক লোক আসল। সে বলল, আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাই। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কেন তুমি তোমার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাও? (উত্তরঃ) আমি তাঁকে আর ভালোবাসি না, তাঁকে আর আকর্ষিত মনে হয় না। তারপর উমর (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ফা’ইনা রি’ইয়াআ, সৌজন্যতার কি অবস্থা? তোমার স্ত্রীর প্রতি উদারতার কি হল? সে কি তোমার...
আর তারা তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটা দ্বারা আসলে বুঝায়, তারা লজ্জাশীলতা অবলম্বন করে। যখন আপনি ইসলামের জন্য কাজ করেন এবং জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও সিরিয়াস – মনে রাখবেন, একটা বিষয় সম্পর্কে আপনি কখনোই নিশ্চিন্ত হতে পারবেন না আর তা হল – কামনা-বাসনা, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ। এ বিষয়টা পুরোপুরি বাদ দেয়া অসম্ভব। তাই আল্লাহ বলছেন তারা শালীন এবং নৈতিক হতে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করে। যখন তারা কোন কাজ করে তখন তাদের মর্যাদার সংরক্ষণ করতে সতর্ক থাকে। মুসলিম ছাত্র সংগঠনের শিক্ষার্থীরা, যখন সংগঠনের কোন কাজে আত্মনিয়োগ করেন সাবধান থাকুন। (মেয়েদের বলছি) ভাইদের সাথে খুব বেশি মিশুক হবেন না। তাদের সাথে খুব বেশি বন্ধুভাবাপন্ন হবেন না। এটা করবেন না। আপনার আরও বড় লক্ষ্য রয়েছে। আপনি নিজেকে লক্ষ্যচ্যুত করছেন। এটা সঠিক নয়। (ভাইদের বলছি) সেই মেয়েটি কারো ভবিষ্যৎ স্ত্রী। ভাইটি তখন হয়তো বলবেন- তাহলে আমার ব্যাপারটা কি? আরে ভাই, আপনি কতজন সম্পর্কে এভাবে বলবেন? প্রতি দশ মিনিট পর পর!! – “হুম, এই মেয়েটি বউ হতে পারে, ওই মেয়েটিও হতে পারে!!” না। এভাবে করতে পারেন না। অপ্রয়োজনীয় আলাপচারিতা বন্ধ করুন। জীবনের লক্ষ্য ঠিক করুন আর সিরিয়াস থাকুন। ইসলাম আপনাকে এ রকম হতে দেয় না। এটা আপনাকে এরূপ বাজে আলাপচারিতা করার সুযোগ দেয় না। শুধু এই জন্য না যে কাজটি প্রকৃতিগতভাবেই একটি মন্দ কাজ। আর এটা সত্য যে কাজটি মন্দ। কিন্তু আপনার আসলে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ, বড় লক্ষ্য রয়েছে। এসব করার জন্য আপনার সময় নেই। আমেরিকাতে এমন অনেক কম্বাইন্ড বিদ্যাপীঠ রয়েছে যেখানে কোন ডেটিং হয় না। অমুসলিম স্কুল/কলেজ! কেন হয় না জানেন? কারণ তাদের শিক্ষার মান এত উন্নত যে এবং তারা ছাত্রদের এত বেশি ব্যস্ত রাখে যে – তাদের এসব করার কোন সময় থাকে না। তারা তাদের শিক্ষা নিয়ে এত ব্যস্ত থাকে !! তাদের...
– আসসালামু আলাইকুম আব্দুল্লাহ, – ওয়ালাইকুমুস সালাম। – কেমন চলছে? আপনি আপনার এক বন্ধু সম্পর্কে কথা বলতে চাচ্ছিলেন? – হ্যাঁ, আমি একজনের সাথে বল খেলছিলাম, এরপর আমরা ‘ঈদ মুবারক’ জাতীয় যা করে না, সেরকম করলাম। কিন্তু সে মনে করে যে সে এমনকি ঈদও পালন করতে পারবে না, কারণ সে মনে করে সে তার অতীতে এমন কাজ করেছে, এবং তার কারণে সে অনেক দূরে সরে গেছে (ইসলাম থেকে)। এবং তার আশেপাশের সবাইও তাকে এই ব্যাপারটা ভুলতে দিচ্ছিল না, তাই কোন আশা আর নেই। আমি তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলাম, কিন্তু সেটা কাজ করল না। – আমারও এরকম অনেক মানুষের সাথে দেখা হয়েছে। কিন্তু সুবহানাল্লাহ, আমরা অনেক নিষ্ঠুর, দয়াহীন অন্য লোকদের প্রতি। এবং পরিহাসের ব্যাপার হল, আমরা আল্লাহর কাছে নিজেদের জন্য অনেক দয়া চাই, কিন্তু আমরা অন্য লোকদের প্রতি তার বিন্দু মাত্রও প্রদর্শন করি না। মানুষ ভুল করতেই পারে, ঠিক আছে। কোন কোন লোক হারাম কাজ করে, কেউ কেউ অনন্য, অসাধারন, হারামের উপর হারাম, এমন কাজ করে। এবং অন্য লোকেরা যখন এটা সম্পর্কে জানে, তখন তারা বলা শুরু করে, ওহ তুমি তো কখনোই ক্ষমা পাবে না, তোমাকে তো কখনোই আল্লাহ মাফ করবেন না। তুমি! ভুলে যাও, তুমি তো জাহান্নামে জ্বলবে। এই ধরনের কথা বার্তা! এবং আপনি যখন বারবার এই ধরনের কথা শুনা শুরু করবেন, আপনি যখন বারবার অনুশোচনায় দগ্ধ হবেন, তখন আপনিও এটা বিশ্বাস করা শুরু করবেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যখন আপনি এটা বিশ্বাস করা শুরু করবেন যে আপনি আর ক্ষমা পাবেন না, তাহলে আপনার এই জীবনে ভাল কাজ করার আর কোন অনুপ্রেরনাই থাকবে না। যেমন ধরেন, আপনি ভাববেন কেন আমি নামাজ পড়বো? কারণ আমি তো এমনিতেই জাহান্নামে যাব। কেন আমি আমার বাবা-মার দেখাশুনা করবো? কেন আমি সত্য কথা বলবো?...
...
উপস্থাপকঃ আমাদের সাথে এমন কিছু ঘটনা শেয়ার করুন যে কীভাবে মানুষ শুধু কুরআনের কারণে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। নু’মান আলী খানঃ আমি আপনাকে গত রাতের একটি ঘটনা বলছি। গত রাতে আমি সূরা ত্বহা আলোচনা করেছিলাম। সূরা ত্বহা থেকে কিছু শিক্ষা এবং মূসা আঃ এর ঘটনার সৌন্দর্য এবং কীভাবে আল্লাহ তা আমাদের বলেছেন। আলোচনা শেষে এক তরুণী আমার নিকটে আসলো, ব্রিটেনে বড় হওয়া…মনে হয় চাইনিজ তরুণী। সে আমার কাছে এসে বলল – ” আমি অনেক দিন ধরে ইসলাম নিয়ে ভাবছি, আর আজকের লেকচার শুনে আমি খুব আলোড়িত হয়েছি, কুরআনের এই শিক্ষাগুলো আসলেই আমার মন নরম করে দিয়েছে। কিন্তু আমি আসলে নিশ্চিত নই আমি মুসলিম হতে চাই কিনা।” আমি বললাম – “তোমার পিছুটান কীসে?” সে বলল- “আমি সিওর না।” তারপর আমি বললাম – “তোমাকে এর চেয়ে ভাল উত্তর দিতে হবে”। সে কিছুক্ষণ চিন্তা করলো তারপর বলল- “আমার পিতা মাতা, আমার বন্ধু-বান্ধব, আমার আশপাশের মানুষ, চাপ, ধকল।” আমি বললাম- “এগুলো সবই বাস্তব কারণ। আমি এর সাথে টক্কর দিয়ে পারবো না, আর আমি তোমাকে এটাও বলবো না যে তুমি ইসলাম গ্রহণ করলে, এই বইকে গ্রহণ করে নিলে সব সহজ হয়ে যাবে। আমি মনে করি হ্যাঁ, ঐ সম্পর্কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নিশ্চিত এটা হবে, আমি তোমাকে এখনই বলছি। এটা আসলেই কঠিন হবে, লোকজন তোমার উপর খুবই রাগান্বিত হবে। তবে আমি তোমাকে একটা বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারি, তুমি তোমার অন্তরে যে প্রশান্তি পাবে, এবং আল্লাহর সাথে তোমার যে সম্পর্ক তৈরি হবে তার জন্য এইসব ধকল সহ্য করা যায়।” তখন সে কাঁদতে শুরু করলো। সে সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলো। তখন আমি তাকে বললাম- তুমি জানো, তুমি কেন কাঁদছ? সে বলল- কেন? বললাম – “কারণ তুমি ইতিমধ্যে ইসলাম গ্রহণ করে ফেলেছ। তোমার হৃদয় ইতিমধ্যে ইসলাম গ্রহণ...
...
...
...
...
...
ব্যাপারটা এমন যে যখন আপনি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে কিছু চান, তখন আসলে আপনি এমন একটি জায়গায় থাকেন যেখানে দাঁড়িয়ে আপনি এমন কিছু চাইতে পারেন যা আপনার কল্পনার অতীত, যা আপনার সাধ্যের অতীত। আপনি যখন আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে দুয়া করেন আর তাঁর কাছে চান, উনি আপনার জন্য এমন রিজিক বরাদ্দ করেন যা আপনার কল্পনার বাইরে। যেটা আসলে আপনার নিজের যোগ্যতায় আপনি অর্জন করছেন না আরবিতে সেটাকে বলা হয় ‘ ফাদল’। এটা অতিরিক্ত। এটা আশাতীত। তাই তখন তারা আল্লাহর কাছে এমন কিছু চায় যেটা আসলে আশাতীত, যেটা কোন রাজনীতি বিশেষজ্ঞ এটা প্রত্যাশা করেনি, কোন অর্থনীতিবিদ এটা প্রত্যাশা করেনি, কোন গবেষকও এটা প্রত্যাশা করেনি। ধরুন, যখন কেউ আল্লাহর কাছে রোগ মুক্তি চাইবে, ডাক্তার আশা ছেঁড়ে দিয়েছে, কিন্তু সে আল্লাহর কাছে ফাদল চাইতে পারেন, আর হঠাৎ করেই ডাক্তার দেখবে যে রোগীর ক্যান্সার ভাল হয়ে গিয়েছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এরকম মানুষকে চিনি যাকে মাত্র তিন মাসের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, ক্যান্সার তার ফুসফুসে পুরো ছঁড়িয়ে গিয়েছিল, সে তার শেষ মুহুর্তের জন্য তৈরি হচ্ছিল। ওই অবস্থায় সেই ব্যক্তি উমরাহ করতে গেল, আর সেখানে গিয়ে সে বলল, হে আল্লাহ যদি আমি আরো সময় বেঁচে থাকি তাহলে আমি শুধুই আপনার দ্বীনের জন্য কাজ করবো। আমি যদি বেঁচে থাকি আমি শুধু ইসলামেরই সেবা করবো, আমি জানি আমার বয়স মাত্র ২৩ বছর আর কিছুদিনের মাঝেই আমার মৃত্যু হবে যদি না আপনি আমাকে আপনার ফাদল দান করেন। এরপর সে যখন ফিরে তার চেকাপ আর শেষ দফার কেমো দিতে গেল, তখন ডাক্তাররা আর কিছু খুঁজে পেল না। ডাক্তার স্ক্যানএ কিছুই পেল না। ‘কোথায় গেল তোমার ক্যান্সার, কি করেছো তুমি’? সে বলল আমি শুধু দুয়া করেছি, আমি শুধু এতটুকুই করেছি। সে আল্লাহর কাছে কি চেয়েছিল? ফাদল। ‘ইয়াবতাগুনা ফাদলাম মিনাল্লাহি’(তারা আল্লাহর কাছ থেকে...
...
খুৎবায় আলোচিত আয়াতসমূহ: “আর আপনি তাদেরকে শুনিয়ে দিন, সে লোকের অবস্থা, যাকে আমি নিজের নিদর্শনসমূহ দান করেছিলাম, অথচ সে তা পরিহার করে বেরিয়ে গেছে। আর তার পেছনে লেগেছে শয়তান, ফলে সে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়েছে। আর আমি ইচ্ছা করলে উক্ত নিদর্শনাবলীর মাধ্যমে তাকে অবশ্যই উচ্চ মর্যাদা দিতাম, কিন্তু সে পৃথিবীর প্রতি ঝুঁকে পড়েছে এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে কুকুরের মত। যদি তার উপর বোঝা চাপিয়ে দাও তাহলে সে জিহবা বের করে হাঁপাবে অথবা যদি তাকে ছেড়ে দাও তাহলেও সে জিহবা বের করে হাঁপাবে। এটি হচ্ছে সে কওমের দৃষ্টান্ত যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে। অতএব তুমি কাহিনী বর্ণনা কর, যাতে তারা চিন্তা করে। তাদের উদাহরণ অতি নিকৃষ্ট, যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার আয়াত সমূহকে এবং তারা নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করেছে।” সূরা আ’রাফ, আয়াত ১৭৫ –...