উস্তাদ নুমান আলী খান

নুমান আলী খান একজন মুসলিম দা’ঈ। কুর’আন এর জ্ঞানে তার অসাধারণ গভীরতা এবং সুন্দর উপস্থাপনা শৈলীর কারণে সমগ্র বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশ এবং বাংলাভাষাভাষী অনেক ইসলাম অনুরাগী তরুণ তাঁর অসাধারণ আলোচনা থেকে উপকৃত হচ্ছে নিয়মিত …

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

আমাদের সাথে সংযুক্ত থাকুন

বর্তমানে আমরা ফেইসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল এ নুমান আলী খানের লেকচার গুলো নিয়মিত প্রকাশ করছি এবং এই ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে তা শ্রেণীবদ্ধ ভাবে সংরক্ষণ করছি। আপনি আমাদের ফেইসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল লাইক /সাবস্ক্রিপশন করে আমাদের সাথে আরো নিবিড় ভাবে সংযুক্ত থাকতে পারেন।

আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অভিনন্দন…

সংযুক্ত থাকুন

ভিডিও + প্রতিলিপি

জিব্রাইল (আঃ) এর গল্প (৫ম পর্ব)

রাসূল ﷺ যখন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন জিব্রিল কিভাবে সান্ত্বনা দিতেন? রাসূল ﷺ যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তিনি বলেন, জিব্রিল আমার কাছে আসলেন এবং বললেন- ও মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থ? আমি বললাম – হ্যাঁ। তখন জিব্রিল তাঁর হাত দিয়ে আমার মুখমণ্ডল এবং বক্ষ মুছে দিলেন এবং বললেন- ‘বিসমিল্লাহি আরকিকা মিন কুল্লি শাইয়িন ইয়ুজিকা’। আল্লাহর নামে আমি আপনার জন্য আরোগ্য প্রার্থনা করছি সবকিছু থেকে যা আপনার ক্ষতি করছে – ”মিন সাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন, আও হা-সিদ।” সকল খারাপ জিনিস থেকে অথবা বদ নজর থেকে বা হিংসা থেকে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুন। আল্লাহর নামে আমি আপনার জন্য আরোগ্য প্রার্থনা করছি। কিন্তু তখন ব্যাপারটা কেমন ছিল যখন জিব্রিল (আঃ) রাসূল ﷺ কে জীবন সম্পর্কে কোন উপদেশ দিতেন! এখন আমি আপনাদেরকে যে বিষয়টি বলবো সেটি রাসূল ﷺ এর জীবনের শেষ দিককার। জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) রাসূল ﷺ এর নিকট এসে বললেনঃ হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আচ্ছা, আল্লাহ কি কুরআনে কখনও এভাবে বলেছেন ‘হে মুহাম্মাদ’? না। ইয়া নাবিয়াল্লাহ, ইয়া রাসূলাল্লাহ – ও আল্লাহর নবী, ও আল্লাহর রাসূল (এভাবে বলেছেন)। তাহলে জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) কি করে ‘ইয়া মুহাম্মাদ’ বলার সাহস করলেন? আলেমরা বলেন যে, যখন জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) বলেন, ‘ইয়া মুহাম্মাদ’, এর মানে হলোঃ তিনি নবীﷺ কে এটা বুঝাতে চাচ্ছেন যে, এখনকার বিষয়টি ওহীর বাইরের বিষয়। যখন আমি আপনাকে ‘ইয়া মুহাম্মাদ’ বলি, তার মানে বিষয়টি আপনি মুহাম্মাদ আর আমার মধ্যকার। সুতরাং এটা হলো কেবল এমন একক সময় যখন জিব্রাইল ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ বলে সম্বোধন করলেন না। কারণ এখন আমি এমন কথা বলবো যা কেবল আপনার আর আমার মাঝে। বিষয়টি বুঝতে পারছেন আশা করি। সুতরাং তিনি বলেনঃ হে মুহাম্মাদ, ৫টি উপদেশ দিচ্ছি আপনাকে। ১। আপনি যেভাবে খুশি জীবন যাপন করুন। কিন্তু একথা মনে...

পরকালের বন্ধুরা

জানেন, মানুষ যখন খুশিতে থাকে তখন তারা কি চিন্তা করে? তারা বসে বসে ভাবে ইসস.. জীবনটা যদি সব সময় এরকম হত। তারা জানে যে এরকম হবার নয়, জীবনের বাঁকে বাঁকে সমস্যা আছে। কিছু না কিছু সমস্যা হবেই, শারীরিক বা মানসিক, কিছু একটা হবেই। জীবনে আর কোন সমস্যাই আসবে না এটা যদি জানা যেত!! আমার অত্যন্ত অত্যন্ত প্রিয় একটা বর্ণনা জান্নাত সম্পর্কে, এটা সুরা সাফফাত থেকে (আয়াত ৫০-৫৯) এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করলো এবং সে দেখলো সেখানে তার বন্ধুরাও আছে। তারা একজন একজনকে দেখে উচ্ছসিত হয়ে বলল ”আরে তুমিও সফল হয়েছও” তারপর তারা একে অপরকে অভিনন্দিত করলো। তারা একজন আরেকজনকে বলতে থাকবে ও আল্লাহ! তুমি, ও তুমিও। তারা আবার একজন আরেকজনের সাথে পরিচিত হতে থাকবে। আমি তোমাকে ওখানে চিনতাম। এরপর সে চিন্তা করবে আচ্ছা আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু যে তার কি হল? তাকে তো দেখছি না। অর্থাৎ সে তার পুরোনো জীবনের কথা স্মরণ করবে আর ভাববে যে তার এক বন্ধু এখানে নেই। তখন সে বাকীদেরকে জিজ্ঞাসা করবে তোমরা কি জান ওর কি হয়েছে? কিন্তু কেউই এই ব্যাপারে জবাব দিতে চাইবে না। কিন্তু সে আসলেই জানতে চায় যে তার পুরাতন বন্ধুর কি হল। ব্যাপারটা এমন হবে যে আল্লাহ জান্নাতে একটা জানালা খুলে দিবেন যাতে সে জাহান্নামে তার বন্ধুকে দেখতে পায়। এই ধরনের একটা চিত্রই ৩৭ নম্বর সুরাটিতে বর্ণিত হয়েছে। সে দেখবে যে তার সবচেয়ে ভাল বন্ধু জাহান্নামে জ্বলছে। হ্যাঁ, আপনি জান্নাত থেকে এটি দেখতে পারবেন, কারণ জান্নাতে আপনি যা চাইবেন তাই পাবেন। আর সে তার বন্ধুকে দেখতে চাইলো আর তার ইচ্ছাও পূরণ হল। তাই সে জাহান্নামের একটি ঝলক দেখতে পেল এবং সেখানে তার বন্ধুকে দেখলো। তখন সে বলবে إِن كِدتَّ لَتُرْدِينِ তুমিও আমাকে প্রায় ওখানেই নিয়ে যাচ্ছিলে। সে তার বন্ধুকে দেখলো...

তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবাদের বিয়ে করাঃ একটি ভুলে যাওয়া সুন্নাহ

আজকের খুতবার আলোচ্য বিষয় সূরা নুরের দুটি আয়াত থেকে একটু কম। এই আয়াতগুলোতে এমন এক মূলনীতি আলোচনা করা হয়েছে যার দ্বারা আমরা শুধু বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটিকে বুঝবো না, বরং সমাজে কিভাবে মানুষকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা যায় তাও বুঝবো। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল এর চেয়ে কেউ বেশি অলংকারপূর্ণ ভাষায় কথা বলে না। অল্প কিছু শব্দের মাধ্যমে তিনি এ বিষয়টা চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন যে কিভাবে মুসলিম কমিউনিটি এবং মুসলিম পরিবারগুলো তাদের ছেলে মেয়েদের বিয়ে দেয়ার বিষয়টি চিন্তা করবে। বস্তুতঃ এটা শুধু আপনার ছেলে বা মেয়ের বিয়ে দেয়ার ব্যাপার নয়। যখন এই আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয় তখন বহু মানুষ মাত্র ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। সুতরাং অনেকের কোন মুসলিম পরিবার ছিল না। এমন অনেক মহিলা ছিলেন যাদের পিতামাতা মুসলিম ছিল না, তারা তাকে সমর্থন দিচ্ছিলেন না। তাঁরা এখন সাহাবিয়াত এবং তাঁরা অবিবাহিত। অথবা যাদের বিবাহ ভেঙ্গে গেছে, অধিকন্তু সন্তান সন্ততি আছে, ইত্যাদি। সাধারণ পরিবারগুলোতে আপনার ছেলে বা মেয়ে থাকে, তারা বড় হয় অতঃপর বিয়ের বয়সে পৌঁছায় আর আপনি তাদের বিয়ে দেয়ার কথা ভাবেন। কিন্তু বৃহত্তর পরিসরে আমাদের পরিবার হল গোটা উম্মাহ। রাসূল (সঃ) সমগ্র উম্মাহকে একটি শরীরের সাথে তুলনা করেছেন। আর আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা একে ‘ইখওয়া’ বা প্রায় রক্ত সম্পর্কীয় ভ্রাতৃত্ব বলে অভিহিত করেছেন। আমরা একে অপরের ভাই। তার মানে আমরা সবাই মিলে বড় একটি পরিবারের মত। সুতরাং আমাদের সমাজে যখন পুরুষ মহিলারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না সেটা আমাদেরই সমস্যা। যার দায়ভার সম্মিলিতভাবে আমাদের সকলের কাঁধে অর্পিত হয়। তো, আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা বলেন – وَأَنكِحُوا الْأَيَامَىٰ مِنكُمْ তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও। এভাবেই বক্তব্যের শুরু। আরবিতে ‘আইম’ শব্দটি নারী পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। বেশিরভাগ সময় এটা নারীদের জন্য ব্যবহৃত হত আর কম...

প্রবন্ধ

নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাওয়া, ফিরে আসা

ক্ষমা চাওয়াটা দুইভাবে হয়ে থাকে। জিহ্বার মাধ্যমে ক্ষমা চাওয়া এবং অন্তরের মাধ্যমে ক্ষমা চাওয়া। মানুষ সাধারণত নিজের পক্ষে যুক্তি দিয়ে থাকে। আমি যদি কোনো কারণে আপনার সমালোচনা করি যেমন আমি কাউকে বললাম – ”এই যে, আমি আপনাকে অমুক কথা বলতে শুনেছি। আপনি কেন এটা বলেছেন?” সে তৎক্ষণাৎ হয়তো বলে উঠবে – ”আমি এমনটা বোঝাতে চাই নি, আপনি জানেন না আমি কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি! আপনি তো পুরো ঘটনাটাই জানেন না।” সুতরাং কেউ আপনাকে যদি বলে, ভাই আমি আপনাকে এটা এটা করতে দেখেছি। আপনি সাথে সাথে নিজের পক্ষে যুক্তি দিতে শুরু করেন, আত্মরক্ষামূলক হয়ে উঠেন। بَلِ الْإِنسَانُ عَلَىٰ نَفْسِهِ بَصِيرَةٌ – وَلَوْ أَلْقَىٰ مَعَاذِيرَهُ – ﴾বরং মানুষ নিজেই তার নিজের কাজ সম্পর্কে নিজেই পূর্ণ অবগত। তবুও তারা প্রচুর অজুহাত দেখায়﴿ [সূরা কিয়ামাহঃ ১৪]। আপনি যদি আসলেই আল্লাহর ক্ষমা চান। আপনাকে নিরিবিলি একটা সময় খুঁজে নিতে হবে। যদি আরবীতে দো’আ করতে না পারেন কোনো সমস্যা নেই। আপনি শুধু পাঞ্জাবি, বাংলা, বাহাসা বা উর্দু জানেন, কোনো ব্যাপার না, আপনি আপনার নিজস্ব ভাষাতেই আল্লাহর সাথে কথা বলুন। আন্তরিকতার সাথে আপনার অপরাধগুলো স্বীকার করে নিন। কোনো অজুহাত দেখাবেন না। এইরকম করতে পারা আসলেই অনেক কঠিন। কারণ আয়নার সামনে দাঁড়িয়েও আমরা নিজের সাথে মিথ্যা বলি। নিজেকে এভাবে প্রবোধ দেই – “আমি আসলে অতো খারাপ না। আমি যা করেছি তার কারণ আছে।” যখন আপনি আল্লাহর সামনে দাঁড়াবেন, নিজের কাজের বৈধতা দেয়ার কথা ভুলে যান। কারণ যেসব অজুহাতের মাধ্যমে আপনি আপনার কাজের বৈধতা দিতে চান, তিনি ইতোমধ্যে তার সবগুলোই জানেন। আল্লাহ জানেন আপনি কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তিনি জানেন এটা কঠিন সময় ছিল, তিনি জানেন অমুক অমুক বিষয় আপনাকে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে ফেলেছিলো। ” ইয়া রব, আমি অনেক চাপের মধ্যে ছিলাম তাই মদ খেয়েছি।” তাঁকে...

এসব আমার!!

– নোমান আলী খান। আমাদের অনেকেরই, আলহামদুলিল্লাহ, এখনো পিতামাতা আছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের পিতামাতাকে বাঁচিয়ে রাখুন, তাদের হেদায়াত দিন, তাদের ভুলত্রুটি মাফ করুন, তাদের হেফাজত করুন। তবে কল্পনা করুন আপনার মা প্রচন্ড অসুস্থ, এবং পিতা ইন্তেকাল করেছেন, এবং কেবল তিনিই বাকি আছেন, তাঁর বয়স অনেক, নিজে নিজে খাট থেকেই উঠতে পারেন না। এতটাই বৃদ্ধ যে কথাই বলতে পারেন না। সে বৃদ্ধা মানুষটা, একটা সময় আপনি-আমি ছিলাম অসহায়, এখন তিনি অসহায়। তিনি একদমই অসহায় অবস্থায় আছেন। এ অবস্থায় তিনি কোনোভাবে আপনার সাথে যোগাযোগ করলেন। ১০০ টাকা ধার নিলেন, বললেন “দিয়ে দিবো শীঘ্রই। জানি না কবে পারবো, তবে দিয়ে দিবো। ওয়াদা করলাম।” যখন তিনি এটা বললেন, আপনার কেমন অনুভূতি হবে? আপনার অনুভূতি হবে, আমার অনুভূতি হবে, যে ইনি আমার মা। কেন আমি জানলাম না যে আপনার কিছু একটা দরকার ছিলো, আর অবস্থা এখন এমন, আপনাকে আমার কাছে চাইতে হচ্ছে! এমনকি এমনভাবে চাচ্ছেন, যা বলে দিচ্ছেন আপনি আমাকে কি ভাবেন। আপনি আমাকে এমন ভাবেন, যে শুধু মন থেকে আপনাকে কিছু দিবে না তাই না, বরং দেয়ার পর আবার ভাবতেও থাকবো, কবে ফেরত পাবো। তিনি কি আমাকে ফেরত দিবেন, নাকি অন্য কিছু? আমার মা ভাবছেন আমি এত লোভী! আমার মা ভাবছেন আমি মনে হয় টাকা কামড়ে পড়ে থাকি! তাঁর কি দরকার, তিনি কি চান, তা যেন চিন্তাতেই নেই! আমার সবচেয়ে বড় চিন্তা নাকি কবে আমি টাকা ফেরত পাবো! কবে টাকা দিবেন তিনি! কথাটা ছেলেমেয়েদের কাছে শুনতে খুবই অপমানকর। কেন? কারণ ছেলেমেয়েদের মাথায় চিন্তা আসবে, আমার মা আমাকে কি ভাবেন? মা আমাকে লোভী ভাবেন। মা আমাকে এমন ভাবেন, যেন আমি কিছু দিবোই না, সর্বোচ্চ গেলে কিছু ধার দিবো। আবার মনে মনে সেটা ফেরতও চাইবে। এ হয়ে গেলো আপনার মা এবং তিনি আপনাকে...

বিচার দিবসে আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

— নোমান আলী খানআমি আপনাদের আগেই সতর্ক করে দিচ্ছি। আজকের বক্তব্যটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করার চেষ্টা করবো কিন্তু ৪৫ মিনিটের কমে শেষ করতে পারব বলে মনে হয় না। আগেই বলে দিচ্ছি, যেন আপনারা বিরক্ত না হয়ে পড়েন। আবারো বলছি, আমি আগেও আপনাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছিলাম কীভাবে কোন শব্দ না করে চুপি চুপি মসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে হয়। পাশের দরজাগুলো দিয়ে কেউ চলে যেতে চাইলে যেতে পারেন, আমি মাইন্ড করব না।আজ আমি ভয়ানক একটি ব্যাপার নিয়ে বক্তব্য শুরু করতে চাই। আমাদের ধর্ম হল সত্য ধর্ম। আর সত্য সুখবর যেমন প্রদান করে তেমনি সাবধানবাণীও প্রদান করে। আমাদের সকল নবী রাসূলদের বিশেষত রাসূলুল্লাহ (স) কে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা বর্ণনা করেছেন “মুবাসশিরান ওয়া নাজিরান” হিসেবে। সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী। যদি কাউকে শুধু সুসংবাদ প্রদান করেন তাহলে সে সাবধানবাণীর কথা ভুলে যাবে। আর যদি শুধু সতর্ক করতে থাকেন তাহলে সে এতোই হতাশ হয়ে পড়ে যে মনে করে ভালো খবর বলতে কিছু নেই। বুঝতে পারছেন?আমি চেষ্টা করেছি এই ভারসাম্য রক্ষা করার। যেহেতু, এই মাসটি প্রত্যাশার মাস তাই আমি সুসংবাদের উপর একটু বেশি জোর দিয়েছি। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লার প্রতি আমাদের আশা এবং ভালবাসা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু, একই সময়ে এর মাঝে একটা ভারসাম্য থাকতে হবে। যদিও আজকের বক্তব্যের শেষ অংশে আশার খবর রয়েছে, কিন্তু শুরু করছি এমন একটা জায়গা থেকে যা অতটা আশাব্যঞ্জক নয়।দেখুন, আমাদের পূর্বের জাতি বনী ইসরাইলকে আল্লাহ বই দান করেছেন। আমাদের যেমন কুরআন রয়েছে তাদেরকেও অন্য কিতাব দেওয়া হয়েছিল। কুরআন যাকে বর্ণনা করেছে অন্য কুরআন হিসেবে, অর্থাৎ আগের কিতাব। তারা তাদের কিতাবকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেনি। তাদের মাঝে বেশ কিছু বিভ্রান্তিমূলক ধারণা গড়ে উঠে – ‘আমরা যদিও এতো ভালো মুসলমান নই, সমস্যা নেই, আল্লাহ যদি আমাদের দোজখে ফেলেনও- সবচেয়ে...

কার অন্তরে মোহর মারা হয়েছে?

নোমান আলী খান আমি তোমাদের ছোট একটি উপমা দিতে চাই, যা তোমাদের এই বিষয়টি বুঝতে সাহায্য করবে যে, কুরআনে কেন কোনো কোনো মানুষের অন্তরে সিল মেরে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তোমাদের অনেকেই ব্যায়াম করার সাথে পরিচিত। মনে করো, কেউ একজন এক্সিডেন্টের কবলে পড়লো এবং হাসপাতালে ভর্তি হলো। তাকে ছয় মাস যাবৎ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে হলো। সে ছয় মাস থেকে এক বছর যাবৎ পা নাড়াতে পারেনি। শেষে, যখন সে উঠতে যাবে সে কি তার পা ব্যবহার করতে পারবে? না। সম্ভবত, সে উল্টে পড়ে যাবে। আমাদের মাংসপেশিগুলো যদি ব্যবহার করা না হয়, যদি এগুলোর অনুশীলন করা না হয়, তাহলে এগুলো কাজ করার শক্তি হারিয়ে ফেলতে থাকে। যেমন, তুমি যদি পাঁচ বছর যাবৎ তোমার চোখ বন্ধ করে রাখো, সম্ভবত চোখের জ্যোতি হারিয়ে ফেলবে। বুঝতে পারছো? হেদায়াত গ্রহণ করার সামর্থ, নিরপেক্ষভাবে কোনো কিছু চিন্তা-ভাবনা করার সামর্থ হলো আল্লাহর দেওয়া মাসল, আধ্যাত্মিক পেশী, বুদ্ধিবৃত্তিক পেশী। নবী করিম (স) এর সময়কালে মানুষকে এই পেশীগুলোর অনুশীলন করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা অস্বীকার করে। যখন সত্য তাদের নিকট এসেছিলো তারা সত্যকে গ্রহণ করার এবং গুরুত্বের সাথে একে বিবেচনা করার সামর্থ অনুশীলন করতে অস্বীকার করে। এখন, তুমি যদি এভাবে প্রতিনিয়ত তোমার এই সামর্থ অনুশীলন করতে অস্বীকার করো…. তুমি চিন্তা করতে অস্বীকার কর, তুমি তোমার অন্তর ব্যবহার করতে অস্বীকার কর, তুমি আন্তরিক হতে অস্বীকার কর, তাহলে কী হবে ভাবতে পারো? পরিশেষে, তোমার অন্তর শুরুতে যে কাজ করার সামর্থ রাখতো সেই সামর্থ হারিয়ে ফেলবে। তুমি সেই পেশী হারিয়ে ফেলেছো। সেই সামর্থ হারিয়ে ফেলেছো। এই উপমার মাধ্যমে আমরা অন্তর মোহরাংকিত হওয়ার মানে উপলব্ধির একটি চেষ্টা করলাম মাত্র। ব্যাপারটা এমন নয় যে, তাদের একটি বিলিফ সিস্টেম রয়েছে এবং সেটাতে সিল মেরে দেওয়া হয়েছে। একজন ব্যক্তি নাস্তিক হতে পারে বিভিন্ন কারণে,...

কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হওয়ার পরিণাম।

– নোমান আলী খান নামাজ আদায় করাকে আমরা বলি ‘ইকামাতুস সালাহ।’ ‘ইকামা’ শব্দের অর্থ হলো দাঁড়ানো। আর যখন আপনি দাঁড়ান আপনি এদিক ওদিক হেলে পড়েন না। বর্তমানে, পৃথিবীর সামাজিক মূল্যবোধে রয়েছে ‘ইওয়াজ বা বক্রতা।’ কিন্তু, এই কিতাবটি অনড় অটল, আর এটা আপনাকেও অনড় করে তোলে। এটা সোজা দাঁড়িয়ে থাকে, এর মূল্যবোধে সামান্যতম নড়াচড়াও পরিলক্ষিত হয় না। এখন, আল্লাহ আমাদেরকে এই ইস্পাত কঠিন মূল্যবোধগুলো দেয়ার পর আমরা কী করলাম? আল্লাহ বলেন – فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ – ১৯:৫৯ ”অতঃপর তাদের পরে এল অপদার্থ পরবর্তীরা। তারা নামায নষ্ট করল ….” তারা নামাজ নষ্ট করলো। আর যখন আপনি নামাজ নষ্ট করেন – নামাজের সাথে যে নৈতিক মূল্যবোধগুলো আপনি পেয়েছিলেন সবগুলো তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে। যখন আপনি নামাজ ছেড়ে দেন তখন এটাই ঘটে। এরপর কী হয়? وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ – ”এবং তারা কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। আজ আমরা কোন পৃথিবীতে বসবাস করছি? ভোগবাদী যে বিশ্বে আজ আমরা বসবাস করছি তার নিকট চূড়ান্ত নৈতিকতা মানে হলো – ”তোমার কামনা বাসনার অনুবর্তী হও, তোমার মন যা চায় তাই করো।” জাস্ট ডু ইট, শব্দগুলো পরিচিত মনে হয়? আমার নিজের কাছে যদি এটা সঠিক মনে হয় তার মানে এটা সঠিক। …আমরা অফিসিয়ালি এমন এক জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছি যারা وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। প্রথম পতন কোনটি ছিল? নামাজ। এরপরের আরও জঘন্য পতন হল, فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا (Then they will fall into deviation) غَي এর আক্ষরিক অর্থ হল, deviation বিচ্যুতি, নৈতিক অধঃপতন। অর্থাৎ, তাদের মূল্যবোধের ক্রমান্বয়ে অধঃপতন ঘটবে। অনৈতিকতার এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে ক্রমান্বয়ে নামতে থাকবে। আর এরপর তাদের চূড়ান্ত পতন হবে জাহান্নামে। আর তাই এই আয়াতের তাফসিরে বলা হয় – امطرت السماء نباتا – “আকাশ শাকসবজি বর্ষণ করেছে।” আকাশ শাকসবজি বর্ষণ করে না, আকাশ থেকে...

মু’জিযা

মূসা (আঃ) এর নাম, একটি মৃত ভাষা ও কুর’আনের মু’জিযা

মূসা (আঃ) এর নাম, একটি মৃত ভাষা ও কুর’আনের মু’জিযা

  মূসাকে হিব্রু ভাষায় ‘মুশেহ’ বলা হয়… মূসা বলা হয় না। এই মুশেহ এর প্রথমাংশ ‘মু’ এর অর্থ হল আরবী ‘মা’(=পানি) এর মত। মূসা অর্থ পানি, আর এক্ষেত্রে ইহুদিরা বলে মূসা শব্দটি হিব্রু। আমি বলি মূসা শব্দটি হিব্রু নয়। এটা হিব্রু শব্দ হতে পারে না। অথচ ইহুদিরা এটাকে হিব্রুই বলে। আমি বলিঃ <> বলুন তিনি কোথায় জন্মগ্রহন করেছিলেন? – মিশরে। <> তিনি কোথায় বড় হয়েছিলেন? – ফিরাউনের প্রাসাদে। <> তাঁর দায়িত্বে কে ছিল? – ফিরাউন। <> তাহলে একজন নতুন শিশুকে কে নামকরণ করবে? যে দায়িত্বে আছে সে নাকি চাকর-বাকরেরা? – অবশ্যই দায়িত্বরত ব্যক্তি। <> তাহলে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা কার ভাষায় নামরকণ করবে প্রভূর ভাষায় নাকি চাকরদের ভাষায়? – অবশ্যই প্রভূদের ভাষায়। আর প্রভূদের ভাষা ছিল মিশরীয়, হিব্রু নয় ((ফিরাউনের রাজ্য মিশর, আর তার ভাষা মিশরীয়)। কিন্তু সমস্যাটা কোথায় জানেন? রাসূল (সাঃ) এর জন্মের ৩০০০ বছর পূর্বে মিশরীয় ভাষা বিলুপ্ত হয়েছিল। কেউ মিশরীয় ভাষা জানত না। সুতরাং রাসূল (সাঃ) এর সময়ে কেউ যদি জিজ্ঞেস করত ‘মূসা’ অর্থ কী? কেউ বলতে পারত না। (আমরা না হয় আধুনিক যুগে বাস করি এবং এজিপ্টলজি বা মিশরীয় হায়ারুগ্লিফিক্স আবিষ্কারের কারণে এখন অর্থ বের করতে পারব, কিন্তু রাসূল সা এর সময়ে এটা জানা অসম্ভব ছিল)। মূসা এর অর্থ কী এটা জানার আগে চলুন দেখি কুর’আন কী বলে। সূরা কাসাস এর ৯নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ০ لَا تَقْتُلُوهُ عَسَى أَن يَنفَعَنَا أَوْ نَتَّخِذَهُ وَلَدًا وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ অর্থঃ “…তাকে হত্যা করো না। এ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে নতুন পুত্র হিসেবে গ্রহন করে নিতে পারি।” ‘মূসা’ শব্দটি মিশরীয় ভাষায় বলা হয় ‘নতুন জন্মপ্রাপ্ত’। তার মানে লক্ষ্য করেছেন? নিশ্চয় আল্লাহ কুর’আনে ‘মূসা’ শব্দের অনুবাদ করেছেন ‘وَلَدًا’ বা ‘নতুন জন্মপ্রাপ্ত শিশু’ হিসেবে অর্থাৎ ‘মূসা = নতুন জন্মপ্রাপ্ত...
কোরআন কেন মানব রচিত হতে পারে না – ৩য় পর্ব

কোরআন কেন মানব রচিত হতে পারে না – ৩য় পর্ব

আমরা কেন কোরআনে বিশ্বাস করি আরবরা ছিল ট্রেডিশনাল মানুষ, তারা যাযাবরদের মত ভ্রমন করত। যেহেতু তাদের ভূমি ছিল অনুর্বর এবং মরুভূমি আর সেকারণে ভূ-রাজনৈকিত ও অর্থনৈতিকভাবে কেউ তাদের উপর আক্রমন করত না-কারণে সেখানে কোন লাভ নেই। আরব ছিল রুমান ও ইরানিয়ান সাম্রাজ্যের মধ্যভাগে আর সেকারণে কেউ তাদের সাথে কোন সমস্যা তৈরি করত না এই ভয়ে যে এতে এই দুই সাম্রাজ্যের মধ্যে ভয়াভহ যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। তারা অন্যান্য সাম্রাজ্যের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতো, কারণ সেখানে সম্পদ ছিল আর এসব আরবে অনুপস্থিত ছিল অনুর্বর, মরুভূমি ও উন্নত সম্পদ না থাকায়। এভাবে আরবদেরকে ততকালীন উন্নত সাম্রাজ্য শত শত বছর বিচ্ছিন্ন রেখেছিল তাদের প্রভাব থেকে। আর এইসব বিচ্ছন্নতার কারণে আরবরা ছিল তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ, বাহিরের কোন প্রভাবও ছিল না। আর কেউ যখন বিচ্ছিন্ন থাকে তখন কিন্তু নিজের সাথেই কথা বলে। আর এভাবেই তাদের ভাষায় অন্যদের প্রভাব না থাকার কারণে বিশুদ্ধ থেকে বিশুদ্ধতম হতে থাকে এবং বিশুদ্ধই থাকে। আর অন্যরাও এ ভাষা শিক্ষায় আগ্রহী ছিল না কারণ এতে পার্থিব-সম্পদগত কোন লাভ নেই! আপনারা জেনে থাকবেন যে যখন অনেকগুলো কালচার বা শক্তিশালী ক্ষমতা অন্যকে দখল করে নেয় তখন সেই স্বদেশীয় ভাষা কলুষিত হয়(যেমন বাংলা—কত ভাষার সমষ্টি ও বিকৃতি এসেছে এ ভাষায়-সেই ওলন্দাজ থেকে ইংরেজ সাম্রাজ্য পর্যন্ত) অথবা যে কোন দেশ বা অঞ্চল বৈশ্বিক বাজারে বা কসমোপলিটানে রুপান্তরিত হয় সেখানেও ভাষার ভিন্নতা দেখা যায় যেমন প্রাচীনকালের চিটাগাং(সামুদ্রিক ব্যবসায়ী কেন্দ্র ছিল) বা নিউইয়র্কে বিভিন্ন দেশের লোকেদের ইংরেজির বেহাল অবস্থা! এভাবে একটি ভাষা যখন কোন প্রভাব ব্যতিত টিকে থাকে, সেটা বিশুদ্ধ থাকে-সেরকম ছিল আরবী ভাষা। আরবের চতুর্পার্শে কিছুই ছিল না, কেবল মরুভূমি ছাড়া। আর এজন্য তাদের কাল্পনিক চিন্তাশিলতা ছিল প্রখর(যেহেতে চতুর্পাশ্বে কিছু ছিল না তাই কল্পনার চিন্তাশক্তিই তাদের শৈল্পিক দিক ছিল)। যখন কারো চতুর্পাশ্বে কিছুই থাকে না,...
কোরআন কেন মানুষের সৃষ্টি হতে পারে না – ২য় পর্ব

কোরআন কেন মানুষের সৃষ্টি হতে পারে না – ২য় পর্ব

  আমরা কেন কোর’আনে বিশ্বাস করি কোরআনের চ্যালেঞ্জ বলতে কী বুঝায়? কোরআনের চ্যালেঞ্জ ছিল ‘কোরআনের অনুরুপ কিছু নিয়ে আস’। আর এই ‘চ্যালেঞ্জ’ বলতে অনেক কিছু বুঝায়, কেবল কিছু শব্দের সমষ্টিযুক্ত বাক্য নয় যা অনেক সমালোচনাকারীরা মনে করে-এটা নিতান্তই সরল ও অবুঝ উপলব্ধি। এই চ্যালেঞ্জ অনেক কিছুই হতে পারে যেমন ১। কোরআনের সৌন্দর্যের মত সৌন্দর্যময় কিছু তৈরি করা। ২। কোরআনের মত শক্তিশালী জিনিস তৈরি করা। ৩। কোন ব্যক্তির উপর কোরআনের যে প্রভাব সেটা তৈরি করা। ৪। একটা সমাজের উপর কোরআনের যে প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, সেরূপ প্রভাব সৃষ্টি করা। অর্থাৎ এই চ্যালেঞ্জ এক ধরণের নয়, অনেক কিছুর হতে পারে। এর মধ্যে একটি চ্যালেঞ্জ হল– কোরআন কত বছরে অবতীর্ণ হয়েছিল? দীর্ঘ ২৩ বছরে। আর এই ২৩ বছরে কোরআন কী করেছিল আরব সমাজে? কোন ধরণের পরিবর্তন এনেছিল তাদের মাঝে? ঐতিহাসিক দৃষ্টি… কোরআন নাযিল হয়েছিল দীর্ঘ ২৩ বছরে। আর এই কোরআনের প্রভাবে কি হল সেই সমাজ ও তার মানুষের উপর, তা একবার দেখুন… ঐ সমাজ বহু ঈশ্বরবাদী সমাজ থেকে পরিবর্তিত হয়ে এক আল্লাহতে ইবাদাতকারী সমাজে পরিণত হল। একটা সমাজ পূর্ণরুপে পাল্টে গেল, একেবারে পূর্ণরুপে। তাদের মধ্যে মানুষের মর্যাদায় কোন বৈষম্য রইল না …কালো, সাদা, আফ্রিকান, আরবী, অনারবী সবাই একই কাতারে নামাজ পড়তে শুরু করল। তারা ভাবত নারীরা কিছুই না, কিন্তু সেই পরিবর্তিত সমাজের নারীরাই হল সর্বাপেক্ষা সম্মানিত। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে ‘তাকওয়া’(সদা আল্লাহর উপস্থিতির চিন্তা) শব্দটা ব্যবহৃত হয়নি একমাত্র মায়ে’দের ছাড়া। আল্লাহ মায়েদের এত মর্যাদা দিলেন! সকল গোত্র সমান হয়ে গেল।  তাদের ব্যবসা, খাওয়া-পান করার মধ্যে সীমাবদ্ধতা আসল। তারা হালাল ব্যবসা ছাড়া অন্য কিছু ত্যাগ করল। পিতা-মাতার সম্পর্ক কেমন হবে, সন্তানদের সাথে কেমন সম্পর্ক হবে, আত্মীয়দের সাথে কেমন সম্পর্ক হবে, বন্ধুদের সাথে কেমন হবে সম্পর্ক, অমুসলিমদের সাথে কেমন সম্পর্ক ও ব্যবহার হবে, স্বামী-স্ত্রীর...
মধ্যমপন্থী জাতি ও অলৌকিক মু’জিযা

মধ্যমপন্থী জাতি ও অলৌকিক মু’জিযা

কোর’আনের সবচেয়ে বড় সূরাটি নিয়ে কথা বলছি এখন। এটি ২য় নং সূরা, সূরা বাকারাহ। আয়াত সংখ্যা- ২৮৬. এই সূরার কোনো এক জায়গায় এই আয়াতটি এসেছে… وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًاٌ “এভাবে আমি তোমা্রকে একটি একটি মধ্যমপন্থী জাতি হিসেবে তৈরি করেছি” এখানে ‘মধ্যমপন্থী’ এর আরবী কি? ‘ওয়াসাতা’। কিন্তু মূল বিষয় ও এর সাজানোর ধরণ কি জানেন আপনি? আপনি নিশ্চয় কোর’আন সংকলনের ইতিহাস, নাযিলের ইতিহাস ইত্যাদি জেনে থাকলে এটাও জানেন যে কোর’আন কখনই লিখিত আকারে অবতীর্ণ হয়নি। এটা বক্তব্য আকারে নাযিল হয়েছে; যা একবার বলার পর আর ফেরত নেওয়া যায় না। ঐতিহাসিক ডকুমেন্ট থেকে এটাও জানতে পারি যে এই সূরা একসাথে নাযিল হয়নি…প্রায় ১০ বছর ধরে ছোট্ট ছোট্ট অংশ করে নাযিল হচ্ছিল। এবং এই দশ বছরে আরো অন্যান্য সূরাও নাযিল হচ্ছিল। আর সাহাবাদেরকে ওহী(আল্লাহর অবতীর্ণ বাণী)অনুযায়ী নির্দেশ দেওয়া হত ‘এই আয়াতগুলো’ যাবে ‘অমুক’ সূরায়; ‘ঐ আয়াতগুলো’ যাবে ‘অমুক’ সূরায় আর ‘এইসব আয়াতগুলো’ যাবে ‘তমুক’ সূরায়। এভাবে প্রায় ১০ বছর শেষে অন্যান্য সূরার নাযিলের সাথে এই সুরা পূর্ণ একটি রূপ পায় যার আয়াত সংখ্যা হয় ২৮৬। এই বিশাল সূরার ১৪৩ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন… وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًاٌ “এভাবে আমি তোমাদেরকে একটি মধ্যমপন্থী জাতি হিসেবে তৈরি করেছি” এই সূরায় কতটি আয়াত? – ২৮৬ ‘মধ্যমপন্থী জাতি’ বলা হয়েছে কত আয়াতে? – ১৪৩ অর্থাৎ পূর্ণ সূরার ঠিক মাঝের আয়াতে!!!!আল্লাহ আমাদেরকে ‘মধ্যমপন্থী জাতি’ বলেছেন ‘ঠিক মধ্যম আয়াতে’ সুবহানাল্লাহ। এটাই মু’জিযা- অলৌকিকত্ব, যা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কেন এটি মু’জিযা? আপনি লিখিত বইতে হয়তো এভাবে মিলিয়ে লিখতে পারেন কিন্তু বক্তব্য আকারে কীভাবে সম্ভব?! আপনি ১০ বছর কারো সাথে কথা বললেন, কোন হিসাব না করে, সাথে অন্যান্য হাজার, লাখো রকম কথা বলেন, এই কথাগুলো কোনো একদিন রেকর্ড করে কি এভাবে কোনো কিছু মেলাতে পারবেন?…আমাদের তো ১মাস আগের...
সুর ও আল-কুর’আনের মু’জিযা

সুর ও আল-কুর’আনের মু’জিযা

  যারা আরবী জানেন ও যারা জানেন না – তারা এই শব্দগুলোকে একটু মনযোগ দিয়ে উচ্চারণ করুন আর দেখুন কোনো মিল খুঁজে পান কি না: যাকারিইইয়া, খাফিইইয়া, শাকিইইয়াহ, রাজিইইয়াহ, ওয়ালিইইয়া, শারিইইয়া, নাবিইইয়া, হাইইয়া ইত্যাদি। যারা আরবী জানেন না তারা কি কিছু লক্ষ্য করেছেন? যারা আরবী জানেন না তারা নিশ্চয় শব্দগুলো কীভাবে উচ্চারিত হচ্ছে তা লক্ষ্য করেছেন। সবগুলো একই সুরে অন্তমিলের সুর ছড়াচ্ছে। এটি সূরা মারিয়ামে রয়েছে, যা পবিত্র কুর’আনের অন্যান্য সূরার মতোই একটি সূরা। প্রত্যেকটি আয়াতের সমাপান্তে শব্দগুলোতে অন্তমিলের সুরবিন্যাস রয়েছে। যিকরু রাহমাতি রাব্বিকা আব্দাহু যাকারিইইয়াহ, ইজ নাদা রাব্বাহু নিদাআন খাফিইইয়া (২-৩) ইত্যাদি। আর এভাবে এটা সমাপান্তে সুর করে চলতেই থাকছে…চলতেই থাকছে…। কিন্তু, কিছুদূর যাওয়ার পর কী দেখতে পেলেন? সূর পাল্টে গেছে (ইয়ামতারুন)?!! কিন্তু কেন? এটা আর আগের শব্দগুলো খাফিইইয়হ, শাকিইইয়া বা ইনশিইইয়া এগুলোর মতো সুর মিলছে না শব্দান্তে। এখন শুরু হয়েছে শব্দান্তের মিলের ভিন্ন সুরধ্বনি: ইয়ামতারুন, ফা ইয়াকুন, মুস্তাকুন, আযিম, মুবিন, ইউমিনুন। সুতরাং, এভাবে আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, প্রাথমিক কিছু আয়াত যেগুলো একই সুরের অন্তমিলের সুরধ্বনি, আর কিছুদূর যাওয়ার পর একই সূরায় অন্তমিলের ভিন্ন সুরধ্বনি। অথচ একই সূরায়, কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে ভিন্ন সুর। যখন বিষয়টি ছিল একই, নবীদের কাহিনী, তখন সূরের অন্তমিলের ধ্বনিও ছিল একই-অভিন্ন। কিন্তু যখনই বিষয়টি (Topic of Subject) পরিবর্তিত হয়েছে তখনই ভিন্ন অন্তমিলের সুরধ্বনি এসেছে। এটা এক প্রকার প্যারাগ্রাফ-এর মতো যেখানে প্রতি প্যারায় একই টপিকের ভিন্ন ভিন্ন দিকের আলোচনার মতো। আপনি স্পেস দেন লেখায়, ট্যাব চাপেন বেশি দূরে যাওয়ার জন্য, সরিয়ে নেন, একটার উপর আরেকটা লেখেন, বা অনেকটটা জায়গা ছেড়েও দেন লেখার বিভিন্ন ধরণের জন্য। কিন্তু কুর’আনে এগুলো নেই! তাহলে কুর’আনে কী আছে? এটার রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সুরবিন্যাস। যেহেতু একটি বিষয় পরিবর্তিত হয়েছে, আর সেজন্য শ্রোতা যাতে বুঝতে পারে যে এখন...

Facebook Like

সাথেই থাকুন

 

<—-Facebook & YouTube —->

Youtube Subscriber