উস্তাদ নুমান আলী খান

নুমান আলী খান একজন মুসলিম দা’ঈ। কুর’আন এর জ্ঞানে তার অসাধারণ গভীরতা এবং সুন্দর উপস্থাপনা শৈলীর কারণে সমগ্র বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশ এবং বাংলাভাষাভাষী অনেক ইসলাম অনুরাগী তরুণ তাঁর অসাধারণ আলোচনা থেকে উপকৃত হচ্ছে নিয়মিত …

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

আমাদের সাথে সংযুক্ত থাকুন

বর্তমানে আমরা ফেইসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল এ নুমান আলী খানের লেকচার গুলো নিয়মিত প্রকাশ করছি এবং এই ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে তা শ্রেণীবদ্ধ ভাবে সংরক্ষণ করছি। আপনি আমাদের ফেইসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল লাইক /সাবস্ক্রিপশন করে আমাদের সাথে আরো নিবিড় ভাবে সংযুক্ত থাকতে পারেন।

আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অভিনন্দন…

সংযুক্ত থাকুন

ভিডিও + প্রতিলিপি

আমার স্ত্রী হিজাব করছে না ‒ কী করবো?

তাকে হিজাব পরার ব্যাপারে কিছুই বলবেন না। হিজাব বিষয়ে তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিন। একেবারেই বন্ধ করে দিন। আপনি যেটা করবেন, আসলে আপনি তার সাথে কথা বলবেন না(ইসলাম নিয়ে)… কারণ প্রায় সময়ই দেখা যায়, যেই মানুষেরা আমাদের প্রতি দাওয়াহ দিতে সবচেয়ে অকার্যকর তারা আসলে নিজস্ব পরিবারের সদস্য। তারা একজন অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে কথা শুনতে বেশি আগ্রহী এবং তার উপদেশ গ্রহণ করতে রাজি আছে কিন্তু নিজের পরিবারের কাছ থেকে তা শুনতে চাইবে না। এটা কিন্তু আমাদের মত বক্তাদেরও সমস্যা। তারা সারা দুনিয়াকে দাওয়াহ দিতে পারে। কিন্তু দেখা যায়, তারা অন্য কারও টেপ বা অন্য কারও সিডি নিয়ে আসে গাড়িতে শুনার জন্যে। (কারণ পরিবারের সদস্যরা বলতে থাকে) ‘তোমার কথা আর শুনতে চাই না! অনেক শুনেছি!’ তাই না? এমনটা হয়ে থাকে। তো প্রথমত আপনাকে বুঝতে হবে, যখন পরিবারের কাছে দ্বীনের শিক্ষা দিবেন আপনার একটু কৌশলী হতে হবে। আপনার ধাপে ধাপে আগাতে হবে। একজন খুব দক্ষ বক্তা খুঁজে বের করুন যিনি আখিরাত এবং শেষ বিচারের দিন সম্পর্কে বলেছেন। আপনার স্ত্রীর সবচেয়ে বড় সমস্যা এটা না যে, তিনি হিজাব করছেন না। হিজাব কেবল রোগের লক্ষণ, আসল অসুখ নয়। তার অসুখ হলো দুর্বল ঈমান। আপনি কিভাবে ঈমানকে পুনর্জীবিত করবেন? তাকে বার বার স্মরণ করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে। আর এর জন্যে সবচেয়ে শক্তিশালী গ্রন্থ কোনটি? কুরআন। আপনি যদি কুরআনের সেই আয়াত গুলো পর্যবেক্ষণ করেন যাতে অনুস্মরণের কথা বলা হয়েছে… সেখানে সব সময় কী বিষয়ে কথা বলা হয়েছে? আখিরাত আর অতীতের মানুষদের ধ্বংসের কারণ। এটাই শক্তিশালী উপদেশ। ‘যেই মানুষেরা উপদেশ গ্রাহ্য করেনি দেখ তাদের সাথে সাথে কি হয়েছিলো। দেখ, তাদের সাথে কি হতে যাচ্ছে।’ তাই না? আপনি যদি আপনার পরিবারে এমন অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন যে, প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ মিনিট আপনারা একত্রে কুরআনের কথা...

বন্ধুদের প্রতি দাওয়াহ

হরেক রকমের মানুষ আছে। আলহামদুলিল্লাহ। বিশেষ করে বর্তমানে মুসলিম সমাজে এমন মানুষ আছেন যারা ইসলাম মেনে চলার প্রতি অনুপ্রেরণা খুঁজে পেয়েছেন। তারা সত্যিই কিছু একটা করতে চান। আর তারা খুব হতাশ হয়ে পড়েন যখন দেখেন তার বন্ধুদের মাঝে সেই অনুপ্রেরণা নেই। তাই না? প্রথমত আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে তাদের ব্যাপারে কারণ আপনি নিজেই আগে এতটা অনুপ্রাণিত ছিলেন না। এই অবস্থায় আসতে আপনার বেশ সময় লেগেছে। আবার আপনি হাল ছেড়েও দিতে পারেন না। আপনি বলতে পারেন না, ‘ওদের কথা ভুলে যাও, এরপরের বার আমি ওদের আর ডাকব না।’ না! আপনি তাদের সব সময় ডাকবেন, তাদের দাওয়াত দিবেন। আপনি তাদের বলতে থাকবেন, বলতে থাকবেন, বলতে থাকবেন এবং একদিন এমন একটা সময় আসবে যখন সে আপনার কথা শুনতে রাজি হবে। কারণ কেবল একটা কথাই যথেষ্ট যেটা কারও মুখ থেকে বেরিয়ে এসে আল্লাহর সাহায্যে ঠিক একটা বুলেটের মত হয়ে যায়। যেটা যেকোন বুলেটপ্রুফ খোলসের মধ্য দিয়ে গিয়ে একজন মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করে। এটা তাদের এমনভাবে আঘাত করে যা তাদের জীবনকে আমূল পরিবর্তন করে দেয়। আমার কথা কিংবা আপনার কথা কাউকে বদলে দিবে না। কিন্তু আল্লাহ যখন আমাদের কথায় শক্তি সঞ্চার করে দেন… তিনি যখন কোনো একবার শুধু একজন মানুষের জন্যে… হয়ত লাখো মানুষেরা এই ভিডিওটি দেখছে কিন্তু কেবল একজন মানুষ বসে দেখেছে যার কাছে এই কথাগুলো পৌঁছে গিয়েছে এমনভাবে যে আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সে তার জীবন কে বদলে ফেলবে, আর সে পারবে। নুহ (আ) অবশ্যই একজন সুবক্তা, আমাদের কারও পক্ষেই তাঁর সমকক্ষ হওয়া সম্ভব নয়। তিনি কত দিন যাবৎ একই শ্রোতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন? ৯৫০ বছর! অথচ তেমন কোন পরিবর্তন দেখতে পাননি। তাই না? তার মানে আমরা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারি না। আর আমরা ভুলে যেতে পারিনা আল্লাহই মানুষকে...

রাসূল (সা) কীভাবে দাওয়াহ দিতেন

আরবরা বলে, “হৃদয়ের নমনীয়তা হৃদয়ের কারাগারে পরিণত হতে পারে।” আপনি যদি কারও হৃদয়ে নমনীয়তা এনে দিতে পারেন এটা যেন তাকে পকেটে পুরে রাখার মতো! আপনি তাকে অর্জন করে ফেলেছেন। তারা বলে মানুষকে সুন্দর ব্যবহার দ্বারা বশ করে ফেলা যায়। আপনি কারও সাথে মনোরম ব্যবহার দেখালে সে আপনার হয়ে যাবে, তারা আপনার।এমনটাই ছিলেন আমাদের নবী (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম)। মানুষের সঙ্গে তাঁর ব্যবহার ছিলো অসাধারন। আমাদের নবীর সুন্দর ব্যবহার বিষয়ক আমার একটা প্রিয় গল্প হলো মক্কা বিজয়ের গল্প। যখন আল্লাহ তাঁকে মক্কার বিজয় দান করেছিলেন, যিনি কা’বা ঘরের রক্ষক ছিলেন তার কাছে এর চাবি ছিলো। তিনি ছিলেন একজন মুশরিক। আর তিনি মুসলিমদের চাবি দিতে আপত্তি জানালেন। ‘আমি যদি বিশ্বাস করতাম যে মুহাম্মাদ আল্লাহর বার্তাবাহক তবে চাবিটা দিয়ে দিতাম, কিন্তু সে কোনো বার্তাবাহক নয়। আমি চাবি দিব না।’ তো একজন সাহাবী নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে না বলেই জোর করে চাবিটি আদায় করে নবীর কাছে নিয়ে গেলেন। তারা কা’বা খুললেন তাতে নামায পড়লেন। তারা যখন বেরিয়ে আসছেন তখন এক আয়াত নাযিল হলো যাতে বলা হয়েছে চাবিটা সেই মুশরিক কে ফেরত দিতে এবং তার কাছে ক্ষমা চাইতে ওভাবে চাবিটা কেড়ে নেওয়ার জন্যে। আর মুসলিমদের কাছে এমন ব্যবহার পেয়ে তিনি মুসলিম হয়ে গিয়েছিলেন। অসাধারণ! আল্লাহ এমন বিজয়ঘন মুহূর্তে এই আয়াত নাযিল করেছিলেন। আর এ সমস্ত মানুষেরা তো তাঁদের উপর নির্যাতন চালিয়েছিলো, সেই সাহাবী তো তাকে নির্যাতন করেননি কিংবা হত্যা করেননি, আঘাত করেননি, তিনি কেবল চাবিটি কেড়ে নিয়েছিলেন। অপরদিকে চাবিটি তাঁর কাছে থাকার কথাও নয়, তিনি ছিলেন মুশরিক। কিন্তু আল্লাহ এমন ব্যবহার পছন্দ করলেন না, তাই আয়াত নাযিল হলো। “আল্লাহ তোমাদের আদেশ করছেন হকদার কে তাদের অধিকার বুঝিয়ে দিতে।” অভিনব দৃশ্য! দেখুন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে অন্যদের সঙ্গে ব্যবহার করতেন। একজন...

আনন্দময় বিবাহ চান?

আল্লাহ আজ ওয়াজ্জাল বিবাহ সম্পর্কে বলেছেন, وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (৩০ঃ ২১) এটি কুরআনের অত্যন্ত সুন্দর কিছু বাণী। আপনারা যারা বিবাহিত তাদের পুরো বিবাহিত জীবনে এই বাণীর প্রযোজ্যতা খুঁজে পাবেন। আল্লাহ বলেন, তিনি আপনাদের মধ্যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা ‘মাওয়াদ্দা’, এবং প্রগাঢ় ভালোবাসা দিয়েছেন, ‘ওয়া রাহমা’ দৈবানুগ্রহ দিয়েছেন। কারণ, বিবাহের প্রথম দিকে ভালোবাসা প্রগাড় থাকে। আপনি আপনার স্ত্রীকে নিয়ে মুগ্ধ থাকেন। আপনি অন্য কিছুর কথা আর চিন্তা করতে পারেন না । আপনার বন্ধুরা যখন আপনাকে কল দেয়, তারা সরাসরি ভয়েস মেইল এ যায়। ঠিক? কারণ, আপনি সদ্য বিবাহিত। আপনারা জানেন, ছয় মাস ধরে আপনার কোন দেখা নেই, কেউ আপনাকে দেখে নি। কিন্তু তারপর যখন বিবাহিত জীবন আরও অগ্রসর হয়, কী আপনাদের বিবাহিত জীবন চাঙ্গা রাখে? এটা কি আগের মত থাকে? কারণ, অন্যান্য দায়িত্ব নিতে হয়। বাচ্চা হয়, কাজে ব্যস্ততার কারণে আর মধুর থাকে না। কিভাবে আপনার দাম্পত্য জীবন বজায় রাখবেন? রাহমা, আপনার স্ত্রীর প্রতি অনুগ্রহ থাকতে হবে। স্বামীর প্রতি অনুগ্রহ থাকতে হবে। একে অপরকে সম্মানপ্রদর্শন করতে হবে। একবার উমর (রাঃ) এর কাছে এক লোক আসল। সে বলল, আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাই। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কেন তুমি তোমার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাও? (উত্তরঃ) আমি তাঁকে আর ভালোবাসি না, তাঁকে আর আকর্ষিত মনে হয় না। তারপর উমর (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ফা’ইনা রি’ইয়াআ, সৌজন্যতার কি অবস্থা? তোমার স্ত্রীর প্রতি উদারতার কি হল? সে কি তোমার...

জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে সচেতন থাকুন

আর তারা তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটা দ্বারা আসলে বুঝায়, তারা লজ্জাশীলতা অবলম্বন করে। যখন আপনি ইসলামের জন্য কাজ করেন এবং জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও সিরিয়াস – মনে রাখবেন, একটা বিষয় সম্পর্কে আপনি কখনোই নিশ্চিন্ত হতে পারবেন না আর তা হল – কামনা-বাসনা, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ। এ বিষয়টা পুরোপুরি বাদ দেয়া অসম্ভব। তাই আল্লাহ বলছেন তারা শালীন এবং নৈতিক হতে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করে। যখন তারা কোন কাজ করে তখন তাদের মর্যাদার সংরক্ষণ করতে সতর্ক থাকে। মুসলিম ছাত্র সংগঠনের শিক্ষার্থীরা, যখন সংগঠনের কোন কাজে আত্মনিয়োগ করেন সাবধান থাকুন। (মেয়েদের বলছি) ভাইদের সাথে খুব বেশি মিশুক হবেন না। তাদের সাথে খুব বেশি বন্ধুভাবাপন্ন হবেন না। এটা করবেন না। আপনার আরও বড় লক্ষ্য রয়েছে। আপনি নিজেকে লক্ষ্যচ্যুত করছেন। এটা সঠিক নয়। (ভাইদের বলছি) সেই মেয়েটি কারো ভবিষ্যৎ স্ত্রী। ভাইটি তখন হয়তো বলবেন- তাহলে আমার ব্যাপারটা কি? আরে ভাই, আপনি কতজন সম্পর্কে এভাবে বলবেন? প্রতি দশ মিনিট পর পর!! – “হুম, এই মেয়েটি বউ হতে পারে, ওই মেয়েটিও হতে পারে!!” না। এভাবে করতে পারেন না। অপ্রয়োজনীয় আলাপচারিতা বন্ধ করুন। জীবনের লক্ষ্য ঠিক করুন আর সিরিয়াস থাকুন। ইসলাম আপনাকে এ রকম হতে দেয় না। এটা আপনাকে এরূপ বাজে আলাপচারিতা করার সুযোগ দেয় না। শুধু এই জন্য না যে কাজটি প্রকৃতিগতভাবেই একটি মন্দ কাজ। আর এটা সত্য যে কাজটি মন্দ। কিন্তু আপনার আসলে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ, বড় লক্ষ্য রয়েছে। এসব করার জন্য আপনার সময় নেই। আমেরিকাতে এমন অনেক কম্বাইন্ড বিদ্যাপীঠ রয়েছে যেখানে কোন ডেটিং হয় না। অমুসলিম স্কুল/কলেজ! কেন হয় না জানেন? কারণ তাদের শিক্ষার মান এত উন্নত যে এবং তারা ছাত্রদের এত বেশি ব্যস্ত রাখে যে – তাদের এসব করার কোন সময় থাকে না। তারা তাদের শিক্ষা নিয়ে এত ব্যস্ত থাকে !! তাদের...

প্রবন্ধ

ক্ষমতা বনাম সম্মান – উস্তাদ নোমান আলী খান

“قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَن تَشَاء وَتَنزِعُ الْمُلْكَ مِمَّن تَشَاء …”- “হে আল্লাহ তুমিই সর্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেও আর যার নিকট হতে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নেও।” (সূরা আল ইমরান ৩ঃ ২৬)। এটাই বাস্তবতা। এই স্বীকার করি এই ক্ষমতা শুধু আল্লাহর হাতেই, তিনি যাকে যখন ইচ্ছা দেন আর যখন ইচ্ছা তার থেকে কেরে নেও। এখানে একটা ব্যাপার বেশ নজর কাড়ে, আরবী শব্দ “মুলক” এখানে দুইবার ব্যবহৃত হয়েছে। “تُؤْتِي الْمُلْكَ مَن تَشَاء” এবং “تَنزِعُ الْمُلْكَ مِمَّن تَشَاء”। এখানে “দমীর” বা সর্বনাম ব্যবহার করা যেত। অর্থাৎ “মুলক” শব্দ দুইবার ব্যবহার না করে একবার মূল শব্দ আরেকবার সর্বনাম ব্যবহার করতে পারতেন। তাহলে আয়াতটা হতো এমন, “তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেও আর যার নিকট হতে ইচ্ছা সেটা কেড়ে নেও।” পরেরবার ‘মুলক” ব্যবহার না করে “সেটা” বা এরকম কিছু ব্যবহার করা যেত। কিন্তু আল্লাহ “মুলক” অর্থাৎ ক্ষমতা বা রাজত্ব এই শব্দটি দুইবার ব্যবহার করেছেন। আরবীর নিয়ম অনুসারে আপনি যখন একই শব্দ দুইবার ব্যবহার করছেন তখন দুইটি শব্দ দ্বারা আলাদা দুইটি বিষয় বা এই আয়াতে আলাদা দুইটি ক্ষমতা বুঝায় না। এখানে একটি জিনিসের কথায় বলা হচ্ছে। সাধারণভাবে আমরা যদি চিন্তাকরি, তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন ও যার থেকে ইচ্ছা থেকে সেই ক্ষমতা কেড়ে নেন। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন একজনকে রাজত্ব দেওয়া হচ্ছে আর অন্য একজন থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, বিষয়টা এমন না। “মুলক” শব্দটির দুইবার ব্যবহারের ফলে এর আরেকটা অর্থ দাড়াচ্ছে। অর্থাৎ তিনি যাকে ক্ষমতা দিয়েছেন চাইলে তার থেকেই কেড়ে নিতে পারেন। অর্থাৎ ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি থেকেই ক্ষমতা আল্লাহ চাইলে নিয়ে নিচ্ছেন। এটা আল্লাহর সিদ্ধান্ত। আবারো বলছি, বিষয়টা এমন না যে, একজনকে দিলেন এবং অন্যজন থেকে কেড়ে নিলেন।  আল্লাহ এমন করেননি যে, তোমাকে একবার ক্ষমতা দিয়েছি তারমানে সারাজীবন তুমিই শাসন করবে।...

আপনার আওয়াজ নবীর আওয়াজের উপর উঁচু করবেন না

–নোমান আলী খান সূরা হুজুরাত (৪৯) এর দ্বিতীয় আয়াতে, আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা নবি ﷺ এর আমাদের উপর একটি অধিকারের বর্ণনা করছেন –يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ“হে ঈমানদারগণ, তোমরা নবীর আওয়াজের উপর তোমাদের আওয়াজ উঁচু করো নাوَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ“এবং তাঁর সাথে সেরকম উচ্চস্বরে কথা বলো না”كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ“যেমন তোমরা নিজেরা পরস্পর উচ্চস্বরে কথা বল,”أَنْ تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ“এ আশঙ্কায় যে তোমাদের সকল আমল-নিস্ফল হয়ে যাবে”وَأَنْتُمْ لَا تَشْعُرُونَ“অথচ তোমরা উপলব্ধিও করতে পারবে না।“এই আয়াতের প্রেক্ষাপটের ব্যাপারে একটু বুঝে নেই, ঠিক আছে?যারা মুসলিম হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে কিছু বেদুইনও ছিলেনএবং তাঁরা ইসলামি আচার ব্যাবহার তো দূরের কথা, সাধারণ সহুরে আদব কায়দার ব্যাপারেও অতো সভ্য ছিলেন না।তারা একরকম ভাবে জানতেন যে নবি ﷺ একজন রাসুল, কিন্তু তাঁকে শ্রদ্ধা করা, সঠিক সম্মান দেখানো, এসব ব্যাপারে তারা অজ্ঞ ছিলেন।তাই তারা তাঁর বাড়িতে যান, তাঁর বাড়ি ছিল খুবই ছোট, এবং দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলেন, “ইয়া মুহাম্মাদ! উখ্রুজ আলাইনা!”“মুহাম্মাদ, বেড়িয়ে এসো, আমরা তোমাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।“সমস্যা হলো – আল্লাহ নিজে কখনো নবি ﷺ কে “ইয়া মুহাম্মাদ” বলে ডাকেননি।আল্লাহ নিজে নবির প্রতি এতো শ্রদ্ধাশীল যেতিনি তাঁকে ডেকেছেন “ইয়া আইয়ুহান-নাবি”, “ইয়া আইয়ুহাল-মুযযাম্মিল”, “ইয়া আইয়ুহাল-মুদ্দাসসির”, “ইয়া আইয়ুহার-রাসুল” বলে,এমনকি যখন [কোরআনে] “মুহাম্মাদ” নামের উল্লেখ আসে, তিনি সাথে যোগ করেছেন “মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ”(সূরা আস-সাফ:৬) – وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِن بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُতাই না?(সূরা আল-আহযাব: ৪০) – مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَٰكِنْ رَسُولَ اللَّهِযেখানেই “মুহাম্মাদ” উল্লেখ করা হয়েছে সেখানেই “রাসুল”ও যোগ হয়েছে।এবং মাত্র একবার আল্লাহ “মুহাম্মাদ”-এর সাথে “রাসুল” উপাধি যোগ করেন নি, সেটা হলো সূরা মুহাম্মাদ-এ, যেখানে আল্লাহ তাঁর নামটাকেই লক্ষণীয় করেছেন।(QS. Muhammad: 2) – وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَآمَنُوا بِمَا نُزِّلَ عَلَىٰ مُحَمَّدٍ وَهُوَ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْএবং এখানে তাঁর নামের সাথে রাসুল যোগ না করার...

দুঃখ কষ্টের মাহাত্ম্য

– – নোমান আলী খান আপনি জানেন এই জীবনে আমরা কিছু জিনিস চাই।একজন যুবক বিয়ে করতে চায় অথবা মহিলা বিয়ে করতে চায়।আপনি একটি ভালো চাকরি চান।আপনি একটি ঘর চান।আপনি চান আপনার পরিবার ঠিক থাকুক।আপনি আপনারা সন্তানদের জন্য করতে চান তাদের জন্য ভালো শিক্ষা চান আপনার সন্তানদের বিয়ে দিতে চান।কিছু ব্যাপার আছে যেগুলোর অগ্রাধিকার আমাদের জীবনে আছে।আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল তার কিতাবে আমাদের শিখাচ্ছেন একটা জিনিস আপনি যদি এই জীবনে পেয়ে থাকেন তা অন্য সব কিছুর থেকে মূল্যবান।আর সেই একটি জিনিস হলো আল্লাহর নৈকট্য। আল্লাহর সাথে ভালো হওয়া এবং সত্যিকার অর্থে তার সাথে সম্পর্ক তৈরি করা।মানুষের সমস্যা হচ্ছে যখন জীবন ভালো যায় অনেক মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পরে।আপনি ভিডিও গেম খেলেন,মুভি দেখেন,সোস্যাল মিডিয়া স্ট্যাটাস চ্যাক করেন,বন্ধুদের সাথে হ্যাং আউট করেন রেস্টুরেন্টে,ঘুমান।আল্লাহকে এই সব কিছুর বাইরে রাখেন।এখানে আল্লাহ নেই।এটা আপনি চিল করছেন,সেখানেই সব।এবং তারপর কঠিন সময় আসে।বন্ধুরা সেখানে নেই।গেম আর ভালো লাগে না গাড়িটাও সুন্দর লাগেনা কারন সুস্থতা নেই আর যখন অসুস্থ থাকি তখন কোন কিছুই ভালো লাগেনা।আর তখন আপনার শুধুমাত্র আশা থাকে “আমি এই হাসপাতালের বিছানা থেকে বের হতে চাই।আমি আবার হাটতে পারলেই চলবে।” মানুষজন আপনার প্রিয় খাবার নিয়ে আসবে আপনি খেতে চাবেননা।আপনাকে মুভি দেখাতে চাবে আপনি দেখতে চাবেননা।যাকিছু যেগুলো নিয়ে আপনি বেচে ছিলেন a,b,c,d সব কিছু নাই হয়ে গিয়েছে।আপনি আর এগুলোর প্রতি পরোয়া করেননা।কারন একটা নিয়ামত আল্লাহ আপনার জন্য একটু কমিয়ে দিয়েছেন।এবং এই পর্যায়ে আপনার দুটি রাস্তা আছে।আপনি যদি এই মানুষদের মধ্যে হন যারা একদম দারপ্রান্তে আছে, আপনি আল্লাহর কাছে অভিযোগ শুরু করতে পারেন “কেন আপনি আমার সাথে এমন করলেন? আপনার কি পছন্দ হয়নি আমি সুখী ছিলাম।” অথবা আপনি সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সম্পদ লাভ করতে পারেন আর সেটা হলো নম্রতা এবং আল্লাহর নৈকট্য ।অসলে উপলদ্ধি করা এমনকি যখন আমি সুস্থ ছিলাম, এমনকি...

আল্লাহ সর্বশক্তিমান 

– উস্তাদ নোমান আলী খান ইনশাআল্লাহ, আজ আমি আপনাদের নিকট আল্লাহর একটি নাম القوي – এর উপকারিতা বর্ণনা করবো। القوي অর্থ – শক্তিশালী, ক্ষমতাশালী। এই অসাধারণ শব্দটি দ্বারা আল্লাহর একটি নাম প্রকাশ করা হয়। শব্দটি শুনলেই আপনি বুঝতে পারেন এর মানে হল আল্লাহ সর্বশক্তিমান। কিন্তু সুরাতুল হাজ্জের শেষের দিকে আল্লাহ যেভাবে এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন তা অসাধারণ চমকপ্রদ। আমি যুক্তি দেখাবো, একজন বিশ্বাসীর জন্য আল্লাহর ‘القوي’ হওয়ার মানে কী তা উপলব্ধি করার জন্য আল কুরআনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোর একটি হল সুরাতুল হাজ্জের এই অংশটি। আমরা তাঁর সকল নামে বিশ্বাস করি কিন্তু তাঁর প্রত্যেকটি নাম কোন না কোনভাবে আমাদের উপকার করে। কোন না কোনভাবে আমাদের সাহায্য করে। القوي কীভাবে আমাদের সাহায্য করে? এটা শেখার অন্যতম একটি সেরা জায়গা হল ২২তম সূরা, সুরাতুল হাজ্জের শেষের অংশ। এই সূরায় আল্লাহ একটি উপমা পেশ করেন যেন মানুষ তাঁর সম্পর্কে একটি ব্যাপার উপলব্ধি করতে পারে। তিনি বলেন – يَا أَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوا لَهُ – “হে লোক সকল! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো, অতএব তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন;” এভাবেই তিনি শুরু করেছেন, একটি উপমা দেয়া হল মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করো। তিনি সাধারণত এভাবে বলেন – আল্লাহ একটি উপমা বর্ণনা করলেন। কিন্তু এখানে বলেছেন, একটি উপমা প্রদান করা হলো। ‘আমি একটি উপমা দিচ্ছি’ বলার পরিবর্তে। তিনি এখানে বক্তাকে আলোচনা থেকে গোপন করে ফেললেন। এটি একটি সাইড নোট – কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি – যা আমাদের জানা থাকা প্রয়োজন। আমি এখন আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার একটি নির্দিষ্ট রূপ আছে, আমার দাঁড়ি আছে, আমার পোশাক এইরকম, আমার মাথায় টুপি আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আপনারা সরাসরি আমাকে দেখতে পাচ্ছেন। আমি কুরআন থেকে কিছু তিলাওয়াত করলে বা কোন আলোচনা করলে সেটাও আপনারা দেখতে পান। কিন্তু এমন একটি পরিস্থিতির...

রাসূলের ﷺ উপমা সূর্যের মত

– নোমান আলী খান আজ আমি আপনাদের সাথে আমাদের প্রিয় নবী (স) সম্পর্কে কিছু কথা এবং আমাদের সাথে তাঁর সম্পর্কের স্বরূপ কেমন হওয়া উচিত তার উপর আলোকপাত করতে চাই। আলোচনার প্রথম দিকে আপনাদের কাছে হয়তো এমনটি মনে হবে না। কিন্তু শেষের দিকে গেলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে উঠবে যে আমি এ বিষয় নিয়েই কথা বলতে চেয়েছি। আমার নিজের জন্যেও, কুরআনে আমি যা কিছু অধ্যয়ন করেছি এটা সবচেয়ে শক্তিশালী শিক্ষা। এবং আমি এই শিক্ষা দ্বারা খুবই প্রভাবিত হয়েছি। আমি দোয়া করছি, এই সূরা থেকে যা কিছু আমি অধ্যয়ন করেছি এবং যে সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পেরেছি তার কিছু কিছু যেন আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারি। এই পাঠটি সূরা ইয়াসিনের অন্তর্গত। কুরআনের ছত্রিশ তম সূরা। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা এই সূরায় নবীদের অনন্যসাধারণ একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। সাধারণত দেখা যায় আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা একটি অঞ্চলের জন্য একজন রাসূল প্রেরণ করেন। কিন্তু এই ক্ষেত্রে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা বলেন – إِذْ أَرْسَلْنَا إِلَيْهِمُ اثْنَيْنِ – আল্লাহ তাদের জন্য দুইজন রাসূল প্রেরণ করেন।(36:14) فَكَذَّبُوهُمَا – আর সেই জাতি উভয় রাসূলকেই অস্বীকার করে। فَعَزَّزْنَا بِثَالِثٍ – “তখন আমি তাদেরকে শক্তিশালী করলাম তৃতীয় একজনের মাধ্যমে।” তাই দেখা যাচ্ছে, এই জাতির ঘটনা অন্য সব জাতির তুলনায় অনন্যসাধারণ। কারণ তিনজন রাসূল একই সময়ে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছেন। এই রাসূলদের প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল…। আলোচনা চালিয়ে যাবার পূর্বে আরেকটি ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। মূসা (আ) কে – কুরআনে বর্ণিত সবচেয়ে ভয়ংকর ভিলেনদের একজন – ফেরাউনের মোকাবেলা করতে হয়েছিল। আর এই কাজে তিনি কার সাহায্য চান? হারুন (আ) এর। তাহলে তাঁরা ছিলেন দুইজন। এমনকি এই ক্ষেত্রেও আপনি যদি ভালভাবে কুরআন অধ্যয়ন করেন তাহলে দেখবেন, সব কথা মূসা (আ) বলেছিলেন, হারুন (আ) নীরব ছিলেন। সব কাজ মূসা (আ) করেছিলেন। হারুন...

মু’জিযা

No Results Found

The page you requested could not be found. Try refining your search, or use the navigation above to locate the post.

Facebook Like

সাথেই থাকুন

 

<—-Facebook & YouTube —->

Youtube Subscriber