মু'জিযা |
<> চাঁদ-সূর্য <> ২৫ নাম্বার সূরা ফুরকানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন – تَبَارَكَ الَّذِي جَعَلَ فِي السَّمَاءِ بُرُوجًا وَجَعَلَ فِيهَا سِرَاجًا وَقَمَرًا مُّنِيرًا (আয়াত ৬১) আকাশ এবং পৃথিবীতে থাকা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আল্লাহ কথা বলেছেন। ”পূন্যময় তিনি যিনি আকাশে নক্ষত্ররাজি স্থাপন করেছেন।” তার পর বলছেন, ”আর আকাশে তিনি প্রদীপ স্থাপন করেছেন।” তিনি এই আয়াতে সূর্যকে প্রদীপ বলেছেন -সিরাজ। ‘’ও কামারাম মুনিরা।’’ ‘কামার’ অর্থ চাঁদ। কিন্তু এর পরের ‘মুনির’ শব্দটি আসলে বৈজ্ঞানিক। যদি আপনি এভাবে বলতে চান। মুনির শব্দের অর্থ যাকে আলো দেয়া হয়েছে। এমনকিছু যাতে প্রতিবিম্বিত আলো আছে। তাহলে দুটি শব্দ। একটি হলো সিরাজ, যা দ্বারা বুঝায় আলোর উৎস। আরেকটি(মুনির) হল আলোর গ্রাহক। যখন সূর্যের কথা আসলো তখন তিনি বললেন সিরাজ বা বাতি। আর যখন চাঁদের কথা আসলো তিনি বললেন- মুনির বা যার উপর আলো প্রতিবিম্বিত হয়। সুতরাং এমন এক সময় যখন এটা সবার জানা ছিল না তখন আল্লাহ বলছেন, চাঁদ নিজের আলো দিচ্ছে না। এখন আমরা সবাই জানি, চাঁদ সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়। কিন্তু ১৫০০ বছর আগে এটা এতোটা সুস্পষ্ট ব্যাপার ছিল না। মনে হত এটা নিজের আলোই বিতরণ করছে। <> লোহা <> সুতরাং এই আয়াত বলছে- আমি লোহা প্রেরণ করেছি। এটা ৫৭ নাম্বার সূরা হাদিদে আছে। আল্লাহ এখানে বলেছেন আমি লোহা প্রেরণ করেছি। আল্লাহ কুরআনে বহু কিছু সৃষ্টি করার কথা বলেছেন। আর এর জন্য তিনি ‘খালাকা’ (সৃষ্টি করা) ক্রিয়াপদ ব্যবহার করেছেন। তিনি পৃথিবী এবং মহাকাশ সৃষ্টি করেছেন, তিনি জীবন মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন, ইত্যাদি ইত্যাদি সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু যখন লোহার কথা আসলো তিনি বলেননি যে, তিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেছেন এটা প্রেরণ করেছেন। অতীতের আলেমরা এই আয়াত ব্যাখ্যা করতে হিমশিম খেতেন যে কেন আল্লাহ প্রেরণ করা বললেন। কারণ আল্লাহর কথা খুবই স্পষ্টরূপে নির্দিষ্ট, এটা আমাদের বিশ্বাস।...
Articles |
একটি বিষয়ে আজ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মাঝে মাঝে আমি কোনো প্রেক্ষাপট ছাড়াই কুরআনের আয়াত নিয়ে আলোচনা করতে পছন্দ করি। আবার কখনও আমরা যে যুগে বাস করছি তার প্রেক্ষাপটে কুরআনের আয়াত নিয়ে কথা বলি। আমি প্রায়ই একটা সমস্যা দেখতে পাচ্ছি , যা নতুন কিছু নয়, তারপরও ইদানিং এটি আরও বেশি দেখছি, এই ব্যাপারে ইমেইল পাচ্ছি, আমার সাথে এ ব্যাপারে অনেকে যোগাযোগও করছে। বিষয়টা এরকম যে, অনেকের ধারণা কুরআনকে আমাদের সর্বপ্রথম গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত, আর রাসূল (সঃ) এর সুন্নাহ হবে গুরুত্বের দিক থেকে দ্বিতীয়। অনেকে বলে তা নাকি প্রশ্নবিদ্ধ, বা বলে আমরা নিশ্চিন্ত নই যে কুরআনের মত হাদীস সংরক্ষিত কিনা। রাসূল (সঃ) এর সুন্নাহ অনেকভাবে সমালোচিত হচ্ছে, এমনকি ফিলোসফিকাল অবস্থান থেকেও সমালোচিত হচ্ছে। সমালোচনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল যে, সুন্নাহ ওতোটা সংরক্ষিত নয়। অর্থাৎ কুরআনের মত সুসংরক্ষিত নয়। আর আরেক রকম সমালোচনায় বলা হয় যে, এই সুন্নাহ যদি সংরক্ষিত হয়েও থাকে, যে ব্যাপারটা মুহাম্মদ (সঃ) কে রাসূলের মর্যাদা দিয়েছে, তা হলো উনি আল্লাহর বার্তা ছড়িয়ে দিতেন, আর এই বার্তাটা হল কুরআন। তাহলে আমাদের চোখ থাকবে শুধু ঐ বার্তার উপর, অর্থাৎ মূখ্য হবে শুধু কুরআন। আর এটা নিয়ে আমাদের নাকি বিভ্রান্ত হওয়ারও দরকার নেই, সুন্নাহর অস্তিত্ব আছে আরকি, তা নাকি কুরআনের মত অতোটা প্রয়োগযোগ্য নয়। আর কিছু মানুষ সব সীমা অতিক্রম করে এটাও বলেছে যে, অতিপবিত্র পথপ্রদর্শনের উৎস হিসেবে সুন্নাহকে নেওয়া নাকি শির্কের সমপর্যায়ে পড়ে। কারণ কিনা আপনি একজন নির্দিষ্ট মানুষের আচার আচরণকে গ্রহণ করছেন, আর সেটাকে আল্লাহর বাণীর সাথে সমতুল্য করছেন। এইরকম বিতর্ক এখনও চলছে, অনলাইনে আছে, অনেক মানুষ এসব আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ইত্যাদি। আর আমি এরকম ধরণের সমালোচনা অথবা অদ্ভুত চিন্তাভাবনার সামনে পড়েছি অনেক পরে। আপনাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে বলছি, আমি কুরআনের ছাত্র হয়েছি প্রায় পনের বছর আগে এবং এই কিতাব...
মু'জিযা |
কুরআনের গঠন বিন্যাস একটি অন্যতম কারণ যার জন্যে মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে এটা একমাত্র সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকেই অবতীর্ণ হতে পারে। আধুনিক গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে যে কুরআনের একটি বিশেষ গঠন বিন্যাস রয়েছে। এই বিন্যাসের নাম হল “বৃত্তাকার গঠন বিন্যাস”। এটির উদাহরণের জন্য আসুন আমরা কুরআনের দ্বিতীয় সুরাটি নিয়ে পর্যালোচনা করি। এর নাম হল “বাকারা” অর্থাৎ গাভী। এই সুরাটিতে মোট ২৮৬ টি আয়াত আছে। পুরো সুরাটিকে ৯ টি অংশে ভাগ করা যেতে পারে, বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে। প্রথম অংশের আয়াতগুলোতে আলোচনা করা হয়েছে বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস নিয়ে। এই একি আলোচনার প্রতিফলন হয়েছে ৯ম অংশে। ২য় অংশে আলোচিত হয়েছে সৃষ্টি রহস্য এবং জ্ঞান নিয়ে, যার প্রতিফলন হয়েছে শেষ থেকে ২য় অর্থাৎ ৮ম অংশে। ৩য় অংশে আছে সেইসব আইন যা বনী ইসরাইলকে দেয়া হয়েছিল। যার প্রতিফলন হয়েছে ৭ম অংশে, যেখানে আছে মুসলিমদেরকে দেয়া আইনগুলো। ৪র্থ অংশে আছে ইব্রাহিম (আঃ) এর পরীক্ষাগুলো, যার প্রতিফলন হল মুসলিমদের জন্যও পরীক্ষা, যা হল ষষ্ঠ অংশের বিষয়। আর মাঝের অংশ অর্থাৎ ৫ম অংশটি হল পুরো সুরাটির মুখ্য আলোচনা, সালাতের কিবলার দিক পরিবর্তন। “এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলীর জন্যে…. আপনি যে কেবলার উপর ছিলেন, তাকে আমি এজন্যই কেবলা করেছিলাম, যাতে একথা প্রতীয়মান হয় যে, কে রসূলের অনুসারী থাকে আর কে পিঠটান দেয়।” (আল কুরআন ২:১৪৩) এই কিবলার পরিবর্তন, যা ছিল জেরুসালেম থেকে মক্কার দিকে, এটি ছিল আসলে বিশ্বাসীদের জন্যও এক বিরাট পরীক্ষা। আর এই ঘুরে দাঁড়ানোর উল্লেখ আমরা দেখতে পাই সুরাটির ঠিক মধ্যম অংশে। ঠিক ১৪৩তম আয়াতে। আরও উল্লেখ্য হল এই আয়াতেই আছে ”মধ্যপন্থী সম্প্রদায়” শব্দটি। এই ৯ টি অংশ একসাথে একটি বিশাল বৃত্তাকার বিন্যাস গঠন করে। খুব সহজেই দেখা যাচ্ছে যেঁ এই বৃত্তাকার বিন্যাসটি হল একটি পূর্ণ বৃত্ত যার মূল অর্থটি...
Articles |
আস সালাম আলাইকুম সবাইকে, এখানেএকটি শান্ত / গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে এসেছে গালফ সফর থেকে, আমি কোরআন পড়ি কিন্তু আমি আরবি বুঝি না , সুতরাং আমি কোরআন পড়ার সময় কোন কিছুই বুঝতে পারি না । এটি কি শুধুমাত্র ইংরেজিতে পড়া যায় না এবং এই সকল লোকজনরা বলেন যে তোমাকে কোরআন মনে রাখতে হবে, কোরআন মুখস্থ করলে আরও বেশী (সাওয়াব) পাওয়া যাবে, এবং এখানে এমন অনেকে বাবারা আছেন যারা কোরআন মুখস্থ করেছেন কিন্তু অর্থ বুঝেন নি । আমাদের কি মানুষকে কোরআন মুখস্ত করতে না বলে কোরআন পড়তে বলা উচিতনা? এবং আপনি জানেন কি আমি যখন এই প্রশ্নটি শুনি আমি কিছু উপলব্ধি করলাম, যে প্রতিটা কাজেরই একটি সমান ও বিপরীত মুখী প্রতিক্রিয়া আছে । আমাদের সমাজে কিছু চরমপন্থী লোক আছেন, আমাদের কিছু একমুখী লোক রয়েছেন যারা কোরআন মুখস্ত করার উপর গুরুত্ব দেন কিন্তু বুঝার উপর গুরুত্ব দেন না, এবং আপনি একজন বিজয়ী হয়ে যাবেন যখন আপনি কোরআন মুখস্ত করে ফেলবেন এবং আপনি তারাবী সালাত পড়াবেন এবং আপনি অনেক সুন্দর করে তেলাওয়াত করবেন এবং লোকজন বলবে যে আপনি কতো চমৎকার তাজউয়ীদ উল কোরআন, কিন্তু আপনার কোন ধারনাই নেই যে এখানে এই সকল আয়াতে কি বলা হয়েছে । এটা হয় এক প্রকার চরমপন্থা, এবং এই চরমপন্থা আরও অন্যান্য চরমপন্থার জন্ম দেবে, আপনি জানেন কি এই সকল লোক কোরআন তেলাওয়াত করছেন কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই এবং এরা শুধুমাত্র সুন্দর করে শব্দগুলো তেলাওয়াত করে যাচ্ছে , কিন্তু প্রকৃত বার্তা / সংবাদটি কি ? আমাদের উচিত মুখস্ত করার কথা ভুলে যাওয়া / বাদ দেয়া , আমাদের পড়া এবং বুঝার উপর ফোকাস করা / গুরুত্ব দেয়া উচিত , আপনি জানেন এটি কি, এটি হচ্ছে দুটি চরমপন্থা । এই সকল ক্ষেত্রে প্রকৃত সত্যটি এই ২ টি ঘটনার মাঝখানে বিরাজমান থাকে,...
Articles |
আজকের খুতবার একদম শুরুতে আমি দুটো কথা বলে নিতে চাই, প্রথমত এই যে, অনেক দীর্ঘ সময় নিয়ে ভাবনা চিন্তার পর আজকে যে বিষয়টি আমি বেছে নিয়েছি, এটা খুব কঠিন এবং জটিল। যদিও আমি যখন খুতবার জন্য কোন বিষয় নির্বাচন করি সাধারণত আমি চেষ্টা করি সেটাকে যতটা সহজ করা যায়। কিন্তু আমি মনে করি এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা সব মুসলিমদের জন্য যথেষ্ট জরুরী এবং ভীষণ গুরুত্বপুর্ণ তাই আমি আল্লাহ্ আজ্জা ওয়াজ্বালের কাছে প্রার্থনা করছি যেন আজকের বক্তব্যে আমি আমার ভাবনাগুলো খুব পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করতে পারি যাতে আপনারা এ থেকে উপকৃত হতে পারেন। দ্বিতীয়ত, যখনই আমি এখানে এলাম আমি দেখলাম আমাদের ইমাম সাহেব এখানে বসে আছেন, আমার মনে হলো আরবীতে একটা কথা আছে, “আগনাস সাবা আনীল মিসবাহ”, যার মানে হলো, “সময়টা যখন সকাল, আপনার বাতির প্রয়োজন নেই”(স্মিত হাসি)। আমি ঠিক জানি না আমাকে কেন খুতবা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রিত করা হয়েছে যেখানে ইমাম সাহেব স্বয়ং উপস্থিত আছেন। যা হোক, যেহেতু আমি এখন এ জায়গায় আছি, ইন শা আল্লাহ আশা করছি আমি এ সুযোগটা সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে পারবো। আজকের এই সংক্ষিপ্ত খুতবায় আমি কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্কের দুইটি দিক নিয়ে কথা বলতে চাই। আল্লাহ্ আজ্জা ওয়াজ্বাল কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে বর্ণনা করেছেন বিভিন্ন ভাবে। এটা শুধু এক ধরণের সম্পর্ক নয়, কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্কটা বিভিন্ন ধরণের। যেমন ধরুন এটা (কুরআন) একটা স্মরণিকা নিজের জন্য আবার এটা অন্যকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার একটা মাধ্যমও ।এটা জিকির বা স্মরণিকা আমাদের নিজেদের জন্য এবং কুরআন একটা মাধ্যমও যাতে আমরা অন্যদেরকেও স্মরণ করিয়ে দিতে পারি। এটা চিন্তা করার মতো বিষয় এবং আমাদেরকে বার বার বলা হয়েছে যাতে আমরা কুরআনকে নিয়ে চিন্তা করি, খুব মনযোগ দিয়ে শুনি এবং গভীর ভাবে ভাবি। এই “গভীর করে ভাবা” ব্যাপারটা নিয়েই...