Tafsir, Videos |
খুৎবায় আলোচিত আয়াতসমূহ: “আর আপনি তাদেরকে শুনিয়ে দিন, সে লোকের অবস্থা, যাকে আমি নিজের নিদর্শনসমূহ দান করেছিলাম, অথচ সে তা পরিহার করে বেরিয়ে গেছে। আর তার পেছনে লেগেছে শয়তান, ফলে সে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়েছে। আর আমি ইচ্ছা করলে উক্ত নিদর্শনাবলীর মাধ্যমে তাকে অবশ্যই উচ্চ মর্যাদা দিতাম, কিন্তু সে পৃথিবীর প্রতি ঝুঁকে পড়েছে এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে কুকুরের মত। যদি তার উপর বোঝা চাপিয়ে দাও তাহলে সে জিহবা বের করে হাঁপাবে অথবা যদি তাকে ছেড়ে দাও তাহলেও সে জিহবা বের করে হাঁপাবে। এটি হচ্ছে সে কওমের দৃষ্টান্ত যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে। অতএব তুমি কাহিনী বর্ণনা কর, যাতে তারা চিন্তা করে। তাদের উদাহরণ অতি নিকৃষ্ট, যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার আয়াত সমূহকে এবং তারা নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করেছে।” সূরা আ’রাফ, আয়াত ১৭৫ –...
Articles |
সর্বশেষ যে বিষয়টি আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই তা হলো – আল্লাহর উপর ভরসা ধরে রাখা। অনেকের জন্য এই বিষয়টা মেনে নেয়া বেশ কঠিন যে, আল্লাহ তার কথা শুনবেন। তারা হয়তো লম্বা সময় ধরে কোনো খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। তারপর তারা মনে মনে ধরে নেন যে, আল্লাহ আমার কথায় কোনো মনোযোগ দিবেন না, আমার দোয়া তাঁর নিকট গুরুত্বহীন, আমি দোআ করার কোনো অর্থ দেখি না। আপনাদের একটা কথা বলে রাখি, আল্লাহর নিকট থেকে আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ যে উপহারটি পাবেন, তা কী জানেন? ক্ষমা। এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। আপনি এটার মূল্য উপলব্ধি করুন আর নাই করুন। আর যা কিছু আল্লাহ আপনাকে দিবেন বলেছেন, এর সবই অতিরিক্ত। আপনাদেরকে একটা উদাহরণ দেই। আমার অনেকগুলো সন্তান আছে। ধরুন, আমার এক সন্তানের উপর আমি খুবই অসন্তুষ্ট। সে কোনো একটা অন্যায় করেছে, তাই আমি খুবই রাগান্বিত হয়ে আছি। “তোমার এটা বলা উচিত হয়নি। তোমার এটা করা উচিত হয়নি। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে, তুমি এটা করেছো।” এভাবে আমি তাকে কিছুটা বকা-ঝকা করলাম। তারপর দিনের অন্য এক সময় আমার জন্য তার কিছু একটা করার কথা। যেমন, আমার জন্য একটা কার্ড আঁকার কথা যাতে লেখা থাকবে “বাবা, আমি আপনাকে ভালোবাসি”। সে জিনিসটা আঁকলো। কিন্তু পরে কি মনে করে কাগজটা টুকরা টুকরা করে ময়লার বাক্সে ফেলে দিলো। এটা দেখে তার অন্য ভাই বললো – “কী! তুমি এটা ফেলে দিলে কেন? তোমার না এটা বাবাকে দেখানোর কথা।” জবাবে সে বললো – ” বাবা আমার উপর খুবই রাগান্বিত। তিনি এটার প্রতি কোনো গুরুত্ব দিবেন বলে মনে হয় না। তিনি আমাকে আর ভালোবাসেন না।” আমি যদি জানতাম যে, সে বিষয়টাকে এভাবে দেখছে তাহলে আমি কী করতাম? আমি কি এভাবে বলতাম যে, “হ্যাঁ, ফেলে দাও। আমার এসবের কোনো দরকার নেই?” না,...
Articles |
আল্লাহ তায়ালা বলেন – وَمِنْهُمْ أُمِّيُّونَ لَا يَعْلَمُونَ الْكِتَابَ إِلَّا أَمَانِيَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَظُنُّونَ – – “তাদের মাঝে এমন কিছু নিরক্ষর লোক আছে, যাদের মিথ্যা আকাঙ্ক্ষা ছাড়া কিতাবের কোন জ্ঞানই নেই, তারা কেবল অলীক ধারণা পোষণ করে।” 2:78 এখানে ‘উম্মি বা অশিক্ষিত’ বলতে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝানো হয়েছে? ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। তাদের হয়তো ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্ৰী রয়েছে। তারা হয়তো সি ++ জানে, কিন্তু আরবি তাদের জন্য অনেক বেশি কঠিন। কুরআন তাদের জন্য অনেক বেশি কঠিন। “আমি যদি চাই চোখ বন্ধ করেও কোড লিখতে পারবো। আমি পুরো একটা রোবটের কোডিং একা একাই লিখে ফেলতে পারবো। কিন্তু কুরআনের ভাষা?? কার এতো সময় আছে?” তারা ইচ্ছা করেই অশিক্ষিত থেকে যায়। لَا يَعْلَمُونَ الْكِتَابَ – তারা আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে জানে না। এর আরেকটি অর্থ হলো, তারা আল্লাহর বিধান জানে না। কিতাব শব্দের দুইটি অর্থ, বই এবং আইন। لَا يَعْلَمُونَ الْكِتَابَ إِلَّا أَمَانِيَّ – “তারা মিথ্যা আকাঙ্খা ছাড়া আল্লাহর গ্রন্থের কিছুই জানে না।” إِلَّا أَمَانِيَّ তারা নিজেদের কল্পনাপ্রসূত অনুমান ছাড়া আর কিছু জানে না। তারা এভাবে বলে – “আমি মনে করি, বিষয়টা এটা এভাবে না, ঐভাবে। আমি মনে করি না যে, শাস্তি এতো কঠোর হবে, আল্লাহ এর চেয়ে অনেক কোমল। হুজুররা ঐ জিনিসটাকে শুধু শুধু হারাম হারাম বলে আসছে। ঐ জিনিসটাকে হারাম বলা পুরাই অবাস্তব। বিষয়টা এতো খারাপ না। আমরা বড় জোর এটাকে অপ্রয়োজনীয় বলতে পারি।” অর্থাৎ, নিজেরা যা কামনা করে তা ধর্মের কথা বলে চালিয়ে দেয়। আমাদের সময়ে এই রোগটা অনেক জটিল আকার ধারণ করেছে। তারা ধর্ম সম্পর্কে এমনভাবে কথা বলে যেন বাজারের কোনো পণ্য সম্পর্কে কথা বলছে। “আমি ধর্মটাকে এমনভাবে চাই যেন আমি নিজের সম্পর্কে ভালো ফিল করতে পারি। কিন্তু এই এই বিধানগুলো আমার জন্য অনেক কঠোর। আমি যদি এগুলো পালন না...
Tafsir |
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আমি আপনাদের সাথে এই সংক্ষিপ্ত ভিডিওতে সুরা সোয়াদ এর কিছু ভাবনা নিয়ে আলোচনা করব। এটি কুরআনের ৩৮ তম সুরা। আর এর পরের সুরা হচ্ছে সুরা জুমার। এই দুই সুরার শেষেই আল্লাহ বেহেশত সম্পর্কে খুব সুন্দর কিছু উল্লেখ করেছেন, যা এখন আমি আলোচনা করব। আল্লাহ আজ ওয়াজাল সুরা সোয়াদে বলেছেন, “জান্নাতের বাগান সমূহ ( যা আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন) এর দরজাগুলো তাদের জন্যে খোলা রাখা হয়েছে, (আরবিতে মুফাত্তাহা মানে এমন কিছু যা খোলে ধরে রাখা হয়েছে এবং কেউ একজন এর ধরে রাখার দায়িত্বে আছে)। এবং যেভাবে আল্লাহ এটি বর্ণনা করেছেন যে, জান্নাতের দরজা ইতিমধ্যে খোলে ধরে রাখা হয়েছে। এটি কিয়ামতের দিন খোলা হবে না। এটি ইতিমধ্যে খোলে ধরে রাখা হয়েছে। মুফাত্তাহা আর মাফতুহা এ দুটি আলাদা শব্দ। আরবিতে মাফতুহা মানে দরজা খোলা। আর মুফাত্তাহা মানে, দরজা প্রশস্তভাবে খোলে ধরে রাখা। এখন চিন্তা করুন, আপনার অনুমান শক্তিকে কাজে লাগান। যখন দরজা বন্ধ থাকে, তাদেরকে দরজার বাইরে দাড়াতে হবে, ঘণ্টা বাজাতে হবে, দরজায় কড়া নাড়তে হবে, অপেক্ষা করতে হবে দরজা খোলার জন্যে এবং তারপরেই তারা ঢুকতে পারে। যখন আপনি আপনার অতিথির সুবিধার জন্যে খুব বেশি উদ্বিগ্ন থাকবেন, তখন আপনি কি করবেন? আপনি দরজা খোলে রাখবেন। এরপরেও আপনার অতিথি দরজা অর্ধেক খোলা দেখে হয়তো ভাবতে পারে যে, আমি জানি না আমাকে হয়তো ঘণ্টা বাজাতে হবে, ঘরে ঢোকার জন্যে অনুমতি নিতে হবে যেরকম আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা যারা বিশ্বাস কর, তারা অন্যের ঘরে ঢুকো না যতক্ষণ না অনুমতি পাও”। (সুরা আন-নুর:২৭)। এখন, তৃতীয় আরেকটি অবস্থার কথা চিন্তা করুন। ধরুন, আপনি কাউকে দায়িত্ব দিলেন যেমন কোন বাচ্চা অথবা যে কেউ। আপনি দায়িত্ব দিলেন আপনার বাসার দরজা খোলে ধরে থাকার জন্যে এবং আপনার অতিথিদেরকে স্বাগতম জানানোর জন্যে যখন তারা আপনার...
Articles |
কুরআন তিলাওয়াত শুরু করার পূর্বে সহ বিভিন্ন সময় আমরা বলে থাকি ”আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম।” এখানে اعوذ শব্দের যে অর্থ আমরা সাধারণত করে থাকি তা হলো – “আমি আশ্রয় চাই।” কিন্তু اعوذ শব্দটি ”উওআজ” শব্দ থেকে আগত। আর ”উওআজ” শব্দের অর্থ বোঝার জন্য আগে কয়েকটি উদহারণ দেখি। যেমন — এমন পাথর যা শেওলা দিয়ে ঢাকা থাকে, আর শেওলাগুলো সহজে উঠে আসে না। — অথবা এমন গাছ যা অন্য আরেকটি গাছের বাকলে জন্মে, আপনি জোরে টান দিয়েও উঠাতে পারেন না। — অথবা এমন হাড় যার সাথে কিছু গোশত আটকে থাকে, সহজে ছাড়ানো যায় না। এই রকম আটকে থাকাকে বলা হয় ”উওআজ।” এখান থেকেই আশ্রয় চাওয়ার ধারণাটি আসে। এখন প্রশ্ন হলো – এই দুইটার মাঝে কানেকশনটা কী? যখন আপনি আশ্রয় বা রক্ষা পাওয়ার জন্য কোনো কিছুকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকেন, এবং জানেন যে ছেড়ে দিলেই মারা যাবেন, এই রকম জীবন বাঁচানোর জন্য শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকাকে বলা হয় ”ইস্তিয়াজা।” যখন আমি বলি – ”আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম” – তখন আমি আসলে বলছি যে, আমি আমার জীবন বাঁচানোর জন্য আল্লাহকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকবো যেভাবে শেওলা পাথরকে শক্ত করে ধরে রাখে, অথবা ছত্রাকের মত যা গাছের বাকলের সাথে শক্ত করে আটকে থাকে, অথবা ঐ গোশতের মতো যা হাড়ের সাথে আটকে থাকে। আমি শয়তানের কবল থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর বিধানকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকবো। অনেক সময় আমরা সরাসরি আল্লাহর বিধানকে অমান্য করে চলি, তারপর কোনো সমস্যায় পড়লে বলে উঠি – ”আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম।” হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি আল্লাহর দ্বীনকে শক্ত করে ধারণ করে আছি। ইয়া আল্লাহ! আমাকে রক্ষা করুন। তারপর বিপদ চলে গেলে আবার আল্লাহর বিধানকে ছেড়ে দেই। আপনি কীভাবে আল্লাহর বিধানকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আছেন তা দেখানোর...