যখন কোন কম বয়সী কেউ আমাকে এসে প্রশ্ন করে, এমনকি পূর্ণ বয়ষ্ক কেউ, আমি আমার সহকর্মীদের কীভাবে ব্যাখ্যা করে বোঝাবো যে আমি রোযা রেখেছি? কীভাবে ওদের বোঝাবো? যেহেতু ওরা মুসলিম নয়, ওরা ভাবে এটা অদ্ভূত। আপনি কি আমাকে এর একটা সুন্দর উত্তর দিতে পারেন যাতে আমি আমার সহকর্মীদের বোঝাতে পারি? অথবা আমি কীভাবে ওদেরকে বোঝাবো যে, আমি অযু করছি? আমি বাথরুমে ঢুকে অযু করছি, আমি অফিসে ছিলাম বা আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম, আমি ওদের কে কীভাবে বোঝাবো? ওরা আমাকে অযু করতে দেখেছে এবং ওদের মনে হয়েছে ব্যাপারটা অদ্ভুত- আপনি কি আমাকে এর একটা ভালো জবাব দিতে পারেন যাতে আমি ওদের বলতে পারি, আর বিব্রত না হই? অথবা ওরা যখন দেখে যে আমি নামায পড়ছি, ওরা জিজ্ঞেস করে এটা আবার কী ধরণের শারীরিক ব্যায়াম? এটা কী ধরণের যোগব্যায়াম আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবে? ওদেরকে আমি কী বলবো? আমরা ওদের কী উত্তর দিতে পারি? এ ধরণের প্রচুর প্রশ্ন আছে, আপনি হয়তো এর উত্তর খুঁজছেন, যাতে অন্যদের বোঝাতে সাহায্য করতে পারেন, এবং এই প্রশ্ন আপনি করছেন ভালো উদ্দেশ্যে। আমাদের দ্বীন আসলে এমন যে…ও… এই তালিকায় আমার আরেকটু যোগ করার আছে, আমার সব বন্ধুরা যাচ্ছে হ্যালোইন পার্টিতে, অথবা আমার সব সহকর্মীরা যাচ্ছে খ্রিস্টমাস পার্টিতে – আমি কীভাবে ওদের বলবো আমি যেতে পারছি না? কীভাবে আমি ব্যাখ্যা করবো যে আমি এসব কিছুতে যোগ দেই না? আপনি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজছেন, কিন্তু এই প্রশ্নগুলো আমাকে কী বলছে জানেন? এ প্রশ্নগুলো বলছে যে আমরা কীভাবে ভাবতে হয়, কীভাবে চিন্তা করতে হয় তা শিখিনি, এই বই (কুরআন)-এর আলোকে তো নয়ই। দেখুন, আপনি যদি জানতেন কীভাবে চিন্তা করতে হয়, যখন কেউ আপনাকে বলে যে চলো হেলোইন পার্টিতে যাই, আপনি উল্টো ঘুরে তাঁকে প্রশ্ন করতেন, হ্যালোইন কী? তুমি এটা কেন উদযাপন...
উস্তাদ নুমান আলী খানের কুরআন উইকলি তে দেয়া “Quranic Gems” সিরিজ থেকে নেয়া। ”বস্তুতঃ আমি সাগর পার করে দিয়েছি বনী-ইসরাঈলদিগকে। তখন তারা এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে পৌছাল, যারা স্বহস্তনির্মিত মূর্তিপুজায় নিয়োজিত ছিল। তারা বলতে লাগল, হে মূসা; আমাদের উপাসনার জন্যও তাদের মূর্তির মতই একটি মূর্তি নির্মাণ করে দিন। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে বড়ই অজ্ঞতা রয়েছে।”। (সুরা আল-আরাফঃ ১৩৮) আসসালামু আলাইকুম, “কুরআন উইকলী” মূসা (আঃ), যিনি একজন মহান রাসুল ছিলেন, তাকে আল্লাহ দুইটি জাতির কাছে বার্তা পৌঁছে দেবার দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন।এক হলো মিশরের ফারাওদের কাছে এবং তাদের প্রজন্মদের জন্য এবং একই সময় উনি যেখানে জন্মেছিলেন, সেখানের লোকদেরও পথ দেখাবার দায়িত্ব ছিল তাঁর, অর্থাৎ বনী ইসরাইলীদেরকে।তাঁর জীবনের প্রথমভাগ ছিলো মিশরে এবং পরবর্তীভাগ ছিল:যখন তাঁরা আল্লাহ্র সাহায্যে মিশর থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। একসময় তারা পানিপথ পার হলেন। আজকের যেই আয়াত আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করতে চাই, তা হলো: পানিপথ পার হওয়ার পরের ঘটনা। আমার মনে হয় সেটি খুবই জরুরী এবং আমাদের এখনকার সময়ের সাথে খুবই সামঞ্জস্যপুর্ণ। তো আল্লাহ্ বলেন, وَجَاوَزْنَا بِبَنِي إِسْرَائِيلَ الْبَحْرَ আমি বনী ইসরাঈলদের পানি পার করালাম। অন্যভাবে বললে, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া ত্বায়ালা বলছেন, একমাত্র তিনিই তাদের পানি পার হতে সক্ষম করলেন। তারপর তিনি বলছেন, فَأَتَوْا عَلَىٰ قَوْمٍ يَعْكُفُونَ عَلَىٰ أَصْنَامٍ لَّهُمْ ওরা এখন সিনাঈ মরুভূমিতে এবং এখন তারা এমন এক জাতির কাছে এসে পৌঁছালো, যারা তাদের মূর্তিগুলোর সামনে খুব মনোযোগ দিয়ে বসে ছিলো। একটু ভেবে দেখুন: আমরা যখন প্রার্থনা করি, যখন নামাজ পড়ি, তখন আমরা খুবই অমনোযোগী হয়ে পড়ি। আমরা অন্যমনষ্ক হয়ে পড়ি। আমরা বেশিরভাগই যখন প্রার্থনা করি, এমনকি সবচেয়ে ছোট সুরাটাও,যেমন, ইন্না আ’ত্বাইনাকা-ল কাওসার—এটা পড়ার সময়ও আমরা অন্যমনষ্ক হয়ে পড়ি। আর রোজার সময়, ক্বারী যখন পুরো এক পারা তেলাওয়াত করছেন, সেকথা না হয় না-ই বললাম, আমরা তাঁর পেছনে...
মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং রাসুলের প্রতি দরূদ পেশ করছি। আসলে দুটি আলাদা সমস্যায় দুই ধরনের উত্তর দেয়া হয়। প্রথম সমস্যা হল, কেউ বলছে আমি দিনে পাঁচ বার সালাত আদায় করতে পারি না। আমি এটা পারছি না। এখন, প্রথমত আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না। যেই বলুক আমি এটা পারছি না, আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না। কেন জানেন? কারন আমি আল্লাহকে বিশ্বাস করি। আর আমি বলিনি আমি আল্লাহকে স্বীকার করি, আমি বলেছি আমি আল্লাহকে বিশ্বাস করি। এর মধ্যে পার্থক্য আছে, তাই না? আমি আল্লাহকে স্বীকার করি মানে আমি আল্লাহের অস্তিত্বে বিশ্বাস করি। কিন্তু যখন আমি বলি, আমি আল্লাহকে বিশ্বাস করি, তার অর্থ আমি তার কথাগুলো বিশ্বাস করি। তিনি বলেন…আল্লাহ্ কখনোই কারও উপর সামর্থের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেন না। এটাই আল্লাহ্ বলেছেন । তিনি বলেছেন তিনি কারও উপরে এমন দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না যতক্ষন না তারা সেই দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা অর্জন করে। আপনি বলছেন, আপনি এমন দায়িত্ব পালনে অক্ষম যা আল্লাহ্ আপনাকে দিয়েছেন। তাই নয় কি? আপনি বলছেন, আমি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে পারছি না। এটা মাত্রাতিরিক্ত! আর আল্লাহ্ বলছেন আপনি পারবেন। সুতরাং আমাকে বেছে নিতে হবে, আমি আপনাকে বিশ্বাস করব না আল্লাহকে। এবং সম্ভবত যদি আপনি তা বুঝতে না পারেন তাহলে নিজের সাথে মিথ্যাচার করছেন। সম্ভবত আপনি এমন ভাবছেন আপনার আলসেমীর কারনে, নিজের ইচ্ছার অভাবের কারনে, আপনি দিনে ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে চান না। আপনাকে পারতে হবে… আমি আপনাকে বুঝতে পারছি না, আমি জানি না সমস্যাটা কি? কিংবা সমস্যাটা হল, আপনি অমুসলিমদের সামনে সালাত আদায়ে লজ্জা পাচ্ছেন। মানুষ কাজের ফাঁকে ১৫ মিনিট ধূমপানের বিরতি নিতে পারে, তাই না? তারা বিরতি নিয়ে বাইরে যেতে পারছে, যা খুশি করতে পারছে আর আপনি দিনে ৫ বার সালাত আদায় করতে পারছেন...
আমি আপনাদের শয়তানের একটা চালাকির কথা বলছি শুনুন। মনে করুন আপনার অফিসে যেতে দেরী হয়েছে এবং দেরী করার জন্য আপনার বস রাগ হয়ে আছেন।অফিসে আরও অনেক মানুষ আছে। আপনি এরকম সময় কী করেন? আপনি সকলের নজর এড়িয়ে নিজের কিউবিকলে গিয়ে চুপচাপ বসে পড়েন। আপনি তখন বসের সাথে দেখা করতে চান না। অথবা মনে করুন একটা বাজে রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আপনি বাড়ি ফিরলেন।যখন আপনি ক্লাস ৬ বা ৭ এ আর খারাপ রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আসেন তখন আপনি চুপিসারে ঘরে ঢুকবেন। কোন “আসসালামু আলাইকুম” নেই কিছু না। চুপিসারে ঢুকে আপনি ঘুমের ভান করে পড়ে রইলেন। মা যদি জিজ্ঞেস করেন, “আজকে স্কুলে কী হোল?” আপনি বলবেন, “তেমন কিছু না।” আপনি যখন কাউকে হতাশ করেন তখন তার থেকে দূরে দূরে থাকেন। এটাই স্বাভাবিক। এই ক্ষেত্রে, যখন আমরা অশ্লীল কাজ করি, নিজেদের উপর যুলম করি, তখন আমরা কাকে হতাশ করি? আল্লাহ আযযা ওয়াযালকে! আপনি আল্লাহ্কে অসুন্তষ্টি করেন। শয়তান তখন এর সুযোগ নেয়। আপনার কাছে এসে সে বলে যে তুমি এখন আবার সালাহ পড়তে যাবে? ভন্ড! তুমি এতসব অশ্লীল কাজ করে এখন আবার একটা ক্লাস করতে যাবে?এখন তুমি ইবাদত করতে যাবে? তুমি তো দু’মুখো মানুষ! তখন সে বলে হ্যাঁ আমি তো দু’মুখো মানুষ; আমার সালাহ পড়া উচিত না। শয়তান আপনার গুনাহের সুযোগ নিয়ে আল্লাহর কাছ থেকে আপনাকে দূরে সরিয়ে রাখে। আপনি তখন আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে বিব্রত বোধ করেন। কিন্তু একজন সত্যিকারের মুত্তাকী যখন ভুল কিছু করে তৎক্ষণাৎ সে কী করে? সে আল্লাহকে স্মরণ করে! যাকারুল্লাহ। ফা বা সুম্মাও আসেনি এখানে! “ফাসতাগফারু লিযুনুবিহিম।” তারপর তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। (৩:১৩৫) এখানে যুনুব শব্দটা দিয়ে পাপ বোঝান হচ্ছে যা এসেছে যানাব থেকে। যানাব দিয়ে মূলত বোঝান হয় এমন একটা পাপ যার কারণে আপনি অসম্মানিত বোধ...
উস্তাদ নুমান আলী খানের ডেইলি রিমাইন্ডার এ দেওয়া লেকচারের অংশ বিশেষ হে মুমিনগণ! তোমরা রুকু কর, সেজদা কর, তোমাদের পালনকর্তার ইবাদাত কর এবং সৎকাজ সম্পাদন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আল-হাজ্জঃ আয়াত ৭৭) (এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলছেন) আমি তোমাদের শিখিয়ে দেই কিভাবে আল্লাহকে যথাযথ স্বীকৃতি দিতে হয়। ঠিক এভাবেই আল্লাহর মর্যাদার যথাযথ মূল্যায়ন করতে হয়। রুকূ’ কর এবং সিজদাহ কর। এই দুটি কাজই কিসের প্রতি ইঙ্গিত করছে? সালাত। (আল্লাহ বলছেন) তোমার উচিত আমাকে যথোপযুক্ত স্বীকৃতি দেওয়া। আর এর জন্যে প্রথম পদক্ষেপ হল সালাত আদায় করা আমরা আমাদের নামাযকে কতটা গুরত্ব দেই তা থেকে বুঝা যায় আমরা আল্লাহকে কতটা মর্যাদা দেই। আমরা কতটা সক্রিয় এবং সতর্ক ঘুম থেকে উঠে নামায পড়ার ব্যাপারে, মসজিদে যেতে কতটা আলসেমি লাগে, কুর’আনের তিলাওয়াত আকর্ষণীয় না হলে আমরা কতটা বিরক্ত অনুভব করি. এসব ব্যাপারই বলে দেয় আল্লাহর কাছে আমাদের অবস্থান কোথায়। যে আসলে নামায সম্পর্কে জানে না, মুসলিমদের প্রার্থনার ব্যাপারে যার কোন ধারণা নেই। যেমন একজন Non-Muslim, সে যদি হঠাৎ করে কিছু মুসলিমদের নামায পড়তে দেখে তবে সে খেয়াল করবে এই মানুষগুলো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে অর্থাৎ তারা কারও প্রতি তাদের হীনাবস্থা প্রকাশ করছে। এরপর তারা মাথাসহ অর্ধেক শরীর ঝুঁকিয়ে ফেলে। ওয়াও! তারা আরও বিনয়ী হয়ে উঠেছে। তারপর যখন তারা দাঁড়িয়ে পড়ে এরপর কী হয়? সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে! তারা সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করছে! অন্য কথায় সে খেয়াল করবে আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শনে তারা প্রতিনিয়ত অগ্রসর হচ্ছে। তারা যার ইবাদত করছে তাঁর প্রতি তারা আরও বেশি আজ্ঞাবহ হচ্ছে।দেখে মনে হবে তারা তাদের প্রভুকে সম্মান প্রদর্শন করছে…আরও সম্মান প্রদর্শন করছে… আরও বেশি সম্মান প্রদর্শন করছে। সালাতের এই অগ্রসরতা আমাদের শিক্ষা দেয় যে আল্লাহর প্রতি আমাদের বিনয়াবনত অবস্থা বেড়ে উঠা উচিত,...