আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, قُلْ هَٰذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي ۖ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ “বলে দিনঃ এই আমার পথ। আমি আল্লাহর দিকে বুঝে সুঝে দাওয়াত দেই আমি এবং আমার অনুসারীরা। আল্লাহ পবিত্র। আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই।” (সূরা ইউসুফঃ ১০৮) এই হলো সাবিল (পথ, পন্থা)। চমৎকার বাক্য। আমি আল্লাহর পথে ডাকি চোখ খোলা রেখে, সঠিক উপলব্ধি সহকারে। ‘বাসীরা’। ‘বাসীরা’ হলো যখন কোনো কিছুর প্রতি আপনার পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টি রয়েছে। আসলে , আরবি ভাষা অনুযায়ী এই মুহুর্তে আমার ‘বাসীরা’ নেই কারণ এই পিলারটির জন্য পিলারের পেছনের মানুষদের আমি দেখতে পাচ্ছি না এবং তারাও আমাকে দেখতে পাচ্ছে না তাই আমার বাসীরা নেই। ‘বাসীরা’ মানে হলো আপনার পূর্নাঙ্গ দৃষ্টি রয়েছে। এমনকি আংশিক দৃষ্টিও ‘বাসীরা’ নয়। আল্লাহ বলেন : আমরা লোকদের দ্বীনের পথে ডাকি দৃষ্টি খোলা রেখে। আপনারা জানেন এর মানে কী ? এর মানে হলো – আমাদের পরিপূর্ণ জ্ঞান রয়েছে যে কেন আমরা মুসলিম। শুধু এটা নয় যে , আলহামদুলিল্লাহ আমরা জানি যে আমরা মুসলিম। কিন্তু আমাদের চোখ খোলা থাকতে হবে। কেন আমি মুসলিম? কেন আমি বলি – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ? কেন আমি বলি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম? কেন কুর’আন আল্লাহর কিতাব? আমার নিজের জন্যই এই বিষয়ে আমার পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। বহু মুসলমান আজকে মুসলিম কারণ, আর আপনি যদি তাদের জিজ্ঞেস করেন কেন তুমি মুসলিম ? তারা বলবে – কারণ আমার বাবা-মা মুসলিম। অথবা তারা বলবে কারণ আমি বড় হয়েছি একটি মুসলিম দেশে। অথবা তারা বলবে : আমি জানি না, আমার মনে হয় সবাই মুসলিম তাই আমিও মুসলিম। এগুলো ভালো জবাব নয়। ঐ প্রশ্নের এগুলো ভালো উত্তর নয়। আর আমি আপনাদের বলছি ..আমি...
কুর’আন যে আল্লাহর কিতাব তার আরো একটি প্রমাণ হল কুর’আনে ঈসা (আঃ) কে আল্লাহ কী দারুনভাবে উপস্থাপন করেছেন। উস্তাদ নুমান আলী খানের এই লেকচারটিতে সেটাই তুলে ধরা হয়েছে। ………… কুর’আনে ঈসা (আঃ) কে যে সম্মান দেয়া হয়েছে, আমি আপনাদেরকে এর একটি অনুপম দৃষ্টান্ত দিচ্ছি। মুসা (আঃ) কে কোন জাতির কাছে পাঠানো হয়েছিল? বনি ইসরাইল, সবাই এটা জানে, বনি ইসরাইল। আর ঈসা (আঃ) এর প্রাথমিক শ্রোতা কারা ছিল? বনি ইসরাইল নাকি অন্য কেউ? অবশ্যই বনি ইসরাইল। এখন দেখুন সূরা নম্বর ৬১, আস-সাআফ এ, এখানে একটি আয়াত আছে যেখানে মুসা (আঃ) তার জাতির উদ্দেশ্যে বলছেন, আর ঠিক তার পরের আয়াতেই ঈসা (আঃ) তার জাতিকে বলছেন। এটা মনে রাখুন যে, যদিও তাদের এই ঘটনার মধ্যে অনেক সময়ের পার্থক্য রয়েছে, কিন্তু তারা উভয়েই কোন জাতির উদ্দেশ্যে বলছেন? বনি ইসরাইল, তারা একই জাতি। এখন মনোযোগ দিয়ে শুনুন, “ওয়া ইজ কালা মুসা লিকাওমিহি ইয়াকাওমি” – যখন মুসা তার জাতিকে বলল, “হে আমার জাতি”। তিনি তাদেরকে সম্বোধন করার জন্য প্রথম কোন শব্দ ব্যবহার করলেন? “হে আমার জাতি”। “ইয়াকাওমি”- “হে আমার জাতি”। ঠিক আছে, আসুন দেখি ঈসা (আঃ) কি বলেছেন, “ওয়া ইয কালা ঈসা ইবনে মারিয়াম” – “এবং যখন মারিয়ামের পুত্র জিসাস বলল” ; “ইয়া বানী ইসরাইল” – “হে ইস্রাইলের সন্তানেরা”। “হে ইস্রাইলের সন্তানেরা”, তিনি কি বলেননি? মুসা (আঃ) কি বলেছেন যা ঈসা (আঃ) বলেননি? তাহলে, মুসা (আঃ) বলেছেন “হে আমার জাতি” অথচ ঈসা (আঃ) বলেছেন, “হে ইস্রাইলের সন্তানেরা”। এখন আমরা জানি “হে ইস্রাইলের সন্তানেরা” আসলে বনি ইসরাইল কেই বুঝায়, তাইনা? আপনারা জানেন এর থেকে আমরা কি জানতে পারি? সেমিটিক প্রথা এবং আরব প্রথা যা ইব্রাহীম (আঃ) এর সময় থেকে প্রতিষ্ঠিত তাতে বংশ পরিচয় হয় পিতার পরিচয়ের মাধ্যমে। ইসরাইল জাতির নামটি কিসের ভিত্তিতে? মাতৃ পরিচয়ের ভিত্তিতে নয়,...
সমগ্র মানবজাতি কিসের প্রতি অনুপ্রানিত, কি তাকে আকর্ষণ করে সে বিষয়ে পবিত্র কুরআন খুব ভালভাবেই আলোচনা করে। একাধিকবার আল্লাহ পাক আলোচনা করেন এমন কিছু বিষয়ে, যেমন পুরুষদের মহিলাদের প্রতি আসক্তি, অথবা অর্থের প্রতি আসক্তি, আথবা সামাজিক পদ মর্যাদার প্রতি আসক্তি অথবা মানুষ আশা করে নিজের একটি বাসস্থানের মত সুন্দর কোন জিনিস। তাই মানুষ এগুলো পাওয়ার জন্য কাজ করে, কারন এগুলোর প্রতি তারা প্রবল আসক্তি অনুভব করে। এমনকি আজকালকার দিনেও অনেক যুবক-যুবতীরা হয়ত চায় তাদের ডিগ্রী শেষ করতে অথবা তাদের কর্মক্ষেত্র এগিয়ে যেতে অথবা একটি সম্পর্কের সুত্রপাত করতে চায় যার প্রত্যাশী তারা ছিল। এ সবগুলো বিষয়ই সবসময় বিদ্যমান আছে, সবসময় বিদ্যমান ছিল। এগুলোর একটি আধুনিক রূপ আজকাল বিদ্যমান এবং আরেকটি পুরনো, মানে প্রাক-আধুনিক রূপ আগে বিদ্যমান ছিল। কিন্তু সুনিপুণভাবে কোর’আন ঘোষনা দেয় যে, এগুলো মানুষের প্রকৃত লক্ষ্যবস্তু নয়। তাই কেউ হয়ত কাজ করে যাচ্ছে নিজেকে বিশেষ আকারে পরিবেশন করার লক্ষ্যে নয়ত কেউ কাজ করে যাচ্ছে অন্য কারো সান্নিধ্য পাওয়ার লক্ষ্যে অথবা কেউ কাজ করে যাচ্ছে অতিরিক্ত কিছু অর্থ উপার্জনের আশায়। এগুলোর কোনটিই আসল লক্ষ্যবস্তু নয়। এগুলো হচ্ছে একটি বৃহত্তর সমাপ্তির মাধ্যম মাত্র এবং সেই সমাপ্তি আমরা আমাদের জীবনে যেসকল ক্ষুদ্র মাইলফলক অর্জন করি তার নির্দেশনা দেয়। প্রকৃতপক্ষে এই জীবন শুধুমাত্র বাস্তব কিছু অর্জন করার জন্যই নয়। অথবা শুধু শারীরিক সুখ অর্জনের জন্য নয়। এই জীবন হচ্ছে সঠিক লক্ষ্যবস্তু স্থির করা সম্পর্কে। সঠিক লক্ষ্যবস্তু পাওয়া যায় তখনই যখন আপনি জীবন যাপন করেন শুধুমাত্র আপনার নিজের অবস্থাকে ভাল করার জন্যই নয় বরং আপনার চারপাশের সবকিছু ভাল করার উদ্দেশ্যে। ইসলাম মানে হচ্ছে নিজের ইচ্ছেগুলোকে আল্লাহর ইচ্ছার নিকট সমর্পন করা, যেন আপনি নিজেকে চিরস্থায়ী সুখের জন্য প্রস্তুত করতে পারেন। এবং এটা করার মাধ্যমে আপনি এসব পার্থিব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের বিসর্জন দেন না, আপনি এই জীবনও উপভোগ...
আমরা সেই দলের লোক যারা বলি ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এর অর্থ কী? যদিও আমরা এর অর্থ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা করতে পারি, প্রকৃতপক্ষে এর মূল অর্থ দুটি। আলহামদুলিল্লাহ এর দুটি অংশ রয়েছে। প্রথমটি হলো – আপনি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ (আল্লাহকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন), কৃতজ্ঞতা (শুধুমাত্র) আল্লাহর জন্য। আর দ্বিতীয় অংশ হলো – প্রশংসা; প্রশংসা আল্লাহর জন্য। কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা দুটি আলাদা বিষয়। একদিকে প্রশংসা আর অন্যদিকে কৃতজ্ঞতা, দুটি দিক। এখন চলুন প্রথমে আমরা এই দুটি বিষয়ের পার্থক্য বোঝার চেষ্টা করি। আপনি একটি সুন্দর বাড়ি দেখলেন, এবং প্রশংসা করলেন, কিন্তু আপনি বাড়িটিকে ধন্যবাদ দিবেন না। আপনি একজন অসাধারণ খেলোয়াড় দেখলেন, যিনি ফুটবল খেলেন, তিনি একটি অসাধারণ গোল করলেন। আপনি ঐ খেলোয়াড়ের প্রশংসা করবেন, কিন্তু আপনি ঐ খেলোয়াড়কে ধন্যবাদ দিবেন না, আপনি ঐ খেলোয়াড়ের প্রতি কৃতজ্ঞ হবেন না। আপনি একটি অসম্ভব সুন্দর গাড়ি দেখলেন। আপনি গাড়িটির প্রশংসা করবেন, কিন্তু গাড়িটির প্রতি কৃতজ্ঞ হবেন না। আবার মাঝে মাঝে উল্টোটাও ঘটে। কিছু মানুষের প্রতি আপনি কৃতজ্ঞ থাকেন যদিও আপনি কখনো তাদের প্রশংসা করবেন না। এমন ঘটে। এর উদাহরণ হচ্ছে ‒ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা একজন মুসলিমকে সকল অবস্থাতেই তার বাবা-মার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে বলেন, এমনকি তার বাবা-মা মুশরিক হলেও়! আপনাকে অবশ্যই আপনার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। এমনকি যদিও তারা আপনাকে শিরক করার জন্য জোর করেন। তারা চান আপনি ঈমান পরিত্যাগ করেন, তারপরও আপনাকে উনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। আপনি তাদের শিরক এর প্রশংসা করবেন না , কিন্তু তারপর ও আপনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবেন। অতএব জীবনের কোনো কোনো সময় আপনি প্রশংসা পাবেন কৃতজ্ঞতা ছাড়া, আবার কখনো কখনো কৃতজ্ঞতা দেখবেন প্রশংসা ছাড়া। আমি আপনাদের নিকট আরো একটি উদাহরণ পেশ করব, যার মধ্যে কৃতজ্ঞতা আছে কিন্তু প্রশংসা নেই, যেন বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। আপনারা...
আজকের খুতবার একদম শুরুতে আমি দুটো কথা বলে নিতে চাই, প্রথমত এই যে, অনেক দীর্ঘ সময় নিয়ে ভাবনা চিন্তার পর আজকে যে বিষয়টি আমি বেছে নিয়েছি, এটা খুব কঠিন এবং জটিল। যদিও আমি যখন খুতবার জন্য কোন বিষয় নির্বাচন করি সাধারণত আমি চেষ্টা করি সেটাকে যতটা সহজ করা যায়। কিন্তু আমি মনে করি এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা সব মুসলিমদের জন্য যথেষ্ট জরুরী এবং ভীষণ গুরুত্বপুর্ণ তাই আমি আল্লাহ্ আজ্জা ওয়াজ্বালের কাছে প্রার্থনা করছি যেন আজকের বক্তব্যে আমি আমার ভাবনাগুলো খুব পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করতে পারি যাতে আপনারা এ থেকে উপকৃত হতে পারেন। দ্বিতীয়ত, যখনই আমি এখানে এলাম আমি দেখলাম আমাদের ইমাম সাহেব এখানে বসে আছেন, আমার মনে হলো আরবীতে একটা কথা আছে, “আগনাস সাবা আনীল মিসবাহ”, যার মানে হলো, “সময়টা যখন সকাল, আপনার বাতির প্রয়োজন নেই” (স্মিত হাসি)। আমি ঠিক জানি না আমাকে কেন খুতবা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রিত করা হয়েছে যেখানে ইমাম সাহেব স্বয়ং উপস্থিত আছেন। যা হোক, যেহেতু আমি এখন এ জায়গায় আছি, ইন শা আল্লাহ আশা করছি আমি এ সুযোগটা সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে পারবো। আজকের এই সংক্ষিপ্ত খুতবায় আমি কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্কের দুইটি দিক নিয়ে কথা বলতে চাই। আল্লাহ্ আজ্জা ওয়াজ্বাল কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে বর্ণনা করেছেন বিভিন্ন ভাবে। এটা শুধু এক ধরণের সম্পর্ক নয়, কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্কটা বিভিন্ন ধরণের। যেমন ধরুন এটা (কুরআন) একটা স্মরণিকা নিজের জন্য আবার এটা অন্যকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার একটা মাধ্যমও ।এটা জিকির বা স্মরণিকা আমাদের নিজেদের জন্য এবং কুরআন একটা মাধ্যমও যাতে আমরা অন্যদেরকেও স্মরণ করিয়ে দিতে পারি। এটা চিন্তা করার মতো বিষয় এবং আমাদেরকে বার বার বলা হয়েছে যাতে আমরা কুরআনকে নিয়ে চিন্তা করি, খুব মনযোগ দিয়ে শুনি এবং গভীর ভাবে ভাবি। এই “গভীর করে ভাবা” ব্যাপারটা নিয়েই আজকে আমি বিশেষভাবে...