যতই খারাপ অবস্থায় থাকুন না কেন, মনে রাখুন আল্লাহ আপনাকে ছেড়ে যাননি

যতই খারাপ অবস্থায় থাকুন না কেন, মনে রাখুন আল্লাহ আপনাকে ছেড়ে যাননি

যদি আমরা আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করতে চাই, যদি আপনি আল্লাহর সাথে সম্পর্ক রাখতে চান, তাহলে এই কথাগুলো মনে রাখুন।অনুগ্রহ করে এগুলো মনে রাখুন কারণ এগুলো খুব জরুরি। মানুষজন আপনাকে হয়ত ভাল জানে বা তারা হয়ত আপনাকে খারাপ ভাবে, আল্লাহর কাছে কিন্তু এসবের কোন মূল্য নেই। আপনার ব্যাপারে আল্লাহর যে ধারণা এবং মানুষজনের যে ধারণা তার মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই আর মানুষজন যদি ভাবে আপনি মহান। তাহলে এটি কিন্তু কোন নিশ্চয়তা দেয় না যে আল্লাহর কাছেও আপনি মহান হবেন। একদম না, একদম না। আপনি তাহলে কিন্তু নিজেই নিজেকে ধোঁকা দেবেন। যদি মানুষজন ভাবে আপনি ভয়ানক, আপনি জাহান্নামে যাবেন, আপনি খারাপ, এর মানে এই নয় যে আল্লাহও আপনাকে খারাপ ভাবেন।হয়ত আপনার জন্য আল্লাহর ভালবাসা মজুদ রয়েছে। মানুষজন আমার আর আপনার ব্যাপারে কী ভাবল তার কোন মূল্য আল্লাহর কাছে নেই। যখন মানুষজন আমাদের প্রশংসা বা নিন্দা করে, তখন আমাদের এটা ভাবা উচিত হবে না যে আল্লাহও আমাদের ব্যাপারে তেমনটাই ভাবেন।একদিকে একজন ব্যক্তির বিভ্রম হয় এই ভেবে যে অন্যরা যেহেতু তার প্রশংসা করছে সেহেতু তারা আল্লাহর কাছেও প্রশংসনীয় হবে। এমন ব্যক্তিরা বিভ্রান্ত হয়ে যায়, তাদের মধ্যে ভন্ডামি, আত্ম-ধার্মিকতা ঢুকে পড়ে এবং আল্লাহর কাছে তারা তাদের মর্যাদা হারিয়ে বসে।তারা শুধু দুনিয়া আর এর মানুষদের প্রশংসা পায়, যখন তারা আল্লাহর সামনে হাজির হবে তখন আল্লাহ বলবেন, তোমরা যার জন্য কাজ করেছ তা তো পেয়েই গিয়েছ, আমার সাথে তোমার কোন কিছু নেই।  অপরদিকে এমন ব্যক্তি রয়েছে যারা হয়ত ভাল হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু অন্যরা তাদের বিচার করে বসে এবং তাদের ব্যাপারে এটা-সেটা মন্তব্য করে, তখন সেই সব ব্যক্তিরা ভাবে মানুষজন যখন আমাকে ভাল বলছে না, তখন হয়ত আমি আসলেই ভাল নই। কে বলছে আপনি ভাল না? আল্লাহ? না। আল্লাহ আপনার ব্যাপারে আশা ছেড়ে দেন নি, আপনি...
আমরা মুসলিম, কিন্তু কেনো?

আমরা মুসলিম, কিন্তু কেনো?

আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, قُلْ هَٰذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي ۖ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ “বলে দিনঃ এই আমার পথ। আমি আল্লাহর দিকে বুঝে সুঝে দাওয়াত দেই আমি এবং আমার অনুসারীরা। আল্লাহ পবিত্র। আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই।”  (সূরা ইউসুফঃ ১০৮) এই হলো সাবিল (পথ, পন্থা)। চমৎকার বাক্য। আমি আল্লাহর পথে ডাকি চোখ খোলা রেখে, সঠিক উপলব্ধি সহকারে। ‘বাসীরা’। ‘বাসীরা’ হলো যখন কোনো কিছুর প্রতি আপনার পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টি রয়েছে। আসলে , আরবি ভাষা অনুযায়ী এই মুহুর্তে আমার ‘বাসীরা’ নেই কারণ এই পিলারটির জন্য পিলারের পেছনের মানুষদের আমি দেখতে পাচ্ছি না এবং তারাও আমাকে দেখতে পাচ্ছে না তাই আমার বাসীরা নেই। ‘বাসীরা’ মানে হলো আপনার পূর্নাঙ্গ দৃষ্টি রয়েছে। এমনকি আংশিক দৃষ্টিও ‘বাসীরা’ নয়। আল্লাহ বলেন : আমরা লোকদের দ্বীনের পথে ডাকি দৃষ্টি খোলা রেখে। আপনারা জানেন এর মানে কী ? এর মানে হলো – আমাদের পরিপূর্ণ জ্ঞান রয়েছে যে কেন আমরা মুসলিম। শুধু এটা নয় যে , আলহামদুলিল্লাহ আমরা জানি যে আমরা মুসলিম। কিন্তু আমাদের চোখ খোলা থাকতে হবে। কেন আমি মুসলিম? কেন আমি বলি – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ? কেন আমি বলি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম? কেন কুর’আন আল্লাহর কিতাব? আমার নিজের জন্যই এই বিষয়ে আমার পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। বহু মুসলমান আজকে মুসলিম কারণ, আর আপনি যদি তাদের জিজ্ঞেস করেন কেন তুমি মুসলিম ? তারা বলবে – কারণ আমার বাবা-মা মুসলিম। অথবা তারা বলবে কারণ আমি বড় হয়েছি একটি মুসলিম দেশে। অথবা তারা বলবে : আমি জানি না, আমার মনে হয় সবাই মুসলিম তাই আমিও মুসলিম। এগুলো ভালো জবাব নয়। ঐ প্রশ্নের এগুলো ভালো উত্তর নয়। আর আমি আপনাদের বলছি ..আমি...
জীবনে কেন বিপদাপদ ঘটে? পর্বঃ ০৩ (শেষ পর্ব)

জীবনে কেন বিপদাপদ ঘটে? পর্বঃ ০৩ (শেষ পর্ব)

এটা ছিল দু’টো আয়াতের একটি যে ব্যাপারে আমি কথা বলতে চেয়েছিলাম। বিপদের প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়া হল- “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না লিল্লাহি রাজিউন”। কিন্তু এখন শেষ কিছু মিনিটে আমি অন্য একটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই, জীবনে যত বিপদ আপদ, সমস্যা, চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় সেগুলো নিয়ে। আর সেটা হল কুরআনে দুই ধরনের আয়াত আছে। এক ধরণের আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন যে যা কিছুই তোমাদের ক্ষেত্রে ঘটে مَا أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِّن قَبْلِ أَن نَّبْرَأَهَا ‘’পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে না; কিন্তু তা জগত সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে।‘’( সূরা হাদিদ -২২) জীবনে যত রকম বিপদ হয়, যেখানেই হোক, যার উপরেই হোক, এমন কোন বিপদ নেই আকাশে মাটিতে যেখানেই হোক, যেটা আগে থেকেই কিতাবে লেখা নেই। এটা পূর্ব নির্ধারিত। অর্থাৎ এটি আল্লাহ পাকের কদর, যে এটা হবেই, হবারই ছিল। ধরুন কেউ একজন খুব অল্প বয়সে মারা গেল, আপনি এটা বলতে পারেন না যে আহা বেচারার পুরো জীবনটা সামনে পড়ে ছিল। না, তার ছিল না। এই রকম কিছুর অস্তিত্ত নেই। তার জীবনটা ওইটুকুই নির্ধারিত ছিল। এই দুনিয়াতে তার সময় ওইটুকুই ছিল, বেশিও নয়, কম ও নয়। আমার এই দুনিয়াতে থাকার সময়ও নির্ধারিত, আপনার সময়ও নির্ধারিত। আপনি বিভিন্ন কবরস্থানে গেলে দেখবেন যে কারও কারও জন্ম ১৯০১ সালে, মারা গেল ২০১৩ সালে। আবার এটাও দেখবেন যে কেউ জন্ম নিল ২০১৩, আবার মারাও গেল ২০১৩ সালে। এমন কবরও আপনি পাবেন। আর এটা আল্লাহ পাক আগেই নির্ধারণ করে রেখেছেন যে কতটুকু সময় আমরা প্রত্যেকে এই দুনিয়াতে থাকব। এটা নির্ধারিত।আপনি বলতে পারেন না যে আজ যদি সে বেঁচে থাকতো !না, না, না । কারণ এটা ঠিক করা ছিল, আগে থেকেই! আরেকটি ব্যাপার আল্লাহ পাক বলেন...
জীবনে কেন বিপদাপদ ঘটে? পর্বঃ ০২

জীবনে কেন বিপদাপদ ঘটে? পর্বঃ ০২

আমাদের মনে নানা ধরনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য আছে, যা আমরা মনে করি আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। অথচ আল্লাহ বলেন, এর চেয়েও অনেক মূল্যবান কিছু তোমাদের মনে আছে, যদি তোমরা তা বাস্তবায়ন করতে পার- যদিও এর মূল্য তোমরা অনুধাবন করতে পার না, তবে আমি তোমাদের জানাচ্ছি এর মূল্য কতখানি! – এর মূল্য হলো এটা অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। আর ঠিক এরপরেই, এই অভিনন্দন জানানোর পরই আল্লাহ পাক বলেন الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُو ” যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো।” (সূরা বাকারাঃ ১৫৬) কোন ধৈর্যশীল ব্যক্তিদের জন্য এই অভিনন্দন? যখনই একটি নির্দিষ্ট বিপর্যয় তাদের আঘাত করে , যে কথাটি প্রথমেই তাদের মুখে চলে আসে –‘কালু’ (তারা বলে) , এমনকি ‘ফাক্বালু’ও (অতপর তারা বলে ) নয়। এমনকি ‘ছুম্মা ক্বালু’ ও (এরপর তারা বলে) নয়। আল্লাহ পাক বলছেন না যে, তখন তারা বলে। যদি এটা ঘটে বা যখন ঘটে তখন তারা বলে। বাক্যটিতে কোন “যদি” নেই, এমনকি “তখন” কথাটিও নেই। কেন নেই? কারণ এটা হতে হবে একটি তাৎক্ষণিক জবাব! আমরা ফিজিক্স , মেডিসিন অথবা বায়োলজিতে পড়ে থাকতে পারি, ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে। যখন একজন ডাক্তার আমাদের শারীরিক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করে তখন সে হাটুতে হালকা আঘাত করে এবং হাটু তাৎক্ষণিকভাবেই একটু উপরে উঠে যায়। তারা এই রিফ্লেক্সগুলোকে পরীক্ষা করে। এই আয়াতটি আমাদের এটাই শিখাতে চাচ্ছে যে, যখন যাবতীয় বিপদ-আপদ আপনার আমার উপর আসবে, আমাদের একটি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত। প্রতিক্রিয়া কখনই দেরিতে হয়না, সঙ্গে সঙ্গেই হয়ে যায়। কাউকে জোর করে করতে হয়না, এমনিতেই চলে আসে। আর কী চলে আসে ? “ইন্না লিল্লাহি” কোন সন্দেহ নেই, আমরা আল্লাহ্‌রই জন্য। “ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” এবং আমরা একমাত্র তার...
কুরআনের রত্নঃ পথভ্রষ্টতা যেভাবে শুরু হয়

কুরআনের রত্নঃ পথভ্রষ্টতা যেভাবে শুরু হয়

উস্তাদ নুমান আলী খানের কুরআন উইকলি তে দেয়া কুরআনের রত্ন সিরিজ থেকে।   শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا   বাংলা ভাবার্থঃ “অতঃপর তাদের পরে এল অপদার্থ পরবর্তীরা। তারা সালাত নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতা প্রত্যক্ষ করবে।” [১৯:৫৯] আমি ওস্তাদ নুমান, কুরআনের ১৬তম পারার অন্তর্ভুক্ত সুরা মারিয়ামের ৫৯নং আয়াতটি নিয়ে আলোচনা করবো। আর এই হল আমার বড় ছেলে ইমাদ । আলহামদুলিল্লাহ, সে আজ আমার সাথে যোগ দিয়েছে। ইমাদ তুমি কেমন আছ? ভালো । তুমি কি মনোযোগ দিয়ে শুনবে ? হাঁ । ঠিকাছে ভালো । আল্লাহ এই আয়াতে বনী ইসরাইলদের সম্পর্কে কথা বলেছেন । এই আয়াতের আগের আয়াতগুলোতে বিভিন্ন সময়ে আল্লাহ্‌র প্রেরিত নবী-রাসুলদের কথা বলা হয়েছে। যেমনঃ নুহ (আঃ) ও তাঁর বংশধর যারা মহাপ্লাবন থেকে উদ্ধার পেয়েছিল, ইব্রাহিম (আঃ) এবং তাঁর বংশধর বিশেষ করে ইসমাইল (আঃ), ইসহাক (আঃ), ইয়াকুব (আঃ) এবং তাঁর ছেলেরা, এবং মুসা (আঃ) সম্পর্কে বলা হয়েছে। এখানে উনাদের অনুসারীদের মধ্য থেকে একটি নির্দৃষ্ট প্রজন্মের কথা বলা হয়েছে যারা প্রত্যাশা পুরন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। সেই প্রজন্ম সম্পর্কে আল্লাহ্‌‘তালা বলেছেন এইভাবেঃ ‘ফাখালাফা মিম বা‘দিহিম খালফুন’ অতঃপর তাদের পরে কারা এলো ? এমন মানুষ যারা প্রত্যাশা পুরন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। এখানে ‘খালফ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। ‘খালাফ’ (লাম এর উপর জবর দিয়ে ) অর্থ পরবর্তী প্রজন্ম যারা  প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম, যারা দ্বীনের পথে রয়েছে। অপরদিকে ‘খালফ’ [সুকুনযোগে] অর্থ পরবর্তী প্রজন্ম যারা তাদের পূর্বপুরুষদের শিক্ষা  কে  এগিয়ে নিয়ে যায়নি, তারা পেছনে ফিরে গিয়েছিল। তারা পূর্ববর্তীদের কাছ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পরও পথভ্রষ্ট হয়েছিল। এখানে আল্লাহ্‌‘তালা বনী ইসরাইলদেরকে তেমন একটি জাতি হিসেবে চিহ্নিত করে ছেন যারা নবী-রাসুলদের কাছ থেকে স্পষ্ট নির্দেশ পাবার পরও...