জুনাইদ জামশেদের কথা শুনুন তার নিজের জবানিতে

আমার আব্বা ছিলেন খুবই সৎ, কোন হারাম কখনো তাকে স্পর্শ করতে পারতো না। এ কারণে বাড়ীতে কিছুটা সংযমের হালত বিরাজ করতো। পরিবারের এই টানাটানির অবস্থা দেখে আমার মাথায় টাকা কামাই করার নেশা চাপল। কিভাবে দু’হাতে টাকা কামাই করা যায়, সেই নেশায় হন্যে হয়ে উপায় খুঁজতে লাগলাম। ছোটবেলা থেকে আমার গলা ছিল খুব সুন্দর। আমি সেই গলা কাজে লাগিয়ে সঙ্গীত চর্চা শুরু করলাম। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে চারদিকে আমার বিশেষ সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল। এভাবে এক সময় আমি দেশের সেরা শিল্পীতে পরিণত হলাম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমন্ত্রণ আসতে থাকলো। বাংলাদেশ আর ভারত ছাড়া বিশ্বের সব দেশে গান গাইলাম। আমি একেকটা গানে লাখ লাখ টাকা কামাই করতে থাকলাম। গাড়ী-বাড়ী সবই হল। কিন্তু তারপরও মনে কেন যেন শান্তি পেতাম না। ২০০৩ সালের কথা। একদিন জুন মাসের প্রচণ্ড গরমে করাচীর রাস্তা দিয়ে গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছিলাম। বাইরে তখন লু-হাওয়া বইছে। রাস্তায় পায়ে হাঁটা মানুষের সংখ্যা খুব কমই পরিলক্ষিত হচ্ছিল। এমন সময় দেখি, তাবলীগের কিছু ভাই গাশতে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। আর তাদের শরীর দিয়ে ঝর ঝর করে ঘাম ঝরছে। জামা-কাপড় সব ভিজে গেছে। তাদেরকে দেখে মনে মনে বললাম, লোকগুলো পাগল ছাড়া আর কি! নিজেদের আরামও নষ্ট করছে, অন্যদেরকেও বাড়ী থেকে বের করে কষ্টের মধ্যে ফেলার ফিকির করছে। পরে চিন্তা করলাম, আমি এই এসি গাড়ীতে কত আরামে বসে আছি। কিন্তু এরা কিসের জন্য নিজেদেরকে এই কষ্টের মধ্যে ফেলছে? কেন তারা এই ত্যাগ স্বীকার করছে? এ কথা চিন্তা করে তাদের প্রতি আমার ভক্তি-শ্রদ্ধা জন্মালো। তখন আমি তাদের দু’আ নেয়ার জন্য গাড়ী ঘুরিয়ে একেবারে তাদের আমীর সাহেবের সামনে গিয়ে ব্রেক কষলাম। আমীর সাহেব হতচকিত হয়ে গেলেন। আমি গাড়ী থেকে তাকে সালাম দিলাম। তারপর বললাম, আপনারা অত্যন্ত ভাল কাজ করছেন। আমার জন্য দু’আ করবেন। আমীর সাহেব...

ধৈর্যশীল ও বুদ্ধিবৃত্তিক শয়তানের পথভ্রষ্টতার পলিসি…এবং আমরা

“শয়তান বলল(আল্লাহর উপর অভিযোগ দিয়ে)যেহেতু আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করলেন, একারণে আমি অবশ্যই, অবশ্যই, অবশ্যই তাদের(পথভ্রষ্ট করার)জন্য আপনার সরল পথে বসে থাকব”… এখানে শয়তান এরাবিক যে শব্দ ব্যবহার করেছে -তা খুবই গভীর, তা কোন সাধারণ শব্দ নয়। এই একটি শব্দ ভালো করে উপলব্ধি করতে পারলে আমরা শয়তানের পথভ্রষ্টতার পলিসি ধরতে পারব…এবং আমরা এ থেকে বেঁচে থাকব কি না সেটা আমাদের ইচ্ছা আর আল্লাহর রহমতের উপর নির্ভর করবে। আরবীতে জুলুস অর্থ বসে থাকা, কিন্তু কুয়ুদ অর্থ শুধু বসে থাকা নয়, বরং দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, চিন্তাশিলতা নিয়ে বসে থাকা(সূরা আলে ইমরান-১৯১ দেখুন)। এখানে শয়তান শিকার ধরার জন্য বিস্তারিত ও বড়সড় পরিকল্পনা নিয়ে বসে থাকে…কিভাবে? আসুন তবে বসে থাকা(কুয়ুদ) এর একটি উদাহরণ দেখি… একটি বক কিভাবে মাছ ধরার জন্য বসে থাকে(কুয়ুদ)? – সে দেখে তাঁর শিকারের সময় ছায়া পড়বে কি না…যাতে মাছ টের পায়, সে দেখে কখন তীব্র রোধ উঠবে ও মাছ উপরে উঠে আসবে, সে চিন্তা করে এই খাবার এখন না পেলে সে অভূক্ত থাকবে, কষ্টে থাকবে, সে চিন্তা করে কোন এংগেলে গেলে মাছ তাকে দেখবে না, মাছ কোন দিকে মাথা দিয়ে রাখবে এবং সেখানে থাবা দিবে যাতে শক্তি করতে না পারে, —এভাবে বহু চিন্তার পর সে মাছ শিকার করে। এটা কি শুধু বসে থাকলে হবে? …না, কক্ষনই না…বরং দীর্ঘক্ষণ বসে, চিন্তা করে, পরিকল্পনা করে, এর পরেই না তার কাজ সমাধা করতে হয়। তাহলে চিন্তা করুন কত দীর্ঘ সময় তাকে বসে থাকতে হয় একটি শিকার ধরার জন্য। যারা ক্রিমিনলজি পড়েছেন তারা হয়ত জানেন একটি ক্রিমিনালকে ধরতে বা কোন অপারেশন চালাতে কত প্রস্তুতি নিতে হয়, কত মাস, কত দিন ধরে সময় নিয়ে অবস্থান ঠিক করে, লোকজন ঠিক করে, অপরাধীর অবস্থান ভাল মত পর্যবেক্ষণ করে, কোথায়, কিভাবে, কোন পদ্ধতিতে, কত সময় ধরে, কোন অস্ত্র...

যেভাবে একজন মানুষ ঈমান হারিয়ে ফেলে

খুৎবায় আলোচিত আয়াতসমূহ — “যেদিন আপনি দেখবেন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদেরকে, তাদের সম্মুখ ভাগে ও ডানপার্শ্বে তাদের জ্যোতি ছুটোছুটি করবে বলা হবেঃ আজ তোমাদের জন্যে সুসংবাদ জান্নাতের, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তাতে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই মহাসাফল্য। যেদিন কপট বিশ্বাসী পুরুষ ও কপট বিশ্বাসিনী নারীরা মুমিনদেরকে বলবেঃ তোমরা আমাদের জন্যে অপেক্ষা কর, আমরাও কিছু আলো নিব তোমাদের জ্যোতি থেকে। বলা হবেঃ তোমরা পিছনে ফিরে যাও ও আলোর খোঁজ কর। অতঃপর উভয় দলের মাঝখানে খাড়া করা হবে একটি প্রাচীর, যার একটি দরজা হবে। তার অভ্যন্তরে থাকবে রহমত এবং বাইরে থাকবে আযাব। তারা মুমিনদেরকে ডেকে বলবেঃ আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না? তারা বলবেঃ হ্যাঁ, কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছ। প্রতীক্ষা করেছ, সন্দেহ পোষণ করেছ এবং অলীক আশার পেছনে বিভ্রান্ত হয়েছ, অবশেষে আল্লাহর আদেশ পৌঁছেছে। এই সবই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত করেছে। অতএব, আজ তোমাদের কাছ থেকে কোন মুক্তিপন গ্রহণ করা হবে না। এবং কাফেরদের কাছ থেকেও নয়। তোমাদের সবার আবাস্থল জাহান্নাম। সেটাই তোমাদের সঙ্গী। কতই না নিকৃষ্ট এই প্রত্যাবর্তন স্থল। যারা মুমিন, তাদের জন্যে কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবর্তীর্ণ হয়েছে, তার কারণে হৃদয় বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি? তারা তাদের মত যেন না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের উপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, অতঃপর তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী। তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহই ভূ-ভাগকে তার মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করেন। আমি পরিস্কারভাবে তোমাদের জন্যে আয়াতগুলো ব্যক্ত করেছি, যাতে তোমরা বোঝ।” সূরা হাদীদ : আয়াত:...
দাওয়াত না ঝগড়া?

দাওয়াত না ঝগড়া?

মূর্খের মত মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার একটা উদাহরণ হচ্ছে,যখন আমরা ইসলামের বিভিন্ন দল নিয়ে কথা বলি। আমরা বলি এই দল বনাম সেই দল, এই শায়খ বনাম ওই শায়খ, এই মাজহাব বনাম সেই মাজহাব। তুমি এইটা বলছ অথচ অমুক শায়খ এর বিপরীত বলেছে, তুমি কি ঝগড়া করতে চাও? আর এরপর, এমনও মানুষ আছে, যারা মনে করে তারা ইসলাম নিয়েই কথা বলে, কিন্তু আসলে তারা শুধু অমুক কী কী ভুল করেছে সেটা নিয়েই কথা বলে। তারা নিজেদের youtube চ্যানেল, ফেসবুক পেজ, ব্লগ সবকিছুতে এরা। আসলেই অনেক কষ্ট, সময় দিয়ে করে মানুষের ভুল ধরে যায়। এদের কি আর কোনো কাজ নাই?? যাই হোক, এরা এসবই করে। তারা বলে অমুক ভিডিওর ৮৭ মিনিটে …। ভাই, তুমি ৮৭ মিনিট ধরে ভিডিওটা শুনেছ শুধু উনি কী ভুল করে এটা বের করার জন্যে?? অবিশ্বাস্য!! এদের মনোযোগের মাত্রা দেখে আমি সত্যিই অভিভূত! এই ভাই এটা বলেছে, আস্তাগফিরুল্লাহ! এই ভাই এই সমাজের জন্যে ফিতনা। উনি আসলে মানুষকে জাহান্নামের দিকে ডেকে চলেছেন এবং উম্মাহ কে উনার থেকে বাঁচানোর জন্যে এই আমার ব্লগ কি…? এইসব কথা পরিচিত মনে হয়? এদের থেকে কি মানুষ উপকার পাবে? আমি কারো নাম নিতে চাইনা এদেরকে আমি পাত্তা দেইনা, আমার সম্পর্কে বললেও না। আমি সত্যিই এদেরকে গণনায় ধরি না। আমি মাঝে মাঝে ইউটিউবে এদের কমেন্ট পড়ি, শুধুমাত্র বিনোদনের জন্যে। কিন্তু ইনি, ইনার এই ভুল আছে .. অথবা লোকে বলে উনি অমুক বিপথগামী দলের লোক, লোকে বলে উনি ভালো শায়খ নন।এই সব কথাবার্তা শুনেছেন না? .. আহ ..এইসব ‘লোকে বলা’ জিনিস গুলা কোথায় থেকে পায় এরা? এটা নবী (সা:) সুন্নাহ নয়, তবে এখন ‘মুসলিমদের সমাজের’ একটা সুন্নাহ চালু হয়েছে। যখনি কেউ মানুষের উপকারের জন্যে কাজ করবে আপনাকে তার ভুল বের করতেই হবে। এবং আমি গ্যারান্টির সাথে...
আইনের ফাঁক-ফোকড় খুঁজবেন না

আইনের ফাঁক-ফোকড় খুঁজবেন না

উস্তাদ নুমান আলী খানের কুরআন উইকলি তে দেয়া “Quranic Gems” সিরিজ থেকে নেয়া। আজকে আমরা নৈতিকতা ও আচরণের একটি বিষয় শিখব- তা হচ্ছে আদাব। উম্মাহর মধ্যে, মুসলিমদের লাইফস্টাইলের মধ্যে এবং এমন কিছু যা আল্লাহ আমাদের শিক্ষা দেন, যেটি সাধারণভাবে অবহেলিত। এবং আল্লাহ বলেন, “ইয়া আইউহাল্লাযিনা আমানু”– তোমরা যারা ঈমান এনেছ, তোমরা যারা ঈমানে প্রবেশ করেছ, লা তাসআলু আনইয়াশইয়াআ- জিজ্ঞেস করোনা বিষয়াদি সম্পর্কে, ইন তুবদালাকুম তাসু’কুম- যদি তা তোমাদের উপর প্রতীয়মান হয়, যদি উত্তরটি তোমাদের জন্য স্পষ্ট হয়ে যায়, তোমরা তা পছন্দ করবেনা। তা তোমাদের জন্য খারাপ হবে, তোমরা উত্তরটির জন্য কষ্ট পাবে।” আমি আপনাদের একটি গল্প বলবো, আপনারা অনেকেই যারা আমাকে অনলাইনে ফলো করেন অথবা আমি যে ধরনের ভিডিও এবং লেকচার করি এগুলোর সাথে পরিচিত, আপনারা জানেন যে আমি ফাতওয়া দেই না। আমি ফিক্‌হ নিয়ে কথা বলিনা। লোকে আমাকে সবসময় জিজ্ঞেস করে কোনটা হালাল, কোনটা হারাম। আমি তাদের সবসময় বলি কোন প্রকৃত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছে যেতে। শেইখ ওমর সুলেমানকে জিজ্ঞেস করুন, শেইখ আব্দুন নাসেরকে জিজ্ঞেস করুন, অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করুন। আমাকে কুর’আন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন। আশা করি আমি আপনাদের উত্তর দিতে পারব অথবা আমি গবেষণা করে আপনার উত্তরটি দিতে চেষ্টা করব। কিন্তু হালাল এবং হারাম বড় বিষয়।  তো একজন আমার কাছে আসলো এবং জিজ্ঞেস করল, এবং এটি একটি সত্য ঘটনা। আমি বলবোনা তারা আমাকে কি প্রশ্ন করেছিল, কিন্তু তারা বলল, “এক্স ওয়াই যেড…এটি কি হারাম?” আমি বললাম, “আমি জানিনা। আমি আপনাদের বলতে পারবনা।” তারা জিজ্ঞেস করল “আমি কি মনে করি?” “না, আমি কিছু জানিনা, আমি আপনাদের বলতে পারবনা, আপনাদের অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করতে হবে।” “তাহলে কাকে জিজ্ঞেস করা উচিত?” তো আমি একজন স্কলারের কথা বললাম, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি তাকে এই প্রশ্নটি করেছেন?” আমি বললাম, “হ্যাঁ, আমি...