রাগ গিলে ফেলুন আর ক্ষমা করুন

আমরা রাগান্বিত হই। ছোট ছোট বিষয় নিয়ে কাজের ক্ষেত্রে, বাসায় তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সহজেই স্ত্রী স্বামীর উপর, স্বামী স্ত্রীর উপর রাগ করেন। নগণ্য বিষয় আপনার ছেলেমেয়েদের উপর রাগ তৈরি করে। রাগ দমন করতে শিখুন। এমন একজন মানুষ হওয়ার চেষ্টা করুন, যে এসব কাজ করতে ভয় পায়। ছোট ছোট বিষয় যদি আমাদের রাগান্বিত, বিপর্যস্ত করে, তাহলে কিভাবে আমরা আল্লাহ আজ্জা ওয়াজালের কাছে আমাদের বড় বড় পাপের জন্যে ক্ষমা আশা করব? আমরা আল্লাহর কাছ থেকে আশা করি, তিনি যেন রাগান্বিত না হন। আর আমরাই কিনা ছোট ছোট বিষয়ে রাগ করি! এটা আত্মসংযম এর ঘাটতি প্রকাশ করে। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জ্বাল বলেন – وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ – “যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে”। (৩:১৩৪) আর দ্বিতীয়, মুত্তাকী লোকদের পরের লক্ষণ হচ্ছে, وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ – “মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে”। খুবই কঠিন! তারা ভালোবেসে মানুষকে ক্ষমা করে দেয়। গাফিরিন না! গাফিরিন না! আ’ফিন। গাফিরিন হচ্ছে যে ক্ষমা করে দেয়। কিন্তু আ’ফ মানে হচ্ছে, যে ভালোবেসে ক্ষমা করে দেয়। যখন কেউ আপনাকে কষ্ট দেয় এবং আপনি তাঁকে ক্ষমা করে দেন…. প্রথমত, বেশির ভাগ লোকই বলে যে, আমি জানি এটা অনেক সুন্দর খুতবা। আমি জানি আমার ক্ষমা করা উচিত কিন্তু আমার অবস্থা অন্যদের থেকে আলাদা। আপনি বুঝতে পারছেন না। এই লোকটি সব গোলমাল পাকিয়ে ফেলেছে। সে ক্ষমার যোগ্য নয়। প্রসঙ্গক্রমে, যে ক্ষমার যোগ্য তাঁকে আপনি কখনো ক্ষমা করেন না। সংজ্ঞানুযায়ী, ক্ষমাশীলতা মানে হচ্ছে এমন কাউকে ক্ষমা করা যে এর যোগ্য নয়। এবং আপনি কাউকে তার জন্য ক্ষমা করবেন না। কেউ আপনার কাছে ক্ষমা চাইছে বা কেউ ক্ষমার যোগ্য এই জন্য আপনি কাউকে ক্ষমা করবেন না। আপনি ক্ষমা করবেন আপনার নিজের জন্য। কারণ, আপনি এই তালিকায় থাকতে চান। আপনি এমন মানুষদের মধ্যে থাকতে চান যাদেরকে মুত্তাকীন বলা...

আপনাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে, সামনে এগিয়ে যান

– আসসালামু আলাইকুম আব্দুল্লাহ, – ওয়ালাইকুমুস সালাম। – কেমন চলছে? আপনি আপনার এক বন্ধু সম্পর্কে কথা বলতে চাচ্ছিলেন? – হ্যাঁ, আমি একজনের সাথে বল খেলছিলাম, এরপর আমরা ‘ঈদ মুবারক’ জাতীয় যা করে না, সেরকম করলাম। কিন্তু সে মনে করে যে সে এমনকি ঈদও পালন করতে পারবে না, কারণ সে মনে করে সে তার অতীতে এমন কাজ করেছে, এবং তার কারণে সে অনেক দূরে সরে গেছে (ইসলাম থেকে)। এবং তার আশেপাশের সবাইও তাকে এই ব্যাপারটা ভুলতে দিচ্ছিল না, তাই কোন আশা আর নেই। আমি তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলাম, কিন্তু সেটা কাজ করল না। – আমারও এরকম অনেক মানুষের সাথে দেখা হয়েছে। কিন্তু সুবহানাল্লাহ, আমরা অনেক নিষ্ঠুর, দয়াহীন অন্য লোকদের প্রতি। এবং পরিহাসের ব্যাপার হল, আমরা আল্লাহর কাছে নিজেদের জন্য অনেক দয়া চাই, কিন্তু আমরা অন্য লোকদের প্রতি তার বিন্দু মাত্রও প্রদর্শন করি না। মানুষ ভুল করতেই পারে, ঠিক আছে। কোন কোন লোক হারাম কাজ করে, কেউ কেউ অনন্য, অসাধারন, হারামের উপর হারাম, এমন কাজ করে। এবং অন্য লোকেরা যখন এটা সম্পর্কে জানে, তখন তারা বলা শুরু করে, ওহ তুমি তো কখনোই ক্ষমা পাবে না, তোমাকে তো কখনোই আল্লাহ মাফ করবেন না। তুমি! ভুলে যাও, তুমি তো জাহান্নামে জ্বলবে। এই ধরনের কথা বার্তা! এবং আপনি যখন বারবার এই ধরনের কথা শুনা শুরু করবেন, আপনি যখন বারবার অনুশোচনায় দগ্ধ হবেন, তখন আপনিও এটা বিশ্বাস করা শুরু করবেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যখন আপনি এটা বিশ্বাস করা শুরু করবেন যে আপনি আর ক্ষমা পাবেন না, তাহলে আপনার এই জীবনে ভাল কাজ করার আর কোন অনুপ্রেরনাই থাকবে না। যেমন ধরেন, আপনি ভাববেন কেন আমি নামাজ পড়বো? কারণ আমি তো এমনিতেই জাহান্নামে যাব। কেন আমি আমার বাবা-মার দেখাশুনা করবো? কেন আমি সত্য কথা বলবো?...

আল্লাহর কাছে কীভাবে ক্ষমা চাইবেন?

এখন এই ক্ষমা চাওয়াটা দুইভাবে হয়ে থাকে। জিহবার মাধ্যমে ক্ষমা চাওয়া এবং অন্তরের মাধ্যমে ক্ষমা চাওয়া। মানুষ সাধারণত নিজের পক্ষে যুক্তি দিয়ে থাকে। আমি যদি কোনো কারণে আপনার সমালোচনা করি…যেমন আমি কাউকে বললাম – ”এই যে, আমি আপনাকে অমুক কথা বলতে শুনেছি। কেন আপনি এটা বলেছেন?” সে তৎক্ষণাৎ হয়তো বলে উঠবে – ”আমি এমনটা বোঝাতে চাই নি, আপনি জানেন না আমি কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি! এক্সকিউজ মি, আপনি তো পুরো ঘটনাটা জানেনই না।” সুতরাং কেউ আপনাকে যদি বলে, ভাই আমি আপনাকে এটা এটা করতে দেখেছি। আপনি সাথে সাথে নিজের পক্ষে যুক্তি দিতে শুরু করেন, আত্মরক্ষামূলক হয়ে উঠেন। بَلِ الْإِنسَانُ عَلَىٰ نَفْسِهِ بَصِيرَةٌ – وَلَوْ أَلْقَىٰ مَعَاذِيرَهُ – মানুষ নিজের সম্পর্কে সু ধারণা পোষণ করে। তারা প্রচুর অজুহাত দেখায়। আপনি যদি আসলেই আল্লাহর ক্ষমা চান। আপনাকে নিরিবিলি একটা সময় খুঁজে পেতে হবে … যদি আরবিতে দোয়া করতে না পারেন কোনো সমস্যা নেই। আপনি শুধু পাঞ্জাবি, বাংলা, বাহাসা, বা উর্দু জানেন, কোনো ব্যাপার না, আপনি আপনার নিজস্ব ভাষাতেই আল্লাহর সাথে কথা বলুন। আন্তরিকতার সাথে আপনার অপরাধগুলো স্বীকার করে নিন। কোনো অজুহাত দেখবেন না। এইরকম করতে পারা আসলেই অনেক কঠিন। কারণ আয়নার সামনে দাঁড়িয়েও আমরা নিজের সাথে মিথ্যা বলি। নিজেকে এভাবে প্রবোধ দেই – ”আমি আসলে অতো খারাপ না। আমি যা করেছি তার কারণ আছে। আমি অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।” যখন আপনি আল্লাহর সামনে দাঁড়াবেন, নিজের কাজের বৈধতা দেয়ার কথা ভুলে যান। কারণ যেসব অজুহাতের মাধ্যমে আপনি আপনার কাজের বৈধতা দিতে চান, তিনি ইতিমধ্যে তার সবগুলোই জানেন। আল্লাহ জানেন আপনি কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তিনি জানেন এটা কঠিন সময় ছিল, তিনি জানেন অমুক অমুক বিষয় আপনাকে সম্পূর্নরুপে গ্রাস করে ফেলেছিলো। ” ইয়া রব, আমি অনেক চাপের মধ্যে ছিলাম তাই...

আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা

আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে কত শত পথ আপনার জন্য খুলে যাবে! আসমানের দরজা আপনার জন্য এমনভাবে খুলে যাবে যে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। হেদায়েতের পথ খুলে যাবে, আপনি সবকিছু আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। আপনার ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো দূর হতে শুরু করবে। উদাহরণস্বরূপ, রাগের কথা ধরা যাক। রাগ হওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া আসলেই অনেক কঠিন। বহু মানুষ খুবই সমস্যাপূর্ণ জীবন যাপন করে, কারণ তারা অল্পতেই রেগে যান। এর থেকে বের হতে পারে না। কিছু একটা তাদের সামান্যতেই ক্রোধান্বিত করে তোলে, আর তারা এর সাথে লড়াই করতে পারে না। তারা তাদের এই সমস্যাটা বুঝতে পারেন, কিন্তু নিজের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন এবং মনে মনে ভাবেন যে, “না, আমার পক্ষে এই রাগ হওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। আর মনে হয় আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন না, কারণ আমি এরকম রাগান্বিত একজন মানুষ। আমি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নয়। “ হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় সাহাবীরা খুবই রাগান্বিত হয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের রাগ দূর করা সম্পর্কে আল্লাহ কী বলেছেন? তিনি বলেছেন – أَنزَلَ السَّكِينَةَ فِي قُلُوبِ الْمُؤْمِنِينَ – “তিনি আকাশ থেকে বিশ্বাসীদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করেন।” প্রশান্তি আমাদের নিজেদের কাছ থেকে আসে না। আমরা নিজেদের প্রশান্ত করতে পারি না। মূসা (আ) এর মা ভয়ে এবং টেনশনে প্রায় মারা যাচ্ছিলেন, যখন তিনি তার ছোট্ট শিশুকে একটি বাক্সে বন্দি করে পানিতে ভাসিয়ে দেন। আর আল্লাহ বলেন – لَوْلَا أَن رَّبَطْنَا عَلَىٰ قَلْبِهَا – “যদি আমি তাঁর হৃদয়কে দৃঢ় করে না দিতাম,” আল্লাহ তার অন্তরকে দৃঢ় করেছিলেন। মূসা (আ) এর মায়ের পক্ষে স্বীয় অন্তরকে দৃঢ় করা সম্ভব হতো না। তিনি এতো বেশি ভেঙে পড়েছিলেন, এবং আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে তাঁর নিজের পক্ষে নিজেকে শান্ত করা সম্ভব হতো না। ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ বলে একটা ব্যাপার আছে,...

আল্লাহর কাছে কী চাইবো? (২য় পর্ব)

এটা শুনার পর আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন, ক্ষমা চাওয়ার জন্য কোন দোয়া পড়তে হবে বা ক্ষমা চাওয়ার জন্য শ্রেষ্ঠ দোআ কোনটি? মানুষ বিভিন্ন অকেশনে বিভিন্ন রকম দোআ পড়ে। যেমন – কোন সন্তানসম্ভাব্য মা এসে জিজ্ঞেস করে, কিছুদিনের মধ্যে আমার বাচ্চা হবে, এখন আমার বাচ্চার জন্য কোন দোয়াটি আমি পড়তে পারি? অথবা কেউ একজন এসে বলতে পারে – আমি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছি, কোন দোয়াটি আমি এখন পড়তে পারি? ঠিক কিনা? আমাকে বিশেষ বিশেষ সময় উপলক্ষে বিশেষ বিশেষ দোআ প্রদান করুন। আমি আপনাদের বলছি – বিশেষ সময়ের ঐ দোয়াগুলো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেগুলো পবিত্র এবং আল্লাহর কাছ থেকে অবতীর্ণ। কিন্তু সকল সমস্যার ক্ষেত্রে কমন দোআ হলো – “আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করা।” আপনার সকল সমস্যা দূর করার দোআ, যে একটি দোআ আপনার সকল সমস্যা দূর করবে তা হলো – সত্যিকারার্থে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। নূহ আলাইহিস সালাম তাঁর জাতিকে আল্লাহর দিকে ডেকেছিলেন নয় শত বছরেরও বেশি সময় ধরে। তিনি তাদের নিকট অবিরাম দাওয়াত দিয়ে গেছেন। তাঁর নবুয়তি জিন্দেগির শেষ দিকে এসে তিনি পেছনে ফিরে দেখেন এবং তিনি তাদের নিকট যে বার্তাটি দিতে চেয়েছিলেন তার একটি সারাংশ দাঁড় করিয়েছেন। অবশ্যই তিনি তাদের নিকট শুধু একটি বার্তা দেন নি, তিনি তাদের উদ্দেশ্যে শুধু একবার বা দুইবার কথা বলেন নি,…قَالَ رَبِّ إِنِّي دَعَوْتُ قَوْمِي لَيْلًا وَنَهَارًا – “তিনি বললেন: হে আমার পালনকর্তা! আমি আমার সম্প্রদায়কে দিবারাত্রি দাওয়াত দিয়েছি;” তিনি রাতেও কোন বিরতি নেন নি, প্রতিনিয়ত, সারাক্ষণ তাদের দাওয়াত দিয়ে গেছেন। কুরআনের একটি সূরা তার নামে নামকরণ করা হয়েছে, সূরাতুন নূহ। সেখানে তিনি এই গোটা সময় ধরে যে তার সম্প্রদায়কে দাওয়াত দিয়ে গেছেন তার একটি সারমর্ম তুলে ধরেছেন। আমি তোমাদের কাছ থেকে কী আশা করেছিলাম। وَإِنِّي كُلَّمَا دَعَوْتُهُمْ لِتَغْفِرَ لَهُمْ – আর এই...