আল্লাহর কাছে কীভাবে ক্ষমা চাইবেন?

এখন এই ক্ষমা চাওয়াটা দুইভাবে হয়ে থাকে। জিহবার মাধ্যমে ক্ষমা চাওয়া এবং অন্তরের মাধ্যমে ক্ষমা চাওয়া। মানুষ সাধারণত নিজের পক্ষে যুক্তি দিয়ে থাকে। আমি যদি কোনো কারণে আপনার সমালোচনা করি…যেমন আমি কাউকে বললাম – ”এই যে, আমি আপনাকে অমুক কথা বলতে শুনেছি। কেন আপনি এটা বলেছেন?” সে তৎক্ষণাৎ হয়তো বলে উঠবে – ”আমি এমনটা বোঝাতে চাই নি, আপনি জানেন না আমি কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি! এক্সকিউজ মি, আপনি তো পুরো ঘটনাটা জানেনই না।” সুতরাং কেউ আপনাকে যদি বলে, ভাই আমি আপনাকে এটা এটা করতে দেখেছি। আপনি সাথে সাথে নিজের পক্ষে যুক্তি দিতে শুরু করেন, আত্মরক্ষামূলক হয়ে উঠেন। بَلِ الْإِنسَانُ عَلَىٰ نَفْسِهِ بَصِيرَةٌ – وَلَوْ أَلْقَىٰ مَعَاذِيرَهُ – মানুষ নিজের সম্পর্কে সু ধারণা পোষণ করে। তারা প্রচুর অজুহাত দেখায়। আপনি যদি আসলেই আল্লাহর ক্ষমা চান। আপনাকে নিরিবিলি একটা সময় খুঁজে পেতে হবে … যদি আরবিতে দোয়া করতে না পারেন কোনো সমস্যা নেই। আপনি শুধু পাঞ্জাবি, বাংলা, বাহাসা, বা উর্দু জানেন, কোনো ব্যাপার না, আপনি আপনার নিজস্ব ভাষাতেই আল্লাহর সাথে কথা বলুন। আন্তরিকতার সাথে আপনার অপরাধগুলো স্বীকার করে নিন। কোনো অজুহাত দেখবেন না। এইরকম করতে পারা আসলেই অনেক কঠিন। কারণ আয়নার সামনে দাঁড়িয়েও আমরা নিজের সাথে মিথ্যা বলি। নিজেকে এভাবে প্রবোধ দেই – ”আমি আসলে অতো খারাপ না। আমি যা করেছি তার কারণ আছে। আমি অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।” যখন আপনি আল্লাহর সামনে দাঁড়াবেন, নিজের কাজের বৈধতা দেয়ার কথা ভুলে যান। কারণ যেসব অজুহাতের মাধ্যমে আপনি আপনার কাজের বৈধতা দিতে চান, তিনি ইতিমধ্যে তার সবগুলোই জানেন। আল্লাহ জানেন আপনি কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তিনি জানেন এটা কঠিন সময় ছিল, তিনি জানেন অমুক অমুক বিষয় আপনাকে সম্পূর্নরুপে গ্রাস করে ফেলেছিলো। ” ইয়া রব, আমি অনেক চাপের মধ্যে ছিলাম তাই...

নিজেকে নিয়ে হতাশ থেকো না

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সূরা তাগাবুনের তৃতীয় আয়াতে বলেছেনঃ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ وَصَوَّرَكُمْ فَأَحْسَنَ صُوَرَكُمْ ۖ وَإِلَيْهِ الْمَصِيرُ তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর সুন্দর করেছেন তোমাদের আকৃতি। তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তন। তিনি বলেছেনঃ وَصَوَّرَكُمْ فَأَحْسَنَ صُوَرَكُمْ তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর সুন্দর করেছেন তোমাদের আকৃতি। কি অসাধারন পরিবর্তন, উনি আপনার আকৃতি দিয়েছেন, আল্লাহ বলেছেন যে উনি বাকী সবকিছুকে সৃষ্টি করেছেন, উনি তার সাথে যোগ করতে পারতেন যে তিনি আপনাকেও সৃষ্টি করেছেন। উনি আগেই এটা বলে ফেলেছেন, উনি এবার সেটা পরিবর্তন করেছেন, وَصَوَّرَكُمْ, তিনি আপনাকে আকৃতি দান করেছেন, আরবীতে এই শব্দের অর্থ হলঃ কোন কিছুকে নিঁখুত, সুন্দর আকৃতিতে গড়া। আল্লাহ নিজে বলছেন, আমি তোমাকে খুব সুন্দর আকৃতিতে তৈরি করেছি। উনি নিজে সেটা আমাদেরকে বলছেন। উনি যেভাবে আমাদেরকে তৈরি করছেন তাতে উনি গর্ববোধ করছেন। জানেন, যারা অকৃতজ্ঞ তারা কি বলবে? বলবে, কেন আমি এত মোটা? কেন আমি এত চিকন? কেন আমি এত বেঁটে? কেন আমার মুখে এত দাগ। কেন আমার এরকম কেন ওইরকম। কেন আমি আমার ভাইয়ের মত স্মার্ট না? কেন আমি গরীব আর সে ধনী। কেন তার এটা আছে আর আমার নেই? আর জানেন, আজকালকার আধুনিক সমাজে কি হয়? এবং শুধু আমেরিকাতেই নয় সারা বিশ্বে? মানুষের বয়স বাড়তে থাকে, চুল পাকা শুরু হয়, চামড়ায় ভাঁজ পড়তে শুরু করে, পুরো মাল্টিমিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে যাতে বলা হয় যে মানুষ সেইরকম দেখাবে যেমন সে তার বিশ বছর বয়সে দেখাতো, আসলে তাকে দেখায় একটা কিম্ভূত প্রাণীর মত। তারা আপনার চুল গজিয়ে দিবে, আপনার চামড়া টেনে ভাঁজ দূর করার চেষ্টা করবে, আপনার ভূড়িটাকে ভেতরে ঢুকিয়ে দেবার চেষ্টা করবে, এরকম আরো অনেক কিছু করবে। যেন আপনি ভাব ধরতে পারেন যে এখনো আপনার বয়স ২৫। আল্লাহ বলছেন,...

আখিরাতের জন্য পরিকল্পনা করা

জানেন, আমরা এটা থেকে কি শিখলাম? কোন কিছুকে বড় করে দেখলেই সেটা বড় ব্যাপার হয়ে যায়। কোন কিছুকে ছোট করে দেখ তাহলেই সেটা সামান্য মনে হবে। জানেন, এই আয়াতে আখিরাতকে বড় এবং দুনিয়াকে ছোট করে দেখানো হয়েছে।পুরো আয়াতটা এটা নিয়েই। দুনিয়াতে আমরা জীবন যাপন করবো। আমাদের ক্যারিয়ার হবে।আমাদের শিক্ষাগত অর্জন থাকবে।আমাদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এই সব কিছুই জীবনে থাকবে।কিন্তু একটা ব্যাপার কি জানো এই সব কিছু ক্ষণস্থায়ী। সব কিছুই। একদিন আসবে যেদিন এক জমায়েত হবে।এবং সেদিন তারা নামায পড়বে। আর সেদিন তারা একটা ঘোষণা দিবে।যে একটা জানাযা হবে। এবং এই ঘোষণাটা একদিন হবে আমার জন্য এবং একদিন হবে আপনার জন্য। এটা হতে যাচ্ছে এবং একদিন মানুষ আমাদের জন্য জানাজার নামায পড়বে। এবং ততক্ষনে আমরা চিরকালের জন্য চলে গেছি। এবং এটা শীঘ্রই ঘটবে, দেরীতে নয়। আমি বলতে চাচ্ছি আমাদের জীবনের অনেকখানি তো ইতোমধ্যেই কেটে গেছে। সুতরাং এমন নয় যে সেই দিনটা থেকে আমরা দূরে যাচ্ছি, বরং আমরা সেই দিনের আরো কাছে পৌছাচ্ছি। তাই যত তাড়াতাড়ি আমরা এটা আত্মস্থ করি যে, আল্লাহর কাছে যা আছে তা তুলনামূলক ভাবে ভালো। কারন যে কোন ভাবেই হোকনা কেন আমরা সেদিকেই যাচ্ছি। তাহলে আমরা নিজেরা নিজেদেরই উপকার করব । যদি আমরা শুধু এটা শিখতে পারি যে কিভাবে সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হয়। যেমনটা আমি বললাম যে আমরা ১০ বছরের পরিকল্পনা করি, ১৫ বছরের পরিকল্পনা করি।কিন্তু আমরা আখিরাতের কথা চিন্তাই করিনা। তাহলে আখিরাতের কথা কিভাবে ভাবা উচিত? কিভাবে আখিরাতের জন্য বাস্তবতা ভিত্তিক পরিকল্পনা করা যায়? আখিরাতের জন্য আমরা ১০ বছরব্যাপী, ১৫ বছরব্যাপী পরিকল্পনা করিনা। আমরা এর জন্য দৈনন্দিন পরিকল্পনা করি। এটা দীর্ঘ সময়ব্যাপী লক্ষ্য নির্ধারণ করা নয়। এটা আজকের দিনটা আপনি কিভাবে ব্যয় করলেন তার সাথে সংশ্লিষ্ট। আপনি তার পরে কি করতে যাচ্ছেন এটা তার সাথে...

আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা

আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে কত শত পথ আপনার জন্য খুলে যাবে! আসমানের দরজা আপনার জন্য এমনভাবে খুলে যাবে যে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। হেদায়েতের পথ খুলে যাবে, আপনি সবকিছু আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। আপনার ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো দূর হতে শুরু করবে। উদাহরণস্বরূপ, রাগের কথা ধরা যাক। রাগ হওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া আসলেই অনেক কঠিন। বহু মানুষ খুবই সমস্যাপূর্ণ জীবন যাপন করে, কারণ তারা অল্পতেই রেগে যান। এর থেকে বের হতে পারে না। কিছু একটা তাদের সামান্যতেই ক্রোধান্বিত করে তোলে, আর তারা এর সাথে লড়াই করতে পারে না। তারা তাদের এই সমস্যাটা বুঝতে পারেন, কিন্তু নিজের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন এবং মনে মনে ভাবেন যে, “না, আমার পক্ষে এই রাগ হওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। আর মনে হয় আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন না, কারণ আমি এরকম রাগান্বিত একজন মানুষ। আমি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নয়। “ হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় সাহাবীরা খুবই রাগান্বিত হয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের রাগ দূর করা সম্পর্কে আল্লাহ কী বলেছেন? তিনি বলেছেন – أَنزَلَ السَّكِينَةَ فِي قُلُوبِ الْمُؤْمِنِينَ – “তিনি আকাশ থেকে বিশ্বাসীদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করেন।” প্রশান্তি আমাদের নিজেদের কাছ থেকে আসে না। আমরা নিজেদের প্রশান্ত করতে পারি না। মূসা (আ) এর মা ভয়ে এবং টেনশনে প্রায় মারা যাচ্ছিলেন, যখন তিনি তার ছোট্ট শিশুকে একটি বাক্সে বন্দি করে পানিতে ভাসিয়ে দেন। আর আল্লাহ বলেন – لَوْلَا أَن رَّبَطْنَا عَلَىٰ قَلْبِهَا – “যদি আমি তাঁর হৃদয়কে দৃঢ় করে না দিতাম,” আল্লাহ তার অন্তরকে দৃঢ় করেছিলেন। মূসা (আ) এর মায়ের পক্ষে স্বীয় অন্তরকে দৃঢ় করা সম্ভব হতো না। তিনি এতো বেশি ভেঙে পড়েছিলেন, এবং আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে তাঁর নিজের পক্ষে নিজেকে শান্ত করা সম্ভব হতো না। ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ বলে একটা ব্যাপার আছে,...

আল্লাহ সকল মানুষকে ক্ষমতা দিয়েছেন শয়তানকে প্রতিহত করার জন্য

আল্লাহ শয়তানকে বলেন: ‘إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ অর্থাৎ, “যারা আমার বান্দা, তাদের উপর তোর কোন ক্ষমতা নেই” [সূরা আল হিজর: ৪২]। মানে হলো, শয়তান আপনার অন্তরে জোর করে ঢুকতেও পারবে না এবং জোর করে থাকতেও পারবে না। আপনি যখনি বলবেন ‘বের হয়ে যাও’, শয়তান বের হয়ে যেতে বাধ্য। এখন আপনি যদি তাকে আপনার অন্তরে ঢুকতে দেন এবং সেখানে থাকতে দেন, এর মানে এই না যে, সে নিজের ক্ষমতাবলে সেখানে অবস্থান করছে। বরং এর মানে হচ্ছে আপনিই তাকে বের করে দেননি! আল্লাহ শয়তানকে বিতাড়িত করার জন্য সব ধরনের অস্ত্র আপনাকে দিয়েছেন। শুধু ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রাজীম’ পড়ুন, ইস্তেগফার করুন, শয়তান চলে যেতে বাধ্য। কিন্তু আপনি সেটা করছেন না। আর যখন আপনিই শয়তানকে বের করতে চাচ্ছেন না, তখন আল্লাহ তা’আলা বলছেন, ঠিক আছে, তুমি তোমার মতোই থাকো… فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضًا …  “আল্লাহ তাদের ব্যাধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন।” [সূরা বাকারা:১০] আপনি শয়তানের পথে চলতে চান, ঠিক আছে চলতে থাকুন। শয়তানের সব সাঙ্গপাঙ্গকে আপনার অন্তরে বাসা বাঁধতে দিন। ফলশ্রুতিতে তারা আপনার অন্তরকে এমনভাবে সাজাবে যে, এমনকি রমজান মাসে যখন শয়তান বাঁধা অবস্থায় থাকে, তখনও আপনি এমনভাবে চলবেন যেন মনে হবে শয়তানই আপনাকে চালাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে শয়তান কিন্তু সেখানে নেই, শয়তানের কাজ আপনি নিজেই...