Videos |
২য় বৃত্তটি হচ্ছে মৌলিক বাধ্যবাধকতা, মূল করণীয় এবং মূল বর্জনীয় কাজসমূহ। উদাহরণসরূপ: আমরা সবাই জানি যে আমাদের ধর্মের ৫ টি মূল স্তম্ভ আছে। সালাত এর মধ্যে একটি। সালাত হচ্ছে মৌলিক করণীয়। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে, এই বাধ্যবাধকতার মাধ্যমে (১ম বৃত্তে বর্ণিত) ইসলামের অত্যাবশ্যকীয় মূলনীতিগুলোর একটিকে পূরণ করা যায়। আমাদের মনে রাখতে হবে যে পূর্বে বর্ণিত মূলনীতিগুলোই কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি আল্লাহ আমাদেরকে যেসব মৌলিক বাধ্যবাধকতা সেট করে দিয়েছেন এসবের উদ্দেশ্য হচ্ছে মূলনীতিগুলিকে সুদৃঢ় করা। যেমন ধরুন, আল্লাহ বলেছেন: ‘আকিমুসসালাতা লি যিকরি’ – ‘সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাতে করে তোমরা আমাকে স্মরণ করতে পারো’। আল্লাহকে স্মরণ করা কি একটি মৌলিক নীতি নয়? অবশ্যই! আল্লাহর স্মরণকে আমরা কিভাবে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নিয়ে আসবো? এমন কি উপায়ে আমরা এটা করতে পারি যা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবে? এমনটি করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সালাত। সালাত হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম যেটা আল্লাহকে স্মরণ করার বিমূর্ত ধারণাটিকে বাস্তবিক সত্যে রূপান্তরিত করে। সিয়াম পালন করার বিষয়ে আল্লাহ বলেন: ‘কামা কুতিবা আলাল্লাযীনা মিন কাবলিকুম লা আল্লাকুম তাত্তাকুন’ – ‘তোমাদের সিয়াম পালন করতে বলা হয়েছে, যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো’। তাকওয়া হচ্ছে বিমূর্ত ধারণা। বাস্তবে এমন কি করা যেতে পারে যেটা তাকওয়ার এই বিমূর্ত ধারণাকে আমার জীবনযাত্রায় প্রতিফলিত করবে? কি সেটা? সিয়াম পালন করা এই ধরণের কাজসমূহের একটি। এইভাবে আপনারা দেখবেন যে, আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিটি মৌলিক বাধ্যবাধকতা এক একটি মৌলিক নীতিকে সুদৃঢ় করে। বাধ্যবাধকতাগুলো দেয়া হয়েছে যাতে করে মৌলিক নীতিগুলিকে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নিয়ে আসতে পারি। দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা যা করেছি সেটা হচ্ছে, আমরা আল্লাহ প্রদত্ত এইসব বাধ্যবাধকতাগুলোকে সংশ্লিষ্ট নীতিমালগুলো থেকে আলাদা করে ফেলেছি। এর ফলে যেটা হয়েছে, মানুষ ঠিকই সিয়াম পালন করছে কিন্তু তাদের মধ্যে এই বোধটি নেই যে সিয়াম পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া বৃদ্ধি করা। মানুষ সালাত...
other scholars, Others |
ইসলাম আবির্ভাবের ১০০ বছরের মাঝে মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তার লাভ করলো আফ্রিকা, পারস্য, ভারত এবং স্পেন পর্যন্ত। ইসলামিক সভ্যতার আগমনই ঘটত না, সমৃদ্ধি তো দূরের কথা, বিভিন্ন গোষ্ঠীর এবং সংস্কৃতির অহমিকার কারণে। এটা সম্ভব হয়েছিলো নবী (স) এর শক্তিশালী বাণীর আগমনে, যার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে মানুষ সম্প্রীতির সাথে বাস করতে পেরেছিলো, ইসলামের ছায়াতলে। ইতিহাসবেত্তা এইচ.আর.গিব লিখেছেন, অন্য কোনো সমাজে এমন সাফল্যের দৃষ্টান্ত নেই যেখানে এত বেশি সংখ্যক সামাজিক অবস্থান, সুযোগ-সুবিধা ও অসংখ্য জাতি ও বর্ণের মানুষদের প্রচেষ্টা একীভূত হয়েছিলো। ইসলামের শক্তির সাহায্যে এখনও নিষ্পত্তি ঘটানো সম্ভব বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির আপাতদৃষ্টিতে নিরাময়ের অযোগ্য উপাদানের।তবে এই পরিবর্তন রাতারাতি হয়নি, বরং আজীবন নবী (স) এর সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিলো গোষ্ঠী, বর্ণ ও বিভিন্ন শ্রেনীর মাঝে ভেদাভেদ উচ্ছেদ করা। তিনি শুধু দাস মুক্ত করেননি, তিনি তাদের সম্মান দিয়েছিলেন এবং তাদের পক্ষ হয়ে সমাজের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন। আর ২০ বছরেরও কম সময়ে তিনি সফল হয়েছিলেন নারী ও পুরুষকে তাদের প্রাপ্য মর্যাদা ও ক্ষমতা প্রদানে যারা সারা জীবন অপদস্থ হয়েছিলো পূর্ববর্তী ক্ষমতাশীলদের দ্বারা। এ ঘটনা ঘটেছিলো ১৪০০ বছর আগে, আরবের মরুভূমিতে। আমরা যে সমাজে বাস করি তার থেকে একেবারেই আলাদা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের চেয়ে উন্নত। আর সত্যিটা স্বীকার করতেই হবে, আমাদের তাদের থেকে অনেক কিছু শিখার আছে। কারণ আমরা যদিও এই কয়েক বছরে অনেক অগ্রসর হয়েছি, বর্ণবাদ আজকের দিনেও প্রায়ই এর কুৎসিত মাথা তুলে দাঁড়ায়। আমাদের দায়িত্ব এটা নিশ্চিত করা যখন এমন ঘটে আমরা এর বিরুদ্ধে দৃঢ় ভাবে রুখে দাঁড়াবো। আব্রাহাম লিংকন বলেছেন, যারা অন্যের স্বাধীনতা হরণ করে তারা নিজেরা স্বাধীন হওয়ার যোগ্য নয়। গৃহযুদ্ধ হয়েছিলো এই দেশে কেবল দেড়’শ বছর আগে কারণ দাস-দাসীরা স্বাধীনতার পিছে ছুটেছিলো। আর তখনও তাদেরকেই যুদ্ধের প্রথম সারিতে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিলো। যদিও পলিটিকাল...
Articles |
আমার আসল পয়েন্ট হলো এখন কেন মানুষ মানুষ ইসলামকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে? কেনই বা ওরা রাসুল (সঃ) কে নিয়ে মজা করে? কেন রাসুলুল্লাহ (সঃ) কে অপমান করে কার্টুন বানানো হয়? কেন মুসলিমদের উপর এত প্রোপাগান্ডা, এত জঘন্য কথাবার্তা যেগুলো এখন সাংবাদিকতার নামে চলছে সম্পাদকীয় কলামে? এ ব্যাপারটিকে দিনকে দিন আরও আকর্ষণীয় করা হচ্ছে। আগে তারা উগ্রপন্থীদের নিয়ে কথা বলতো তাই না? তারা কথা বলতো কিছু উগ্রপন্থী আর জঙ্গি ইসলামের ভার্সন নিয়ে যেখানে ওরা সবাইকে খুন করতে চায়, আর নারীদের ডাস্টবিনে ফেলতে চায় ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আস্তে আস্তে এই উগ্রপন্থীর সংজ্ঞা ঢিলা হতে হতে এমন পর্যায়ে এসেছে যে আপনি এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়লেই উগ্রপন্থী। উগ্রপন্থী আগে যা উন্মাদদের বেলায় প্রযোজ্য ছিল এখন তারা বলে আপনি যদি একটুও ইসলাম প্রকাশ করেন, অথবা আপনি দেখতে যদি মুসলিম হন, বা মহিলা যদি হিজাব পরেন সে নিশ্চয়ই উগ্রপন্থী। পুরুষদের বেলায় যদি দাঁড়ি থাকে তাহলে সে নিশ্চয়ই উগ্রপন্থী। আমেরিকায় এত খারাপ অবস্থা এখনও হয়নি কিন্তু ইউরোপে খুবই খারাপ অবস্থা। আমি ইউরোপে গিয়েছিলাম, আমি বলতে পারি অবস্থা সেখানে ভালো নয়। এটা উগ্রপন্থী হিসেবে দেখা হয় কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন? আমাদের এই মানসিকতা তৈরি হয়েছে যে তারা(কাফিররা) আমাদের ধরতে আসবে, এই কাফিররা আমাদের ঘৃণা করে, ওরা প্রতিনিয়তই আমাদের বিরুদ্ধে কার্টুন আঁকছে, তারা প্রোপাগান্ডা চালায়, তারা ইসলামের সব ব্যাপারকেই ঘৃণা করে, তারা এটার পিছনে ছুটছে , ওরা ওরা ওরা……। আমরা নিজেদের আয়নায় দেখার একটুও সময় পাই না। নবী-রাসুলদের (সঃ) নিয়ে ব্যঙ্গ করা হয়েছিল, আমি বলেছিলাম সাহাবাদের নিয়েও হয়েছিল। যেমন কুরআনে এসেছে… وَيَسْخَرُونَ مِنَ الَّذِينَ آمَنُوا আর তারা ঈমানদারদের প্রতি লক্ষ্য করে হাসাহাসি করে। (বাকারা; ২১২)। কাফিররা তাদেরকে নিয়ে মজা করে যারা বিশ্বাস করে। এখন মৌলিক প্রশ্ন হলো রাসুল (সঃ) ও সাহাবাদের নিয়ে কেন ব্যঙ্গ করা হত? আর...
Articles |
প্রথমেই যে ব্যাপারটা আমি বলতে চাই তা হলো, আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল সুরা আন নাহল এর শেষ অংশে বলেছেন, ‘উদয়ু ইলা সাবিলি রাব্বিক’। যেটার অর্থ সাধারণ ভাবে বলা যায় ‘তোমার রবের পথে ডাকো’। এটাই সাধারণ ভাবে বলা হয়েছে এখানে। বিল হিকমাহ অর্থ প্রজ্ঞা ব্যবহার করে , অথবা বলা যায় তোমার রবের প্রতি ডাকো প্রজ্ঞার সাথে। কিন্তু এ বিষয়টাই এখন একটু গভীরভাবে ভাবা যাক। যখন আপনি কাউকে দাওয়াত দেন ; দাওয়াত দেবার অর্থ হলো এটা একই সাথে হবে বন্ধুত্বপূর্ণ, দয়ার্ত ও ভালবাসাময় একটা ব্যাপার। আপনি তেমন কাউকে দাওয়াত দিবেন না যাদের আপনি ঘৃণা করেন। এবং এই দাওয়াতের কাজটা তখনও সম্পন্ন হবে না যখন আপনি রাগান্বিত থাকবেন। অন্যভাবে বলা যায়, ব্যাপারটি এমন ও না যে আপনি কাউকে ডিনারের দাওয়াত দিতে গিয়ে রাগতস্বরে বললেন যে, এহ! আমার বাসায় এসো। আপনি সেটা করবেন না। কারণ আপনি নিশ্চিত ভাবে জানেন যে আপনার সে আমন্ত্রন প্রত্যাখ্যাত হবে। আমি যা বুঝাতে চাচ্ছি তা হলো, দাওয়াত দেবার পন্থাটা কেমন হবে। দাওয়াতের সেই পন্থা যেটা ইসলামকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়, মানুষকে ইসলামের পথে আনে। আপনি যে মানুষটাকে দাওয়াত দিয়ে ইসলামের পথে ডাকেন তার প্রতি ভালবাসা, সৌজন্যতা, সম্মান থাকতে হবে। এই দাওয়াতে ঘৃণা মেশানো কোন কথা থাকতে পারে না, বিচার করার বার্তা থাকতে পারবে না। এই দাওয়াত নিজেকে জাহির করার জন্যও নয় যেখানে কোনভাবেও দেখানো হয় যে যাকে দাওয়াত দিচ্ছেন তার চেয়ে আপনি উত্তম। এর কোনটাই দাওয়াতে থাকতে পারবে না। যদি থাকে তাহলে সেটা কখনই দাওয়াত হতে পারে না। এখন দেখা যাক আল্লাহ প্রথম শব্দটিতে কি ব্যবহার করেছেন। ‘উদয়ু’। এবং তার পরে তিনি বলেছেন ‘ইলা সাবিলি রাব্বিক’- তোমার রবের পথে ডাকো। এটা নিয়ে একটু চিন্তা করুন। ক্লাসিক্যাল তাফসীর থেকে এ সম্পর্কে অনেক কিছুই বলা যায়। কিন্তু আজকের দর্শকদের জন্য আমি...
Articles |
খলিফা হারুন অর রশিদ, তিনি তখন রাষ্ট্র প্রধান ছিলেন, আমির উল মু’মিনিন। সেই সময় আমির উল মু’মিনিনগণ সালাতের ইমামতি করতেন, বিশেষভাবে হজ্বের সময়। এরকম এক সময় তিনি হজ্ব পালন করতে গেছেন, তাহলে কে তখন ইমামতি করবেন? আমির উল মুহ’মিনিন হিসেবে তিনিই ইমামতি করবেন। যাই হোক, তিনি প্রথম কাতারে ছিলেন। কারণ তিনি ইমামতি করবেন। আর তিনি ছিলেন হানাফি মাজহাবের অনুসারী। উনার হজ্বের যিনি মুয়াল্লিম ছিলেন, আপনারা তো জানেনই মুয়াল্লিম কাকে বলে – মুয়াল্লিম হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি আপনাকে হজ্বের বিভিন্ন নিয়মকানুনগুলো সঠিকভাবে শিখিয়ে দেন। স্বাভাবিকভাবেই আমির উল মু’মিনিনের মুয়াল্লিমও হানাফি মাজহাবের অনুসারী ছিলেন। তিনি ছিলেন কাজী ইউসুফ, হানাফি মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতা। ইমাম আবু হানিফার সবকিছু উনিই লিপিবদ্ধ করতেন। যাইহোক, এই কাজী ইউসুফই ছিলেন আমির উল মুহ’মিনিনের মুয়াল্লিম। পৃথিবীর বুকে হানাফি মাজহাবের সবচেয়ে বিজ্ঞ যে আলেম তিনি হচ্ছেন তাঁর মুয়াল্লিম! তাঁরা দুজনেই সামনের কাতারে আছেন এবং আমির উল মুহ’মিনিনের একটু পরেই সালাতের ইমামতি করার কথা। কিন্তু খলিফা হারুন অর রশিদ, হিজামা করিয়েছেন। আপনারা জানেন নিশ্চয়ই হিজামা কি। হিজামা হচ্ছে এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যেটা কাপিং এর মাধ্যমে করা হয় এবং এর ফলে শরীর থেকে রক্ত বের হয়। এখন, হানাফি মাজহাব অনুসারে শরীর থেকে রক্ত বের হলে অজু নষ্ট হয়ে যাবে। খলিফা হারুন অর রশিদ একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন, তিনি জানতেন যে তিনি যদি আবু ইউসুফকে এখন জিজ্ঞাসা করেন যে আমার অজু কি নষ্ট হয়েছে কি না? তাহলে আবু ইউসুফ কি বলবেন? বলবেন যে, হ্যাঁ, অজু নষ্ট হয়ে গেছে। আর সে ক্ষেত্রে তাঁকে এখন প্রথম কাতার থেকে বের হয়ে, সবগুলো কাতার পার হয়ে অজুখানায় যেয়ে অজু করতে হবে। এরপরে, আবার সেই পেছন থেকে প্রতিটি কাতারে বিভিন্ন মানুষজনের সাথে কুশল বিনিময় করতে করতে সামনের কাতারে ফেরত আসতে হবে। এই পুরো প্রক্রিয়াতে যে সময় লাগবে...