মন্দ সামাজিক প্রথা উদ্ভাবনকারীদের থেকে সাবধান

আমি আমার আজকের খুতবা একটা সাধারণ বিষয়ের মাধ্যমে শুরু করতে যাচ্ছি, আমি মনে করি আজকে এখানে যারা রয়েছি তারা সকলেই এই বিষয়টি বুঝি যে আমরা কম বেশি সামাজিক চাপ (সোসাইটাল প্রেশার) অনুভব করি। যখন আমরা সামাজিক চাপের কথা শুনি তখন আমরা সাধারণত মনে করি এটি অত্যন্ত বিরাট একটি বিষয়, কিন্তু এটি আমাদের জীবনের সুক্ষ্ণাতিসুক্ষ্ণ ঘটনার মধ্যেও রয়েছে। আপনাদের যাদের বাচ্চা রয়েছে তারা হয়তো অনেক সময় খেয়াল করেছেন যে আপনাদের বাচ্চাটি একটু বিশেষ রকমের পুতুল চাচ্ছে। অনেক সময় তারা এই পুতুল চায় কারণ হয়তো স্কুলের অন্য কোন বাচ্চার এইরকম একটি পুতুল রয়েছে। তারা ঐ জিনিসটিই কিনতে চায় যা অন্য লোকেদের রয়েছে। এটা হচ্ছে এক ধরনের সামাজিক চাপ। যখন আপনার বাচ্চা একটু বড় হয় তখন তারা বিশেষভাবে (সার্টেইন ওয়েতে) কাপড় পরতে চায় এবং এই বিশেষভাবে কাপড় পরার চিন্তাটা তার নিজস্ব মস্তিষ্ক থেকে আসেনি, এটা এসেছে হয়তো এমন কোন অনুষ্ঠান থেকে যা সে টিভিতে দেখেছে এবং এখান থেকে সে শিখেছে “এভাবেই কাপড় পরতে হবে”। তার মাথায় হয়তো এই জিনিসটি এসেছে এমন কারো কাছ থেকে যাকে সে স্কুলে দেখেছে বিশেষভাবে কাপড় পরে আসতে অথবা এই ধরনের অন্য কোন মাধ্যম হতে যেখান থেকে সে শিখে নিয়েছে এভাবেই কাপড় পরতে হবে। এই ধরণের জিনিসগুলোকে তখন সে নির্দিষ্ট ধরে নেয় (Defined)। তখন সে নির্দিষ্ট সেই পন্থায়ই কাপড় পরতে চায় বা নিজেকে সেইভাবেই উপস্থাপন করতে চায় অথবা সেই সুনির্দিষ্ট খেলনাটিই কিনতে চায়। ছোট ছোট বাচ্চারা মোবাইল ফোন কিনতে চায়, তাই না? “তোমার ফোনের কি প্রয়োজন?’’ আমি জানি না, আমার বন্ধুর একটি ফোন রয়েছে, আমার কেন থাকবেনা?” পিতা-মাতারা হয়তো এই ধরনের কিছু যুক্তি শুনে থাকবেন, ‘’তার এই জিনিসটি রয়েছে, আমার কেন থাকবেনা?” যখন সে আরো কিছু বড় হয় তখন সেই সামাজিক চাপই ভিন্ন রূপে তার সামনে হাজির হয়।...

আল্লাহর সিংহাসন

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যিনি অস্তিত্বশীল সকল কিছুর অস্তিত্বদানকারী এবং তাঁর সৃষ্টির প্রতি সবচেয়ে দয়াবান। আবার তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারীও বটে। তিনিই একমাত্র সত্ত্বা যিনি আমাদের উপাসনা পাওয়ার যোগ্য। যার কোন শরিক নেই, অংশীদার নেই, কোন পুত্র নেই, কোন কন্যা নেই। কারো সাথে তিনি পরামর্শ করেন না, কোন ব্যক্তি বা কোন কিছুর সাথে তাঁর কোন তুলনা নেই। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। তিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার দাবীদারদের বাদশা। তাঁর সৃষ্টির জন্য আইন প্রণয়নের ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই। তিনি জীবন দানকারী, আবার তিনিই মৃত্যু ঘটান। কিন্তু তাঁর কোন মৃত্যু নেই। কারণ তিনি চিরঞ্জীব, নিজেই অস্তিত্ববান, চিরস্থায়ী এবং অদ্বিতীয়। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। সব কিছুর উপর যার ক্ষমতা রয়েছে। আর বাস্তবে কারো কোন ক্ষমতা, কোন শক্তি, কোন প্রভাবই কারো কোন উপকার বা ক্ষতি করতে সমর্থ নয় একমাত্র তাঁর হুকুম ছাড়া। তিনিই এই জটিল বিশ্ব ব্যবস্থাপনা তৈরি করেছেন। দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান, স্পষ্ট এবং অস্পষ্ট, এই পৃথিবী – এই পৃথিবীর উপরে যা কিছু আছে এবং এই পৃথিবীর ভেতরে যা কিছু আছে সব কিছুই তাঁর সৃষ্টি। তিনিই সেই সত্ত্বা যিনি তাঁর সকল নবী-রাসুলদের (আঃ) পাঠিয়েছেন একই নির্ভেজাল একত্ববাদের পয়গাম নিয়ে। যার অর্থ হল কেউই আমাদের উপাসনা পাওয়ার যোগ্য নয়, কেউই আমাদের আনুগত্য পাওয়ার যোগ্য নয় একমাত্র সর্বশক্তিমান আল্লাহ ছাড়া। যিনি এক, অদ্বিতীয় এবং যার কোন অংশীদার নেই। (খালিদ ইয়াসিন) সুদূর অতীতে যে সব ঐশীবাণী পৃথিবীকে পরিবর্তন করেছিল… সে সব অঞ্চলে নবীদের পাঠানো হয়েছিল – আমরা জানি সে ঐশী বাণীগুলো আর অক্ষত নেই, পরিবর্তিত হয়ে গেছে। এমনকি যে নবীগণ আলাইহিমুস সালাম এ বাণীগুলো নিয়ে এসেছিলেন অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁদের নামও হারিয়ে গেছে। আমরা শুধু সাধারণভাবে বিষয়টা জানি। কারণ আল্লাহ কুরআনে আমাদের বলেছেন – “আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং...

স্বামীদেরকে বলছি, “সবাইকে খুশি রাখা অসম্ভব

আপনার মা-বাবা আপনার জন্য যা যা করেছেন তার মূল্য আপনি কখনোই পরিশোধ করতে পারবেন না। আপনার মা তার দেহের মধ্যে আপনাকে নিয়ে বেড়িয়েছেন। তাঁর রক্ত বিসর্জনের কারণেই আপনি পৃথিবীর মুখ দেখতে পেরেছেন। আপনাকে জন্ম দিতে গিয়ে তাঁরই মৃত্যু হতে পারতো। আপনি যখন নিজের যত্ন নিতে পারতেন না তখন বাবাই আপনার সব প্রয়োজন মেটানোর ব্যবস্থা করেছেন। আপনার থাকার জায়গা ছিলোনা, তিনিই সেই ব্যবস্থা করেছিলেন। আপনার পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছেন। আবার আপনার মায়ের দেখভাল করার মাধ্যমেও আপনার বাবা আসলে আপনার প্রতিই ইহসান করেছেন। কেন এমনটা বলছি? কারণ আল্লাহ যখন মুসা (আঃ) এর প্রতি বর্ণনা করছিলেন وَلَقَدْ مَنَنَّا عَلَيْكَ مَرَّةً أُخْرَىٰ সূরা ত্বহাতে… “আমি তোমার প্রতি আরও একবার অনুগ্রহ করেছিলাম।” আর তাঁর প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের একটা অংশ ছিলো… “আমরা তোমাকে তোমার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।” ..… “যাতে সে চোখের পানি না ফেলে।” যাতে তাঁর চোখ শীতল হয়ে যায়। যাতে সে আর কষ্ট না পায়। যখন আল্লাহ তাঁর মায়ের যত্ন নিচ্ছিলেন, আল্লাহ বলছেন, “আমি আসলে তোমাকেই অনুগ্রহ করছিলাম।” তাই যখন আপনার মায়ের প্রতি ভালো কিছু করা হচ্ছে, তখন আসলে আপনার প্রতিও অনুগ্রহ করা হচ্ছে। আপনি হয়তো বলবেন “আমি জানি আম্মু আমার যত্ন নিয়েছে, কিন্তু আব্বু তো কিছুই করেনি।” তিনি যে স্বামী হিসেবে আপনার মায়ের দেখাশোনা করে যাচ্ছেন, আপনাদের দুজনেরই, এটাই একটা অনুগ্রহ যা আপনি শোধ করতে পারবেন না। তিনি যদি আর কিছু না-ও করে থাকেন। তাই বাকি সব সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনি হয়তো অন্যদের ভালো করছেন। কিন্তু মা-বাবার বেলায় আপনি আসলে এমন ঋণ পরিশোধ করছেন যা আসলে শোধ হওয়ার ঊর্ধ্বে। এটা অসম্ভব। আর আমরা সারা জীবনই এর জন্য ঋণী থেকে যাবো। তাই আপনার সর্বোচ্চটা দিলেও তা যথেষ্ট হবেনা। তবুও আপনি আপনার সেরা চেষ্টাই দিয়ে যাবেন। সেজন্যই এটা “ওয়াবিল ওয়ালিদাইনি ইহসানা।” এটা হলো আপনার দায়িত্বের প্রথম...

পার্থিব জীবনের সাজ-সজ্জা ও ক্রীড়া-কৌতুক

“আপনি নতুন বিয়ে করেছেন, রাস্তা দিয়ে আপনার স্ত্রীকে নিয়ে যাচ্ছেন। হঠাৎ করে তিনি হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন। আপনি দ্রুত গিয়ে তুললেন, সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, “আমি কখনই তোমার কিছুই হতে দেব না, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি! নতুন বিবাহের মধ্যে এরকম ভালোবাসাই থাকে… এরকম আবেগের মধ্য দিয়েই আমরা যাই… এভাবে আমাদের জীবনের অনেকগুলো স্তর থাকে… বিবাহের প্রাথমিক অবস্থা থেকে সন্তান-নাতি-নাতকুর বয়স পর্যন্ত। আমাদের জীবনের অবস্থা কেমন? ছোটবেলার খেলা নিয়েই পড়ে থাকি, কিছুটা বড় হলে পড়ালেখা ধরি, আর কিছুটা বড় হলে আমাদের মধ্যে স্মার্টনেস আসা শুরু করে, মেয়ে বা ছেলে দেখলেই একটু সাজুগুজু করার চেষ্টা করি, ভাব নেই। আরো একটু বড় হলে পড়ালেখা কখন শেষ হবে, একটা সার্টিফিকেট পাবো এই চিন্তা করি। চাকরি এবং এরপরে বিয়ে, স্বামী-স্ত্রীর আনন্দ… এভাবে আর কিছু দিন, সন্তান-সন্তুতি… এরপর নাতী-নাতকু… এভাবে জীবনের শেষপ্রান্তে এসে হাজির হই। আমাদের সেই ছোট্ট জীবন থেকে জীবনের শেষপ্রান্তে এসে হাজির হই। শেষে আর কিছুতেই মজা পাই না, আমাদের জীবনের রঙ শেষ হয়ে আসে, জীবনের রঙ পাল্টাতে শুরু করে। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে আপনার স্ত্রীকে নিয়ে যদি আবার সেই একই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যান এবং আপনার স্ত্রী হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে যান তখন বলেন, “কী সমস্যা তোমার, তোমাকে নিয়ে কি রাস্তায়ও বেড়োনো যাবে না?” সেই প্রাথমিক বিবাহিত অবস্থার ভালোবাসা আজ নেই, জীবনে ভালোবাসা আজ পীতবর্ণ ধারণ করেছে, ধূসর রঙ ধারণ করেছে। এভাবেই আমাদের জীবনও একই অবস্থা দিয়ে যায়। ছোট্ট শিশু, কৈশর, যৌবন, বৃদ্ধাবস্থা… এভাবে আমাদের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। এই ক্ষণস্থায়ী জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে। ঠিক আল্লাহ এই উপমাকেই এখানে চিত্রায়িত করেছেন এভাবে… আমাদের ক্ষণস্থায়ী পার্থিব জীবন, যেন আমরা এখানে এভাবে পড়ে না থাকি, আমরা যেন ধোঁকায় পড়ে শাস্তিযোগ্য না হই। আমাদের সফলতার জন্য আল্লাহ আমাদের সতর্ক করে দিলেন আমাদের চোখের সম্মুখে দেখা একটি...
আল্লাহর রাস্তায় অগ্রসর হও

আল্লাহর রাস্তায় অগ্রসর হও

Quran Weekly তে দেয়া উস্তাদ নুমান আলী খানের Quranic Gems সিরিজ থেকে।   “হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কি হল, যখন আল্লাহর পথে বের হবার জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন মাটি জড়িয়ে ধর, তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প।” আসসালামু আলাইকুম কুরআন উইকলি আল্লাহ্‌ সুরা তওবা-র ৩৮ নং আয়াতে বলেছেন “ইয়া আইয়ুহাল্লাজ্বীনা আমানূ” – যারা নিজেদের বিশ্বাসী বলে দাবী কর, “মা লাকুম” -তোমাদের কী সমস্যা? “ই’জা ক্বীলা লাকুমুনফিরূ ফী সাবীলিল্লাহ” তোমাদেরকে বলা হয়েছে আল্লাহ্‌র পথে এগিয়ে যাও “সাকালতুম ই’লাল আ’রদ্ব” তোমাদের পা হিঁচড়ে যায়। তোমরা মাটিতে গেঁড়ে যাও। ভাবুন এমন যে কারো পা বালিতে গেঁড়ে গিয়েছে। এবং সে তার পা টেনে হিঁচড়ে চলার চেষ্টা করছে এবং সে এগুতে পারছে না- আল্লাহ্‌ এই দৃশ্যের কথা বলছেন। “ইস সাকালতুম ই’লাল আ’রদ্ব” আল্লাহ্‌ কেন এই দৃশ্যের কথা বলছেন? আমি এই আয়াতটি বেছে নিয়েছি বিশেষত আমাদের তরুণদের জন্য। রমজান মাসে তোমরা দেখিয়েছ তোমরা রোযা রাখতে সক্ষম, তোমরা অনেক বদ-অভ্যাস থেকে বিরত থাকতে পারো যেসব থেকে তোমরা ভেবেছিলে তোমরা বিরত থাকতে পারবে না, তোমরা সময়মত উঠে নামায পড়তে পারো, তোমরা অ-নে-ক কিছু করতে সক্ষম; এইজন্য নয় যে এটা রমজান মাস এবং এমাসে তোমরা সুপার হিউম্যান হয়ে যাও বরং আল্লাহ্‌ তোমাদের সেই সামর্থ্য দিয়েছেন। এরপর আল্লাহ্‌ খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করলেন, যখন তোমাদেরকে সামনে আসতে বলা হয় এবং তোমরা তা করতে সক্ষম তখন তোমাদের পা টান দাও, এটা কেন?” “সাকালতুম ই’লাল আ’রদ্ব” এবং এই প্রশ্নটি করা হয়েছে বিশ্বাসীদের, বিশ্বাসীদের প্রশ্ন করা হয়েছে, “আ’রাদ্বীতুম বিল হায়াতিদ দুনিয়া মিনাল আখিরাহ” তোমরা কী আখিরাতের পরিবর্তে এই পার্থিব জীবন নিয়ে পরিতুষ্ট? আল্লাহ্‌ এই প্রশ্ন করেছেন বিশ্বাসীদের।  আল্লাহ্‌ যেন বলছেন, যারা বিশ্বাসী নয় তারা তো অবশ্যই এই পার্থিব জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট কারণ...